মুফতী ইজহারুল ইসলাম কাউসারী
আল্লাহর আকার:
আল্লাহর আকার প্রমাণের ধারনাটি মূলত: ইহুদী ধর্ম থেকে এসেছে। ইহুদীরা আল্লাহ তায়ালাকে মানুষের আকৃতিতে বিশ্বাস করে। মানুষের প্রায় সব গুণাগুণ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে থাকে। দেহবাদী আকিদার ক্ষেত্রে ইহুদীদের এসব জঘন্য আকিদা কাররামিয়া ও শিয়াদের মাধ্যমে ইসলামী আকিদায় প্রবেশ করে। পরবর্তীতে কাররামিয়াদের অনুসারী তথাকথিত সালাফীরাও এসব বাতিল আকিদা লালন করে এবং সমাজে দেহবাদী আকিদা প্রচার করতে থাকে।
আল্লাহর আকার সম্পর্কে ইহুদী আকিদা:
ওল্ড টেস্টামেন্টের বুক অব জেনেসিসে রয়েছে,
And God said, Let us make man in our image, after our likeness: and let them have dominion over the fish of the sea, and over the fowl of the air, and over the cattle, and over all the earth, and over every creeping thing that creepeth upon the earth.
“প্রভূ বললেন, আমি আমার আকৃতিতে, আমার সাদৃশ্যে মানুষ সৃষ্টি করবো, যারা মাছ, সমুদ্র…..জয় করবে”
[বুক অব জেনেসিস, পরিচ্ছেদ-১, শ্লোক-২৬]একই বইয়ের ২৭ নং শ্লোকে রয়েছে,
So God created man in his own image, in the image of Godcreated he him; male and female created he them.
অর্থাৎ সুতরাং প্রভূ মানুষকে নিজের আকৃতিতে সৃষ্টি করলেন; প্রভূর আকৃতিতে মানুষকে সৃষ্টি করলেন। আর তাদেরকে সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও মহিলা হিসেবে।
[বুক অব জেনেসিস, পরিচ্ছেদ-১, শ্রোক, ২৭]ইহুদীদের কিতাব থেকে আল্লাহর আকার প্রমাণ:
তথাকথিত সালাফীরা যে ইহুদীদের কিতাব থেকে তাদের এই আকিদাটি নিয়েছে, এটি আমাদের মৌখিক কোন দাবী নয়। বরং তাদের কিতাবেই বিষয়গুলো স্পষ্ট রয়েছে।
সালাফীদের বক্তব্য:
সালাফীদের অন্যতম শায়খ হলেন আব্দুল আজিজ রাজেহী ও শায়খ সালেহ ইবনে আব্দুল আজিজ আলুশ শায়খ। তাদের মতে আল্লাহ তায়ালার সুরত বা আকৃতি রয়েছে। এই সুরত হলো আল্লাহর শিকল বা গঠন ও অবকাঠামো। আল্লাহ তায়ালার এই গঠন ও অবকাঠামোর মাধ্যমে তিনি অন্যদের থেকে পৃথক হয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালার বিদ্যমান হওয়ার জন্য এমন একটি সুরত বা গঠন প্রয়োজন, যার মাধ্যমে তিনি অস্তিত্বশীল হয়ে থাকেন।
[বয়ানু তা’লবিসিল জাহমিয়া, পৃ.৪৫৫]স্ক্রিনশট:
সৌদি মুফতী বোর্ডের ফতোয়া:
সালাফীরা শুধু আল্লাহ তায়ালার আকার আছে, একথা বলেই ক্ষ্যান্ত হয় না। বরং তাদের মতে আল্লাহর আকার হলো মানুষের মতো। এর স্বপক্ষে তারা দলিল দিয়ে থাকে, আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন এই হাদীস দ্বারা। তাদের মতে আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর নিজের আকৃতি অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন। বরং তাদের নিকট আল্লাহর আকার ও মানুষের আকারের মাঝে একটি মা’নায়ে কুল্লী বা সামষ্টিক অর্থ রয়েছে। অর্থাৎ উভয়ের আকৃতি একই রকম। তবে এই মা’নায়ে কুল্লী বা সামষ্টিক অর্থ থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর আকৃতি মানুষের সাথে সাদৃশ্য রাখে না। অর্থাৎ আল্লাহর একটি গঠন বা আকৃতি রয়েছে যেটা মানুষের মতো। কিন্তু এই গঠন হুবহু মানুষের আকৃতির সাইজ, রং বা পরিমাপ এক নয়। তাদের নিকট আল্লাহর আকার ও মানুষের আকারের মাঝে গুণগত পার্থক্য বিদ্যমান কিন্তু সমষ্টিগতভাবে উভয় আকৃতি একই রকম। এই কথাটি সৌদি মুফতী বোর্ডের পক্ষ থেকে ফতোয়া দেয়া হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ) ফতোয়া নং-২৩৩১
স্ক্রিনশট:
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
“ইবনে উসাইমিনের মতে আল্লাহর গুণের সাথে মানুষের সাদৃশ্য রয়েছে। তার মতে আল্লাহর হাত ও মানুষের হাতের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। আল্লাহর চোখ ও মানুষের চোখের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। আল্লাহর চেহারার সাথে মানুষের চেহারার সাদৃশ্য রয়েছে। তবে আল্লাহর হাত হুবহু মানুষের হাতের মতো নয়।” অর্থাৎ ইবনে উসাইমিনের মতে আল্লাহর সাথে মানুষের সাদৃশ্য রয়েছে কিন্তু আল্লাহর হাত হুবহু মানুষের হাতের মতো নয়।
এই হুবহু জিনিসটা বোঝার জন্য ছোট্র একটি উদাহরণ দিচ্ছি,
আমরা জানি ত্রিভুজ কয়েক প্রকার। এর মধ্যে এক প্রকার ত্রিভুজ হলো, সমবাহু ত্রিভুজ। অর্থাৎ একটা ত্রিভুজকে অপর আরেকটি ত্রিভুজের কোণ ও বাহুর দিক থেকে সমান। একটাকে আরেকটা দিয়ে রিপ্লেস করা যায়। কিন্তু সমবাহু ত্রিভুজ ছাড়া অন্যান্ সব ত্রিভুজই একটা আরেকটার সাথে সাদৃশ্য রাখে। কিন্তু এগুলো তো একটা আরেকটা হুবহু একই রকম নয়।
সারকথা হলো, ইবনে উসাইমিনের মতো আল্লাহ তায়ালা ও মানুষের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে কিন্তু আল্লাহ ও মানুষ হুবহু এক নয়। আল্রাহর চেহারার সাথে মানুষের চেহারার সাদৃশ্য রয়েছে, কিন্তু আল্রাহ ও মানুষের চেহারা হুবহু এক নয়।
স্ক্রিনশট:
নোট:
আপনারা এতো দিন হয়তো সালাফীদের মৌখিক দাবী শুনে এসেছেন, আমরা আল্লাহ তায়ালাকে কিছুর সাথে সাদৃশ্য দেই না। আল্লাহর মতো কিছুই নয়। এগুলো তাদের ডাহা মিথ্যা দাবী। ইবনে উসাইমিন স্পষ্ট স্বীকার করেছে, আল্লাহর সাথে মানুষের সাদৃশ্য রয়েছে, কিন্তু আল্লাহ ও মানুষ হুবহু এক নয়। যেসব সালাফী এতো দিন মেকি দাবী করেছেন যে, আল্লাহর সাথে সাদৃশ্য নেই, আশা করি আপনাদের আকিদা ইবনে উসাইমিনের সাথে মিলিয়ে নিবেন। আল্লাহ পাক এধরনের কুফুরী আকিদা থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।
সালাফীদের শায়খ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ তুয়াইজারী একটি কিতাব লিখেছে। কিতাবের নাম, আকিদাতু আহলিল ইমান ফি খালকি আদম আলা সুরতির রহমান ( মু’মিনের বিশ্বাস: আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন)। সৌদি শায়খ ইবনে বাজ এই কিতাবের উপর একটি ভূমিকা লেখে দিয়েছে। কিতাবের ভূমিকায় ইবনে বাজ লিখেছে, আল্লাহ তায়ালার নিজ আকৃতিতে আদম আ. কে সৃষ্টি করেছেন এটি সালাফে সালেহীনের আকিদা। তিনি অন্যান্য আলেমদেরকে এটি বিশ্বাস করার আহ্বান জানিয়েছেন। হামুদ বিন আব্দুল্লাহ আত-তুয়াইজারী এ কিতাবটি একটি জঘন্য কিতাব। তার বক্তব্যগুলো স্পষ্ট মুজাসসিমাদের বক্তব্য। সে মূলত: দেহবাদী আকিদা প্রমাণের জন্য এই বই লিখেছে। এই তুয়াইজারী আল্লাহর আকৃতি প্রমাণের জন্য তাউরাত থেকে প্রমাণ দিয়েছে যে, আল্লাহর আকৃতি রয়েছে।
স্ক্রিনশট:
সালাফী আলেমদের বিরোধীতা:
সালাফী আলেমদের মাঝে শায়খ আলবানী আল্লাহর আকার বা আকৃতি অস্বীকার করেছেন। এছাড়াও ইবনে খোযাইমা তার কিতাবুত তাউহীদে আল্লাহর আকৃতি অস্বীকার করেছেন। আলবানী সাহেবের ছাত্র নাসীব রিফায়ীও আল্লাহর আকৃতি অস্বীকার করেছেন।
আলবানী সাহেবের বক্তব্য:
শায়খ আলবানী ইবনে বাজের ভূমিকা সমৃদ্ধ কিতাব “আকিদাতু আহলিল ইমান ফি খালকি আদম আলা সুরতির রহমান” ( মু’মিনের বিশ্বাস: আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন) কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি তুয়াইজারীর লেখা এই কিতাব সম্পর্কে সহীহু আদাবিল মুফরাদে লিখেছেন,
” তুয়াইজারী “আকিদাতু আহলিল ইমান ফি খালকি আদম আলা সুরতির রহমান” ( মু’মিনের বিশ্বাস: আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন) এই কিতাব লিখে সালাফী আকিদা ও রাসূল স. এর হাদীসের প্রতি নিকৃষ্ট কাজ করেছে।”
তুয়াইজারী সম্পর্কে শায়খ আলবানী বলেন, সে হাদীস নিয়ে কথা বলার যোগ্য নয় এবং আলেমদের বক্তব্য বিকৃত করে থাকে। অর্ধেক বক্তব্য উল্লেখ করে এবং অর্ধেক ছেড়ে দেয়।
[সহীহু আদাবিল মুফরাদ, ৩৭৫ পৃ.]এছাড়াও দেখুন, ফাতাওয়াশ শায়খ আলবানী ফিল মদিনাতি ওয়াল ইমারত, পৃ,১৬-১৭। মুখতাসারু সহীহিলি বোখারী, খ.২, পৃ.১৭৮।
আলবানী সাহেব আল্লাহর আকৃতি অস্বীকার করায় অন্যান্য সালাফী শায়খরা তার উপর বেশ চটেছেন। সালাফীদের দু’জন শায়খ স্পষ্ট আলবানীর সমালোচনা করেছে। এরা হলেন, শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আফিফী ও শায়খ আব্দুল্লাহ দাবিশ।
আব্দুর রাজ্জাক আফিফীর বক্তব্য:
“আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। এটিই সঠিক। যদিও আলবানী ও নাসীব রিফায়ী এর বিরোধীতা করেছে”
[ফাতাওয়া ও রসাইল, পৃ.১৬০,, খ.১]
স্ক্রিনশট:
আব্দুল্লাহ দাবিশ এর বক্তব্য:
শায়খ আব্দুল্লাহ দাবিশ আলবানী সম্পর্কে লিখেছে,
” আলবানীর মতটি আমি দেখেছি। এটি আহলে সুন্নতের বক্তব্যের বিরোধী এবং পথভ্রষ্ট জাহমিয়াদের বক্তব্যের অনুরুপ”
[দিফাউ আহলিস সুন্নাহ, পৃ.৫]স্ক্রিনশট:
যারা আল্লাহর আকার সাব্যস্ত করে তাদের সম্পর্কে ইমাম কুরতুবী রহ. এর বক্তব্য:
যারা আল্লাহর আকার সাব্যস্ত করেছে এবং আল্লাহর আকৃতিতে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে এধরনের বিশ্বাস রাখে, ইমাম কুরতুবী তাদেরকে মুশাববিহা বলেছেন। ইমাম কুরতুবী এধরনের আকিদা পোষণকারীদেরকে কাফের পর্যন্ত বলেছেন।
[আল-মুফহিম, খ.৬, পৃ.৫৯৮]
স্ক্রিনশট:
আরশ কি খালি হয়ে যায়?
তথাকথিত সালাফীরা আজব আজব আকিদা রাখে। এসব আকিদা কীভাবে তারা ইসলামী আকিদা হিসেবে প্রচার করে আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। এদের আকিদা হলো, আল্লাহ তায়ালা স্বশরীরে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। আল্লাহ তায়ালা যদি প্রথম আসমানে নেমে আসেন, তাহলে কি আরশ তখন খালি থাকে? আরশ খালি থাকে কি না, এটা নিয়ে তাদের মাঝে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে।
আসলে আরশ খালি থাকার প্রশ্ন তখনই দেখা দেয়, যখন কেউ বিশ্বাস করে যে, আল্রাহ তায়ালা আরশের মতো দৈঘ্য-প্রস্থের। তিনি আরশকে পরিপুর্ণ বেষ্টন করে আছেন। তিনি যখন নেমে আসেন, তখন আরশ আল্লাহ তায়ালা থেকে খালি হয়ে যায়। এরা শুধু আরশ খালি হওয়ার আকিদা নিয়ে কথা বলে না, আল্লাহ তায়ালা উঠেন, বসেন, দৌড়ান, নামেন ইত্যাদি আকিদাও রাখে।
প্রথম কথা হলো, সালাফীরা বলে, কোন সৃষ্টির মাঝে আল্লাহর প্রবেশের আকিদা কুফুরী। এই কুফুরী আকিদাকে হুলুল বলে। হুলুলের আকিদা কুফুরী এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। আমি বহুবার জিজ্ঞাসা করেছি, আপনারা আসলে আল্লাহ তায়ালাকে কোথায় বিশ্বাস করেন? আরশে না কি আসমানে? এরা দলিল দেয়ার সময় বলে,আল্লাহ আসমানে রয়েছেন। বিশ্বাসের সময় বলে, আল্লাহ আরশে বসে আছেন। আবার কিছুক্ষণ পরে বলে, আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন। সেদিন এক সালাফী আমাকে প্রশ্ন করলো, দেওবন্দীরা হুলুলের আকিদা রাখে। আমি বললাম, আস্তাগফিরুল্লাহ। হুলুলের আকিদা তো আপনারা রাখেন। তাকে বললাম, আসমান মাখলুক কি না? সে বলল, হ্যা, মাখলুক। আমি বললাম, আসমান যদি মাখলুক হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ তায়ালাকে কোন মাখলুকের মাঝে বিশ্বাস করাই তো হলো হুলুল? সে একেবারে লা জওয়াব। এদের কাছে বড় মাখলুকের মধ্যে আল্লাহ তায়ালাকে বিশ্বাস করলে হুলুল হয় না, কিন্তু ছোট মাখলুকের মধ্যে বিশ্বাস করলে হুলুল হয়।
দ্বিতীয় কথা হলো, সালাফীদের আকিদা হলো, আল্লাহ তায়ালা আরশে বসে আছেন। আবার তারা এটাও বিশ্বাস করে যে, শেষ রাতে আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসেন। আমরা জানি, পৃথিবীর কোথাও না কোথাও চব্বিশ ঘন্টার প্রত্যেকটি মুহূর্তে শেষ রাত থাকে। অর্থাৎ ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সব সময় কোথাও না কোথাও শেষ রাত থাকবে। এবার মূল প্রশ্ন হলো, আল্লাহ তায়ালা সব সময় প্রথম আসমানে থাকেন, না কি আরশেও থাকেন? শেষ রাত হিসেবে সব সময় প্রথম আসমানে থাকার কথা। আবার আপনাদের বক্তব্য অনুযায়ী,আল্লাহ তায়ালা আরশে বসে আছেন। সালাফী আলেমরা ত্রিমুখী সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা যখন আসমানে নেমে আসেন, তখন কি আরশ খালি থাকে?
১. আসমানে নেমে আসার আকিদাটি স্পষ্ট হলো হুলুল। অথচ তাদের নিকট হুলুলের আকিদা কুফুরী।
২. আল্লাহ তায়ালা শেষ রাথে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। অথচ পৃথিবীর কোথাও না কোথাও চব্বিশ ঘন্টার প্রতিটি মুহূর্তে শেষ রাত থাকে। তাহলে কি আল্লাহ তায়ালা প্রতি মুহূর্তে প্রথম আসমানে নেমে আসেন?
৩. আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসার পর কি আরশ খালি থাকে?
৪.আল্লাহ তায়ালা যদি প্রথম আসমানে নেমে আসেন, তাহলে আল্লাহ তায়ালা যে উপরে রয়েছেন, একথা বলা সঠিক হয় না। কারণ আল্লাহর উপরেও অন্যান্য আসমান বা আরশ থাকে। সুতরাং উলু বা উপরে থাকার ব্যাপারটি আর সঠিক থাকে না।
এরা হয়তো বলবে, আল্লাহ তায়ালা তার শান অনুযায়ী প্রথম আসমানে নেমে আসেন। সুতরাং এটি হলুল হবে না বা কুফুরী হবে না। তাহলে যারা আল্লাহ তায়ালাকে সর্বত্র বিরাজমান মনে করে, তারাও একই উত্তর দিবে। আল্লাহ তায়ালা তার শান অনুযায়ী সর্বত্র বিরাজমান। তার শান অনুযায়ী প্রথম আসমানে নেমে আসাটা যদি সহীহ আকিদা হয়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার শান অনুযায়ী সর্বত্র বিরাজমান এটাও সহীহ আকিদা হওয়ার কথা। এই দুই আকিদার মধ্যে সামান্যতম কোন পার্থক্য নেই। অথচ এই সালাফীরাই আবার দ্বিতীয় আকিদাকে কুফুরী সাব্যস্ত করে। এধরনের হাস্যকর দ্বিমুখী আচরণ তারা কেন করে আল্লাহ পাকই ভালো জানেন।
যাই হোক, আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয়, আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে এলে আরশ কি খালি থাকে? ইবনে তাইমিয়া এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ইবনে তাইমিয়ার মত আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে এলেও আরশ খালি হয় না। একই বিশ্বাসের কথা বলেছে শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী। এ বিষয়ে সালাফী আলেমদের মাঝে মতবিরোধ হয়েছে। আমরা তাদের মতবিরোধ উল্লেখ করছি।
মুফতী ইব্রাহীম আলুশ শায়খের বক্তব্য:
সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতী ইব্রাহিম আলুশ শায়খের মতে আল্লাহ তায়ালার জন্য এজাতীয় শব্দ ব্যবহার অনুচিৎ। আরশ খালি হয় কি না, এটা নিয়ে আলোচনা করাই ঠিক নয়। তার মতে, আল্লাহ তায়ালা তার শান অনুযায়ী নেমে আসেন এটা বলা উচিৎ।
[ফতোয়া ও রসাইল, পৃ.২১২]
স্ক্রিনশট:
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
ইবনে উসাইমিন লিখেছে,
” আল্লাহর আরশে ইস্তাওয়া হলো একটি কাজ। এটি আল্লাহর সত্ত্বাগত কোন গুণ নয়। আমার মতে, আমাদের এই অধিকার নেই যে, আমরা আরশ খালি হয় কি না, এবিষয়ে আলোচনা করবো। বরং আমরা এ বিষয়ে চুপ থাকবো, যেমন সাহাবায়ে কেরাম চুপ ছিলেন।”
[শরহুল আকিদাতিল ওয়াসিতিয়া, খ.২, পৃ.১৬]
স্ক্রিনশট:
ইবনে জিবরীনের বক্তব্য:
শায়খ ইবনে জিবরীন বলেন,
” এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করতে বাধ্য নই। এ বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজনও নেই।”
[আত-তা’লীকাতুয যাকিয়্যা, খ.২, পৃ.১১]স্ক্রিনশট:
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আফিফীর বক্তব্য:
সালাফী শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আফিফী বলেন,
” এ ব্যাপারে সঠিক বক্তব্য হলো, কোন মতামত ব্যক্ত না করা। আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহ আরশে আছেন। আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহ অবতরণ করেন। আমরা বলবো না, আরশ খালি হয়ে যায় অথবা আরশ খালি হয় না। কেননা, এ আলোচনা আল্লাহর কাইফিয়াত সম্পর্কে আলোচনার অন্তর্ভূক্ত”
[ফতোয়া ও রসাইল, খ.১,পৃ.১৬৩]স্ক্রিনশট:
ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য:
ইবনে তাইমিয়ার মতে আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে এলেও আরশ থেকে তিনি খালি থাকেন না বা আরশ তার থেকে খালি থাকে না।
[মাজমুয়াতুল ফাতাওয়া, খ.৫, পৃ.২১৯]
স্ক্রিনশট:
শায়খ আলবানীর বক্তব্য:
শায়খ আলবানী ইবনে তাইমিয়ার অনুরুপ মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে এলেও আরশ থেকে খালি হন না।
[মাউসুয়াতুল আলবানী, খ.২, পৃ.৬৮৮]
স্ক্রিনশট:
Alhamdulillah