প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শায়েখ আমার।
কেউ যদি স্ত্রীর সাথে মজা করতে করতে বা এমনি গসাগসি করার সময় যদি ভুলে ভিতরে ডুকে যায় কি করবে.?
শায়েখ মনে শান্তি পাচ্ছিনা। কিছুই ভালো লাগছেনা। এমন একটা কাজ কিভাবে হয়ে গেলো। মালিক আল্লহ ক্ষমা করবেন কিনা.? একটু যেন মনে শান্তি পাই।
অতিতের অপরাধের ভয়ে অস্থির তার উপর এমন একটা কাজ হয়ে গেছে।
শায়েখ আমার আমাকে একটু শান্ত করুন। যদি আত্যহত্যা মহাপাপ না হয় তো নিজেকে ওই শাস্থিটাই দিতাম।
হযরত আমাকে একটু বুজিয়ে বলুন। আমি এমন কাজ কিভাবে করলাম। শয়তান তো বন্ধি এখন আমি কার দোষ দিবো। আমি জানি ডুকে যেতে পারে এরপরও এটা কেন করলাম।
আমার প্রশ্ন আমাকে বাচান শায়েখ। আমি কি করতে হবে। তওবাতো করছি কিন্তু মালিক ক্ষমা করছেন কিনা সেটাই জানার দরকার?
শায়েখ যেন আমার পরিচয় কেউ না জানে।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইচ্ছেকৃত স্ত্রীর পায়ূপথে সঙ্গম করা জায়েজ নেই। মারাত্মক গোনাহের কাজ।
এমন ঘৃণ্য কাজ করে ফেললে তার জন্য তওবা করা আবশ্যক।
কিন্তু অনিচ্ছায় হলে গোনাহ হবে না।
যেহেতু আপনি অনিচ্ছায় এমনটি করেছেন, আশা করি এতে গোনাহ হবে না।
আর যদি গোনাহ হয়েও থাকে, আপনি যেহেতু অনুতপ্ত হয়েছেন, আর ভবিষ্যতে না করার দৃঢ় সংকল্প করেছেন এর দ্বারা তওবাও সম্পন্ন হয়ে গেছে।
আর তওবা দ্বারা এমনভাবে গোনাহ মাফ হয়ে যায়, যেন তওবাকারী উক্ত গোনাহ করেই নাই। তাই পেরেশান হবার কিছু নেই।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَلْعُونٌ مَنْ أَتَى امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَا
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে গুহ্যদ্বারে সঙ্গম করে সে অভিশপ্ত। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-২১৬২]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ أَتَى كَاهِنًا قَالَ مُوسَى فِي حَدِيثِهِ فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ ثُمَّ اتَّفَقَا أَوْ أَتَى امْرَأَةً قَالَ مُسَدَّدٌ: امْرَأَتَهُ حَائِضًا أَوْ أَتَى امْرَأَةً قَالَ مُسَدَّدٌ: امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَا فَقَدْ بَرِئَ مِمَّا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট যায়; রাবী মূসা বলেনঃ আর সে ব্যক্তি তার কথায় বিশ্বাস করে; অথবা সে তাঁর স্ত্রীর নিকট গমন করে। রাবী মুসাদ্দাদ (রহঃ) বলেনঃ অথবা সে তার স্ত্রীর পশ্চাদদ্বারে সংগম করে; সে যেন আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর নাযিলকৃত দীন হতে মুক্ত (অর্থাৎ গুমরাহ) হলো। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-৩৯০৪, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৩৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৩৯]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَا يَنْظُرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى رَجُلٍ جَامَعَ امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَا
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে, আল্লাহ্ তার দিকে (দয়ার- দৃষ্টিতে) তাকান না। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৯২৩]
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। {সূরা নিসা-১৭ }
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ [٢٠:٨٢
আর যে তওবা করে,ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে,আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। [সূরা ত্বহা-৮২]
إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا [٢٥:٧٠]
কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা ফুরকান-৭০] হযরত উবাদা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ
গোনাহ থেকে তওবাকারী এমন,যেন সে গোনাহ করেইনি। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০] হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
فَإِنَّ العَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ، تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ
বান্দা গোনাহ স্বীকার করে মাফ চাইলে আল্লাহ পাক তা কবুল করেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪১৪১]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
ইমেইল– [email protected]