প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / বাংলাদেশের উলামাগণের প্রতি লা-মাযহাবীদের ধৃষ্টতা!

বাংলাদেশের উলামাগণের প্রতি লা-মাযহাবীদের ধৃষ্টতা!

মুফতী রফীকুল ইসলাম মাদানী

এ অধ্যায়ের প্রারম্ভেই উল্লেখ করেছি যে, কটাক্ষ, কটুক্তি, অশালীন আচরণ, অশ্লীল ভাষ্য আর তিরস্কার  ও উস্কানীমূলক বক্তৃতা বিবৃতি এবং আজগুবি অপবাদ-অপপ্রচার হল লা-মাযহাবীদের নিকট প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অন্যতম হাতিয়ার। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বিশেষতঃ ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ও দেওবন্দী উলামায়ে কিরাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেয়া, হেয় প্রতিপন্ন করা এবং মুখনিঃসৃত বিভিন্ন অবান্তর-অমূলক উক্তি ও মতামত প্রচার করে জনসাধারণকে উলামায়ে কিরামের প্রতি বিরাগ-বিকর্ষণ সৃষ্টি করাই এদের মজ্জাগত অভ্যাসে রূপ নিয়েছে। এ প্রবণতায় তারা হানাফী মাযহাব ও উলামায়ে দেওবন্দের শীর্ষস্থানীয় কোন ধারক-বাহক, কর্ণধারকে যেমন ছাড়েনি, তাঁদের উত্তরসূরী হিসেবে বাংলাদেশের উলামায়ে কিরামদেরকেও তারা রেহাই দেয়নি। তাদের অসংখ্য বই-পুস্তক, পত্রিকা ও চ্যালেঞ্জ-বিবৃতিতে বর্তমানে বাংলাদেশী উলামায়ে কিরামকে বিশেষভাবে তাদের হিংসাত্মক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। উদাহরণস্বরূপ নিম্নে কয়েকটি তথ্য অতি সংক্ষেপে উপস্থাপন করছি-

(১)

বিগত ৬ই এপ্রিল ২০০১ইং তারিখে গাজীপুর জেলার অন্তর্গত ভাওয়াল মির্যাপুর পশ্চিম ডগরী, ম-ল পাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মাননীয় খতীব “মাওলানা ওবায়দুল হক্ব” সাহেব হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠত্ব, বৈশিষ্ট্য ও ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ে তাদের গৌরবোজ্জ্বল কৃতিত্ব, অপরিসীম অবদান এবং মাযহাব অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক, কুরআন-হাদীস, ইজমা, ক্বিয়াস ও বিশ্বশ্রেষ্ঠ প্রথিতযশা ইমামগণের সুদৃঢ় মতামতের ভিত্তিতে অপূর্ব তত্ত্বপূর্ণ ও অনন্য তথ্যবহুল জ্ঞানগর্ভ আলোচনা পেশ করেন। বিজ্ঞ মনীষীর এ আকর্ষণীয় আলোচনা জনতার হৃদয় কাড়ে, দ্বীপ্ত হয় উপস্থিত শ্রোতাম-লীর সুপ্ত প্রতিভা। আলোড়ন সৃষ্টি হয় অনুসন্ধিৎসু মুসলমানদের মনে। আর জাগ্রত হয় সমগ্র এলাকা।

কিন্তু হক্ব কথায় চুন-কালি লাগে লা-মাযহাবীদের মুখে। হক্ব গ্রহণে রায় দেয়নি তাদের অপহৃত অভিপ্রায়। কদাচারী বিবেক অধীর হয়ে উঠে প্রতি উত্তরের হীন প্রচেষ্টায়। রচনা করে জনৈক লা-মাযহাবী প্রতিশোধ অভিঘাতের বিষোদগার “পর্যালোচনা ও চ্যালেঞ্জ” শিরোনামে অনাচারী বইয়ের জগতে আরেক ঘৃণ্য সংযোজন। এ বইয়ে মাননীয় খতীব সাহেবের সারগর্ভ ভাষণকে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ আর জঘন্য অপব্যাখ্যার মাধ্যমে উপস্থাপন করতঃ তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন ও জনগণের হৃদয়ে তার প্রতিষ্ঠিত সুনাম ক্ষুণœ করার অপপ্রয়াস চরিতার্থ করেছে।

বইয়ের লিখক, আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম, অর্থায়নে সৌদি আরবের আল-জুবাইলে কর্মরত জনাব মুহাম্মদ তামীযুদ্দীন ও জনাব মুহাম্মদ শাহজাহান, প্রকাশনায় আমানাতুল ফুরকান। বিনামূল্যে বিতরণের জন্য।

এই বইয়ের ভূমিকায় লিখেছে-খতীব সাহেব জনসাধারণের প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়ে এ আলোচনা রাখেন এবং তার আলোচনা ছিল কুরআন-হাদীসের প্রতি বিরাগ ও বিকর্ষণ সৃষ্টিকারী , দলীল বিহীন ইত্যাদি।

৩য় পৃষ্ঠায় লিখেছে, তাক্বলীদপন্থীরা হাদীস অবলম্বন ছাড়া যা ইচ্ছা তা-ই বলে।

৬ষ্ট পৃষ্ঠায় লিখেছে, খতীব সাহেবের উক্ত বক্তব্য হাদীস অস্বীকারকারীদের কথারই সাদৃশ্য।

৭ম পৃষ্ঠায় ইসলামী বিষয়ে বিধর্মীদের কয়েকটি বইয়ের নাম উল্লেখ করত, লিখেছে- হয়ত এ কর্মের খবর (দু’চারজন ছাড়া) আমাদের দেশের মুফতী, মুহাদ্দিছ ও বড় বড় আলিমগণ জানেনও না। বাস্তবে হয়ত লেখক নিজেও এ বইগুলো দেখেনি। তাই  আমাদের বসুন্ধরায় এসে বইগুলো দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

১৩নং পৃষ্ঠায় লিখেছে, বল্গাহীনতা ও দলীল প্রমাণের বালাই না থাকার কারণে হানাফী মাযহাবের লোক সংখ্যা বেশী।”

১৯নং পৃষ্ঠায় লিখেছে তার বক্তব্য ছিল পক্ষপাতমূলক বিভ্রান্তিকর।

২২নং পৃষ্ঠায় লিখেছে, খতীব সাহেবের কথা অবান্তর ভাওতাবাজি।

এ ধরনের সমস্ত অবান্তর ও অশালীন অভিযোগের উত্তর ইতিপূর্বে আলোচিত অধ্যায়গুলোতে প্রদান করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে উল্লেখ্য যে, খতীব সাহেব কেন , নবী মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্তও বিভ্রান্ত মানব জাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাননি। তাঁর সহীহ দাওয়াত যাতে কেউ গ্রহণ না করে, সে জন্য তাঁর ব্যক্তিত্বকে কলুষিত করার উদ্দেশ্যে মুশরিকরা কখনো তাঁকে কবি বলেছে, কখনো বলেছে পাগল। কখনো বলেছে গণক ও জ্বিনের আছরাক্রান্ত। আবার কখনো মিথ্যাবাদী এবং যাদুকরও বলেছে। এ সব কাহিনীই আল্লাহপাক আল কুরআনে বর্ণনা করেছেন।

(২)

এ ধারায় বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত পত্রিকা, লাখ লাখ মুসলমানের প্রাণপ্রিয় সঞ্জীবনী “মাসিক মদীনা’র সম্পাদক প্রখ্যাত ধর্ম বিশেষজ্ঞ ও জননন্দিত সু-সাহিত্যিক মাও. মুহিউদ্দীন খান সাহেব, মাসিক মদীনায় একটি প্রশ্নোত্তর প্রকাশ করেন, প্রশ্নকারী লিখেন , বেশ কিছু দিন যাবৎ একজন বাংলাদেশী আহলে হাদীস পন্থী আলেম, মদীনা ভার্সিটি থেকে পাশ করে জামইয়াতু-ইহইয়াউত্তুরাছ আল ইসলামী, জাহরা শাখায় কুয়েতে চাকরীতে আছেন।এই সংস্থা থেকে প্রতি সপ্তায় ২/৩ দিন কোরআন-হাদীস থেকে আলোচনা হয়, বাংলাদেশে নাকি জাল হাদীসে ভরা। যে সমস্ত হাদীস গ্রন্থ পড়ানো হয় এবং অনুসরণ করা হয় তার সবই জাল, জইফ ও দুর্বল। বাংলাদেশে কোন সহীহ কোরআনের তাফসীর পড়ানো হয় না। এরা নাকি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর অনুসরণ বাদ দিয়ে আবু হানীফা (রহ.) এর অনুসরণ শুরু করেছেন….

প্রশ্নোত্তরে সম্পাদক সাহেব লিখেন,” মুশকিল কি, কুয়েত এমন একটি দেশ যেখানে ইসলামের কোন ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যাবে না।  সে দেশে নাম করার মত কোন ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। সে দেশের নাগরিকদের মধ্যে একজন যোগ্য আলেম, এমনকি দু’চার জন হাফেযও খুঁজে পাওয়া কঠিন। এমনি একটি দেশে সে দেশের মানুষের ধ্যান-ধারনা ভিত্তিক ধর্মীয় অহংকে(চাহিদাকে) তুষ্ট করার জন্য আমাদের উপমহাদেশের কিছু আলেমবেশী পেটুয়া লোক নানা দায়িত্বহীন বকওয়াছ করে; ওরা নিছক পেট পালার জন্যই দুষ্কর্মে লিপ্ত। আল্লাহর মেহেরবানীতে বাংলাদেশে কোরআন-হাদীসের যে বিশুদ্ধ চর্চা আছে, সেটুকু কুয়েতের ন্যায় একটি বালুচর কেন, সমগ্র আরব উপদ্বীপেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সুতরাং ওদের আলতু-ফালতু কথাবার্তায় কান দেয়ার কোনই প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। মাসিক মদীনা, আগস্ট -৯৯সংখ্যা ,প্রশ্ন নং ৩০

প্রশ্নোত্তরের সমালোচনা করতে গিয়ে উপরোক্ত বই (পর্যালোচনা ও চ্যালেঞ্জ)-এর ২৭নং পৃষ্ঠায় লিখেছে, “ জানিনা উত্তর দাতা কোন নেশায় মাতাল ছিলেন।”

প্রিয় পাঠক! এবার চিন্তা করুন! লা-মাযহাবীরা কটাক্ষ করা ও বে-আদবীতে কতইনা পটু। তাই আমি লিখেছিলাম, বে-আদব এবং অভদ্র অশালীন হওয়া তাদের নিকট বীর হওয়ার সমতুল্য।

খান সাহেব লিখেছিলেন,” সে দেশে নাম করার মতো কোন ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই।”

সমালোচক তার বইয়ের ২৮নং পৃষ্ঠায় লিখেছে, “এ কথাটি উত্তরদাতা তার সীমিত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন।”

তার বে-আদবীর সীমা রেখা লক্ষ্য করুন। সমালোচকের বয়স হবে ২৫/৩০বছর। পৃথিবী সন্বন্ধে মুহিউদ্দীন খান সাহেবের অভিজ্ঞতার বয়সও এর দ্বিগুণ। আর তিনি বর্তমানে যুগশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। তাঁর উত্তর খ-ন করতে গিয়ে ঐ সমালোচক কুয়েতের একটি মাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম লিখেছে,“কুল্লিয়াতু উসুলিদ্দীন” এবং লিখেছে যে, শত শত উচ্চ মাধ্যমিক মাদরাসা আছে। কিন্তু সে কুল্লিয়া অর্থ না লিখে আরেকটা ছলচাতুরী করেছে। “কুল্লিয়া “অর্থ ’কলেজ ‘ আর ইউনিভার্সিটির আরবী ব্যবহার হয় “জামিয়া” । এই হল সে দেশের শিক্ষাগত অবস্থান, গোটা দেশে মিলে ১টি কলেজ আর কয়েক শত উচ্চমাধ্যমিক মাদরাসা মাত্র। কিন্তু বাংলাদেশের হাজার হাজার জামিয়া, কুল্লিয়া আর অগণিত মাদরাসা তার চোখে পড়ে না। তাই তো সে খান সাহেবের আরেক বাস্তব উক্তি – “বাংলাদেশে কুরআন ও হাদীসের বিশুদ্ধ চর্চা আছে” এ সম্বন্ধে সে ঐ বইয়ের ৩১নং পৃষ্ঠায় বলেছে , এ দাবি মিথ্যা।

সে কি জানে না যে, গোটা কুয়েতের ছোট বড় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রের সমষ্টি বাংলাদেশের কেবল একটি মাদরাসা” হাটহাজারী ইসলামী আরবী ইউনিভার্সিটির” ছাত্র সংখ্যার সমতুল্যও হবে না। তাহলে কুয়েতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধিক্য ও প্রাধান্য দিতে গিয়ে সে স্বদেশের শীর্ষস্থানীয় ও স্বনামধন্য আলেমে দ্বীনের তীব্র সমালোচনায় বিভোর হয়েছে কোন স্বার্থে? এ জন্যই তাকে বলেছেন, “ আলেমবেশী পেটুয়া লোক”।

উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত সমালোচক বর্তমানে (২০০৪ইং) বাংলাদেশে কুয়েত কর্তৃক পরিচালিত ইহইয়াউত তুরাছ নামক একটি দাতা সংস্থায় চাকরিরত আছেন। আমার বুঝে আসে না যে, এ সমস্ত সংস্থা কি এদেশে সাহায্য বিতরণের জন্য আগমন করেছে, নাকি সাহায্যের নামে নাস্তিক এন,জি,ও এবং প্রবীণ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানীর মতো এদেশের সরলমনা জনসাধারণকে বিভ্রান্ত ও দ্বিধাবিভক্ত করতঃ দুরভিসন্ধি হাসিলের পাঁয়তারা করছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ-বিবৃতি জনমনে সংশয় সৃষ্টি করছে। মুস্তাহাব ও মুবাহ কাজে চরম বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে তারা মুসলমানদেরকে পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত করছে। সাহায্য বিতরণের নামে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে তারা দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কিরামের প্রতি মুসলমানদের নিকট ভ্রান্ত ধারণা দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত হয়। এদের গাইরে মুকাল্লিদ বা লা-মাযহাবী বানানোর দাওয়াত ও কার্যক্রম আজ এদেশের উলামায়ে কিরামের বিরুদ্ধে সংঘাতের রূপ ধারণ করেছে।

এ পরিস্থিতিতে এ ধরনের যাবতীয় সংস্থা তথা “ইহইয়াউত তুরাছ” ‘ আমানাতুল ফুরকান আল-খাইরিয়াহ’, ইদারাতুল মাসাজিদ ও আল-মুনতাদা ইত্যাদি সংগঠনের কর্মসূচী ও কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতঃ কর্মসূচী বহির্ভূত বিভ্রান্তিকর তৎপরতার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আইনানুগ আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

জামিয়া রহমানিয়া ঢাকার বিশিষ্ট মুহাদ্দিস, প্রখ্যাত মুফতী, বিজ্ঞ আলিম মাও. মনসুরুল হক সাহেব লিখেছিলেন-” যেসব হাদীসকে ভিত্তি করে হানাফী মাযহাবের উৎপত্তি সেসব হাদীস ছিহাহ ছিত্তার হাদীস থেকেও মজবুত ও সহীহ” কেননা ইমামে আযম আবু হানীফা (রহ.) যেহেতু ৮০ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি তাবেয়ী ছিলেন তাই দুই বা তিন রাবীর মাধ্যমে তিনি হাদীস পেয়েছেন।…. হাদীসের আলোকে হানাফীদের সুদৃঢ় দলীল প্রমাণ, সম্পাাদকের কথা পৃ.৪

মাননীয় মুফতী সাহেবের এ উক্তির সমালোচনা করতে গিয়ে “পর্যালোচনা ও চ্যালেঞ্জ” নামক উপরোল্লেখিত বিতর্কিত বইয়ে লিখেছে,

“এরূপ একখানা গ্রন্থ মুফতী সাহেব দেখাতে পারলে তাকে এক লাখ টাকা নগদ পুরস্কার দেয়া হবে। শুধু তিনি কেন; সারা বিশ্বের হানাফী মাযহাবের যত বড় বড় মুফতী, মুহাদ্দিস, ফক্বীহ ও শাইখুল হাদীস রয়েছেন তাদের যার এবং যত জনের ইচ্ছা সহযোগিতা নিতে পারেন। আর এ চ্যালেঞ্জ বংশানুক্রমে কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে।” পর্যালোচনা ও চ্যালেঞ্জ পৃ. ১৩(পার্শ্ব টীকা)

পর্যালোচনা

সিহাহ সিত্তাহ বিশেষ করে বুখারী ও মুসলিম শরীফই শুধু বিশুদ্ধ হাদীসের কিতাব নয়। ছিহাহ ছিত্তাহ বা বুখারী ও মুসলিম ছাড়া অপর কোন কিতাবে সহীহ হাদীস নেই একথা কোনো হাদীসে নেই। এমনকি বুখারী মুসলিমের হাদীস হলেই সহীহ হবে একথাও কোনো হাদীসে নেই। বরং ছিহাহ সিত্তাহ ছাড়াও ইমাম আবু আব্দিল্লাহ হাকেমের কিতাব “মুস্তাদরাক “ ইমাম ইবনে হিব্বান ও ইবনে খুযাইমার কিতাব ‘সহীহ’ এবং ইমাম জিয়াউদ্দীন আল মাক্বদাসীর কিতাব, আল মুখতারাহ , মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদি হাদীসের বিশাল ভা-ারে অসংখ্য সহীহ হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। এভাবে হাদীসের জগতে রচিত সর্বপ্রথম কিতাব, ইমাম আবু হানীফা (রহ.) প্রণীত “কিতাবুল আসার’ এবং তাঁর হাদীস সংকলিত ১৫টি ‘মাসানিদ’ বা হাদীস গ্রন্থেও অসংখ্য সহীহ হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে অনেকগুলো এমন যে বুখারী-মুসলিম ও সিহাহ সিত্তার কোন কিতাবে আদৌ উল্লেখ নেই। আর কিছু এমনও পাওয়া যায় যা বুখারী মুসলিমের কোন কোন হাদীস অপেক্ষা শক্তিশালী ও সহীহ এবং তুলনামূলক উচ্চ তথা এক বা দুই রাবী’র মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে।

ইমাম সাখাবী (রহ. মৃত ৯০২হিজরী) লিখেন, ইমাম বুখারী ও মুসলিম সমস্ত সহীহ হাদীস তাঁদের কিতাবে গচ্ছিত করেননি, বরং তাঁরা আপন আপন দাবি অনুযায়ী কেবল সহীহ হাদীস নির্বাচনের শর্ত পূর্ণ করতে সক্ষম হননি। (অনেক ক্ষেত্রে তারা সহীহ নয় এমন হাদীসও সংকলন করেছেন।) ইমামদ্বয়ের উভয়েরই এ মর্মে সুস্পষ্ট স্বীকারোক্তি রয়েছে।” ফাতহুল মুগীস, ১/৪৪-৪৫

ইমাম হাসান বিন যিয়াদ (রহ.) বর্ণনা করেন-

قد انتخب ابو حنفیۃ الآثار من اربعین الف حدیث

“ ইমাম আবু হানীফা (রহ.) চল্লিশ হাজার হাদীস হতে নির্বাচন করতঃ”আসার” নামক হাদীস গ্রন্থ সংকলন করেন।“ আল-খাইরাতুল হিসান। ২১১

এ ছাড়া ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর অসংখ্য-অগণিত হাদীস সমূহ হাদীসের কিতাব ও মাসানিদ সমূহে বিস্তৃত রয়েছে। তন্মধ্যে কেবল ইমাম আবু হানীফার সূত্রে বর্ণিত হাদীসের সমন্বয়ে নির্ভরযোগ্য ১৫টি মুসনাদে (কিতাবে) তাঁর মূল্যবান বর্ণনাগুলো গ্রন্থবদ্ধ রয়েছে। এ ১৫টি মুসনাদকে ইমাম মুহাম্মদ বিন মাহমুদ আল-খাওয়ারযিমী (রহ.) একত্রে সংকলন করেছেন।

বলাবাহুল্য এ সমস্ত কিতাবে ইমাম আবু হানীফা (রহ.) থেকে বর্ণিত অসংখ্য সহীহ হাদীস রয়েছে। এ পরিসরে সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় বিষয় হল যে, লা-মাযহাবীদেরই ইমাম , বরং এ মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম দাউদে যাহেরী লিখেন-

و أدرک بالسن عشرین من الصحابۃ، وروی عن ثمانیۃ منھم، انہ روی عن انس ثلاثۃ احادیث وعن ابن جزء حدیث وعن واثلۃ حدیثین وعن جابر حدیثا، وعن ابن انیس حدیثا۔

ইমাম আবু হানীফা (রহ.) তাঁর জীবনে বিশজন সাহাবী (রা.)কে স্বচক্ষে দেখেছেন। তাঁদের আটজন থেকে তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে আনাস (রা.) থেকে তিনটি। ইবনে জায(রা.) থেকে একটি, ওয়াসিলা (রা.) থেকে দুটি, জাবির (রা.) থেকে একটি এবং ইবনে উনাইস (রা.) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। আত-তালিকুল মুখতার আলা কিতাবিল আশার,১১৭

এই ভিত্তিতে ইমাম আবু হানীফা ও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মধ্যে বর্ণনাকারী শুধু একজন, আর তিনি হলেন রাসূলের সাহাবী। এ ধরনের হাদীসের মান নিশ্চয় সব হাদীসের তুলনায় শক্তিশালী ও সর্বাপেক্ষা সহীহ। এতে কারো কোনো সংশয়ের অবকাশ নেই, সুযোগ নেই।

ইমাম শা’রানী (রহ.) লিখেন-

وقد من اللہ تعالی علیَّ بمطالعۃ مسانید الامام ابی حنفیۃ الثلاثۃ من نسخۃ صحیحۃ علیھا خطوط الحفاظ، آخرھم الحافظ الدمیاطی، فرایتہ لایروی حدیثا الا عن خیار التابعین العدول الثقات الذین ھم من خیر القرون بشھادۃ رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم  کالاسود وعلقمۃ وعطاء وعکرمۃ ومجاھد ومکحول والحسن البصری واقرانھم- رضی اللہ عنھم اجمعین فکل الرواۃ الذین ھم بینہ وبین رسول اللہ عدول ثقات اعلام اخیار۔

ইমাম আবু হানীফা (রহ.) থেকে বর্ণিত হাদীসের কিতাব (মাসানিদ) তিনটিরই বিশেষভাবে সত্যায়িত কপি অধ্যয়নের তৌফিক আল্লাহ আমাকে প্রদান করেছেন। সর্বশেষে যিনি সত্যায়ন করেন তিনি হলেন হাফেজ দিমইয়াতী (রহ.)। এতে আমি প্রত্যক্ষ করেছি যে, ইমাম আবু হানীফা (রহ.) সর্ব শ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য এবং রাসূল (সা.)-এর ভাষায় শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তিগণ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন- আসওয়াদ, আলক্বামা, আতা, ইকরামা, মুজাহিদ, মাকহুল ও হাসান বছরী প্রমুখ এমন বর্ণনাকারী যাদের প্রত্যেকেই মাত্র একজন নির্ভরযোগ্য ও সর্বশ্রেষ্ঠ বর্ণনাকারী সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে  হাদীস বর্ননা করেছেন। আল মিযানুল কুবরা, ১/৮২-৮৩

অন্যত্র এক প্রশ্নোত্তরে তিনি লিখেন, ইমাম আবু হানীফা থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) পর্যন্ত কোন বর্ণনাকারীই দুর্বল নেই। অতএব, পরবর্তীকালে ইমাম আবু হানীফার মৃত্যুর পর কোনো হাদীসে দুর্বল বর্ণনাকারী সংযুক্ত হলে ইমাম আবু হানীফার হাদীসে কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না। আল মিযানুল কুবরা , ১/৮৪-৮৫

উপরোক্ত তথ্যগুলোর আলোকে দিবালোকের ন্যায় প্রতীয়মান হয় যে, ইমাম আবু হানীফা (রহ.)  কখনো মাত্র একজন বর্ণানাকারীর মাধ্যমে রাসূল(সা.) থেকে হাদীস বর্ণনা করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। এ বর্ণনাকারী হলেন আবু হানীফার উস্তাদ ও রাসূলের প্রিয় সাহাবী (রা.)। আর সাহাবীগণ হলেন সমালোচনার ঊর্দ্ধে। তাই এ সনদে সমালোচকদের কিছু বলার অবকাশ নেই। এ ধরনের সুউচ্চ (সংক্ষেপ) সূত্রে হাদীস বর্ণনা করা সিহাহ সিত্তার ইমামগণের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। অতএব এ ধরনের সূত্রে বর্ণিত হাদীস গুলো অবশ্যই সিহাহ সিত্তাহ তথা বুখারী মুসলিমের হাদীস অপেক্ষা শক্তিশালী বলে গণ্য হবে। কিন্তু প্রতিপক্ষের হাতে কলম থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে এ সুস্পষ্ট সত্য বিষয়টি চাপা দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো যে, আমাদের হানাফী উলামায়ে কেরামগণও অনেক ক্ষেত্রে এ সুক্ষ্ম চক্রান্তটি বুঝে উঠতে পারেননি। তাইতো ইমাম আবু হানীফার (রহ.) কিতাব, কিতাবুল আসারের সঠিক মূল্যায়ন আজ আমাদের কাছে নেই। নেই ত্বাহাবীর কোনো গুরুত্ব।

ইমাম আবু হানীফা (রহ.) কখনো মাত্র দু’জন বর্ণনাকারীর মাধ্যমেও হাদীস বর্ণনা করতে সক্ষম হয়েছেন। অর্থাৎ আবু হানীফা (রহ.) বর্ণনা করেছেন তাবেয়ী থেকে। আর তাবেয়ী বর্ণনা করেছেন সাহাবী থেকে সাহাবী বর্ণনা করেছেন রাসূল (সা.) থেকে। আর এ সমস্ত তাবেয়ীগণ ছিলেন হাদীসের জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। তাদের হাদীস সর্বাপেক্ষা সহীহ বলে সকলের নিকট স্বীকৃত। তন্মধ্যে অনেক হাদীসই রয়েছে যা সিহাহ সিত্তাহ এমন কি বুখারী-মুসলিমের কতিপয় হাদীস অপেক্ষা সহীহ। কেননা বুখারী-মুসলিমের কতিপয় হাদীসকে অনেকেই যয়ীফ বা দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন।

দেখুন তাদরীবুর রাবী, খ–১ পৃষ্ঠা ৭৪ও ২৫১ ফাতহুল বারী , মুকাদ্দমা পৃষ্ঠা-৩৬৪

লা-মাযহাবীদের ইমাম, কথিত অপ্রতিদ্বন্ধী গবেষক, নাসির উদ্দিন আলবানী, বুখারী মুসলিমের অনেকগুলো দুর্বল হাদীসের ফিরিস্তী রচনা করেছেন।

দেখুন আলবানী রচিত যয়ীফুল জামি’ (৪/১১ নং-৪০৫৪) , (৪/২০৮নং ৪৪৮৯) )১/১৯৭ নং-২০০৫) (১/২১৩ সং-৭১৮)(২/১৪নং ১৪২৫) এবং (২/১৯২নং-১৯৮২) ইত্যাদি হাদীস।

অতএব সিহাহ  সিত্তার এ সমস্ত দুর্বল হাদীসগুলোর তুলনায় ইমাম আবু হানীফা সূত্রে কিতাবুল আসার বা মুসনাদে আবু হানীফায় এক বা দুই বর্ণনাকারীর মাধ্যমে বর্ণিত হাদীস গুলো নিঃসন্দেহে সহীহ ও মজবুত। আর এ সমস্ত হাদীসের উপর নির্ভর করেই ইমাম আবু হানীফা (রহ.) তাঁর মাযহাবের ভিত্তি রেখেছেন। তাই সম্মানিত মুফতী সাহেব লিখেছেন- “যে সব হাদীসকে ভিত্তি করে হানাফী মাযহাবের উৎপত্তি সে সব হাদীস সিহাহ সিত্তার অনেক হাদীস থেকেও মজবুত ও সহীহ।” আর তা বাস্তবিক ক্ষেত্রে ও ইনসাফের দৃষ্টিতে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

উদাহরণ স্বরূপ, ইমাম আবু হানীফা (রহ.) হাদীস বর্ণনা করেছেন, স্বীয় উস্তাদ আতা থেকে, আর আতা বর্ণনা করেন সাহাবী ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে। দেখুন-জামিউল মাসানিদ, ১/৪২৯

এ সনদে আবু হানীফা ও সাহাবীর মধ্যে মাত্র একজন বর্ণনাকারী, তিনি হলেন আতা, যার হাদীস বুখারী মুসলিমেও সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ বলে স্বীকৃত। দেখুন-আল-কামাল ,২৬/৫০৩

অতপর আতা ও রাসূল (সা.) এর মধ্যবর্তী মাত্র সাহাবী ইবনে আব্বাস (রা.) আর ইবনে আব্বাস তো ইবনে আব্বাসই।

এভাবে ইমাম আবু হানীফা (রহ.) হাদীস বর্ণনা করেন, ‘নাফে’ হতে। আর তিনি ইবনে উমর থেকে ইবনে উমর বর্ণনা করেন রাসূল (সা.) থেকে। দেখুন, জামিউল মাসানিদ , ১/৩৬৪

ইমাম বুখারী (রহ.) নাফে’ কর্তৃক ইবনে উমার থেকে বর্ণিত সনদকে (اصح الاسانید) বা সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ সনদ বলে অভিহিত করেছেন। মা’রিফাতু উলুমিল হাদীস পৃ. ৫৩ তাদরীব ১/৮৩ আল কিফায়াহ, ৩৯৮ তাওযিহুল আফকার , ১/৩৫

বলাবাহুল্য যে, ইমাম আবু হানীফা (রহ.) অনুরূপভাবে কেবল তাবেয়ী ও সাহাবী-এ দুয়ের মাধ্যমে অসংখ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন, যেমনিভাবে তিনি কেবল মাত্র সাহাবীর মাধ্যমে কিছু কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাই তাঁর সনদ যেমন সুউচ্চ (সংক্ষেপ) তেমনি সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধও বটে।

আশা করি উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনার নিরীখে মুফতী সাহেবের দাবির বাস্তবতা এবং বিভ্রান্তকারীদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও অবান্তর চ্যালেঞ্জের ভিত্তিহীন স্বরূপ সত্যানুসন্ধিৎসু পাঠকবর্গের নিকট অবশ্যই সুস্পষ্ট হয়েছে।

বস্তুত এ ধরনের চ্যালেঞ্জ-বিবৃতি তাদের মজ্জাগত অভ্যাস এবং সাধারণ মুসলমানদেরকে লা-মাযহাবী বানানো বা বিভ্রান্ত করার দুরভিসন্ধি ও কৌশলগত একটি ফাঁদ মাত্র। সময়-সুযোগে তারা এ সমস্ত চ্যালেঞ্জ বিবৃতি বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে বিলি করতঃ মুসলমানদেরকে বিব্রত ও দ্বিধা-বিভক্ত করার চক্রান্তে মেতে উঠে। অবস্থা বেগতিক দেখলে কখনো কখনো পত্র পত্রিকায় দায়ভারমুক্ত ঘোষণাও প্রকাশ করে। দেখুন- দৈনিক ইনকিলাব, ৭মে ২০০৪ইং শুক্রবার, পৃষ্ঠা-১৫ শেষ কলাম, সর্বশেষ শিরোনাম-বাংলাদেশ জমঈয়াতে আহলে হাদীসের সেক্রেটারী জেনারেল-এর বিবৃতি।

আর এ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা অথবা সমাধানে তারা কখনো আসেনা। এইতো বিগত ২৪শে মার্চ ২০০৪ইং ১০ঘটিকায় জামালপুর শহরে বিতর্কে বসার তারিখ তারা নিজেরাই প্রদান করেছিল। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তারাই উধাও হয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার দ্বার উন্মুক্ত রেখেছে। তাই দেখা যায় যে, কাগজ পত্রে এ সমস্ত চ্যালেঞ্জ বিবৃতি শুধু বিভ্রান্তিরই যোগান মাত্র।

তাই এ ধরনের লুকোচুরি পন্থা পরিহার করে পুরস্কার ঘোষিত টাকার ব্যাংক গ্র্যান্টি সহ আলোচনায় বসার তারিখ ও স্থান ঘোষণা করতঃ জনতার মঞ্চে আসার আহবান জানাচ্ছি। তাহলেই একটা চূড়ান্ত সমাধানের আশা করা যেতে পারে এবং জনসাধারণও আসল বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে।

সম্মানিত  পাঠক সমাজ! লা-মাযহাবীরা আজ এ দেশের যে সমস্ত উলামায়ে কিরামের সমালোচনা করছে, তারাই তো এ দেশের মুসলমানদের শিক্ষা সংস্কৃতি এবং মানবিক জীবন ধারার সামগ্রিক দিক তথা রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক এবং দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও বাতিল কুসংস্কার প্রতিরোধে শত বাধা বিপত্তির সাগর পাড়ি দিয়ে সফল অবদান রেখে আসছেন। তারাই প্রাচীন কুসংস্কারের স্থলে একটি আধুনিক, সার্বজনীন ও সংস্কারমূলক শিক্ষা ধারার প্রবর্তন  করেছেন। উপহার দিয়েছেন এ দেশের মানুষকে হাজার হাজার মাদরাসা, মসজিদ আর লাখ লাখ প্রথিতযশা সত্যের পতাকাবাহী উলামায়ে কিরাম। নাস্তিক মুরতাদ আর বাতিলের নগ্ন থাবা থেকে ইসলামী আদর্শকে রক্ষা করার জন্য জীবনবাজী রেখে তারাই বীরদর্পে এগিয়ে এসেছেন।  কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ জাতির এ সমস্ত কর্ণধারগণকেই কলুষিত করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে লা-মাযহাবী বা তথাকথিত আহলে হাদীস দলটি। অথচ এদেশের মুসলিম সংস্কৃতি ও বাতিলের মোকাবিলায় তাদের সামান্যতম অবদানও নেই। নেই এ দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যে তাদের নাম গন্ধ মাত্র। পক্ষান্তরে যুগ যুগ ধরে চলে আসা, কুরআন সুন্নাহর সুদৃঢ় দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মাযহাবপন্থী উলামায়ে কিরামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ঐতিহ্য আর তাঁদের অসাধারণ অবদান এদেশের মানুষ আজীবন স্মরণ রাখবে। লিখে রাখবে স্বর্ণাক্ষরে চিরদিন। তাঁদের নিষ্ঠাদৃপ্ত স্মৃতি এদেশের তৌহিদী জনতার অন্তরে চিরভাস্বর হবে, হবে চিরঅম্লান ও অনির্বাণ-অপ্রতিরোধ্য। ইনশাআল্লাহ।

0Shares

আরও জানুন

হানাফী মাযহাব মতে বুযুর্গদের কবর পাকা করার অনুমতি আছে?

প্রশ্ন আল্লাহ ওয়ালা বুযুর্গদের কবর কি পাকা করা হানাফী মাযহাব মতে জায়েজ? দয়া করে জানালে …

No comments

  1. M M Mustakim bellah

    বাতিলের বিরুদ্ধে এ প্রচেষ্টাকে আল্লাহ কবুল করুন

  2. শামীম আহমাদ

    আল্লাহ আপনাদের প্রচেষ্টা ক্ববূল ফরমাঁ।আমীন।

Leave a Reply to শামীম আহমাদ Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *