প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / যেভাবে পালিয়েছেন কথিত আহলে হাদীস শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ [শেষ পর্ব]

যেভাবে পালিয়েছেন কথিত আহলে হাদীস শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ [শেষ পর্ব]

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

৩য় পর্বটি পড়ে নিন

আশা করি আমার প্রশ্ন দু’টি সচেতন পাঠকগণ বুঝতে পারছেন। আমার দু’টি প্রশ্ন ছিল শায়েখকে লক্ষ্য করে। যথা-

সহীহ শব্দটি একটি পারিভাষিক শব্দ। মুহাদ্দিসীনদের মাঝে এই সহীহ শব্দের সংজ্ঞা নিয়ে বিস্তর মতভেদ আছে। কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণ করতে গেলে কার সহীহ এর সংজ্ঞা মেনে সহীহ হাদীস অনুসরণ করতে হবে? এ ব্যাপারে কুরআন ও সহীহ হাদীসে কোন ব্যক্তি বিশেষের সহীহ এর সংজ্ঞা অনুসরণের নির্দেশ আছে কি?

জারাহ তাদীলের গ্রন্থে একই ব্যক্তির ক্ষেত্রে একাধিক বক্তব্য রয়েছে। যে কাউকে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার দিয়ে সাধারণ মানুষকেও মনমত সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার দিয়ে বিরাট ধর্মীয় বিভক্তির দিকে আহবান করছি কি না?
আমার প্রশ্নের ওজন শায়েখ বুঝে গেছেন। প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জান ছাড়ানোর জন্য আমাকে বলেনঃ “আপনি যে কথাগুলো বললেন, এর ফলাফল কি আমি বলবো না আপনি বলবেন?”
আমি বললাম- জি না, আপনিই বলেন। দু’টি পয়েন্টের ফলাফলই চাই”।
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক সাহেব বলতে লাগলেনঃ “যদি এটাই হয়, তাহলেতো কোন বিশুদ্ধ কথা বলার প্রয়োজন থাকে না। তাহলে যার নাম হাদীস সেটাই মানতে হবে।”
আমি বললাম- “এটার একটা সমাধান আছে? এর একটি সমাধানে আসা উচিত।”
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাকঃ “সমাধানতো, সমাধানতো ঐটাই। তদন্ত করে দেখা যাবে যে, বেশিরভাগই এটা বলছে। আর নইলে আমি একজন আলেম মানুষ শর্ত ছাড়াই তদন্ত করি। তদন্ত আমার ঠিকও হতে পারে ভুলও হতে পারে। তদন্তে যেটা পৌঁছিবেন সেটি বলবেন। এইডাই বলতে হবে।”
আমিঃ আর এই পয়েন্টটাই আপনাকে বললাম। সবাই যদি তদন্ত করে সঠিক ভুল তদন্তের অনুসারী হয়ে যায়, তাহলেতো পুরো দ্বীনটাই বিভক্ত হয়ে…..।”
আমার কথা শেষ করার আগেই মাঝখান থেকে কথা বলে উঠলেন শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক সাহেবঃ “তদন্তের পয়েন্টে যদি আপনার আপত্তি থাকে, তাহলেতো আপনি বলতে চাচ্ছেন যে, সহীহ জঈফ বলে কোন তদন্তের হিসাব করতে হবে না।”
আমি- “আমি একথা বলিনি। আমি বলতে চাচ্ছি, আমি যদি সবাইকে বলি, আমিও তদন্ত করবো, তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার তিনিও তদন্ত করবেন।”
আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে মাঝখান থেকে কথা বলতে চাচ্ছিলেন শায়েখ। তখন আমি হযরতকে বলিঃ “আমি বিষয়টি আগে পরিস্কার করে বলি……..”।
আমার কথা শেষ করতে দিলেন না শায়েখ। কথা কেড়ে নিয়ে বলতে লাগলেন- “এইভাবে বলিয়েন না। আপনি বলেন যে, হাদীস তদন্তের জন্য সহীহ জঈফের বিষয়টি ভাবার প্রয়োজন আছে কি না?”
আমি- “অবশ্যই আছে। থাকবে না কেন? না থাকার প্রশ্নই উঠে না।”
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাকঃ “আপনি যখন সহীহ জঈফ ভাববেন। তখনতো আপনি একটি পর্যায়ে পৌঁছিবেন।”
আমি- “অবশ্যই। তবে সেটির একটি বাইন্ডিং আছে………..”। কথা শেষ করতে না দিয়ে বলতে লাগলেন শায়েখ আব্দুর রাজ্জাকঃ “তো যখন আপনি সহীহ এর পর্যায়ে পৌঁছিবেন তখন কি আপনি হাদীসটি মানবেন? নাকি তদন্তে যখন হাদীসটি জাল জঈফ হয়ে গেল তখন আপনি হাদীসটি মানবেন?”
খেয়াল করুন। এ প্রশ্নটি আমি পরিস্কার বুঝার পরও শায়েখকে বলেছিলাম “বুঝি নাই”। তাহলে কি আমি মিথ্যা বলেছিলাম? আসলে মিথ্যা বলিনি। সত্য কথাই বলেছি। তিনি যেভাবে এ প্রশ্নটি করেছেন, সেটিতে তিনি জাল ও জঈফ উভয় প্রকার হাদীসকে এক করে দিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন করেছেন তদন্তে জাল-জঈফ প্রমাণিত হলে মানবো কি না? একসাথে এর জবাব হতে পারে হাদীস অস্বিকারকারী ব্যক্তির কাছে। কিন্তু আমাদের মত যারা হাদীসকে অধিক শ্রদ্ধা করেন। রাসূল সাঃ থেকে কোন প্রকারে হাদীস প্রমাণিত হলেই তা মেনে রাসূল সাঃ এর সাচ্চা আশেক হতে চান। তারা এক বাক্যে এর জবাব দিতে পারবে না। তারা বলবেন, জাল হাদীস মানা যাবে না। কারণ এসব হাদীসই না। বরং রাসূল সাঃ এর নামে মিথ্যাচার। কিন্তু জঈফ হাদীস এগুলো হাদীস। বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে এগুলো কোন শক্তি রাখে না। অর্থাৎ জঈফ হাদীস দিয়ে কোন বিধান প্রমাণিত হয় না। কোন বিধান প্রমাণিত করা যায় না। কিন্তু ফযীলতের ক্ষেত্রে জঈফ হাদীস গ্রহণীয়। একথা জমহুর মুহাদ্দিসীনদের বলা যায় সকল মুহাদ্দিসীনদেরই মত। তাই হাদীস মান্যকারী ব্যক্তি “জাল জঈফ হলে মানবেন?” এই প্রশ্নের জবাব আসলে একসাথে দিতে পারবে না। তাকে ভাগ করে বলতে হবে। কিন্তু হাদীস অস্বিকারকারী হলে সে “হ্যাঁ, বা না” বলে এক বাক্যে জবাব দিতে পারে। এ কারণে জাল জঈফকে এক পাল্লায় নামানোর কারণে বিষয়টি বুঝতে পারিনি। হযরতকে বলি-“বুঝিনি”।
হযরত জবাবে বলেন- “আপনিতো সহীহ জঈফ তদন্ত করতে চাচ্ছেন।”
আমি- “হু”।
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক- “তো চাচ্ছেন যখন, তখনতো আপনি একটি ফলাফলকে সামনে রেখে যাচ্ছেন। নাকি?”
আমি- “ফলাফল! তদন্ততো আর ফলাফলকে সামনে রেখে করা হয় না। এটা ফলাফলে পৌঁছার জন্য তদন্ত করা হয়ে থাকে।
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাকঃ “তাহলে তদন্ত কেন করবেন আপনি?”
আমি- “ফলাফলে পৌঁছার জন্য। কোন কেইসে মানুষ তদন্ত কেন শুরু করে? ফলাফলকে সামনে রেখে না ফলাফলে পৌঁছার জন্য?”
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক- “আপনার তদন্তে যদি দেখেন হাদীসটি জাল, তাহলে আপনি কী করবেন?”
আমি- “অবশ্যই এটাকে বাদ দিয়ে দিব। এটা মানাতো অসম্ভব।”
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাকঃ “এটাই। আর আমরা এটাই বলছি।”
আমি- আমি যে পয়েন্টা বলেছি। সেটা হল, আমি যদি সবাইকে বলি। এইরকম জটিল, এসবই জটিল স্থানগুলোতে আমি যদি সবাইকে বলি, আপনি হাদীস তদন্ত করবেন। আপনি হাদীস তদন্ত করবেন। এখন আমার মেধা যেদিকে যাবে, সেটিই মানা কতটুকু…….”।
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক- “সবাই কি আর করতে পারবে? আর সবাই করতে গেলেও ভুল হবে”।
আমি- “তাহলে আমি যে স্লোগানটা দিচ্ছি “কুরআন ও সহীহ হাদীস হলে মানবো”। তারপর বলা হয় যে, ‘আপনি নিজেই হাদীস তদন্ত করুন…….।”
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক সাহেবঃ “এটা বলতে হবে এইজন্য যে, তাহলে ঐ মানুষটাও আমাকে বলতে শিখবে ‘দয়া করে হাদীসটি ঠিক কি বেঠিক আমাকে জানাবেন। আর যখন এই কথাটার ফাঁক রেখে দিব, তখন ওর, আমি বললাম, সাক্ষ্যি কি অকাট্য বুঝতে পারলো না। আমি বলে দিলাম- এটা হাদীস। তখন ও আমল করতে থাকলো। …… ওকেও জানার বুঝার একটি সুযোগ দিতে হবে। যে ও বলতে শিখুক আলেমদেরকে যে দয়া করে হাদীসটির ঠিক বেঠিক আমাকে জানাবেন।”

আমি- “আপনি কিন্তু আরেকটি পয়েন্ট বলেছেন। সেটি হল, “এটি সবার কাজ না” যদি এটি সবার কাজ না’ই হয়, এখন যার কাজ সে কাজটা করল। এখন যে ব্যক্তি জানবে….।
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক সাহেবঃ এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- “তোমরা না জানলে জ্ঞানীদের কাছ থেকে জেনে নাও”।
আমি- আমি এ পয়েন্টেই আসছি। এখন যে জানবে। আপনার কাছ থেকে জেনে আমল করলো। যেমন কথার কথা আমি। আমি একজন সাধারণ মানুষ। আপনার কাছ থেকে জেনে আমল করবো। তখন কিন্তু ঐ একটি বিষয়ই আসতেছে। সেটি হচ্ছে যে, আপনার কাছ থেকে দলীল জিজ্ঞাসা না করেই মানতেছি। এটা কিন্তু তাকলীদ হয়ে যাচ্ছে।”
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক সাহেবঃ “জি, ওটাই। দলীল মানে। তাকলীদ মানে যখন দলীল ছাড়া মানবে। আর ইত্তেবা যখন দলীলসহ মানবে”।

আমি- আমিতো দলীল বুঝিইনা। আমি একজন গ্রামের কৃষক। কথার কথা আমি একটা গ্রামের কৃষক। আমি আমার নিজের ভাষাই লিখতে পারি না। আমি নিজের ভাষা বুঝিও না। ”
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক সাহেব বুঝে গেছেন। তিনি ফেঁসে গেছেন। রাসূল সাঃ যে জমানাকে শ্রেষ্ঠ জমানা বলে ঘোষণা করেছেন। সেই জমানার ব্যক্তিত্ব। সারা দুনিয়ার মানুষ যাকে ইমামে আজম বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। যাকে কুরআনও সুন্নাহ সম্পর্কে প্রাজ্ঞ অভিজ্ঞ মুজতাহিদ বলে ঘোষণা করেছে সেই ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথা যদি কোন আম মুসলমান মানতে চায়, তাহলে তাকে পরামর্শ দেয় ওরা কথাটি তাহকীক করে নাও। হাদীস সহীহ কি না যাচাই করে নাও, কিন্তু নিজেরা যখন ফাতওয়া দেয়, তখন বলে আমি তাহকীক করেছি মেনে নাও।”
মানে আসল শত্রুতা হল ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথানুসারে মানুষ শরীয়ত মানবে কেন? কেন তাদের মত জাহেল ব্যক্তিদের কথায় মানুষ দ্বীন মানে না? এই হিংসায় কুরআন ও সহীহ হাদীসের নামে ফিক্বহ ও ফুক্বহাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে থাকে এই গায়রে মুকাল্লিদীন গ্রুপটি।
যাইহোক, এবার তিনি গায়রে মুকাল্লিদ মাযহাবের পুরানো কৌশলটি প্রয়োগ করলেন। সেটি হল বিপরীত মতের ব্যক্তিকে কথা বলার আর কোন সুযোগ না দেয়া। শায়েখ শুরু করলেন সেই মিশন।
ভিডিওতে আপনারা দৃশ্যটি অবলোকন করে নিন। তিনি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে একটি হাদীস বলতে থাকেন। তারপর আরেকটি শুরু করলেন। গ্রাম্য ব্যক্তি সম্পর্কে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল। তিনি এ হাদীসটি সূচনা করেছেন গ্রাম্য অশিক্ষিতরাও হাদীসের দলীল জিজ্ঞেস করবে একথার প্রমাণ দেয়ার জন্য। কিন্তু গ্রাম্য ব্যক্তির ঘটনা সম্বলিত এ হাদীসের কোথায় হযরতের এ দাবির দলীল নিহিত সেটি তিনিই জানেন। ভিডিও দেখলে আশা করি আমার মত আপনাদের ঠোটেও কিঞ্চিত হাসি এসে যেতে পারে। যাইহোক, সেই হাদীসটি শেষ করে বললেন- “এভাবে ওজু করেন, রাসূল সাঃ এভাবে ওজু করেছেন। এভাবে বলতে হবে।”
তারপরই শায়েখ আমার মুখ বন্ধ করে দিয়ে স্বস্তি পেতে চাইলেন। বললেন- “আপনার সাথে, আপনার আর জিজ্ঞাসার প্রয়োজন নেই এইজন্য, আপনি আমাকে জিজ্ঞাসার এক পর্যায়ে বললেন, সেটা হল এই। যে তদন্তের শেষ পর্যায়ে যদি জাল প্রমাণ হয়, তাহলে মানবো না। আর তদন্তের শেস পর্যায়ে যদি সহীহ প্রমাণ হয়, তাহলে মানবো। আমরা একথাটাই বলি।”
মুর্খ সাধারণ মানুষ বিজ্ঞ ব্যক্তি, যিনি নিজের ভাষা পড়তে এবং লিখতে জানে না, সে যখন আলেমকে জিজ্ঞাসা করে আমল করে, তখন সেতো তাকলীদই করে থাকে, এ প্রশ্নের জবাব না দিতে পেরে আব্দুর রাজ্জাক সাহেব যখন কথার মারপ্যাচে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। তখন শায়েখকে আবার বলি- “আমি আপনাকে যে পয়েন্টটা বলেছি। সেটা মনে হয় আপনাকে বুঝাতে পারিনি। সেটি হল, আমরা যদি সবাইকে একথাটি বলি। সাধারণকে মানুষকে এই পয়েন্টে যে পয়েন্টের লোকই না। যেমন কথার কথা সে একজন ইঞ্জিনিয়ার। সে হাদীসের সহীহ জঈফের ভিতরকার যে গভীরতা, সে যখন ওখানে পৌঁছবে। যেখানে মুহাদ্দিসীনে কেরামের মাঝে এত মতভেদ। যেখানে মূল “সহীহ” পরিভাষা নিয়েই মতভেদ। সেখানে……[আব্দুর রাজ্জাক সাহেব কথা বলে আমাকে থামিয়ে দিতে চাইলেন] হযরত! আমি একটু কথাটি শেষ করি! যেমন কথার কথা আমি একজনকে বললাম-আপনি বুখারী মানবেন। তাহলে সে যদি বলে-হুজুর আমাকে বলেছেন। তো আমি বুখারী মানবো। এখন বুখারীতেতো এরকম অসংখ্য হাদীস আছে যেগুলো মানা যাবে না। মানা একদম অসম্ভব। এখন আমি যদি বলে বুখারীতে আছে রাসূল সাঃ জুতা পায়ে দিয়ে নামায পড়েছেন। এটি বুখারীতেও আছে মুসলিমেও আছে। তারপর রফয়ে ইয়াদাইন করা। বুখারীতে হাদীস আছে। উভয়টিই রাসূল সাঃ এর আমল। নামাযে রফয়ে ইয়াদাইন করাও আমল, তারপর জুতা পায়ে দিয়ে নামায পড়াও আমল। এখন হুজুর বলেছেন রফয়ে ইয়াদাইন করা সুন্নত, রাসূলের আমল তাই। রাসূল সাঃ রফয়ে ইয়াদাইন করার আদেশ দেননি। যেমন জুতা পায়ে দিয়ে নামায পড়ার আদেশ দেন নাই। তাহলে দু’টি একই পর্যায়ের। ওটাও আমল এটাও আমল। ওখানেও আদেশ নাই এখানেও আদেশ নাই। তাহলে ওটা [রফয়ে ইয়াদাইন] সুন্নত হলে এটা [জুতা পা দিয়ে নামায পড়া] সুন্নত না কেন?

আমি একজন সাধারণ মানুষকে বুখারী দেখে আমল করতে বললাম। তার ব্রেইনে কি আসলো? জুতা পা দিয়ে নামায পড়া সুন্নত। যেমন রফয়ে ইয়াদাইন সুন্নত। উভয়টিই রাসূল সাঃ এর আমল। বুখারীতে এসেছে। মুসলিমেও আছে।
বুখারীতে আরো আমল আছে। যেমন রাসুল সাঃ নামাযে আসলেন। নামাযে আসার পর রাসূল সাঃ এর নাতি উমামা নামাযে থাকা অবস্থায় নাতি কাঁধে উঠল। রাসূল সাঃ তাকে কাঁধে নিয়েই নামায পড়লেন। এ বর্ণনা বুখারীতেও আসছে মুসলিমেও আসছে। এটা রাসুল সাঃ এর আমল নামাযরত অবস্থায়। এখন নাতি কাঁধে নিয়ে নামায পড়ার হুকুম কি? এখানে বলা যায়, যদি নামাযে নাতি কাঁধে উঠে যায়, তাহলে কাঁধে রেখেই নামায পড়া হবে। আরেকটি কথা হল, নামাযরত অবস্থায় সুনির্দিষ্টভাবে এ আমলটির হুকুম কি? এটি কি আমাদের জন্য সর্বদা করা আবশ্যক হবে? যেমন রফয়ে ইয়াদাইনের ক্ষেত্রে হাদীস আসছে। কিন্তু সর্বদা রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন কথাটি নেই। কোন হাদীসের কিতাবে একথা নেই যে, রাসুল সাঃ সর্বদা রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন। সর্বদা করেছেন কোথাও নেই। নাতি কাঁধে নামায পড়ার হুকুম কি হবে? এখানে সর্বদা করার কোন শব্দ নেই। দু’টিতো একই হয়ে যাচ্ছে। রফয়ে ইয়াদাইন করাও রাসূলের আমল। নাতি কাঁধে নামায পড়াও রাসূলের আমল।

বুখারীর আরেক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাঃ নামাযের দিকে রওনা দিয়েছেন। তারপর স্ত্রীকে চুম্বন করেছেন। বুখারীতেও এসেছে। মুসলিমেও এসেছে। এখন প্রশ্ন হল, নামাযের পূর্ব মুহুর্তে স্ত্রীকে চুম্বন করার হুকুম কি? বুখারীর এক হাদীসে এসেছে। ইমাম বুখারী নিজেই বলেছেন যে, উরু সতর না। আরেকটি বর্ণনা এসেছে জারহাদ থেকে। যা দ্বারা বুঝা যায় উরু সতর। কিন্তু এ হাদীসের সনদটা দুর্বল। একথা খোদ ইমাম বুখারীই তার বুখারীতে বলেছেন।
এখন প্রশ্ন হল, আপনি বলেছেন সহীহ হাদীস মানবো। বুখারীতে এসেছে যে, উরু সতর না হওয়াটি আসনাদ তথা সূত্রটি সহীহ ও খুবই শক্তিশালী। আর জারহাদের যে বর্ণনা আসছে সেটি দুর্বল। তাহলে এখন যারা উরু বের করে ফুটবল খেলে তারা সবাই হাদীসের উপর আমল করে?

আমি বলতে চাচ্ছি এইভাবে আমি যদি স্বাধীনতা দিয়ে দেই। যে কেউ কুরআন ও সহীহ হাদীস দেখে আমল শুরু করবে। তাহলে বিশাল জনগোষ্ঠি যারা একতার মধ্যে ছিল। একটি প্লাটফর্মে ছিল। হুজুররা কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক যে মাসআলা দিত তা মেনে আসছিল। তাকে কুরআন ও সহীহ হাদীস দেখে আমল করার স্বাধীনতা দিলে সেখানে সে শুধু বুখারী নিয়েই অসংখ্য দলে বিভক্ত হবে। এর জন্য আমি কসম করতেও রাজি আছি। যদি আমি স্বাধীনতা দিয়ে দেই যে, তুমি যেটিকে সহীহ দেখবে সেটিই মানবে। তাহলে খোদ বুখারীর অসংখ্য সহীহ নিয়ে দুই রাকাত নামায পড়া যাবে না। আমি বলবো জুতা পা দিয়ে নামায পড়া সুন্নত রাসূলের আমল। আরেকজন বলবে জুতা পা দিয়ে নামায পড়া ঠিক না। আরেকজন এসে বলবে নাতি কাঁধে নিয়ে নামায পড়া সুন্নত। রাসূলের আমল। রফয়ে ইয়াদাইন রাসূলের আমল নাতি কাঁধে নামায পড়া রাসূলের আমল। এরকমভাবে আমরা মানুষকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছি? আমিতো সবই বুখারীর উদাহরণ দিলাম। এখানেতো জঈফ হাদীসের কোন কথা নেই। আমি যা উদাহরণ দিলাম সবই বুখারীর বর্ণনা। এক্ষেত্রে আপনার বক্তব্যটি কি? আমরা মানুষকে আসলে একতার দিকে ডাকার আড়ালে মারাত্মক ধর্মীয় বিভক্তির দিকে ডাকছি কি না?”
কিছুটা দেরী করে খুবই ক্ষীণ স্বরে হযরত বলতে লাগলেন- “এই কথাকে এইভাবে পেশ করলেতো মানুষ সঠিক পথ পাবে না। তাহলে আল্লাহর রাসূলের দেয়া শরীয়তকে গোপন রাখা হয়ে গেল। বরং মানুষকে বলতে হবে-যে আপনারা সহীহ জেনে আমল করুন। না হলে আল্লাহর দরবারে আমল কবুল হবে না। তখন মানুষ বিভ্রান্তি পথে চলে, ভুল পথে চলে যাবে এ বিষয়টি আমার আপনার দেখা প্রয়োজন নাই। মানুষের সঠিকটা যখন মানার খেয়াল থাকবে তখন আল্লাহ তাআলা তার পথ সহজ করবেন। তখন তাকে বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যাবেন না। আর আপনার কথাগুলো এই বিভিন্ন জায়গা থেকে আপত্তি পেশ করে একটা পরিবেশকে খাটো করে দেয়া যেন মানুষ সহীহ জঈফ জানতে না চায়। সাধারণ মানুষ।”
আমি বললাম- “অসম্ভব কথা”।

শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক সাহেবঃ “যেমন আগের আলোচনাটার শেষ কথা যেটা আপনি বললেন। সেটা আমাদের সাথে মিলে গেল। এই কথাটাও মিলবে। যখন আপনি এইভাবে বলতে চাইবেন। যে মানুষ পরকালের আশায় কুরআন ও সহীহ হাদীস মানুক এবং সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করুক। তাহলে সবারই সহীহ হাদীস অনুযায়ী জানার অধিকার থাকবে। তদন্ত সবাই করবে কেন? তদন্ত যদি সবাই করবে, তাহলে আল্লাহ কেন বললেন যে, জানা মানুষের নিকট জান? জানা মানুষের কাছেও সরাসরি জানতে আল্লাহ বলবেন না। বললেন বাইয়্যিনাতি ওয়াজ জবুর। একথাই ঠিক দলীল প্রমাণ সহকারে জানতে বলবেন। যেহেতু প্রত্যেকটি মানুষ মুসলমান হিসেবে শরীয়তের কোন কথা মানতে হবে। জেনে মানতে হবে। একটা মুর্খ মানুষ। একটি গরু জবাই করবে কিভাবে? তার জানা নেই। তাহলে সে শুনে নিবে। বিসমিল্লাহ। আল্লাহর রাসূল বলেছেন বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে শরীয়তের প্রত্যেকটা কাজ জেনে করতে হবে। জান বিষয়টি যে আমি, তহনতো আর দলীল জানি না, তহন কার কাছে জানতে যাবো? তো আমি একজন জানা মানুষের কাছে জানতে যাবো যে, এখানে আমি গরু জবাই করতে চাচ্ছি, তো আমারতো জানা নাই। তো এটি কিভাবে করবো? তখন বলে দিবে বিসমিল্লাহ বলবে। …….। এইভাবে যখন আপনি মানুষের সামনে বলবেন, তখন মানুষ সবাই দলীলের উপর আমল করতে চেষ্টা করবে। তখন দেখা যাবে সমাজে যে ব্যক্তি ব্যক্তির মাযহাব আছে সেটা কমে যাবে। তখন সবাই দলীলের কাছে ফিরে আসবে। তখন আর বলবেন না, আব্দুর রাজ্জাক সাহেব বলেছিলেন এটাই ঠিক। মতিউর রহমান সাহেব বলেছেন এটাই চূড়ান্ত। ইমাম আবু হানীফা রহঃ বলেছেন এটাই চূড়ান্ত। তখন আর সে ভালবাসাটা থাকবে না। তখন ভালবাসাটা তার গড়ে দলীলের উপর দিয়ে। আর যখন দলীলে জিনিসটা থাকবে না। তখন মানুষ আর ব্যক্তি পূজার উপর থাকবে না। আপনার স্কুলের একটি শিক্ষক খুব ইংরেজী ভাল জানে। কিন্তু আমি বলছি জানে না। তখন আপনার রাগ হবে। কারণ আমি আপনার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কথা বললাম। যখনি মানুষকে কোন ব্যক্তির কাছে এমনিতেই ফেলে দিব। তখন সে আর বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে না। ভালবাসা থাকে। আর যখন দলীলের কাছে ফেলে দিব। তখন সে আর বিশ্বাসের অনুযায়ী কাজ করবে না, দলীল দিয়ে কাজ করবে। আর শরীয়ত মূলত দলীল দিয়ে কাজ করতে হবে একথা আল্লাহও বলেছেন আল্লাহর রাসূলও বলেছেন। আর এ কারণে আল্লাহর রাসূল আদর্শ। আর এ কারণেই বলছেন যে, আপনার মধ্যেই রয়েছে অনুসরণীয় আদর্শ। لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অতএব আপনার ঐ কথাটি এইভাবে মেনে নিতে হবে, যদি কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে যে, জুতা পা দিয়ে সালাত হবে কি? তখন আপনি বলবেন যে, হ্যা, জুতা যদি পবিত্র থাকে, তাতে যদি পেশাব পায়খানা লেগে না থাকে, তাহলে পড়বেন। দলীল আল্লাহর পড়েছেন।”
আমি বললাম- “হুকুমটা কি? এটার হুকুমটা কি? রাসূলতো করছেন। এখন তিনি যে আমলটা করলেন সে আমলের হুকুম কি?”
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক সাহেবঃ “রাসূল যে আমলটা করেছেন সে আমলটা সুন্নত।”
আমি- “তাহলেতো জুতা পা দিয়ে নামায পড়া সুন্নত হয়ে গেল!
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক সাহেব “খালি পায়েও পড়েছেন। খালি পায়ে পড়েন।”
আমি-একথাতো বুখারীতেও নাই মুসলিমেও নাই। খালি পায়ে নামায পড়ার কথা।
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক- জি?
আমি- জুতা খুলে নামায পড়ার কথা বুখারীতেও নাই, মুসলিমেও নাই।
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক- জুতা খুলার কথা হাদীসে এসেছে।
আমি- সেটা হচ্ছে ময়লা ছিল। নাপাক ছিল। তখন খুলেছেন। বাকি পরিহিত অবস্থায় নামায পড়েছেন একথা বুখারীতেও এসেছে মুসলিমে এসেছে। বাকি নামাযরত অবস্থায় ময়লা ছিল বলে খুলে ফেলেছেন। মানে কি? রাসূল সাঃ এর এটি আমল ছিল যে, জুতা পা দিয়ে নামায পড়তেন। কিন্তু ময়লা থাকায় একবার খুলে ফেলেন। তাহলে ময়লা না থাকলে জুতা পরিধান করে নামায পড়ার হুকুম কি হবে? সুন্নত ওয়াজিব কি হবে?”
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক- সুন্নত হবে। আমাদের পরিস্কার থাকে না, তাই পড়ি না।”
আমি- একটা হচ্ছে ওজর থাকা।…….. যেমন রফয়ে ইয়াদাইনের আমল রাসূল সাঃ করেছেন। এটার ক্ষেত্রে এটাকে আমরা যেভাবে এটিকে সামনে নিয়ে আসি। রাসূলের আমল বলে। রফয়ে ইয়াদাইন রাসূলে আমল ছিল বলে। তাহলে জুতা পরিধান করে নামায পড়া রাসূলের আমল হওয়া সত্বে আমরা এটিকে নিয়ে এমন কোন প্রচারণা করছি কি যে, জুতা পরিস্কার করে তা পরিহিত অবস্থায় নামাযে আসা উচিত?

এরপর যা বলেছেন শায়েখ তা না হয় আর লিখলাম না। কথা বলতে হবে তাই বলেছেন কথা। কি হালাত? তা পাঠকগণই নির্ণিত করে নিবেন আশা করি ভিডিওটি দেখে।
শুধু শেষের অংশের কথাটুকু বলছি। শায়েখ বক্তব্য দিলেন। তার আলোকে শায়েখকে আমি প্রশ্ন করলাম- “তাহলে হাটুর উপর কাপড় খুলে রাখলে তাকে তার সতর খুলে গেছে একথা বলা যাবে না?”
শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ – “না, সতর খুলে গেছে একথা বলা যাবে না।”
আমি- তাহলে ফুটবল খেলোয়ার সবই আহলে হাদীস তথা হাদীসের অনুসারী?

আলোচনার এ পর্যায়ে অনুষ্ঠানের ষ্টেজ পরিচালক সাহেব চলে এলেন। তিনি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলেন। যা কথাবার্তা হয়েছে তা দেখে নিন ভিডিওতে।
আবারো সবাই মিলে হযরতকে বুঝালেন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে। কিন্তু তিনি অনড়। কিছুতেই টকশোতে অংশ নিবেন না। তিনি টিভি টক করবেন। পাচটা হোক দশটা হোক টিভি করতে তিনি রাজি। কিন্তু টকশোতে প্রচন্ড অনিহা।
সবাই আব্দুর রাজ্জাক সাহেবকে টিভি টকে যা বলবেন তা’ই টকশোতে বলার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি প্রথমে বাথরুমে গেলেন। অবশেষে ফিরেই গেলেন।
তিনি চলে যাবার পর অনুষ্ঠান স্থলের সবাই বেশ ক্ষিপ্ত হন শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের এহেন আচরণে।
অবশেষে আমরা যখন শায়েখের পালানোর কথা সবাইকে জানিয়ে দেই। সেই সাথে তারই সামনে করা পালানোর প্রমাণ সম্বলিত ভিডিওগুলো নেটে আপলোড করে দেই। তখন তিনি এবং তার ছেলে মিলে যা করেছেন, তার কিঞ্চিত নিচে উদ্ধৃত করা হল।
প্রথমে আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের ছেলে তারই উদ্ধৃতি দিয়ে এক গাদা মিথ্যাচার নিয়ে স্টেটাস লিখলেন ফেইসবুকে।
অবশেষে মঞ্চে হাজির হলেন শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেব স্বয়ং।
১০ মিনিটের একটি ভিডিও আপলোড করলেন পিস টিভি এডুটেইনমেন্ট এর ব্যানারে। যার পোষ্ট মর্টেম দেখে নিনঃ-

 

শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফর সাহেবের ছেলের মাধ্যমে ছড়ানো অসত্য বক্তব্যের জবাব

শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেবের অসত্য বক্তব্যের জবাব ও প্রকাশ্য আলোচনার আহবান

আরও জানুন

অন্যের হক আমার কাঙ্ক্ষিত পথ রুদ্ধ করবে না তো?

মাওলানা মুহাম্মদ শাহাদাত হুসাইন নশ্বর এই পৃথীবিতে চলতে গেলে যেসকল বস্তুর আমরা মুখাপেক্ষী হই তন্মধ্যে …

No comments

  1. ভাই আপনার লেখা যত পড়ছি তত মুগ্ধ হচ্ছি। এই তিন/ চার দিন আগেও আপনাকে চিনতাম না আলহামদুলিল্লাহ এক ভাইয়ের একটি ভিডিও থেকে এ ওয়েব সাইটের সন্ধান পাই। ভাই একটা অনুরোধ কখনও নিজের স্বার্থে মিথ্যার আশ্রয় নিবেন না। আমরা সাধারন মুসলিম আমরা দ্বীন সম্পর্কে অনেক অজ্ঞ, আপনাদের মত আলেমদেরর কাছ থেকে সঠিকটা জানতে চাই। আল্লাহ আপনাকে নেক হায়াত দান করুন এই দুআ করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস