প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম
আমার নাম……..(নামটি উহ্য রাখা হলো) ।
অনেকদিন মেইল করেও কোনো উওর পাইনি। কলও দিয়েছিলাম, আবারও মেইল করতে বলা হয়েছিলো, করেছিলাম। তাও উওর পাইনি। সেজন্য আবারও মেইল করলাম। দয়া করে উওর দিবেন প্লিজ।
এখন আমার বয়স ২৮। আমার যখন ১৪-১৫ বছর বয়স ছিলো, আমি অন্য ছেলের সাথে সম্পর্কে জরিয়ে যাওয়ার কারণে আমার বাবা মা আমাকে বিয়ে দিতে চায়। যার সাথে বিয়ে ঠিক করে তাকে আমার কোনো ভাবেই পছন্দ হয়নি। আমি বিয়েতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু মায়ের ভয়ে পরে রাজি হই। মন থেকে রাজি ছিলাম না। ছোট ছিলাম তাই ভয়ে রাজি হয়েছিলাম।
সব আত্বীয় স্বজনের সামনে কাজীর দ্বারা বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু আমি কোনো ভাবেই আমার স্বামীকে মেনে নিতে পারছিলাম না।
বিয়ের অনেক মাস পার হয়ে যাওয়ার পরেও তার সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক হচ্ছিলোনা আমার কারণে। এর মাঝে আমার শাশুড়ী একদিন আমাকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়, হয়তো আমার অজান্তে আমাকে কিছু খায়িয়েছেও৷ আমার জানা নেই, যেনো তার ছেলেকে মেনে নেই।
আমার মা-ও হয়তো একই ভাবে কবিরাজের কাছ থেকে আমার কখনো কিছু এনে খায়িয়েছে৷ আমি যতটুকু আনদাজ করতে পারি। সিওর না। এরপর একদিন হুট করে আমার ইচ্ছাতেই আমাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়।
কিন্তু তারপরও আমি তাকে মেনে নিতে পারছিলাম না। যতটুকুই যা ছিলো আমাদের মাঝে শুধুমাত্র আমার মায়ের ভয়ে ছিলো। আমি অনেক কান্না করতাম আমি বলতাম আমি সংসার করবোনা। কিন্তু আমার কথা কেউ শুনতোনা। বিয়েটা না করলেও পারতাম, কিন্তু এত ছোট ছিলাম যে আমি এটা বুঝতাম না একবার বিয়ে হয়ে গেলে তো আর সেটা ফেরানো যায়না।
আমি ভাবতাম বিয়ে দিতেছো দাও, আমি মেনে নিবোনা। এর মাঝে আমি প্র্যাগনেন্টও হয়ে যাই। কিন্তু আমার সংসার টিকবেনা সেটা সবাই বুঝে গেছে ততোদিনে। তাই আমার মা আমাকে গোপনে এবরশন করায়। সেটা কেউ জানতোনা। এরপর থেকে সেই ছেলের সাথে আমার আর শারিরীক সম্পর্কও রাখার ইচ্ছা ছিলোনা।
আমি সবার সম্মতিতেই আমার বাসায় থাকতাম। ছেলেও আমাদের বাসায়ই থাকতো। ছেলে তেমন কিছু করতোনা। তাই আমার কোনো ভরণ পোষণ দিতোনা। মাঝে মাঝে জোর করে হাত খরচের জন্য ২০০-৩০০/১০০ টাকা নিতাম। ছেলেও বুঝতো আমার তাকে পছন্দ না।
হয়তো অনেক দিন বলেছিও তাকে, কতদিন বলেছি আমার মনে নেই যেহেতু অনেক বছর আগের কথা। একদিনের কথা মনে আছে শুধু – একদিন ছাদে আমি তাকে বলেছিলাম – আপনি আমাকে ছেড়ে দেন / ডিভোর্স দিয়ে দেন। সে একটু মুচকি হেসে উওর দিয়েছিলো আমি তোমাকে ছাড়বোনা / কখনোই ছাড়বোনা, তুমি ছেড়ে দাও। আমি বললাম আমার মা বাবা তো আমাকে ছাড়তে দিবেনা। আপনি ছেড়ে দেন। এরপর কি উওর দিয়েছিলো আমার মনে নেই।
এরপর একদিন অনেক ঝগড়া হয় আমার সাথে ছেলের। ছেলে চলে যায় কষ্ট পেয়ে। আর কোনো দিন আসেনা। কোনো কল / কোনো খোজ নেয়না সে বা তার পরিবার।
আমাদের দিক থেকেও আর কেউ যোগাযোগ করেনা। কারণ সবাই অতিষ্ঠ হয়ে এটা বুঝে গিয়েছিলো যে এই সংসার টেকার মতন না। তাদের দিক থেকে রেসপন্স না আসার আরও একটা কারণ হতে পারে তাদেরকে যতটুকু আমি জানি, তা হচ্ছে তাদের দিক থেকে তালাক দিলে কাবিনের টাকা দেয়া লাগবে + আমাদের কাছ থেকে যৌতুকের টাকা নিয়েছিলো ৫০ হাজার, সেটা দেয়া লাগবে। তারাও আমাদের কিছু কিছু মিথ্যা বলে ঠকিয়েছিলো যেমন যতটুকু স্ব্রর্ন দেয়ার কথা ছিলো দেয়নি।
যা-ই হোক। তারা হয়তো চাচ্ছিলো তালাক টা আমাদের দিক থেকেই যাক/হোক। আমার তো এটা নিয়ে চিন্তা ছিলোনা কারণ সে চলে গেছে আমি তাতেই খুশি। অনেক মাস / প্রায় বছর অপেরক্ষার পর আমার মা ( বাবার চাকরীর জন্য দূরে থাকতেন তবে মায়ের সব কাজে তার সম্মতি আছে সবসময়, কোনো মতভেদ নেই) আমার মা কাজী এনে আমাকে তালাক গ্রহন করায়। আমার যতটুকু মনে পর কাজী আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো আমি সংসার করতে চাইনা কিনা।
আমি বলেছিলাম জীবনেও না। কাজী আমাকে তালাক নামাজ সাক্ষর নেন। সেখানে আমার বা আমি আর পাশের রুমে একটা আন্টি ছিলো। আর কেউ ছিলোনা।
তালাক নামায় লিখা ছিলো – কাবীননামার ১৮ নাম্বার কলামের তালাকে তাওফীজের শর্ত পাওয়া গেছে সেই বলে আমি নিজের নফসের উপর তালাক গ্রহন করলাম। কাবিননামায় ১৮ নাম্বার কলামে লিখা ছিলো – বনিবনা না হলে, খোরপোশ না দিলে, নিখোঁজ থাকলে.. এরপর কাজী আমাকে বললো ৩ মাস পর চাইলে অন্য যায়গায় বিয়ে করতে পারবো।
আমাদের দিক থেকে সেই তালাকের নোটিশ তাদের পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
কিন্তু তাও তারা কোনো রেসপন্স করেনি। আজঅব্দি কোনো খোজ করেনি বা কোনো রেসপন্স করেনি।
বুঝাই যাচ্ছিলো তারা সেটা মেনে নিয়েছে তারা অপেক্ষা করছিলো যেনো আমরাই তালাক টা দেই। প্রশ্ন হচ্ছে – আমার কি তালাক টা সহীভাবে হয়েছিলো?
আমার অন্য যায়গায় বিয়ে হয়েছে ২.৫ বছর হলো। এটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে বর্তমান বিয়েতে মন দিতে পারছিনা। ওয়াসওয়াসার রুগী হয়ে গিয়েছি।
দয়া করে উওর দিয়ে আমার সাহায্য করবেন।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কাবিননামার ১৮ নাম্বার কলামের যে শর্ত দেয়া আছে যে, বনিবনা না হলে, খোরপোষ না দিলে কিংবা নিখোঁজ হলে, উপরোক্ত শর্ত যেহেতু আপনার বক্তব্য অনুপাতে পাওয়া গেছে, তাই আপনি নিজের উপর তালাকে তাফয়ীজ গ্রহণের অধিকারপ্রাপ্ত হয়েছেন। সেই হিসেবে নিজের উপর তালাক গ্রহণ করে থাকলে তালাক সম্পন্ন হয়ে গেছে। তালাকের পর তালাকের ইদ্দত শেষে যদি অন্যত্র সঠিকভাবে বিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার দ্বিতীয় বিয়েও শুদ্ধ আছে। সুতরাং পেরেশান হবার কিছু নেই।
جعل الطلاق بيد الزوج لا بيد الزوجة إن الذى يملك الطلاق إنما هو الزوج…. ولا تلملكه الزوجة إلا بتوكيل من الزوج أو تفويض منه (الفقه الأسلامى وأدلته-7/347، 355)
وفي رد المحتار- وأنواعه ثلاثة : تفويض ، وتوكيل ، ورسالة وألفاظ التفويض ثلاثة : تخيير وأمر بيد ، ومشيئة . (رد المحتار-كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/452
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
ইমেইল– [email protected]