প্রশ্ন
মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ হাবিব, ধামরাই, ঢাকা।
আসসালামু আলাইকুম।
কোন সামর্থবান ব্যক্তি মান্নত করল, যদি আমার গাভী ৪ বার প্রসব করে সুস্থ বাচ্চা হয়, তাহলে গাভীটি কোরবানী দিব। অথবা শুধু নিয়ত করল, ৪ বার প্রসব করলেই গাভীটি কোরবানী দিব। কিন্তু দেখা গেল, উভয় সুরতেই চার বার বাচ্চা প্রসব করার ৬ মাস পরে গাভীটি অন্ধ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় করণীয় কি?
গাভীর মালিক এ মুহুর্তে অন্ধ গাভী বিক্রি করে অন্যের সাথে ভাগে কোরবানী দিলে তা কতটুকু শরীয়ত সম্মত হবে?
উক্ত ব্যক্তি গরীব হলে করণীয় কী?
দ্রুত সমাধান দিলে উপকৃত হইবো।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
উক্ত মাসআলাটি বুঝতে হলে আলাদা আলাদাভাবে বুঝতে হবে। যেহেতু ধনী এবং গরীব উভয় অবস্থার উপরোক্ত পরিস্থিতির জবাব চাওয়া হয়েছে। তাই দু’টি আলাদা নাম্বার আকারে এর জবাব প্রদান করা হল।
১
লোকটি যদি গরীব হয়। অর্থাৎ তার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল না। এমতাবস্থায় উপরোক্ত মান্নত করার দ্বারা সুনির্দিষ্ট পশুটি কুরবানী করা তার উপর আবশ্যক হয়ে গেছে। এখন দোষ পাবার পরও উক্ত পশুটি কুরবানী করা তার উপর আবশ্যক। সেটি বিক্রি করা, বা এর বদলে অন্য কোন পশুতে শরীকানা কুরবানী দিলে মান্নত পূর্ণ হবে না। হুবহু উপরোক্ত পশুটিই কুরবানী দিতে হবে।
” ومن نذر نذرا مطلقا فعليه الوفاء ” لقوله عليه الصلاة والسلام: ” من نذر وسمى فعليه الوفاء بما سمى ” ” وإن علق النذر بشرط فوجد الشرط فعليه الوفاء بنفس النذر ” لإطلاق الحديث (الهداية، كتاب الايمان، فصل فى الكفارة-2/461)
এক্ষেত্রে উপরোক্ত মান্নতের দু’টি অবস্থা। যথা-
ক)
মান্নতটি করা দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল, স্বাভাবিক কুরবানী। কুরবানী করে সেটির গোস্ত গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেবার উদ্দেশ্য ছিল না।
খ)
মান্নত দ্বারা হাকীকী মান্নত উদ্দেশ্য ছিল। তথা কুরবানী করে এর গোস্ত গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেয়া মাকসাদ ছিল।
এ দুই সুরতের প্রথম সূরতে তথা স্বাভাবিক কুরবানী উদ্দেশ্য থাকলে এটার গোস্ত খাওয়া তার জন্য জায়েজ হবে।
আর যদি হাকীকী মান্নত উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে এর গোস্ত খাওয়া তার জন্য জায়েজ হবে না। [আহসানুল ফাতাওয়া-৭/৫২৫-৫২৮]
أَنَّ الدِّمَاءَ أَنْوَاعٌ ثَلَاثَةٌ:.
نَوْعٌ يَجُوزُ لِصَاحِبِهِ أَنْ يَأْكُلَ مِنْهُ بِالْإِجْمَاعِ، وَنَوْعٌ لَا يَجُوزُ لَهُ أَنْ يَأْكُلَ مِنْهُ بِالْإِجْمَاعِ، وَنَوْعٌ اُخْتُلِفَ فِيهِ، الْأَوَّلُ دَمُ الْأُضْحِيَّةَ نَفْلًا كَانَ أَوْ وَاجِبًا مَنْذُورًا كَانَ أَوْ وَاجِبًا مُبْتَدَأً، وَالثَّانِي دَمُ الْإِحْصَارِ وَجَزَاءُ الصَّيْدِ وَدَمُ الْكَفَّارَةِ الْوَاجِبَةِ بِسَبَبِ الْجِنَايَةِ عَلَى الْإِحْرَامِ كَحَلْقِ الرَّأْسِ وَلُبْسِ الْمَخِيطِ وَالْجِمَاعِ بَعْدَ الْوُقُوفِ بِعَرَفَةَ وَغَيْرِ ذَلِكَ مِنْ الْجِنَايَاتِ، وَدَمُ النَّذْرِ بِالذَّبْحِ، وَالثَّالِثُ دَمُ الْمُتْعَةِ وَالْقِرَانِ، (بدائع الصنائع، فَصْلٌ فِي بَيَانُ مَا يُسْتَحَبُّ قَبْلَ التَّضْحِيَةِ وَبَعْدَهَا وَمَا يُكْرَهُ-5/80)
২
আর যদি ব্যক্তি ধনী হয়, অর্থাৎ তার নিজের উপর কুরবানী করা আবশ্যক। তাহলেও তার দুই সুরত। যথা-
ক)
মান্নতটি করা দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল, স্বাভাবিক কুরবানী। অর্থাৎ তার উপর আবশ্যকীয় কুরবানিটি এ পশু দ্বারা আদায় করা। কুরবানী করে সেটির গোস্ত গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেবার উদ্দেশ্য ছিল না।
খ)
মান্নত দ্বারা হাকীকী মান্নত উদ্দেশ্য ছিল। তথা কুরবানী করে এর গোস্ত গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেয়া মাকসাদ ছিল।
যদি প্রথম সুরত হয়, অর্থাৎ নিজের উপর আবশ্যকীয় কুরবানী উক্ত পশু দিয়ে আদায় করা মাকসাদ হয়ে থাকে, তাহলে উপরোক্ত পশুটিতে কুরবানীযোগ্য হবার প্রতিবন্ধক বিষয় চলে আসার কারণে এর দ্বারা কুরবানী করা শুদ্ধ হবে না।
অন্য আরেকটি পশু ক্রয় করে, বা কারো সাথে শরীকানায় কুরবানী দেবার মাধ্যমে তার কুরবানী আদায় করতে হবে। উক্ত পশুটি বিক্রি করে তার মূল্য দিয়েও আরেক কুরবানী দিতে পারে।
وَلَوْ اشْتَرَى رَجُلٌ أُضْحِيَّةً وَهِيَ سَمِينَةٌ فَعَجَفَتْ عِنْدَهُ حَتَّى صَارَتْ بِحَيْثُ لَوْ اشْتَرَاهَا عَلَى هَذِهِ الْحَالَةِ لَمْ تُجْزِئْهُ إنْ كَانَ مُوسِرًا، وَإِنْ كَانَ مُعْسِرًا أَجْزَأَتْهُ إذْ لَا أُضْحِيَّةَ فِي ذِمَّتِهِ، فَإِنْ اشْتَرَاهَا لِلْأُضْحِيَّةِ فَقَدْ تَعَيَّنَتْ الشَّاةُ لِلْأُضْحِيَّةِ حَتَّى لَوْ كَانَ الْفَقِيرُ أَوْجَبَ عَلَى نَفْسِهِ أُضْحِيَّةً لَا تَجُوزُ هَذِهِ، وَلَوْ اشْتَرَى أُضْحِيَّةً وَهِيَ صَحِيحَةُ الْعَيْنِ، ثُمَّ اعْوَرَّتْ عِنْدَهُ وَهُوَ مُوسِرٌ أَوْ قُطِعَتْ أُذُنُهَا كُلُّهَا أَوْ أَلْيَتُهَا أَوْ ذَنَبُهَا أَوْ انْكَسَرَتْ رِجْلُهَا فَلَمْ تَسْتَطِعْ أَنْ تَمْشِيَ لَا تُجْزِي عَنْهُ، وَعَلَيْهِ مَكَانَهَا أُخْرَى بِخِلَافِ الْفَقِيرِ، (الفتاوى الهندية، كتاب الاضحية، الباب الخامس فى بيان محل اقامه الواجب-5/229، مجمع الانهر-4/173، تبيين الحقائق-6/7)
আর যদি এর মাধ্যমে হাকীকী মান্নত উদ্দেশ্য নিয়ে থাকে, অর্থাৎ এটিকে কুরবানী করে গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেবার নিয়তে মান্নত করে থাকে, তাহলে উক্ত ব্যক্তির উপর উক্ত পশুও কুরবানী দিতে হবে। সেই সাথে আরেকটি পশু কুরবানী বা শরীকানায় কুরবানী দিতে হবে। অর্থাৎ মান্নতকৃত পশু ছাড়াও তার আরেকটি কুরবানী দেয়া আবশ্যক।
إذَا أَطْلَقَ النَّذْرَ، وَلَمْ يُرِدْ بِهِ الْوَاجِبَ فِي ذِمَّتِهِ يَجِبُ عَلَيْهِ غَيْرُهُ مَعَهُ، وَإِنْ أَرَادَ بِهِ الْوَاجِبَ بِسَبَبِ الْغِنَى لَا يَلْزَمُهُ غَيْرُهُ (تبيين الحقائق، كتاب الضحية، ما يضحى به-6/479)
কিন্তু ধনী ব্যক্তিটির জন্য অন্ধ হয়ে যাওয়া উক্ত পশুটি কুরবানী করার পর এর গোস্ত গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেয়া আবশ্যক। এর গোস্ত তার জন্য খাওয়া জায়েজ নয়।
أَنَّ الدِّمَاءَ أَنْوَاعٌ ثَلَاثَةٌ:.
نَوْعٌ يَجُوزُ لِصَاحِبِهِ أَنْ يَأْكُلَ مِنْهُ بِالْإِجْمَاعِ، وَنَوْعٌ لَا يَجُوزُ لَهُ أَنْ يَأْكُلَ مِنْهُ بِالْإِجْمَاعِ، وَنَوْعٌ اُخْتُلِفَ فِيهِ، الْأَوَّلُ دَمُ الْأُضْحِيَّةَ نَفْلًا كَانَ أَوْ وَاجِبًا مَنْذُورًا كَانَ أَوْ وَاجِبًا مُبْتَدَأً، وَالثَّانِي دَمُ الْإِحْصَارِ وَجَزَاءُ الصَّيْدِ وَدَمُ الْكَفَّارَةِ الْوَاجِبَةِ بِسَبَبِ الْجِنَايَةِ عَلَى الْإِحْرَامِ كَحَلْقِ الرَّأْسِ وَلُبْسِ الْمَخِيطِ وَالْجِمَاعِ بَعْدَ الْوُقُوفِ بِعَرَفَةَ وَغَيْرِ ذَلِكَ مِنْ الْجِنَايَاتِ، وَدَمُ النَّذْرِ بِالذَّبْحِ، وَالثَّالِثُ دَمُ الْمُتْعَةِ وَالْقِرَانِ، (بدائع الصنائع، فَصْلٌ فِي بَيَانُ مَا يُسْتَحَبُّ قَبْلَ التَّضْحِيَةِ وَبَعْدَهَا وَمَا يُكْرَهُ-5/80
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]