প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / যেভাবে পালিয়েছেন কথিত আহলে হাদীস শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ [পর্ব-১]

যেভাবে পালিয়েছেন কথিত আহলে হাদীস শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ [পর্ব-১]

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

আমাদের দেশের নতুন ফিতনা গায়রে মুকাল্লিদীন/লা-মাযহাবী ভাইদের শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেব আমি অধমকে নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। ইচ্ছে করেই চুপ ছিলাম এই ক’দিন। আজ বসলাম একে একে পুরো বিষয়টি পুরিস্কার করবো বলে। ওয়ামা তাওফীকি ইল্লাবিল্লাহ।

যেভাবে আলোচনাটি সাজানো হয়েছে

মোহনা টিভির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজি হলাম কেন?

পূর্ণ বিবরণ দিতে দেরী করা হল কেন?

অনুষ্ঠানে উপস্থিতি, কথোপথন এবং আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের পলায়ন পর্যন্ত পূর্ণ হালাতের বিস্তারিত বিবরণ।

আব্দুর রাজ্জাক সাহেব এবং তার অনুসারী ভাইদের বক্তব্য সম্বলিত লেখা ও ভিডিও এবং তাতে উদ্ধৃত মিথ্যাচার স্পষ্ট করণ।

আল্লাহ তাআলা ও পাঠকদের কাছে বিচারের ভার ন্যস্ত করণ এবং ভ্রান্ত ফিরকাপন্থীদের জন্য হেদায়াতের দুআ কামনা।

ইনশাআল্লাহ উপরোক্ত ৫টি ধাপে আলোচনাটি করা হচ্ছে। আশা করি পুরোটা পড়ার আগে কোন পাঠকই মন্তব্য করবেন না। জাযাকুমুল্লাহ।

মোহনা টিভির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজি হলাম কেন?

“আর কোন টিভি অনুষ্ঠানে যোগ দিব না”বলে মনস্থির করে ফেলেছিলাম। বাণিজ্যিক চ্যানেলে ২০/২৫ মিনিটের ইসলামী অনুষ্ঠানকে দ্বীন প্রচারের নামে তামাশা মনে হতো আমার। গ্যাটআপ, স্যুটিং, ড্রেসআপ সব মিলিয়ে পুরোটাই একটি ন্যাকামী বলে মনে হতো।

সেই সাথে যারা কোন দিন টিভি দেখেননি, তাদেরও ইসলামী অনুষ্ঠানের নামে টিভি দেখতে পরোক্ষভাবে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে। মানে হল, আগে সাধারণত টিভি দেখতো কলেজ ভার্সিটির ছেলেরা। এখন আলেম উলামাদের ঘরেও টিভি ঢুকার ছুতো তৈরী করে দিচ্ছে এসব ঠুনকো ইসলামী অনুষ্ঠান। এমনটাই মনে হতো আমার।

তাই মানসিকভাবে এসব অনুষ্ঠানে আর যোগ দিবো না বলেই স্থীর করে নেই। কিন্তু হঠাৎ মাদরাসায় এসে হাজির হন তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রিয় ব্যক্তিত্ব মাওলানা ইসহাক খান ও মাওলানা মনজুর এলাহী সাহেব। মোহনা টিভির রমজান বিষয়ক অনুষ্ঠানের কথা জানান।

সেই সাথে দ্বীনী খিদমাতকে আম করে ছোট খাট মতভেদকে ভুলে এক হয়ে কাজ করার একটি স্বাপ্নিকতার কথা শুনান। সালাফী হানাফী দ্বন্দ ভুলে এক হয়ে নাস্তিক ও বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করার প্রত্যয়তা প্রকাশ করেন।

মনে নাড়া দেয় কথাগুলো আমার। ভাল লাগে পরিকল্পনাটি।

এমনটি হওয়াইতো উচিত। চারিদিকে আজ মুসলমানদের শত্রু। নাস্তিকতা দিন দিন ভয়ানক হারে বেড়ে চলছে। বেড়ে চলছে খৃষ্টান মিশনারীদের ধর্মান্তর। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি এলাকাসহ আমাদের দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে খৃষ্টান-মিশনারী চক্র খুবই তৎপর হয়ে উঠেছে। লালমনিরহাট,গাজীপুর, ঝিনাইদহ, রংপুর, পাবনা, ময়মনসিংহের দুর্গাপুর, নেত্রকোনা, হালুয়াঘাট, সিরাজগঞ্জসহ বেশ কিছু জেলায় অর্থকড়ির প্রলোভন দেখিয়ে তারা খৃষ্টান বানাচ্ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে স্কুল ও সেবা সংস্থা খুলে মুসলমানদের খৃষ্টান বানানোর কাজ করে যাচ্ছে নির্দ্বিধায়।

# সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন মতে গত বিশ বছরে সেবার নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১২ হাজার মানুষকে  খ্রীষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে (দৈনিক আমার দেশ-১২ই আগষ্ট-২০১১ ইং)।

# ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৫ এর মাঝে শত শত মুসলমানকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে খৃষ্টান বানানো হয়। (দৈনিক ইত্তেফাক-২৩শে এপ্রিল-২০১১ ইং)।

# সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ২৫ নারী-পুরুষের ইসলাম ত্যাগ: এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা (দৈনিক অপরাধ কণ্ঠ-৪ই ডিসেম্বর-২০১১ইং,)

এতো হল পত্রিকা ও সরকারী প্রতিবেদন। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। টাকা-পয়সার প্রলোভন ও কুরআনের অপব্যাখ্যা করে একের পর এক মুসলমানদের খৃষ্টান বানিয়েই চলছে খৃষ্টান মিশনারী ও এন.জি.ও নামধারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

অপরদিকে কাদিয়ানীরা সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে বানিয়ে চলছে কাদিয়ানী কাফের। সেই সাথে শিয়ারাও নেমেছে কোমর বেঁধে। কবর আর মাজারপূজারীরা পসার সাজিয়ে চলছে একের পর এক। সেই সাথে সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি মুসলমানদের শক্তিহীন করতে সব ধরণের ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে চলছে নিরলস। মিডিয়া আমাদের খেলাফ। প্রশাসন আমাদের খেলাফ। দেশের শাসক আমাদের খেলাফ। চারিদিকে ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুরা ছড়িয়ে আছে। এমতাবস্থায় আমরা নিজেদের একতা ভঙ্গের সকল কাজই করে যাচ্ছি কথিত বীরত্বের সাথে।

যে কাজ জীবনে কোনদিন না করলেও নামায ভাঙ্গবে না, এমন সব কাজ নিয়ে নিজের ভাইয়ের সাথে মারাত্মক ঝগড়ায় মেতে উঠি। বন্ধ করে দেই দেখা সাক্ষাৎ। মুখ দিয়ে ছুটাই খিস্তি খেউর। আমীন বলা, বুকে হাত বাঁধা, সূরায়ে ফাতিহা পড়া ইত্যাদি গায়রে ফরজ মাসআলা নিয়ে অযথা বিতর্ক করে পুরো দ্বীনটাই করে দিচ্ছি সন্দেহযুক্ত। মানুষকে করে চলছি ধর্ম সম্পর্কে সন্দিহান।

যেখানে প্রয়োজন দৃঢ় একতা। সেখানে গড়ে তুলছি একের পর বিভক্তির দেয়াল। উত্তম অনুত্তমের মাসআলা নিয়ে এমন লড়াইয়ের অবতারণা করছি আমরা যা কোন কাফেরের বিরুদ্ধে কোনদিন করেছি কি না? নিজের বিবেককে নিজেরাই একটু জিজ্ঞেস করে দেখি।

বে-নামাজীকে নামাযী বানানোর মেহনত রেখে নামাযীকে বে-নামাযী সাব্যস্ত করার ছুতো খুজে বেড়াচ্ছি হরদম। এ জঘন্য কাজটি সমাধা করতে রাসূল সাঃ এর হাদীসকে পর্যন্ত বানিয়ে ফেলছি প্রতিপক্ষ। নিজের মতের উল্টো হলেই হাদীসকে অস্বিকার করে বসছি। সেই সাথে জাল ও বানোয়াট বলে রাসূলের হাদীসের উপর আরোপ করছি জঘন্য অপবাদ।

এভাবে আর কতদিন? কার ক্রীড়ানক হয়ে এসব করছে আমাদের নামধারী আহলে হাদীস/গায়রে মুকাল্লিদ/শব্দধারী মুসলিম বা লা-মাযহাবীরা? কার অর্থ পেয়ে এভাবে আমাদের বিভক্ত করার মিশনে নেমেছে ওরা?

নাস্তিক, শিয়া, কাদিয়ানী, স¤্রাজ্যবাদ ও ধর্মান্তর বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে নামাযীদের বে-নামাযী সাব্যস্ত করার এ মিশন কার তৈরী করা? কার স্বার্থ হাসিলের জন্য এত কসরত ভাইদের?

যারা এসব করছেন, যারা এসব ফিতনা আমাদের দেশে আম করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত তাদেরই দু’জন গুরুর সাথে সরাসরি কথা বলার সুযোগ হবে। জাতির সামনে তাদের অহেতুক বিতর্কের কথা, মিথ্যা অহমিকার কথা প্রামাণিকভাবে উপস্থাপিত করা যাবে মনে হতেই পুলক অনুভব করি। সিদ্ধান্ত নিয়ে এসব অনুষ্ঠানে অবশ্যই যোগ দেয়া উচিত।

যাইহোক, ইসহাক ভাই মাওলানা মনজুর এলাহী সাহেব যখন বললেন মোহনা টিভিতে একটি অনুষ্ঠান করবেন রমজানে। যাতে সালাফী/আহলে হাদীস নামধারী দুইজনও থাকবেন অতিথি হিসেবে। একজন হলেন কাজী ইব্রাহীম সাহেব অপরজন থাকবেন আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেব।

অনুষ্ঠান হবে দুটি। প্রতিটি অনুষ্ঠান হবে ৪০ মিনিট করে। এমনিতে রমজানের জন্য ২৫মিনিট করে অনুষ্ঠানের সিডিউল করা হয়েছে। কারা কারা কথা বলবেন তাদের নামের একটি লিষ্টও আমার সামনে উপস্থাপন করলেন।

তো আমাদের নিয়ে যে অনুষ্ঠান হবে সেটি হবে টকশো। সালাফী আলেমদের পক্ষ থেকে একজন থাকবেন আর আমাদের পক্ষ থেকে একজন থাকবেন। দ্বিতীয় অনুষ্ঠানও এমনি হবে। আলোচনা হবে আন্তরিকতার সাথে। যেন উভয় মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মাঝে যে দূরত্ব আছে সেটি যেন কমে যায়। সেই সাথে অহেতুক বিতর্কিত বিষয় পরিহার করে পারস্পরিক একটি আন্তরিকতা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই ছিল এ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য।

জানতে চাইলাম- আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ এবং কাজী ইব্রাহীম সাহেব অনুষ্ঠানে যোগদানের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন? বলা হল তারা আগ্রহের সাথেই রাজি হয়েছেন।

ভাবতে লাগলাম। কি করবো? একদিকে পারিবারিক চাপ। কেউ রাজি না।

আমরা টিভিতে অনুষ্ঠান করে কাদের আহবান করছি টিভি দেখতে? যারা টিভিতে নাটক সিনেমা দেখে তারা কি আমাদের এসব অল্প সময়ের এসব সাজানো ইসলামী অনুষ্ঠান দেখেন?

যাদের বাসায় টিভি নেই, যারা কোনদিন টিভি দেখেন না তাদের কি টিভি দেখতে প্রলুব্ধ করছি আমরা?

ভাল কাজতো কিছুই করতে পারিনি এখন পর্যন্ত। কিন্তু গোনাহের কাজে পথ দেখিয়ে গোনাহে জারিয়া নিয়ে কবরে গেলে উপায় কি হবে?

দ্বিধা-দ্বন্দের মাঝ দিয়েই এগিয়ে আসছিল সময়। রমজান এসে গেল। হঠাৎ আবার কল পেলাম ইসহাক ভাইয়ের। ২৯ বা ৩০ শে জুন হবে দিনটা। জানালেন ৫ই জুলাই হবে রেকর্ড। থাকতেই হবে। কাজী ইব্রাহীম ও আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেব আসছেন।

বললাম দেখা যাক, সময় আসুক।

দ্বিধা তবু কাটেনি। অনুষ্ঠানের রেকর্ড হবে ৫ ই জুলাই শনিবার। যাব কি যাবো না? এ সিদ্ধান্ত না নিতে পেরে চলে যাই গ্রামের বাড়িতে।

৩ই জুলাই বৃহস্পতিবার আবারো কল দিয়ে ইসহাক ভাই জানালেন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা। কাজী ইব্রাহীম এবং শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ উভয়ে আসবেন বলে জানিয়েছে, সেখানে আমরা না যাওয়া মানে পালিয়ে যাওয়ার সমার্থক হয়ে যাবে, তাই যেতেই হবে বলে জানালেন ইসহাক ভাই।

সারাদিন যারা আমাদের ভ্রান্ত দলীলহীন দল বলে গলা ফাটায় তাদের দলীলের হীনতা প্রকাশ করার এটাই মুক্ষম সুযোগ হবে বলে ভাল লাগল। রাজি হয়ে গেলাম অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার ব্যাপারে। গ্রামের বাড়ি থেকে জুমআ পড়েই ঢাকা চলে এলাম।

ভাবতে লাগলাম যার সাথে কথা বলবো। লোকটি কী বলে থাকে? সেটিতো জানা দরকার। তাই সার্চ শুরু করলাম ইউটিউবে। বেশ কিছু মাহফিলের বয়ান ও জুমআর খুতবা পেলাম আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের। রাতের ঘুমটা নষ্ট করে শুনতে লাগলাম হযরতের বয়ান। রাতে আর ঘুমাইনি। সারা রাত বয়ান শুনেই কাটালাম।

আফসোস হল অনেক। বয়ান যত শুনলাম, আফসোস বাড়ল তত।

এ দেশের যুব সমাজের হালাত দেখে অবাক হলাম। কাকে শায়েখ বলবে? কেন শায়েখ বলবে? তা কি বুঝে এসব যুবকরা? কার পিছনে ছুটে চলে? কেন ছুটে চলে? অশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ, অশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত, উদ্ভট শব্দের হাদীস উচ্চারণ, প্রচুর পরিমাণ ভুল ও মনগড়া ব্যাখ্যাকারী ব্যক্তিকে বানিয়ে নিয়েছে বিশাল শায়েখ। ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মত জগতশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের মতামতও যাদের কাছে মূল্যহীন কিন্তু এসব শায়েখের বক্তব্য গলার মালা। হায়রে শিক্ষিত! হায়রে এদেশের শিক্ষিত বোকা!

অবশেষে এসে গেল ৫ই জুলাই ২০১৪ ঈসাব্দ শনিবার দিন। ঠিক নয়টায় পৌঁছে গেলাম আগারগাঁও ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিসে।

বাকি বিবরণ পরে আসছে ইনশাআল্লাহ।

পূর্ণ বিবরণ দিতে দেরী করা হল কেন?

মোহনা টিভিতে অনুষ্ঠান ধারণ করতে যাওয়ার পর শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের সাথে হওয়া কথোপথন এবং পরবর্তীতে অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে হযরতের পলায়ন সম্পর্কিত পূর্ণ বিবরণ দিতে আমি কেন দেরী করলাম? এ প্রশ্নটি অনেকেই করেছেন অধমের কাছে।

এর আসল কারণ আসলে অনেকই। যথা-

বেচারা শায়েখের নেকাব জাতির সামনে আরো উন্মোচিত হোক, আর তিনি লজ্জিত হোন এটি চাইনি।

সামান্য সামান্য বিষয় নিয়ে নিজেদের মাঝের বিবাদকে প্রকাশ করে নাস্তিকদের হাসাতে চাইনি।

অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগ থেকেই শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেবের ভক্তরা বেশ লাফাচ্ছিলেন, আমি আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের সামনে নাকি দাঁড়াতেই পারবো না। আমাকে পালাতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রমাণ স্বরূপ একটি মন্তব্য- https://www.facebook.com/lrfarazi/posts/805104522857839?comment_id=805742489460709&offset=0&total_comments=168|

শুধু তাই নয়, এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে নাকি আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেব জানেনই না। মাযহাব বিষয়ে তিনি কোন কথা বলবেন না, এসব করলে নাকি ফিতনা হয়। তাই তিনি এসব অনুষ্ঠানে আসবেন না বলে তার এক ভক্তকে জানিয়েছেন।

আমি পালিয়ে যাব একথা যারা প্রচার করেছেন, তাদের সামনে যখন তাদের শায়েখই পালিয়ে গেছে মর্মে প্রমাণিত হয়ে গেল, তখন আর কি কি মিথ্যা ছলনা করতে পারেন? তাদের শায়েখই বা তার খোলস ছেড়ে বের হয়ে আরো কি কি মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন? এসবই দেখার আমার খুব ইচ্ছে ছিল। যেন জাতির সামনে পরিস্কার হয়ে যায়, গায়রে মুকাল্লিদীন তথা লা-মাযহাবী বা কথিত আহলে হাদীসী মাযহাবের অনুসারী মানেই মিথ্যুক হওয়া। এ মাযহাবে প্রবেশ মানেই ধোঁকা দেয়া। এটি যে, তাদের উপরের শায়েখ থেকে নিয়ে নতুন সদস্য সবার ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য এটি একটি ধ্রুবসত্য। তা হাতেনাতে জাতির সামনে আসুক এটিও আমার একটি ইচ্ছে ছিল।

আল্লাহর হাজার শুকরিয়া। তিনি আমার ইচ্ছেকে পূর্ণ করেছেন। শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের নিজস্ব বক্তব্য পিস টিভির ভিডিওগ্রাফার দিয়ে ধারণ করে তা ইউটিউবসহ ফেইসবুকে আপলোড হয়ে গেছে। যাতে তিনি আমি অধমের ব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছেন। সেই সাথে গালাগাল করেছেন। এবং অনুষ্ঠান স্থল থেকে পালিয়ে আসার কথা নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন। যার বিবরণ ইনশাআল্লাহ সামনে আসছে।

পিস টিভির ভিডিওগ্রাফার দিয়ে ভিডিওটি ধারণ করার পূর্বে হযরতের ছেলে আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক সাহেব আমাকে গালাগাল করে আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের কয়েকটি বক্তব্যও উদ্ধৃত করেছেন। যা ফেইসবুকে হযরতের বক্তব্য হিসেবে তার ছেলে প্রচার করেছেন। যা এখন আমাদের সামনে রয়েছে। যে বক্তব্যটি দ্বারাও এ ফিরকাটি মিথ্যাবাদী জামাত হওয়ার আরেকটি জ্বলন্ত প্রমাণ ধারণ করছে আলহামদুলিল্লাহ।

এসব পরিস্কার হোক এ আশায় এতদিন লেখাটি দিতে দেরী করা হয়েছে।

৪-   নরপশু ইসরাঈলী কুকুরদের হাতে আমাদের মা-বোন ও ভাইদের নির্মমভাবে শহীদ হতে দেখে নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সমস্ত লেখালেখি বন্ধ করে হয়েছিলাম বাকরুদ্ধ। কি হচ্ছে এসব এ পবিত্র রমজান মাসে?

আমাদের আবেগ-অনুভূতির উপর ধিক্কার আসছিল। সামান্য সামান্য বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে কি পরিমাণ ক্ষোভ জাগে। কি পরিমাণ প্রতিহিংসা জাগে। কিন্তু আমার ভাইকে গুলি করে মারছে। বোনের ইজ্জত হরণ হচ্ছে, ছোট্ট ছোট্ট শিশুকে জ্বলন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, অসহায়ভাবে কাতরাচ্ছে লাখ যুবক। যারা আমার ভাই। একই শরীরের অঙ্গ বলে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন।

কিন্তু আমি নির্বাক। আমি আমীন জোরে বলা আর আস্তে বলা নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত। আর অপরদিকে ঝাঁজরা হচ্ছে আমার ভাইয়ের বুক। অথচ আমাদের মাঝে নেই সামান্যতম একতা। সেই যে ১২৪৬ থেকে ইংরেজদের থেকে রেজিষ্ট্রি করে আহলে হাদীস নামক বিষবাষ্প এ উপমহাদেশে আমদানী হল, তারপর থেকেই শুরু হল আমাদের পারস্পরিক দ্বন্দ। মসজিদে মসজিদে বিবাদ, ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ। কি শুরু করল এসব ফিতনাবাজ আহলে হাদীস নামধারীরা?

একতাকে বিনষ্ট করে শতধা বিভক্ত করার এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারী কথিত আহলে হাদীসদের উপর বেশ ক্ষোভ জন্মালেও একতার তীব্র প্রয়োজন অনুভব করে মিলে যাওয়ার প্রয়াসী হতে মন চাইল।

ইহুদী খৃষ্টান কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে এক হয়ে কাজ করার তীব্র অনুভব মনে জাগরিত হতে থাকল। অহেতুক বিতর্কের পথ পরিহার করে এক ঝান্ডার নিচে একত্রিত হবার আকাংখা মনের কোণায় বাসা বাঁধছিল।

গাজায় ইজরাঈলী বর্বরতার দৃশ্য দেখে লেখা বা জবাব দেয়ার কোন আগ্রহ বাকি না থাকায়ও দেরী হল এ পূর্ণ বিবরণী পোষ্ট দিতে।

কিন্তু আফসোস! মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা নয়। নিজেকে জাহির করা, ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং মুসলমানদের বিবাদ বিভক্তি সৃষ্টি করাই যাদের মূল লক্ষ্য, সেই কথিত আহলে হাদীসী মাযহাবীদের ফিলিস্তিনী অসহায়দের দিকে তাকানোর সময় কোথায়? কোথায় তাদের জন্য সহমর্মী হয়ে অহেতুক আলোচনা বন্ধ রাখার? আগে বাঁচতে হবে তাদের ফিতনার প্লাটফর্ম। বাঁচতে হবে তাদের কথিত সম্মান। এসবের সামনে ফিলিস্তিনী শিশুর আর্তনাদ কিছুই না। কাতরে মরা ফিলিস্তিনী মুসলিম মায়ের আহাজারী এতো অরণ্যে রোদন যেন।

তর সইল না আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের। জোশের সাথে গাজায় ইজরাঈলী পশুদের বোম্বিংয়ের সাথে তাল মিলিয়ে আরেকটি মিথ্যাচারের বোমা ছুড়লেন। যা এখন পিস টিভির [Peace Tv Edutainment]  নিজস্ব পেইজসহ ছড়িয়ে আছে ব্লগ, সামাজিক সাইট ও ইউটিউবে।

ভিডিওটি পিস টিভির কর্তৃপক্ষ আপলোড করতেই আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের ভক্তরা ছড়িয়ে দেন নেটের পাতায় পাতায়।

এমন পরিস্থিতিতে লেখতে মন সায় দিচ্ছে না। তবু দ্বীনে হককে মানুষের সামনে পরিস্কার করে তুলতে, আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পূর্ণ বিবরণীমূলক এ পোষ্ট করা হচ্ছে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের হককে হক হিসেবে বুঝে তা গ্রহণ করার তৌফিক দিন। সেই সাথে বাতিলকে বাতিল হিসেবে বুঝে তা থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।

২য় পর্ব

0Shares

আরও জানুন

ওয়েব সাইট পরিচালনা খরচ নির্বাহে সহযোগী হই!

السلام عليكم ورحمة الله وبركاته আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ! সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আপনাদের দুআর …

7 comments

  1. Zajakalla, Haiyakallah,Barakalllahu fi khidmatikum. [Amin}

  2. যাযাকাল্লাহ। হকের পথে যারা থাকে তারা কখনও পিছপা হয় না।

  3. জাযাকাল্লাহ ভাই আল্লাহ তাআলা আপনাকে দিনের জন্য কবুল করুন।আমিন

  4. মাহফুজুর রহমান

    جزاكم الله خيرا-ياخادم الدين-

  5. ammeen

  6. এসবের সামনে ফিলিস্তিনী শিশুর আর্তনাদ কিছুই না। কাতরে মরা ফিলিস্তিনী মুসলিম মায়ের আহাজারী এতো অরণ্যে রোদন যেন।
    I support you brother. Carry on… Allah will help you, Insha-Allah.

Leave a Reply to shaker Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *