অনেক নবী-রাসূলগণ যেখানে ব্যর্থ সেখানে পন্নী সাহেব সফল!
একদম মহাসত্য পেয়েও যেখানে নবী রসুলদের মধ্যে অনেকে ব্যর্থ হোয়েছেন,পারেন নি,সেখানে আমি কে।আমি তো কেউ না,কিছুই না।কি হবে,কি হবে না-এই সংশয় আমার ছিল ২০০৮ সনের ফেব্রুয়ারীর দুই তারিখ পর্যন্ত,পূর্ণভাবে ছিল।যদিও সেটা আমাকে দমাতে পারে নি,এজন্য যে আমি চেষ্টা কোরে যাবো,নবী রসুলরা পারেন নি আর আমি কে? আমি চেষ্টা কোরে যাবো।মো’জেজার দিনটায় আল্লাহ আমার সব সংশয় অবসান কোরেছেন,জানিয়ে দিলেন নিজে যে,হবে,উনি কোরবেন,আমি না।(আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা-৬৮)
পন্নী সাহেবের এমন গর্হিত বক্তব্য নবী-রাসূল (আঃ) গণের রিসালাতের উপর মারাত্মক অপবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়।আসুন কুরআনুল কারীম হতে তার প্রমাণ দেখি।
⏩নবী-রাসূলদের দায়িত্ব কি ছিল?
নবী-রাসূল (আঃ)-দের মূল দায়িত্ব ছিল তাওহীদের বাণী প্রচার করা।পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লহ ﷻ এর স্পষ্ট বিবরণ দিয়েছেন।যেমনঃ
🔸সকল রাসূলদের উদ্দেশ্য করে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ
◾وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا نُوۡحِیۡۤ اِلَیۡہِ اَنَّہٗ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدُوۡنِ
আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই এবাদত কর।(সূরা আম্বিয়া-২৫)
🔸নূহ (আঃ) সম্পর্কে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ
◾لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا نُوۡحًا اِلٰی قَوۡمِہٖ فَقَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرُہٗ
নিশ্চয় আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের প্রতি পাঠিয়েছি। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। (সূরা আল-আ’রাফ-৫৯)
🔸হূদ (আঃ) সম্পর্কে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ
◾وَ اِلٰی عَادٍ اَخَاہُمۡ ہُوۡدًا ؕ قَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرُہٗ ؕ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ
আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই হুদকে। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতিত তোমাদের কোন উপাস্য নেই।(সূরা আল-আ’রাফ-৬৫)
🔸সালেহ (আঃ) সম্পর্কে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ
◾وَ اِلٰی ثَمُوۡدَ اَخَاہُمۡ صٰلِحًا ۘ قَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرُہٗ
সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই সালেহকে। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতিত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। (সূরা আল-আ’রাফ-৭৩)
🔸শোয়ায়েব (আঃ) সম্পর্কে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ
◾وَ اِلٰی مَدۡیَنَ اَخَاہُمۡ شُعَیۡبًا ؕ قَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرُہٗ
আমি মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। (সূরা আল-আ’রাফ-৮৫)
এ আয়াতগুলো হতে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে নবী-রাসুলদের মূল দায়িত্ব ছিল “তাওহীদ” এর দাওয়াত ।
⏩তাঁরা কি তাঁদের দাওয়াত যথাযথভাবে পৌঁছিয়েছেন?
উত্তর হচ্ছে- অবশ্যই তাঁরা তাঁদের দাওয়াত যথাযথভাবে পৌঁছিয়েছেন।নূহ আঃ এর দাওয়াত প্রদান সম্পর্কে স্বয়ং আল্লহ ﷻ কুরআন মাজীদে বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ
◾قَالَ رَبِّ اِنِّیۡ دَعَوۡتُ قَوۡمِیۡ لَیۡلًا وَّ نَہَارًا
সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি দাওয়াত দিয়েছি।(সূরা নূহ-৫)
◾فَلَمۡ یَزِدۡہُمۡ دُعَآءِیۡۤ اِلَّا فِرَارًا
কিন্তু আমার দাওয়াত তাদের পলায়নকেই বৃদ্ধি করেছে।(সূরা নূহ-৬)
◾وَ اِنِّیۡ کُلَّمَا دَعَوۡتُہُمۡ لِتَغۡفِرَ لَہُمۡ جَعَلُوۡۤا اَصَابِعَہُمۡ فِیۡۤ اٰذَانِہِمۡ وَ اسۡتَغۡشَوۡا ثِیَابَہُمۡ وَ اَصَرُّوۡا وَ اسۡتَکۡبَرُوا اسۡتِکۡبَارًا
আমি যতবারই তাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি, যাতে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, ততবারই তারা কানে অঙ্গুলি দিয়েছে, মুখমন্ডল বস্ত্রাবৃত করেছে, জেদ করেছে এবং খুব ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে।
(সূরা নূহ-৭)
◾ثُمَّ اِنِّیۡ دَعَوۡتُہُمۡ جِہَارًا
অতঃপর আমি তাদেরকে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছি।(সূরা নূহ-৮)
◾ثُمَّ اِنِّیۡۤ اَعۡلَنۡتُ لَہُمۡ وَ اَسۡرَرۡتُ لَہُمۡ اِسۡرَارًا
অতঃপর আমি ঘোষণা সহকারে প্রচার করেছি এবং গোপনে চুপিসারে বলেছি।(সূরা নূহ-৯)
এ থেকে বুঝা যায় তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনে কোন ত্রুটি করেন নি।কিন্তু মানুষ তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করে নি।এটি মোটেও তাঁর ব্যর্থতা নয়।
⏩মানুষ কর্তৃক দাওয়াত প্রত্যাখ্যান কি নবী-রাসূলদের দূর্বলতা/ব্যর্থতা?
মোটেও না,তাঁদের দায়িত্ব শুধু দাওয়াত পৌঁছে দেয়া। হিদায়াত আল্লহ তা’য়ালার নিকট।
পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ
◾فَہَلۡ عَلَی الرُّسُلِ اِلَّا الۡبَلٰغُ الۡمُبِیۡنُ
রাসূলের দায়িত্ব তো শুধুমাত্র সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছিয়ে দেয়া।(সূরা নাহল-৩৫)
◾فَذَکِّرۡ ؕ اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مُذَکِّرٌ . لَسۡتَ عَلَیۡہِمۡ بِمُصَۜیۡطِرٍ
অতএব, আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা।আপনি তাদের শাসক নন।(সূরা গশিয়াহ-২১-২২)
◾یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ اِنَّاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ شَاہِدًا وَّ مُبَشِّرًا وَّ نَذِیۡرًا .وَّ دَاعِیًا اِلَی اللّٰہِ بِاِذۡنِہٖ وَ سِرَاجًا مُّنِیۡرًا
হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।(সূরা আহযাব-৪৫-৪৬)
উল্লেখিত আয়াত দ্বারা একথা স্পষ্ট যে, নবী-রাসূলদের দায়িত্ব শুধু দাওয়াত পৌঁছে দেয়া।হিদায়াত আল্লহ ﷻ এর এখতিয়ারে ।
আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ
◾وَ اللّٰہُ یَدۡعُوۡۤا اِلٰی دَارِ السَّلٰمِ ؕ وَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ
আর আল্লাহ্ শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছে সরল পথে পরিচালিত করেন ।(সূরা ইউনুস-২৫)
একই কথা বলা হয়েছে সূরা আল-আ’রাফ এর ১৮৬,সূরা বাক্বারাহ এর ২৭২ নং আয়াতসহ কুরআনের আরও অনেক আয়াতে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, নবী-রাসূল (আঃ)-দের দায়িত্ব ছিল তাওহীদের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া।কেউ সে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলে তার দায়ভার নবী-রাসূল (আঃ) -দের উপর বর্তায় না। হিদায়াতের মালিক আল্লহ ﷻ।সুতরাং নবী-রাসূল (আঃ)-গণ ব্যর্থ ছিলেন না,বরং তাঁরা সফল ছিলেন।তাদেরকে ব্যর্থ বলা তাঁদের রিসালাতের উপর মারাত্মক অপবাদ যা ঈমানের জন্য চরম ক্ষতিকর ।
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনঃ উস্তাদে মুহতারম ফাদ্বিলাতুশ শায়খ Abdullah Al Mamun হাঃফি