প্রচ্ছদ / পরিবার ও সামাজিকতা / গায়রে মাহরামের সাথে কথা বলার সময় চেহারার দিকে তাকানোর হুকুম কি?

গায়রে মাহরামের সাথে কথা বলার সময় চেহারার দিকে তাকানোর হুকুম কি?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,

আশা করি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন, আমার প্রশ্নটি হচ্ছেঃ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,

কুদৃষ্টি বা কুনজর ব্যতিত, প্রয়োজনীয় কথা বলার সময় গায়রে মাহরামদের শুধুমাত্র চেহারার দিকে দৃষ্টিপাত করা কি জায়েজ? রক্ত সম্পর্কীয় গায়রে মাহরামদের (মামাতো-খালাতো, ফুফাতো-চাচাতো বোন) সাথে রাস্তায় দেখা হলে কিরূপ আচরণ করবো? ঘরে বা কোনো আত্নীয়র বাসায় দেখা হলে কুশল বিনিময়ের হুকুম কি? আশা করি কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,

ইবনে আবদুল্লাহ, ঢাকা, বাংলাদেশ।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

গায়রে মাহরাম নারীদের চেহারার দিকে তাকানো জায়েজ নয়। আসলে মানুষের মূল সৌন্দর্য চেহারার মাঝেই নিহিত থাকে। যদি চেহারার দিকে তাকানোর হুকুমই থাকে, তাহলে আর পর্দার মৌলিকত্ব কিছুই বাকি থাকে না।

আত্মীয়তা রক্ষাও আবশ্যক। সেই হিসেবে আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা হলে যদিও তারা গায়রে মাহরাম হয়, তাহলেও তাদের সাথে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলবে। যেমন কেমন আছে? পরিবারের অন্য সদস্যারা কেমন আছে? ইত্যাদি।

ফিতনার আশংকা থাকলে প্রয়োজনীয় কথা দ্রুত সংক্ষেপ করে চলে আসা কর্তব্য।

মোটকথা, একজন আত্মীয় হিসেবে যতটুকু সৌজন্যতা রক্ষা করা যায় পর্দা রক্ষা করে এবং ফিতনায় না জড়িয়ে ততটুকু করবে।

يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}

উক্ত সমূহে পরিস্কার ভাষায় মেয়েদের অন্যের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে, অপ্রয়োজনে কথা বলতে, আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। যা পরিস্কার ভাষায় জানাচ্ছে যে, ফেইসবুকে প্রয়োজন ছাড়া মেয়েদের বন্ধু বানানো, তাদের সাথে কথা বলা জায়েজ নয়।

দ্বীনী কোন বিষয় থাকলে কম কথায় শেষ করে নিবে। অযথা কথা বলা হারাম।

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}

বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

পুরুষের কাফনে পাগড়ি পরিহিত করানোর হুকুম কী?

প্রশ্ন মৃত ব্যক্তি পুরুষ হলে তার কাফনে টুপি পাগড়ি পরিধান করিয়ে কাফন দেয়া কি জায়েজ? …