প্রচ্ছদ / কসম ও মান্নত / মান্নতকৃত কুরবানীর গোস্ত কি মান্নতকারী খেতে পারবে না?

মান্নতকৃত কুরবানীর গোস্ত কি মান্নতকারী খেতে পারবে না?

প্রশ্ন

সম্মানিত মুফতী সাহেব।

আসসালামু আলাইকুম।

এক ব্যক্তি মান্নত করল যে, যদি আমার ছেলেটি সুস্থ হয়ে যায়, তাহলে আমি একটি গরু কুরবানী দেব। আল্লাহর রহমাতে তার ছেলেটি সুস্থ্য হয়ে গেছে। এখন এবারের কুরবানীতে উক্ত ব্যক্তি একটি গরু কুরবানী দিতে চাচ্ছে।

বিষয়টি স্থানীয় ইমাম সাহেবকে জানালে ইমাম সাহেব বললেন যে, এটি মান্নত হয়ে গেছে। আর মান্নতের কুরবানীর গোস্ত যে মান্নত করে কুরবানী দিয়েছে, তার জন্য খাওয়া জায়েজ নয়। তাই পুরো গরুর গোস্তই গরীবদের মাঝে দান করে দিতে হবে।

আসলেই কি বিষয়টি তাই? এ বিষয়ে সম্মানিত মুফতী সাহেবের উত্তর জানতে চাচ্ছি। উত্তরটি দ্রুত দিলে ভাল হয়।

প্রশ্নকর্তা-নাম ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আসলে এ মাসআলাটি নিয়ে আমাদের অনেকেই ভুল করে থাকেন। সাধারণভাবে যেহেতু প্রসিদ্ধ যে, মান্নতের পশুর গোস্ত মান্নতকারী খেতে পারে না, তাই এর উপর কিয়াস করে ঢালাওভাবে বলা হয় যে, কুরবানীর জন্য মান্নত করলেও একই হুকুম হবে। অর্থাৎ এর গোস্তও মান্নত করে কুরবানীকারী ব্যক্তি খেতে পারবে না।

কিন্তু এটি গলদ কথা। এ বিষয়ে বিশুদ্ধ কথা হল, এটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ ব্যাপার। কুরবানীর জন্য মান্নতের দু’টি সুরত। যথা-

১) মান্নতটি করা দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল, স্বাভাবিক কুরবানী। অর্থাৎ তার উপর আবশ্যকীয় কুরবানিটি এ পশু দ্বারা আদায় করা। কুরবানী করে সেটির গোস্ত গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেবার উদ্দেশ্য ছিল না।

২) মান্নত দ্বারা হাকীকী মান্নত উদ্দেশ্য ছিল। তথা কুরবানী করে এর গোস্ত গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেয়া মাকসাদ ছিল।

যদি কুরবানীর মান্নত দ্বারা প্রথম সুরতটি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, অর্থাৎ স্বাভাবিক কুরবানী করার উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে উক্ত কুরবানীর গোস্ত মান্নতকারী কুরবানীদাতা খেতে পারবে। কারণ তা সাধারণ কুরবানীর মতই। শুধু এখানে নিজের উপর কোন ধরণের পশু কুরবানী করবে তা নির্দিষ্ট  করে থাকে। বা কুরবানী করার বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে।

আর যদি দ্বিতীয় সুরত হয়, অর্থাৎ হাকীকী মান্নত উদ্দেশ্য নেয়। মানে হল, কুরবানী করে এর গোস্ত গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেয়ার নিয়ত করে থাকে, তাহলে উপরোক্ত মান্নতের কুরবানীর গোস্ত মান্নতকারী খেতে পারবে না। বরং পুরো গোস্তই গরীবদের মাঝে দান করে দিতে হবে।

আর প্রশ্নকারী ভাই তার কুরবানীর মান্নত দ্বারা ঠিক কোন সুরতটি উদ্দেশ্য নিয়েছেন? এর উপর নির্ভরশীল গোস্ত খেতে পারবেন কি না?

أَنَّ الدِّمَاءَ أَنْوَاعٌ ثَلَاثَةٌ:.

نَوْعٌ يَجُوزُ لِصَاحِبِهِ أَنْ يَأْكُلَ مِنْهُ بِالْإِجْمَاعِ، وَنَوْعٌ لَا يَجُوزُ لَهُ أَنْ يَأْكُلَ مِنْهُ بِالْإِجْمَاعِ، وَنَوْعٌ اُخْتُلِفَ فِيهِ، الْأَوَّلُ دَمُ الْأُضْحِيَّةَ نَفْلًا كَانَ أَوْ وَاجِبًا مَنْذُورًا كَانَ أَوْ وَاجِبًا مُبْتَدَأً، وَالثَّانِي دَمُ الْإِحْصَارِ وَجَزَاءُ الصَّيْدِ وَدَمُ الْكَفَّارَةِ الْوَاجِبَةِ بِسَبَبِ الْجِنَايَةِ عَلَى الْإِحْرَامِ كَحَلْقِ الرَّأْسِ وَلُبْسِ الْمَخِيطِ وَالْجِمَاعِ بَعْدَ الْوُقُوفِ بِعَرَفَةَ وَغَيْرِ ذَلِكَ مِنْ الْجِنَايَاتِ، وَدَمُ النَّذْرِ بِالذَّبْحِ، وَالثَّالِثُ دَمُ الْمُتْعَةِ وَالْقِرَانِ، (بدائع الصنائع، فَصْلٌ فِي بَيَانُ مَا يُسْتَحَبُّ قَبْلَ التَّضْحِيَةِ وَبَعْدَهَا وَمَا يُكْرَهُ-5/80)

বিস্তারিত জানতে হলে দেখুন- [আহসানুল ফাতাওয়া-৭/৫২৫-৫২৮]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

 

0Shares

আরও জানুন

বিতর নামাযের পর নফল পড়লে কোন সওয়াব হবে না?

প্রশ্ন আস-সালামু আলাইকুম, মুহতারাম, একজন শায়েখ ভক্ত বলতেছেন, বিতরের পর নফল নামাজ আদায় করা যাবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *