প্রচ্ছদ / আজান ও ইকামত / ইকামত শুরু হলে নামায ভেঙ্গে দিতে হবে মর্মের ইবনে উসাইমিন রহঃ এর ফাতওয়াটি কি সঠিক?

ইকামত শুরু হলে নামায ভেঙ্গে দিতে হবে মর্মের ইবনে উসাইমিন রহঃ এর ফাতওয়াটি কি সঠিক?

প্রশ্ন

ভাঈয়া , আমার নাম – উম্মে মারুফা আক্তার , কুমিল্লা

ভাইয়া , এটার সত্যতা কত টূকূ ?

শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ উছাইমীন (রহঃ)কে প্রশ্ন করা হয়েছিলঃ
নফল বা সুন্নাত নামায শুরু করে দিয়েছি। এমন সময় ফরয নামাযের ইক্বামত হয়ে গেল। এখন কি করব?
তিনি উত্তর দিয়েছেনঃ
সুন্নাত বা নফল নামায শুরু করার পর যদি ফরয নামাযের ইক্বামত হয়ে যায়, তবে বিশুদ্ধ ও মধ্যপন্থী মত হচ্ছেঃ ইক্বামত দেয়ার সময় আপনি যদি শেষ রাকাআতে থাকেন তবে হালকা করে সেই রাকাআত পূর্ণ করে নিন। আর যদি প্রথম রাকাআতেই থাকেন তবে নামায ছেড়ে দিন। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি এক রাকাআত নামায পেল, সে নামায পেয়ে গেল।” (বুখারী ও মুসলিম)

যখন আপনি ইক্বামতের পূর্বে এক রাকাত ছালাত পড়েছেন, তখন নিষিদ্ধ সময়ের আগেই এক রাকাত পড়ে নিয়েছেন। আর যে এক রাকাত নামায পড়ে নিয়েছে সে পূর্ণ নামাযই পেয়েছে। কিন্তু সে অবশিষ্ট রাকাত হালকাভাবে আদায় করবে। কেননা নফল নামাযের এক অংশ পাওয়ার চাইতে ফরয নামাযের এক অংশ পাওয়া অনেক উত্তম। কিন্তু আপনি যদি প্রথম রাকাতেই থাকেন তবে তো পূর্ণ নামায পাওয়ার সময়ই পেলেন না। অতএব এ অবস্থায় আপনি নামায ছেড়ে দিবেন।

কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْمَكْتُوبَةَ
“যখন কোন নামাযের ইক্বামত দেয়া হয়; তখন উক্ত ফরয নামায ছাড়া আর কোন নামায নেই।” (মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায, অনুচ্ছেদঃ মুআয্যিন একামত শুরু করলে নফল শুরু করা মাকরূহ)
দ্রঃ ফতোয়া আরকানুল ইসলাম ৩০১ নং প্রশ্নের উত্তর।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

শায়েখ উসাইমিন রহঃ এর উপরোক্ত ফাতওয়াটি সঠিক নয়। তার বক্তব্যটি পবিত্র কুরআনের আয়াতের খিলাফ। কারণ কুরআনে এসেছে পরিস্কার ভাষায়-

وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ [٤٧:٣٣

নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না। {সূরা মুহাম্মদ-৩৩}

আল্লাহ পাক নিজের আমলকে ধ্বংস করতে নিষেধ করেছেন। আর এক রাকাত পড়ার বাকি এক রাকাত না মিলিয়ে নামায ছেড়ে দেয়ার মানেই হল নামাযটি নষ্ট করে ফেলা। কারণ নামাযের সর্বনিম্ন পূর্ণতা হল দুই রাকাত পূর্ণ করা।

তাই এক রাকাত পড়েই নামায ভেঙ্গে ফেলার দ্বারা কুরআনের আয়াতের বিপরীত কাজ করা হচ্ছে। তাই একাজটি জায়েজ নয়।

সুতরাং ইকামত দাড়িয়ে গেলে বাকি এক রাকাত মিলিয়ে দুই রাকাত পূর্ণ করতে হবে।

আর যে হাদীসে বলা হয়েছে যে, “যখন কোন নামাযের ইক্বামত দেয়া হয়; তখন উক্ত ফরয নামায ছাড়া আর কোন নামায নেই।” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ইকামত হয়ে গেলে নতুন করে নামাযের নিয়ত করা নিষেধ। কিন্তু ইকামত শুরুর আগে থেকেই যে নামায পড়া হচ্ছে এ ব্যাপারে এ হাদীসে কিছুই বলা হয়নি। বলা হয়েছে ইকামত শুরুর পর নতুন করে কোন নামায নেই সে কথা। তাই একামত শুরুর আগে থেকে যে নামায পড়া হচ্ছিল সে নামায বাতিল করার দলীল এ হাদীস দিয়ে দেয়া কিছুতেই ঠিক হয়নি।

একটি প্রশ্ন

যদি ইকামত শুরু হলে নামায নেই মর্মের হাদীসটির উপর ভিত্তি করে কোন নামাযই পড়া যাবে না মর্মের মতটি সঠিক হয়, তাহলে তিনি এক রাকাত পড়ে নামায ভেঙ্গে ফেলার ফাতওয়া দিলেন, কিন্তু দ্বিতীয় রাকাতে থাকা অবস্থায় কেন সালাম না ফিরিয়ে নামায ভেঙ্গে জামাতে শরীক হবার ফাতওয়া দিলেন না?

এ পার্থক্য করার কারণ কি? তিনি নিজেই অজ্ঞাতসারে একথা মেনে নিলেন যে, ইকামত শুরু হলে কোন নামাযে রত থাকলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে মর্মের তার ফাতওয়াটি ভুল প্রমাণ করে দিলেন তাই নয় কি?

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *