প্রচ্ছদ / ইসলামী আইন/শরয়ী শাস্তিবিধান / ইসলামী শরীয়ত বিষয়ে কবি হাসান মাহমুদের অজ্ঞতা ও ধৃষ্টতা (পর্ব-৩) প্রসঙ্গ নারী নেতৃত্ব

ইসলামী শরীয়ত বিষয়ে কবি হাসান মাহমুদের অজ্ঞতা ও ধৃষ্টতা (পর্ব-৩) প্রসঙ্গ নারী নেতৃত্ব

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

আগের লেখাটি পড়তে ক্লিক করুন

হাসান মাহমুদ লিখেন:

সমস্ত সহি হাদিসে নারী-নেত্রীত্বের বিরুদ্ধে নাম-ধাম সহ সুস্পষ্ট হাদিস আছে মাত্র একটি, মাত্র একজন সাহাবীর বলা। [শারিয়া কি বলে-১৮]

উত্তর

এটি হাসান মাহমুদ সাহেবের হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে বলা। এ সংক্রান্ত একাধিক হাদীস আছে। যেমন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا كَانَ أُمَرَاؤُكُمْ خِيَارَكُمْ، وَأَغْنِيَاؤُكُمْ سُمَحَاءَكُمْ، وَأُمُورُكُمْ شُورَى بَيْنَكُمْ فَظَهْرُ الأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ بَطْنِهَا، وَإِذَا كَانَ أُمَرَاؤُكُمْ شِرَارَكُمْ وَأَغْنِيَاؤُكُمْ بُخَلاَءَكُمْ، وَأُمُورُكُمْ إِلَى نِسَائِكُمْ فَبَطْنُ الأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ ظَهْرِهَا

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন তোমাদের নেতারা তোমাদের মাঝের বদলোক হয়। আর তোমাদের ধনীরা হয় কৃপণ, আর তোমাদের কর্মকর্তা হয় মহিলা। তাহলে জমিনের পেট তার পিঠের তুলনায় তোমাদের জন্য উত্তম। [অর্থাৎ মৃত্যু তোমাদের জন্য উত্তম জমিনের উপরে বেঁচে থাকার চেয়ে।] {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২২৬৬, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৯৫২৯}

عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، قَالَ: لَقَدْ نَفَعَنِي اللَّهُ بِكَلِمَةٍ سَمِعْتُهَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيَّامَ الجَمَلِ، بَعْدَ مَا كِدْتُ أَنْ أَلْحَقَ بِأَصْحَابِ الجَمَلِ فَأُقَاتِلَ مَعَهُمْ، قَالَ: لَمَّا بَلَغَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ أَهْلَ فَارِسَ، قَدْ مَلَّكُوا عَلَيْهِمْ بِنْتَ كِسْرَى، قَالَ: «لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا أَمْرَهُمُ امْرَأَةً

আবূ বাকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রুত একটি বাণীর দ্বারা আল্লাহ জঙ্গে জামালের (উষ্ট্রের যুদ্ধ) দিন আমার মহা উপকার করেছেন, যে সময় আমি সাহাবায়ে কিরামের সঙ্গে মিলিত হয়ে জামাল যুদ্ধে শারীক হতে প্রায় প্রস্তুত হয়েছিলাম। আবূ বাকরাহ (রাঃ) বলেন, সে বাণীটি হল, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ খবর পৌঁছল যে, পারস্যবাসী কিসরা কন্যাকে তাদের বাদশাহ মনোনীত করেছেন, তখন তিনি বললেন, সে জাতি কক্ষণো সফল হবে না স্ত্রীলোক যাদের প্রধান হয়। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৪২৫, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২২৬২]

২- আবূ বাকরা রাঃ প্রসঙ্গে

“সে জাতি সফলকাম হয় না, যাদের প্রধান হল নারী” হাদীসটি অস্বিকারে হাসান মাহমূদ সাহেব লিখেন:

“ইসলামের ইতিহাসে বেশির ভাগ লোক এ-হাদিস বিশ্বাস করেনি। আইয়ুবের বিরুদ্ধে নির্বাচনে ফাতিমা জিন্নার সমর্থক মওলানা মওদুদিও বিশ্বাস করেনি। কেন ?

কারণটা তাঁরা হয়ত জানতেন, এ-হাদিস জাল-হাদিস।

মাত্র তিনটি সূত্র দিচ্ছি,আরও বহু জায়গায় পেয়ে যাবেন।

সূত্র ১। আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিবার অপরাধে আবু বাকরাকে শাস্তি দেওয়া হইয়াছিল (“দ্য ফরগট্ন কুইন্স্ অব্ ইসলাম” − বিখ্যাত ইসলামি বিশেষজ্ঞ ফাতিমা মার্নিসি)।

সূত্র ২। এই হাদিসের অসত্যতা সুপ্রমাণিত শুধু ইতিহাসেই নয়, বরং ইহাও সত্য যে আবু বাকরা সম্বন্ধে মুসলমানের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে যে মিথ্যা সাক্ষ্য দিবার অপরাধে তাহাকে জনসমক্ষে শাস্তি দেয়া হইয়াছিল। − উইমেন’স রাইট ইন ইসলাম − শরীফ চৌধুরী।

সূত্র ৩। ইহার বর্ণনাকারী আবু বাকরাকে নারী-ব্যাভিচারের মিথ্যা সাক্ষ্য দিবার অপরাধে হজরত ওমর শাস্তি দিয়াছিলেন। − উইমেন অ্যাণ্ড পলিটিক্স ইন্ ইসলাম − www.submission.org/women/politics.html

এইবার কোরাণ শরীফ খুলে সুরা ২৪-এর আয়াত ৪ দেখে নিন − “যাহারা সতীসাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর স্ব-পক্ষে চারজন পুরুষ-সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাহাদিগকে আশিটি বেত্রাঘাত করিবে এবং কখনও তাহাদের সাক্ষ্য কবুল করিবে না। ইহারাই না-ফরমান।”

এই না-ফারমান আবু বাকরা’র কথাতেই হানাফি-শাফি-মালিকি-হাম্বলি শারিয়া আইনে নারী-নেত্রীত্ব সরাসরি নিষেধ করা আছে। সময়ের সাথে সাথে সবাই উন্নতি করে।

কিন্তু শারিয়ার বিবর্তন হচ্ছে শামুকের গতিতে। [শারিয়া কি বলে-১৯]

উত্তর

এই স্থানে এসে হাসান মাহমুদ সাহেব তার সীমা অতিক্রম করেছেন।

তিনি একজন মহান সাহাবী সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। আবূ বাকরা রাঃ নাফরমান? নাউজুবিল্লাহ।

বুখারীতে বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসকে জাল হাদীস বলে মন্তব্য করলেন।

আবূ বাকরাহ রাঃ মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছেন মর্মে অভিযোগ করেছেন।

আসলে হাকীকত কী?

ইমাম নববী লিখেছেন:

আবূ বাকরা রাঃ এর নাম হল, নাফী’ বিন হারেছ।

তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ১৩২ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আটটি হাদীস বুখারী ও মুসলিমে সমভাবে আসছে। আর এককভাবে বুখারীতে ৫টি এবং মুসলিম ১টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

তিনি মুত্তাকীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত অধিক ইবাদতগুজার ছিলেন। তার সন্তানরাও বসরায় ইলম, সম্পদ এবং আভিজাত্যে অনন্য ছিলেন।

হাসান বসরী রহঃ বলেন, সাহাবীদের মাঝে বসরায় ইমরান বিন হাসীন এবং আবূ বাকরা রাঃ এর চেয়ে উত্তম কেউ ছিল না। আবূ বাকরা রাঃ জামাল যুদ্ধে পিছু হটে যান। তিনি কারো পক্ষেই যুদ্ধ করেননি। তিনি বসরায় ৫১ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। কারো মতে ৫৩ হিজরীতে। [তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত-২/১৯৮]

এমন একজন মহান সাহাবীকে নাফরমান বলা চূড়ান্ত পর্যায়ের ধৃষ্টতা ছাড়া আর কী?

আবূ বাকরাহ রাঃ এর আদালত নেই?

যিনার অভিযোগ এনে হদ্দে কযফ লাগলেই তার থেকে আদালত সাকিত হওয়া ও তার বর্ণনা ও হাদীস বাতিল হয়ে যায় না। বরং যিনার অভিযোগে হদ্দে কযফ দুই ধরণের হয়। যথা-

ক)

যদি হদ্দে কযফ লাগানো হয় কেবল মিথ্যা ও অপবাদের কারণে। যার কোন ভিত্তি নেই। অহেতুক কাউকে অপমান ও অসম্মান করার জন্য তার বিরুদ্ধে মিথ্যা যিনার অপবাদ দেয়া হয়, তাহলে এর মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তি হদ্দে কযফকৃত ব্যক্তির আদালত সাকিত হয়ে যায়। তার সাক্ষ্য আর গ্রহণযোগ্য হয় না। তার কোন বর্ণনাও গ্রহণযোগ্য হয় না। তার মিথ্যুক হবার কারণে।

খ)

আরেকটি হল মিথ্যা বলার কারণে নয়, বরং সাক্ষীর সংখ্যা পূর্ণ না হবার কারণে। এক্ষেত্রে হদ্দে কযফটি মিথ্যুক হবার কারণে লাগানো হচ্ছে না, বরং সাক্ষীর সীমা পরিপূর্ণতা না পাবার কারণে তাদের উপর হদ্দ লাগানো হয়।

কারণ, যিনার হদ্দ কায়েমের জন্য ৪ জন ব্যক্তির সাক্ষী জরুরী। এক্ষেত্রে যদি দুইজন ব্যক্তি দেখে এবং সাক্ষী দেয়। কিন্তু ৪জন পূর্ণ না হবার কারণে তারা সত্যবাদী হবার পরও তাদের উপর হদ্দে কযফ লাগানো হবে। অথচ তারা সত্যবাদী।

শায়েখ মুহাম্মদ আমীন শানকিতী রহঃ বলেন,

أن أبطال الرواية بالحد في القذف تفصيلا فان كان المحدود شاهداً عند الحاكم بأن فلاناً زني وحد لعدم كمال الأربعة فهذا لا ترد به روايته لأنه إنما حد لعدم كمال نصاب الشهادة في الزنى وذلك ليس من فعله وان كان القذف ليس بصيغة الشهادة كقوله لعفيف: يا زاني ويا عاهر ونحو ذلك بطلت روايته حتى يتوب أي ويصلح بدليل قوله تعالى: ((ولا تقبلوا لهم شهادة أبداً وأولئك هو الفاسقون الا الذين تابوا من بعد ذلك وأصلحوا)) الآية…… والحاصل أن القذف بالشتم ترد شهادته وروايته بلا خلاف حتى يتوب ويصلح والمحدود في الشهادة لعدم كمال النصاب تقبل روايته دون شهادته وقيل تقبل شهادته وروايته

হদ্দে কযফের মাধ্যমে কারো বর্ণনা বাতিল হবার ক্ষেত্রে বিস্তারিত কথা হল,

বিচারকের কাছে যিনার সাক্ষ্য দেয় যে, ওমুক ব্যক্তি যিনা করেছে। তখন ঐ সাক্ষীকে নেসাব তথা চারজন সাক্ষী পূর্ণ না হবার কারণে যদি হদ্দ লাগানো হয়, তাহলে এমন ব্যক্তির বর্ণনা বাতিল করা হবে না। কেননা, হদ্দটি লাগানো হয়েছে যিনার সাক্ষ্যর নেসাব পূর্ণ না হবার কারণে। আর এটা তার কোন দোষ নয়। আর যদি হদ্দে

আর যদি কযফটি সাক্ষ্য এর কারণে নয়। বরং কাউকে বলল, হে যিনাকারীণী, হে পতিতা! ইত্যাদি। তাহলে যতক্ষণ না সে তওবা করবে, এবং ভালো হয়ে যাবে ততক্ষণ তার বর্ণনা গ্রহণ করা হবে না।

وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ [٢٤:٤]

যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই না’ফারমান।

إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِن بَعْدِ ذَٰلِكَ وَأَصْلَحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٢٤:٥]

কিন্তু যারা এরপর তওবা করে এবং সংশোধিত হয়, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান। [সূরা নূর-৪-৫]

মোটকথা হল, হদ্দে কযফ যদি শুধুমাত্র অপবাদ ও তোহমতের কারণে লাগানো হয়, তাহলে তার সাক্ষ্য এবং রেওয়ায়েত বাতিল। এতে কোন মতভেদ নেই। যতক্ষণ না সে তওবা করে।

আর যদি সাক্ষ্যর কমতির কারণে হদ্দে কযফ লাগানো হয়, তাহলে তার রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য যদিও সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ কেউ বলেন তার রেওয়ায়েত ও সাক্ষ্য দু’টিই গ্রহণযোগ্য। [মুজকিরা ফী উসূলিল ফিক্বহ-১৯৪-১৯৫]

সুতরাং বুঝা গেল যে, আবূ বাকরাহ রাঃ এর উপর যে হদ্দে কযফ লাগানো হয়েছে সেটি অপবাদের কারণে নয়। বরং সাক্ষ্যর নেসাব পূর্ণ না হবার কারণে তাই তার রেওয়ায়েত বাতিল হবার প্রশ্নই আসে না।

এছাড়া আরেকটি বিষয়। হাসান মাহমুদ সাহেব এখানে একটি প্রতারণা আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি হদ্দে কযফপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না মর্মে সূরা নূরের ৪ নং আয়াতের রেফারেন্স দিয়েছেন।

কিন্তু সত্য গোপন করে তিনি পরের আয়াতটি কেন উল্লেখ করলেন না?

পরের আয়াতে আসছে যে,

إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِن بَعْدِ ذَٰلِكَ وَأَصْلَحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٢٤:٥]

কিন্তু যারা এরপর তওবা করে এবং সংশোধিত হয়, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান। [সূরা নূর-৫]

এর মানে হদ্দে কযফ লাগানোর পর যদি তারা তওবা করে, তাহলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে।

আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, ইমাম নববী রহঃ লিখেছেন যে, হাসান বসরী রহঃ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি অনেক ইবাদতগুজার ছিলেন। বসরার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। এর মানে তিনি যদি অপরাধ করেও থাকেন, তিনি তওবা করেছেন। তাহলেতো হাসান মাহমুদের দেয়া সূরার আয়াত অনুযায়ীই হযরত আবূ বাকরাহ রাঃ এ বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়।

কিন্তু হাসান সাহেব ৪ নং আয়াতের অনুবাদ উপস্থাপন করলেন কিন্তু ৫ নাম্বার আয়াত কেন গোপন করলেন?

এটা কি একজন সাহাবীর উপর অপবাদ আরোপ করার জন্য নয়?

ইসলামী রাষ্ট্র থাকলে এমন অপবাদের কারণে হাসান মাহমুদের উপরও হয়তো হদ্দে কযফ লাগানো হতো।

হযরত আয়শা রাঃ জঙ্গে জামালে মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন?

আসলে মূল কথা হল, তিনি পরামর্শক ছিলেন। বা সহযোগী ছিলেন। মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন হযরত যুবায়ের রাঃ এবং হযরত তালহা রাঃ। সুতরাং এ যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে নারী নেতৃত্ব বৈধতার কথা বলার কোন সুযোগ নেই।

নারী নেতৃত্ব অস্বিকার কুরআর বিরোধী?

হাসান মাহমুদ লিখেন:

খোদ কোরাণের নির্দেশটাই দেখি না কেন আমরা। পড়ে দেখুন সুরা নামল আয়াত ২৩ “আমি এক নারীকে সাবা-বাসীদের উপর রাজত্ব করতে দেখেছি।”

সেই রাজত্ব করা রাণী যখন ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হল তখন ? তখন কোরাণ কি বলেছে তাকে সিংহাসন থেকে তাড়িয়ে দেয়া হল ? মোটেই নয়, মোটেই নয়, পড়ে দেখুন আয়াত ৪৪।

তাহলে ? দেখলেন ইসলামের নামে নারী-বিরোধী পুরুষতন্ত্রের কোরাণ-বিরোধী ষড়যন্ত্র ?

কিন্তু সব ষড়যন্ত্রই দুর্বল হতে বাধ্য, ভেঙে চুরমার হতে বাধ্য যদি প্রতিরোধ করা যায়। [শারিয়া কি বলে-১৯]

উত্তর

কুরআন কিন্তু একথাও বলেনি যে, তাকে আপন সিংহাসনে বহাল রাখা হয়েছে। তাকে এমন একটি অস্পষ্ট বিষয় নিয়ে এতোটা উচ্ছসিত হবার কিছু নেই।

আর ইতোপূর্বের উম্মতের কোন ঘটনা এ উম্মতের জন্য কেবলি শিক্ষণীয় হতে পারে, কিন্তু এ উম্মতের শরীয়তের কোন দলীল হতে পারে না। যদি তা এ উম্মতের কোন বিধানের উল্টো হয়। যদি উল্টো না হয়, তাহলে গ্রহণ করা হতে পারে।

কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট নির্দেশনার পর এহেন ধারণা করার কোন সুযোগই নেই যে, নারীকে বাদশা বানানো হবে।

আর দ্বিতীয়তঃ কুরআনে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে:

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ ۚ [٤:٣٤]

পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। [সূরা নিসা-৩৪]

হাসান মাহমুদ সাহেব যদি এতোই কুরআন বিশ্বাস করেন, তাহলে তিনি কোন সূরা নিসা এর ৩৪ নং আয়াতটি এড়িয়ে গেলেন। এখাতো নারীদের উপর পুরুষের কর্তৃত্বের কথা স্পষ্টই বলা হয়েছে।

যদি নারী মৌলিক নেতা বা বাদশা হবার শরয়ী অনুমোদন থাকতো, তাহলে কোন নবী কেন নারী হয়নি? ইমাম কেন নারীকে বানানো হয় না?

আর এ আয়াততো  স্পষ্ট শব্দেই নারীদের মূল নেতা হবার বিরোধীতা করছে।

এছাড়া নেতা হতে হলে তার অধীনত ব্যক্তিদের সামনে মাঝে ভাষণ দিতে হবে। অথচ পর্দার বিধান অনেক কঠোরতার সাথে পালন করতে শরীয়তে নির্দেশনা আসছে।

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ ۚ ذَٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ ۚ [٣٣:٥٣]

তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। [সূরা আহযাব-৫৩]

সুতরাং কুরআন বিরোধী আপনি নিজে করে কুরআন মান্যকারীদের বলছেন যে, কুরআন বিরোধী ষড়যন্ত্রী?

আপনিতো সাথে সাথে মারাত্মক একটা প্রতারণাও করলেন। সেটা হল, সূরা নামলের ৪৪ আয়াতের নির্দেশ করে কি প্রমাণ করতে চাইলেন? এখানে কি বিলকিসের বাদশাহী বহাল রাখার কথা আসছে?

এমন কথাতো এ আয়াতে নেই। এখানেতো শুধু বিলকিসের ঈমান আনার কথা উদ্ধৃত হয়েছে।

তাহলে কুরআন বিরোধী ষড়যন্ত্রতো আপনিই করছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

শুধুমাত্র প্রধান নেতা হতে ইসলাম নারীদের বিরোধীতা করলেও সহযোগী হতে কখনোই বিরোধী নয়।

এর মাধ্যমে নারীকে কখনোই ছোট করা ও অপমান করা মাকসাদ নয়।

কারণ, নারীর যাবতীয় খরচ পুরুষের দায়িত্বে অর্পণ করেছে। যা সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে স্পষ্টই বলে দেয়া হয়েছে।

এর মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

পুরুষ বাইরে তার দায়িত্বে পালন করেন। আর নারী ঘরের দায়িত্ব পালন করেন।

যদি উভয়ে একই দায়িত্ব পালনে রত হয়ে যায়, তাহলে বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে। যেমনটি ইউরোপ আমেরিকায় এবং বাংলাদেশেও যারা স্বামী স্ত্রী উভয়েই চাকুরী করেন, তাদের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়।

অনেকগুলো সমস্যার মাঝে রয়েছে:

১- সন্তান প্রতিপালন যথার্থভাবে করা যায় না। ফলে সন্তান বখাটে বা উচ্ছৃংখল হবার সম্ভাবনা থাকে।

২-নারীদের পিরিয়ডসহ গর্ভকালীন সময়কালে তার যে কষ্ট হয়, তা বাহিরে কাজ করার দ্বারা আরো বৃদ্ধি পায়।

৩- এটা সম্পূর্ণরূপে অন্যায় ছাড়া কিছু নয় যে, পুরুষ নারীর কোন দায়িত্বই পালন করতে পারে না, কিন্তু তার নিজের দায়িত্ব নারীর উপর চাপিয়ে দেয়। যেমন সন্তান ধারণ, প্রসব, প্রতিপালন, রান্নাবান্না ইত্যাদি।

কিন্তু কামাই করা, উপার্জন করা ইত্যাদি মূলত পুরুষের দায়িত্ব। কিন্তু নারীকে বোকা বানিয়ে পুরুষের সেই দায়িত্ব নারীর উপর চাপিয়ে নিজের দায়িত্ব হালকা করে নারীকে ডাবল কষ্টের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর নাম সমঅধিকার নয়, বরং সমঅধিকারের নামে জুলুম ও নিপিড়ণ।

আমেরিকায় বিবাহ ব্যবস্থাপনার ভঙ্গুর দশা শুধুমাত্র এই কারণে যে, এসব স্থানে সম অধিকারের নামে নারীকে যখন তার নিজ দায়িত্ব পালনের যায়গা বাড়ি থেকে বের করে রাস্তায় নামানো হয়েছে, তখন আর সংসার আর পরিবার থাকেনি, হয়ে গেছে জাহান্নাম।

এ কারণেই ইসলাম নারীকে তার কর্মক্ষেত্র এবং পুরুষের কর্মক্ষেত্র আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে। যা যুক্তিসঙ্গত। যা শারিরীক গঠন ও শক্তি সামর্থ অনুপাতে যথার্থ ও প্রাকৃতিক। এটাকে অস্বিকার করা মানে বাস্তবতা অস্বিকার করা।

৪র্থ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

0Shares

আরও জানুন

নফল আদায়কারীর পিছনে কি ফরজ আদায়কারীর ইক্তিদা সহীহ হয়?

প্রশ্ন হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ নাকি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ইশার নামায পড়তেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *