প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / বিয়ের পর কনেপক্ষ মেয়েকে এনে তালাকনামা পাঠিয়ে আরেক জনের সাথে বিয়ে দিলে হুকুম কী?

বিয়ের পর কনেপক্ষ মেয়েকে এনে তালাকনামা পাঠিয়ে আরেক জনের সাথে বিয়ে দিলে হুকুম কী?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।

আমি । বর্তমানে মালশিয়া স্ত্রী সহ বসবাস করতেছি। আমার বর্তমান বয়স ২৯ এবং আমার স্ত্রীর বয়স ২৪।

আমাদের বিয়ের আগে থেকেই পরিচয় ও ফোনে আলাপ হতো।  আমাদের বিয়ে পারিবারিক ভাবে মেনে নিবে না বলে আমি সানজিদাকে নিয়ে আসি ওর বাসা থেকে এবং ওর বাবা মার অমতে  ১২-০২-১২ তারিখে কাজী অফিসে বিয়ে করি ইসলামিক ভাবে এবং রেজিস্ট্রি করে ।

এরপর আমরা আমাদের বাসায় দাম্পত্য জীবন শুরু করি। এদিকে মেয়ের পরিবার এটাকে মেনে নিয়ে, পরে অনুষ্ঠান করে মেয়েকে আবার তুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে  ২৬-০২-১২ তারিখ নিয়ে যায়।

নিয়ে যাওয়ার পর যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ২৯-০২-২০১২ তারিখ তাদের পক্ষ থেকে মেয়ের সাইন করা তালাক নামা আসে। [পরে জানতে পারি মেয়ের মা আত্মাহুতির হুমকি দিয়ে মেয়েকে জোর করে সাইন কুরতে বাধ্য করে]। মেয়েকে ঘরে তালাবধ্য করে রাখা হয়।

এরপর ০৯-০৩-১২ তারিখ মেয়ের পরিবার সানজিদাকে জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে  কাজীর মাধ্যমে [কাজী আগের কাহিনী কিছুই জানে না]। নতুন ছেলের পরিবার এ ব্যপারে কিছুই জানত না।

মেয়ে অই পরিবারে যায় বিয়ের দিন ই। দুই দিন থেকে আবার মেয়ের বাবার পরিবারে ফিরে আসে। এরপর ২৭-০৩-১২ তারিখ নতুন ছেলের বোনের বাড়িতে উঠে অই ছেলের সাথে। এরপর ফোনে আমার সাথে যোগাযোগ করে ০১-০৪-২০১২ তারিখে পালিয়ে আসে।  এরপর আমরা মেলামেশা করি

[পরে জানতে পারি সে পালানোর সুযোগ খোজার জন্যই অই ছেলের সাথে বিয়ে করে ওর বাড়িতে আসে]

আমার কাছে আসার পর সানজিদাকে দিয়ে ১৩/০৫/২০১২ তারিখ আবার আইনি তালাকনামা পাঠাই। ১৫/০৪/২০১২ তারিখে কাজীর মাধ্যমে আমরা আবার বিয়ে করি। এখানে কাজীকে আগের কথা জানানো হয়নি।

এরপর থেকে আমরা স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করছি।

শরঈ দিক থেকে এখন কি আমরা আদৌ স্বামী স্ত্রী কিনা। বা কোন পর্যায়ে আছি।

কি করনীয় জানাবেন। নাম পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ রইলো।

কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে মিস কল দিলেই আমি ব্যাক করবো হুজুর।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

যদি রেজিষ্ট্রি করার সময় আপনি স্ত্রীকে তালাক দেবার অধিকার দিয়ে থাকেন, আর উক্ত অধিকার বলে পূর্ণ শর্ত মেনে আপনার স্ত্রী যদি আপনাকে প্রথমে তালাক প্রদান করে থাকে, তাহলে আপনার স্ত্রী প্রথমবার আপনাকে তালাক দেবার দ্বারা তালাক হয়েছে বলে সাব্যস্ত হবে।

আর যদি তালাক নামা করার সময় আপনি স্ত্রীকে তালাক দেবার অধিকার প্রদান না করে থাকেন, তাহলে আপনার স্ত্রী আপনাকে যে তালাক প্রদান করেছিল সেটি পতিত হয়নি।

তাহলে আপনাদের প্রথম বিবাহের দুই সূরত। যথা-

বিয়ের সময় আপনি স্ত্রীকে তালাক দেবার অধিকার দিয়েছেন। আর অধিকার যেসব শর্তে দেয়া হয়েছে সেসব শর্ত মেনে আপনার স্ত্রী আপনাকে তালাক প্রদান করেছে।

আপনি তালাক দেবার অধিকার বিবাহের কাবিন নামায় দেননি। বা আপনার স্ত্রী শর্ত মেনে তালাক প্রদান করেনি।

প্রথম সূরতে প্রথমবার আপনার স্ত্রী যে, আপনাকে তালাক প্রদান করেছে। এর দ্বারা আপনাদের বিবাহ শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেই হিসেবে ইদ্দত শেষ হবার পর আরেকজনের সাথে বিবাহও শুদ্ধ হয়েছিল।

আর যদি দ্বিতীয় সূরত হয, তথা আপনি তালাকের অধিকার প্রদান করেননি, বা আপনার স্ত্রী শর্ত মেনে তালাক প্রদান করেনি। তাহলে আপনাকে যে তালাক প্রদান করা হয়েছিল সেটি পতিত হয়নি। অর্থাৎ আপনাদের স্বামী স্ত্রীর বন্ধনই শেষ হয়নি। তাই আপনার স্ত্রীকে যে আরেকজনের সাথে বিবাহ দেয়া হয়েছিল সেটি শুদ্ধ হয়নি। বরং হারাম কাজ হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনার স্ত্রী থাকা অবস্থায়ই আবার আপনার স্ত্রীকে আরেক স্থানে বিবাহ দেয়া হয়েছে। যা সুষ্পষ্ট হারাম কাজ। তাই আপনাদের স্বামী স্ত্রীর বন্ধনে কোন সমস্যা হয়নি।

এবার লক্ষ্য করুন দ্বিতীয় বিবাহের হুকুম

উপরোক্ত বিবরণ পড়ার দ্বারা আশা করি আপনার কাছে পরিস্কার যে, কোন সূরতে তালাক পতিত হয়েছিল আর কোন সূরতে হয়নি। যে সূরতে আপনাদের মাঝে তালাক হয়নি, সে সূরতে দ্বিতীয় বিবাহ শুদ্ধই হয়নি। তাই এ বিষয়ে মাথা ঘামানোর কোন প্রয়োজন নেই। এখন আপনারা স্বামী স্ত্রী এক সাথে থাকার দ্বারাই যথেষ্ঠ। নতুন করে বিবাহ করারও কোন প্রয়োজন ছিল না। এমনিতেই একসাথে বসবাস করতে পারতেন। কারণ আপনাদের বিবাহ সম্পর্ক বিচ্ছেদই হয়নি।

আর যদি উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে আপনাদের মাঝে তালাক পতিত হবার সূরত হয়ে থাকে। তাহলেও আপনাদের বর্তমান অবস্থান দুই সূরত। যথা-

দ্বিতীয় স্বামী কাবিন নামায় তার স্ত্রীকে তালাক দেবার অধিকার প্রদান করেছে। আর স্ত্রী আপনার কাছে গমণ করার পর তার দ্বিতীয় স্বামীকে সেসব শর্ত মেনেই তালাক প্রদান করেছে।

দ্বিতীয় স্বামী কাবিন নামায় স্ত্রীকে তালাক দেবার অধিকার প্রদান করেনি। বা তার স্ত্রী শর্ত মেনে তালাক প্রদান করেনি।

তাহলে এ দুই সূরতের মাঝে প্রথম সূরতে আপনার বর্তমান স্ত্রী দ্বিতীয় স্বামী থেকে পৃথক হয়ে আপনার কাছে গমণ করে তার দ্বিতীয় স্বামীকে তালাক প্রদান করা শুদ্ধ হয়েছে। তাই আপনি উক্ত মেয়েকে তালাকের ইদ্দত শেষ হবার পর আবার বিবাহ করাও শুদ্ধ হয়েছে। কোন সমস্যা নেই। তাই আপনারা এক সাথে বসবাস করতে পারেন। শরয়ী কোন বিধিনিষেধ নেই।

কিন্তু যদি দ্বিতীয় সূরত হয়ে থাকে, অর্থাৎ দ্বিতীয় স্বামী তার স্ত্রীকে তালাকের অধিকার প্রদান করেনি। বা স্ত্রী স্বামীর দেয়া শর্ত মেনে তালাক প্রদান করেনি। তাহলে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে তার স্ত্রীর বিবাহ বন্ধন শেষ হয়ে যায়নি। এখনো বহাল আছে। তাই উক্ত স্ত্রী লোকের অন্য কারো সাথে বিবাহ করা শুদ্ধ হবে না। সেই হিসেবে আপনার সাথে বিবাহ করাও শুদ্ধ হয়নি।

উপরোক্ত বিবরণটি ভাল করে পড়ে নিজেই বের করে নিতে পারবেন আপনাদের বিবাহ শুদ্ধ আছে? নাকি শুদ্ধ হয়নি?

وفي رد المحتار- وأنواعه ثلاثة : تفويض ، وتوكيل ، ورسالة وألفاظ التفويض ثلاثة : تخيير وأمر بيد ، ومشيئة .

( قال لها اختاري أو أمرك بيدك ينوي ) تفويض ( الطلاق ) لأنها كناية فلا يعملان بلا نية ( أو طلقي نفسك فلها أن تطلق في مجلس علمها به ) مشافهة أو إخبارا ( وإن طال ) يوما أو أكثر ما لم يوقته ويمضي الوقت قبل علمها ( ما لم تقم ) لتبدل مجلسها حقيقة ( أو ) حكما بأن ( تعمل ما يقطعه ) مما يدل على الإعراض لأنه تمليك فيتوقف على قبول في المجلس لا توكيل ، فلم يصح رجوعه ، حتى لو خيرها ثم حلف أن لا يطلقها فطلقت لم يحنث في الأصح ( لا ) تطلق ( بعده ) أي المجلس ( إلا إذا زاد ) في قوله طلقي نفسك وأخواته ( متى شئت أو متى ما شئت أو إذا شئت أو إذا ما شئت ) فلا يتقيد بالمجلس ( ولم يصح رجوعه ) لما مر (رد المحتار-كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/452)

فى الفتاوى الهندية- لَا يَجُوزُ لِلرَّجُلِ أَنْ يَتَزَوَّجَ زَوْجَةَ غَيْرِهِ وَكَذَلِكَ الْمُعْتَدَّةُ، كَذَا فِي السِّرَاجِ الْوَهَّاجِ. (الفتاوى الهندية، كِتَابُ النِّكَاحِ وَفِيهِ أَحَدَ عَشَرَ بَابًا، الْبَابُ الثَّالِثُ فِي بَيَانِ الْمُحَرَّمَاتِ وَهِيَ تِسْعَةُ أَقْسَامٍ، الْقِسْمُ السَّادِسُ الْمُحَرَّمَاتُ الَّتِي يَتَعَلَّقُ بِهَا حَقُّ الْغَيْرِ-1/280، بدائع الصنائع، كتاب النكاح عدم جواز منكوحة الغير-2/547، زكريا، البحر الرائق، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-3/108)

وفى رد المحتار- اما نكاح منكوحة الغير ومعتدة لم يقل احد بجوازه فلم ينعقد اصلا (رد المحتار، كتاب النكاح، باب العدة، مطلب فى النكاح الفاسد والباطل-5/197، 4/274، قاضى خان على الهندية-1/366)

فى الفتاوى الهندية- وَلَوْ تَزَوَّجَ بِمَنْكُوحَةِ الْغَيْرِ وَهُوَ لَا يَعْلَمُ أَنَّهَا مَنْكُوحَةُ الْغَيْرِ فَوَطِئَهَا؛ تَجِبُ الْعِدَّةُ، وَإِنْ كَانَ يَعْلَمُ أَنَّهَا مَنْكُوحَةُ الْغَيْرِ لَا تَجِبُ حَتَّى لَا يَحْرُمَ عَلَى الزَّوْجِ وَطْؤُهَا، كَذَا فِي فَتَاوَى قَاضِي خَانْ.. (الفتاوى الهندية، كِتَابُ النِّكَاحِ وَفِيهِ أَحَدَ عَشَرَ بَابًا، الْبَابُ الثَّالِثُ فِي بَيَانِ الْمُحَرَّمَاتِ وَهِيَ تِسْعَةُ أَقْسَامٍ، الْقِسْمُ السَّادِسُ الْمُحَرَّمَاتُ الَّتِي يَتَعَلَّقُ بِهَا حَقُّ الْغَيْرِ-1/280، قاضى خان على هامش الهندية1/366، خلاصة الفتاوى، كتاب الطلاق، الفصل الثامن فى العدة-2/118)

قوله تعالى : ( فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ ( . (البقرة: من الآية230

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

0Shares

আরও জানুন

‘সুন্দর সম্পর্ক কেন নষ্ট করে দিলা’ বলার দ্বারা কি স্ত্রী তালাক হয়ে যায়?

প্রশ্ন আস্সালামুআলাইকুম মুফতি সাহেব, এই প্রশ্ন কয়েকটা আগেও করেছিলাম, উত্তর না পেয়ে আবার করছি| ওয়াসওয়াসা …

No comments

  1. apni arek joner meye vagaichen,apnar meyereo arek bujurgo pola vagaibe, tokhon buzhben lemon moja.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *