প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম।
জনাব আমার প্রশ্ন শাতিমের শাস্তি কার্যকর প্রসঙ্গে। কিন্তু প্রাসঙ্গিক কয়েকটি প্রশ্ন:
১।
কেউ একজন শাতিম, এই ঘোষনা কি সবাই দিতে পারবে নাকি বিচার, বিশ্লেষনপূর্বক একজন আলেম বা ইফতা বোর্ড হতে এই সিদ্ধান্ত আশা উচিত এবং সেই ভিত্তিতেই নির্ধারণ হবে কেউ শাতিম নাকি না?
২।
শাতিমের শাস্তি এবং এই গুনাহের ভয়াবহতা নিয়ে কোন সন্দেহ আমার মনে নেই আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমাদের দেশে যেহেতু শরিয়া আইন নেই, সেক্ষেত্রে কেউ যদি অগ্রগামী হয়ে শাতিমকে খুন করে ফেলে তার ব্যাপারে ইসলামের হুকুম কি?
৩।
আমাদের দেশে রাসুল সা. অবমাননা অনেকেই করে।
দেখা যায় কোন কোন ঘটনা আমরা ২/৩ বছর পরে জানতে পারি।
হয়তো ততদিনে সেই লোক নিজেই ঘোষনা দিয়ে ফেলেছে যে সে ভুলের উপর ছিলো। এখন সে অনুতপ্ত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। এক্ষেত্রে তার ব্যাপারে হুকুম কি?
৪।
শাতিমের ব্যাপারে যখন পবলিকলি বা সোশ্যাল মিডিয়ার জানাজানি হয়, তখন দেখা যায় অনেকেই তাকে যঘন্য ভাষায় গালাগালি করে। বা সামাজিকভাবে ব্যক্তি এবং তার পুরো পরিবারকে নানানভাবে হেনস্তা করে।
এবং পরিশেষে শাতিমের যে শরয়ী শাস্তি তা হয় না যেহেতু শরয়ী ব্যবস্থা জারী নেই আমাদের দেশে। মাঝখান থেকে যে বা যারা হেনস্তা করলো, গালাগালি করলো বা আঘাত করলো এর জন্য ঐ ব্যক্তি/ব্যক্তিরা দোষী হবে কি না?
প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদানে কৃতজ্ঞতা ও বরকতের দোয়া জানবেন। জাযাকাল্লাহ।
আশিকুর রহমান বগুড়া।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১
অভিযোগের ভিত্তিতে যাচাই বাছাইপূর্বক এ ঘোষণা দিবে ইসলামী রাষ্ট্রের বিচারবিভাগ।।
কিন্তু যেহেতু আমাদের দেশে শরীয়া আদালত নেই।
তাই অন্তত এটি বিজ্ঞ মুফতী বা গ্রহণযোগ্য ইফতা বিভাগ থেকে যাচাই বাছাই করেই লোকটি শাতিম নাকি নয় তা নির্ধারণ করতে হবে।
নিজের ইচ্ছেমত যাকে তাকে শাতিম বলা যাবে না।
الحد خالص حق الله تعالى، فلا يستوفيه إلا نائبه وهو الإمام (فتح القدير، كتاب الحدود، فصل فى كيفية إقامة الحد، دار الفكر مصرى، قديم-5/236، زكريا-5/224، كويته-5/22)
والتعزير إلى رأى الإمام (رد المحتار، زكريا-6/103، كرتاشى-4/60)
২
মূলত এসব অপরাধীকে হত্যাসহ শাস্তি প্রদান করা রাষ্ট্র ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব জনগণের নয়।
এভাবে যে কেউ অপরাধীকে খুন করে ফেলার সংস্কৃতি চালু করা ঠিক নয়। এতে করে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে।
কারণ, এক্ষেত্রে শত্রুতাবশত মিথ্যা অভিযোগেও এমন হত্যাকাণ্ড ঘটার সম্ভাবনা তৈরী হতে থাকবে।
তাই এক্ষেত্রে আইনী প্রক্রিয়ায় এদের শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা করতে হবে।
তবে যদি প্রমাণিত কোন শাতিমকে কেউ আবেগবশত খুন করেই ফেলে, তাহলে কাজটি মাকরূহ হলেও হত্যাকারীর উপর শরয়ী কোন শাস্তি বিধান আরোপিত হবে না।
إن قتله إنسان قبل الاستتابة يكره له ذلك ولا شيء عليه لزوال عصمته بالردة (بدائع الصنائع، كتاب السير، فصل وأما بيان أحكام المرتدين-7/134)
৩
এক্ষেত্রে যাচাই বাছাই ও তথ্য তালাশ করে দেখতে হবে যে, সে সত্যিই প্রকৃত তওবা করেছে কি না? নাকি ছলচাতুরী করছে।
যদি এমন ঘৃণ্য কাজ করার পর আল্লাহর কাছে খাস দিলে তওবা করে এবং ক্ষমা চায়। নতুন করে ঈমান নবায়ন করে, তাহলে তার তওবা কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।
এমতাবস্থায় উক্ত ব্যক্তিকে অতীত পাপের কারণে খারাপ বলা বা দোষারোপ করা যাবে না। যারা তাকে দোষারোপ করবে তারা গোনাহগার হবে।
তওবাকৃত গোনাহ বিষয়ে কাউকে তিরস্কার করা জায়েজ নেই।
المسئلة الثانية: فى أن قتل الساب للكفر أو للحد، اعلم أن المرتد يقتل بالاجماع كما مر، وتوبته مقبولة باجماع اكثر العلماء اذا لم يكن زنديقا، وروى عن الحسن البصرى انه لا تقبل توبة المردة بل يقتل وان اسلم، وهو خلاف المشهور من مذهب الصحابة والتابعين ومن بعدهم (مجموعة رسائل ابن عابدين، الرسالة الخامسة عشرة، تنبيه الولاة والحكام على أحكام شاتم خير الأنام أو أحد أصحابه الكرام-1/318)
وحكى عن مالك واجدانه تقبل توبته، وهو قول ابى حنيفة واصحابه، وهو المشهور من مذهب الشافعى بناء على قبول توبة المرتد (مجموعة رسائل ابن عابدين، الرسالة الخامسة عشرة، تنبيه الولاة والحكام على أحكام شاتم خير الأنام أو أحد أصحابه الكرام -1/324)
قال الامام السبكى رحمه الله تعالى اعلم انا وغن اترنا ان من اسلم وحسن اسلامه تقبل توبته ويسقط قتله وهو ناج فى الاخرة، ولكنا نخاف على من يصدر ذلك منه خاتمة السوء نسأل الله تعالى العافية، فإن التعرض لجناب النبى صلى الله عليه وسلم عظيم وغيرة الله له شديد (مجموعة رسائل ا بن عابدين، الرسالة الخامسة عشرة، تنبيه الولاة والحكام على أحكام شاتم خير الأنام أو أحد أصحابه الكرام -1/352)
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ عَيَّرَ أَخَاهُ بِذَنْبٍ لَمْ يَمُتْ حَتَّى يَعْمَلَهُ قَالَ أَحْمَدُ: قَالُوا: مِنْ ذَنْبٍ قَدْ تَابَ مِنْهُ (سنن الترمذى، رقم-2505)
৪
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি ঈমানদারের কাছে নিজের প্রাণের চেয়ে বেশি প্রিয় ব্যক্তিত্ব। এমন নিষ্পাপ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে নোংরা কথা বললে স্বাভাবিকভাবেই রাগ দমন করে, নিজেকে সংযত রাখা কঠিন।
তাই অনেকেই হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে অশ্লীল গালাগাল করে ফেলেন। কিন্তু এভাবে গালাগাল করা, অশ্লীল মন্তব্য করা উচিত নয়।
সেইসাথে সন্তানের অপরাধে পিতামাতাকে দোষী সাব্যস্ত করা, তাদের নিন্দা করা কোনভাবেই জায়েজ নয়। এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
তবে প্রতিবাদী হতে হবে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মোহাব্বতের দাবী হলো, এমন নোংরা মনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শব্দে এবং কঠিনভাবেই নিজের অবস্থান তুলে ধরা।
অশালীন শব্দ ছাড়া কঠোর থেকে কঠোর শব্দে সমালোচনা করাও জায়েজ আছে। শাতিমকে শাস্তির আওতায় আনতে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা ব্যয় করতে হবে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مِنَ الْكَبَائِرِ شَتْمُ الرَّجُلِ وَالِدَيْهِ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَهَلْ يَشْتِمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ، وَيَسُبُّ أُمَّهُ فَيَسُبُّ أُمَّهُ (صحيح مسلم، رقم-146، شرح معانى الآثار، رقم-899)
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلاَ اللَّعَّانِ وَلاَ الفَاحِشِ وَلاَ البَذِيءِ (سنن الترمذى، رقم-1977)
وَفِي مَفْهُومِ قَوْلِهِ ” الْمُسْلِمِ ” دَلِيلٌ عَلَى جَوَازِ سَبِّ الْكَافِرِ، فَإِنْ كَانَ مُعَاهَدًا فَهُوَ أَذِيَّةٌ لَهُ، وَقَدْ نَهَى عَنْ أَذِيَّتِهِ فَلَا يُعْمَلُ بِالْمَفْهُومِ فِي حَقِّهِ، وَإِنْ كَانَ حَرْبِيًّا جَازَ سَبُّهُ إذْ لَا حُرْمَةَ لَهُ. (سبل السلام للصنعانى، كتاب الجامع، بَابُ التَّرْهِيبِ مِنْ مَسَاوِئِ الْأَخْلَاقِ، النَّهْي عَنْ السباب-2/663)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
ইমেইল– [email protected]