প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / মাকামে মাহমূদ বলতে কী বুঝায়?

মাকামে মাহমূদ বলতে কী বুঝায়?

প্রশ্ন

বাংলাদেশের এক প্রসিদ্ধ বক্তা তার বয়ানে বলেন:

“কিয়ামতের দিন আল্লাহর রাসূল যেদিন উঠবে কবর থেইকা। আমি লিখি নাই। আবু লাইস সমরকন্দী রহঃ এই হাদীস লম্বা লেখছেন। আমি শর্ট করতেছি। শর্ট।  মাঝে মাঝে উলামা আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করে আপনি কোত্থেকে বলেন? কিতাবের নাম বইলা দিলাম মুতালাআ করে নিতে পারেন। মুসান্নিফের নাম বললাম। কিতাবের নাম না। ওনার সব কিতাব পড়লে পাইয়া যাবেন। সবডি পড়তে অইবো। আমি অনেক কষ্ট কইরা বাইর করছিতো। এইজন্য আপনি বিনা পয়সায় এহানে বইয়া পাম দিয়া লইয়া লইবেন  অইবো না। এইজন্য মুসান্নিফের নাম বইলা দিলাম।

আবু লাইস সমরকন্দী রহঃ লেখছেন। আল্লাহ তাআলা হুকুম দিবেন জিবরীল আলাইহিস সালামকে: ائت محمد، ائت حبيبى مقام المحمود،  আমার বন্ধুকে মাকামে মাহমূদে নিয়ে আসো। তে ওনি আসবে আর রওযায়ে আতহারে পড় মারবে। আর বলবে: قم يا حبيب الرحمن আল্লাহর বন্ধু উঠেন।

তারপরেরটা শুনেন। যদি দিল থাকে। এইখানে দেমাগ থাকে। এইখানে দিল থাকে। তো আল্লাহর রাসূল উঠবে। وهو يقوم ويبكى ويقول উঠবে। চোখে পানি থাকবে মুখে চিৎকার থাকবে। চিৎকার দিবে! জিবরীল! اين امتى কিয়ামতের মাঠতো খালি আমার উম্মত কোথায়? ডাইনে খালি, বামে খালি, সামনে খালি, পিছে খালি। উম্মত কোথায়? জিবরীল শান্ত্বনা দিবে। ما شق الارض احد الا انت আপনি ব্যাতীত জমিনের উপর এখনো পর্যন্ত জমিনের উপরে কাউকে উঠানো হয়নি। সর্বপ্রথম আপনাকে উঠানো হইছে। মাকামে মাহমুদ আপনাকে দিয়ে সাজানো হবে। এইজন্য উঠানো হইছে। আপনি শান্ত হোন। উম্মত উঠেন নাই। কুরআন ও হাদীসের আলোকে উক্ত হাদীসের বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

মাওলানার উক্ত বয়ানে কয়েকটি পয়েন্ট আগে বুঝুন।

একথা সঠিক যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম উঠবেন।

কিন্তু মাওলানা যেভাবে এর বিবরণ দিয়েছেন তাহলো:

মাওলানা দাবী অনুপাতে তার বয়ানে বলা বিবরণ হুবহু আবুল লাইস সমরকন্দী রহঃ এর কিতাবে আছে।

আল্লাহ তাআলা বলবেন: ائت محمد، ائت حبيبى مقام المحمود،  আমার বন্ধুকে মাকামে মাহমূদে নিয়ে আসো।

وهو يقوم ويبكى ويقول উঠবে। চোখে পানি থাকবে মুখে চিৎকার থাকবে। চিৎকার দিবে! জিবরীল! اين امتى কিয়ামতের মাঠতো খালি আমার উম্মত কোথায়?

উপরোক্ত তিনটি বিষয়ই বানোয়াট ও মনগড়া।

আরবীসহ পুরোটাই মাওলানা নিজে বানিয়ে আবুল লাইস সরমকন্দী রহঃ এর নামে চালিয়ে দিয়েছেন।

আবুল লাইস সরমকন্দী রহঃ তার কিতাব ‘তাম্বীহুল গাফেলীন বিআহাদিসী সাইয়্যিদিল আম্বিয়াই ওয়াল মুরসালীন গ্রন্থে ‘বাবু আহওয়ালিল কিয়ামাহ’ অধ্যায়ে এ বিষয়ে বর্ণনা এনেছেন:

وَفِي خَبَرٍ آخَرَ أَنَّ اللَّهَ تَعَالَى إِذَا أَحْيَا جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ، فَيَنْزِلُونَ إِلَى قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهُمُ الْبُرَاقُ وَحُلَلٌ مِنَ الْجَنَّةِ فَتَنْشَقُّ عَنْهُ الْأَرْضُ فَيَنْظُرُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى جِبْرِيلَ فَيَقُولُ: «يَا جِبْرِيلُ مَا هَذَا الْيَوْمُ» ؟ فَيَقُولُ هَذَا يَوْمُ الْقِيَامَةِ، هَذَا يَوْمُ الْحَاقَّةِ، هَذَا يَوْمُ الْقَارِعَةِ، فَيَقُولُ: «يَا جِبْرِيلُ مَا فَعَلَ اللَّهُ بِأُمَّتِي» فَيَقُولُ جِبْرِيلُ أَبْشِرْ فَإِنَّكَ أَوَّلُ مَنْ ‌تَنْشَقُّ عَنْهُ الْأَرْضُ

অন্য বর্ণনায় আছে। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা যখন জিবরীল, মিকাঈল ও ইসরাফীল আলাইহিস সালামকে জিবীত করবেন। তারা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে উপস্থিত হবে। তাদের সাথে  থাকবে বুরাক এবং জান্নাতী পোশাক। তারপর জমিন বিদীর্ণ করা হবে। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলবেন: হে জিবরীল! এটি কোন দিন? তখন জিবরীল বলবেন: এটি কিয়ামতের দিন। এটি দুর্যোগের দিন। মহাপ্রলয়ের দিন। তিনি বললেন: হে জিবরীল: আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের সাথে কী আচরণ করেছেন? জিবরীল বলবেন: সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা, আপনিই প্রথম ব্যক্তি যার জন্য জমিনকে বিদীর্ণ করা হয়েছে। [তাম্বীহুল গাফেলীন, আবুল লাইস সমরকন্দীকৃত-৬০, বর্ণনা নং-৪৬]

মোটাদাগে উপরোক্ত বয়ানের গোমরাহীসমূহ!

নিজের বানানো শব্দগুলোকে হাদীস নামে চালানো।

আবুল লাইস সমরকন্দী রহঃ এর কিতাবে যা নেই, তা আবুল লাইস সমরকন্দী রহঃ এর নামে চালানো।

মুহাক্কিক তাফসীরবীদগণের মতে মাকামে মাহমূদ কোন স্থানের নাম নয়। বরং এটি শাফাআতে কুবরার নাম।

অথচ মাওলানা তার বয়ানে মনগড়াভাবে ‘মাকামে মাহমূদ’ কে এমনভাবে উপস্থাপন করছেন যেন এটা একটি স্থান। ‘মাকামে মাহমূদে নিয়ে আসো” মাকামে মাহমূদ আপনাকে দিয়ে সাজানো হবে’ বলে তিনি পরিস্কারভাবেই মাকামে মাহমূদকে একটি স্থান হিসেবে বর্ণনা করছেন। যা ভুল ও গোমরাহী।

মাওলানার এক বয়ানের ক্লিপে এতো বেশি গোমরাহী ও বানোয়াটি কথা বড্ড আশ্চর্যজনক।

এমন ব্যক্তি কিভাবে এতোটা দৃঢ়তার সাথে হাদীসের নামে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে বয়ান করে বেড়াচ্ছেন তা সত্যিই আশ্চর্যজনক।

আল্লাহ তাআলা এমন গোমরাহী থেকে উম্মতকে হেফাজত করুন। আমীন।

 و قوله عسى أن يبعثك ربك مقامًا محمودًا أي افعل هذا الذي أمرتك به لنقيمك يوم القيامة مقامًا محمودًا، يحمدك في الخلائق كلهم وخالقهم تبارك وتعالى. قال ابن جرير: قال أكثر أهل التأويل: ذلك هو المقام الذي يقومه محمد صلى الله عليه وسلم يوم القيامة للشفاعة للناس ليريحهم ربهم من عظيم ما هم فيه من شدة ذلك اليوم (تفسير ابن كثير-5/94)

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ভয়েস মেসেজে কবুল রেকর্ড করে দিলে তা স্বাক্ষিদের শুনালে কি বিবাহ হয়ে যায়?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। দয়া করে আমার এই মেইল এর উত্তর দিন। এইটুকু অনুগ্রহ করুন।  আপনাদের …