প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / যেভাবে পালিয়েছেন কথিত আহলে হাদীস শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ [পর্ব-২]

যেভাবে পালিয়েছেন কথিত আহলে হাদীস শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ [পর্ব-২]

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পর্ব-১ পড়ে নিন

অনুষ্ঠানস্থলে গমণ ও কথোপথনের পূর্ণ বিবরণ

নির্ধারিত সময় নয়টার মাঝেই আমি ও মুফতী মাহবুবুর রহমানসহ পৌঁছে যাই আগারগাঁও ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিসে। কিছুক্ষণ পর আসেন মাওলানা ইসহাক খান এবং মাওলানা মনজুর এলাহি। এক সাথে রওনা দেই ভিতরে প্রবেশের জন্য। চলতে চলতে জিজ্ঞাসা করি- “আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেব আসবেনতো? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তিনি আসবেন না।”

হযরতরা বললেন- “সর্বশেষ কথা অনুপাতেতো আসার কথা। দেখবেন ইনশাআল্লাহ আসবে।”

সন্দেহ লাগছিল। আহলে বাতিল সর্বদা আহলে হকের সামনে আসতে ভয় পায়। তারা শুধু সাধারণ মানুষের সামনে চ্যালেঞ্জবাজী করে থাকে। কিন্তু আলেম উলামাদের সামনে কখনোই দাঁড়ানোর সাহস রাখে না। তাহলে আব্দুর রাজ্জাক সাহেব কি খুবই সাহসী মানুষ। প্রকাশ্যে টিভি সেটের সামনেউলামায়ে দেওবন্দের সামনে বসে নিজের প্রচারকৃত আহলে হাদীসী মাযহাবকে প্রমাণিত করার দুঃসাহস দেখাতে পারবেন? আহলে বাতিল হওয়া সত্বেও এতটা মানসিক শক্তি কি তিনি অর্জন করে ফেলেছেন? বিশ্বাস হচ্ছিল না। হাটতে হাটতে আমরা তিন তলায় চলে গেলাম। এরই মাঝে জানতে পারলাম তিনি এসেছেন। শুনে খুশি হলাম।

সরাসরি দেখে ভাল মানুষই মনে হয়েছে। সাথে ছিল আল-আমীন মসজিদের মুতাওয়াল্লি নজরুল ইসলাম এবং প্যান্ট শার্ট পরিহিত হযরতের দুই ভক্ত। আমি এবং মুফতী মাহবুবুর রহমান সাহেব এগিয়ে গিয়ে আব্দুর রাজ্জাক সাহেবকে সালাম দিয়ে মুসাফাহা করি। তারপর সালাম মুসাফাহা করি নজরুল ইসলাম সাহেবের সাথে।

এরপর সবাই রওনা দেই অনুষ্ঠান যে রুমে ধারণ হবে সেই স্টুডিও এর দিকে। আগে আগে যাচ্ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক সাহেব, ইসহাক খান ও মনজুর এলাহি। এর পিছনে নজরুল ইসলাম সাহেব এবং হযরতের দুই ভক্ত। তারপরই আমি ও আমার অপর সাথি।

যেখানে অনুষ্ঠানটি ধারণ হবে এর পাশের রুমে সবাইকে বসার ব্যবস্থা করা হল। যেহেতু হযরতরা আগে ছিলেন। তাই সেই হিসেবে রুমটিতে তারা আগে প্রবেশ করলেন। এরপর আমরা প্রবেশ করলাম। আমার ডান পাশে বসা ছিল আল আমীন মসজিদের মুতাওয়াল্লি নজরুল ইসলাম সাহেব। সর্বোচ্চ তিন হাত দূরের সামনের সোফায় বসা ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক সাহেব। আর বাম পাশের সোফায় মুফতী মাহবুব। তার পাশে আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের সাথে আসা দুই ভক্ত বসেছিল।

আমি প্রথম থেকেই শংকিত ছিলাম আব্দুর রাজ্জাক সাহেব কোন ছুতো বের করে না-জানি অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে চলে যায়। তাই সংকল্প করে নেই, ক্যামেরার সামনে বসার আগে হযরতের সাথে কোন কথা বলবো না। চুপচাপ বসে থাকি।

কিন্তু আমার ডান পাশে বসা নজরুল ইসলাম সাহেবতো চুপ থাকার ব্যক্তি নয়। আগেই বলেছিলাম তিনি একটি টকিং মেশিন। যার স্টপ বাটন কোথায় তা আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। কথা শুধু বলতেই থাকেন, বলতেই থাকেন। তবে বেশ মজার মানুষ মনে হল তাকে। কিন্তু আহলে হাদীসী শায়েখরা এসব সাধারণ দ্বীনদার মানুষকে কথায় আচরণে বানিয়েছে দাম্ভিক এবং উগ্র। এর দোষ আমি মুরুব্বীর উপর চাপাবো না, এর দোষ কথিত আহলে হাদীসী শায়েখদের। তারা এসব সরলপ্রাণ লোকদের মনে আলেমদের সম্পর্কে বিদ্বেষ ঢেলে দিয়েছে।

যাইহোক, কথা বলতে ছিলেন নজরুল ইসলাম। তিনি সূচনা করেন পরিচয় পর্বের। প্রথমে নিজের পরিচয় দেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তারপর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরি করেছেন। তারপর আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি কী করি?

বললাম- একটি মাদরাসায় আছি।

নজরুল ইসলাম- কোন মাদরাসায়?

আমি- জামিয়াতুল আস’আদ আলইসলামিয়া রামপুরা।

নজরুল ইসলাম-দেশের বাড়ি কোথায়?

আমি- নরসিংদী।

নজরুল ইসলাম- আরে আমি নরসিংদী চিনিতো। সেখানে চাকরির সুবাধে থেকেছি। গিয়েছি।

আরো অনেক কথাই বলতেছিলেন নজরুল সাহেব। তারপর একে একে মুফতী মাহবুবের পরিচয় নেয়া হল। আমার ছেলে মেয়ে কয়জন তাও প্রশ্ন করে জেনে নিলেন নজরুল সাহেব। তারপর পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলেন আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের সাথে। আমি বললাম, “আমি তাকে চিনি। তার ভিডিও দেখেছি।”

আমার কথা শুনে আবার টকিং মেশিন স্টার্ট দিলেন নজরুল ইসলাম সাহেব। এক নাগাড়ে অনেক কথাই বললেন, বলতে লাগলেন-“তাকেতো সারা দুনিয়ার বাঙ্গালীরাই চিনে। দেশ বিদেশে প্রোগ্রাম করে থাকেন। তাকেতো চিনার কথাই। আমার মসজিম মুহাম্মদপুরের আলআমীন মসজিদ। এই মসজিদের মুতাওয়াল্লি আমি। সেখানে ৫জন খতীব আছে। আমার পাশে বসা মুফতী মাহবুবুর রহমান জিজ্ঞাসা করল, কে কে?

নজরুল সাহেব বলতে লাগলেন- কাজী ইব্রাহীম, মুজাফফর বিন মুহসিন, তারপর আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ আরো আছে। প্রতি মাসে সবাই জুমআ পড়ানোর সুযোগ পায় না। শুধু আব্দুর রাজ্জাক সাহেব মাসে দুইবার সুযোগ পায়। তাকেই বেশি আনি। কারণ তার বয়ান সবাই খুব পছন্দ করে। অনেক দূর থেকে মানুষ আসে জুমআর নামাযে। রংপুর থেকেও লোক আসে। লোক আসে সোনারগাঁও আরো অনেক দূর থেকে। অনেক মানুষ হয় জুমআর নামাযে। মসজিদে আর যায়গা হয় না, তাই বাহিরে ব্যবস্থা করি। বাহিরেও অনেক মানুষ হয়।

এক সময় মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আর এখন নতুন যুদ্ধে নেমেছি। সেটি হল, মৃত্যু পর্যন্ত আলেমদের ঠিক করতে হবে। যেসব নামের আলেম আছে। যারা মাওলানা সেজে বসে আছে। মাওলানা বলা কি জায়েজ আছে?

জবাব দিলেন মুফতী মাহবুবুর রহমান- তাহলে শায়েখ বলা কি জায়েজ আছে?

অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন নজরুল সাহেব। বলতে লাগলেন- “হ্যাঁ, এই সবের একই হুকুম, মাওলানা শায়েখ ইত্যাদি হয়ে আছে। কিন্তু কুরআন ও সহীহ হাদীস মানে না। এসব হুজুরদের আগে ঠিক করতে হবে। আমার মিশন এখন এইটাই। আমি আমার মসজিদ থেকে কত হুজুরকে নিজের হাতে পিটিয়ে বের করেছি। একদম পিটিয়ে বের করেছি। তারপর এদেরকে এনেছি।”

চুপ করে থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। তবু চুপ করে রইলাম। কানের পাশে বসে এভাবে উলামায়ে কেরাম সম্পর্কে বিষোদগার ও বেআদবীমূলক বক্তব্য শুনে চুপ থাকতে পারছিলাম না। তবু চুপ রইলাম। কারণ আমরা সামনেই বসে আছেন আব্দুর রাজ্জাক সাহেব। তিনি এসব শুনে নিশ্চয় মজা পাচ্ছেন। কারণ এসব বেদআদবীমূলক বক্তব্য নিশ্চয় এসব শায়েখরাই মুরুব্বীকে শিখিয়েছেন। আর আমি চাচ্ছি টিভি সেটের সামনে আসুন তিনি। সারা দুনিয়ার সামনে আহলে হাদীসী মাযহাবের ভন্ডামী প্রকাশ হোক। কিন্তু আমি যদি এখনি কথা বলে ফেলি। তাহলে হয়তো তিনি কোন ছুতো বের করে বলবেন, তিনি টকশোতে অংশগ্রহণ করবেন না। আব্দুর রাজ্জাক সাহেবকে কোন প্রকার ছুতো বের করার সুযোগ দেয়া যাবে না। তাই চুপ রইলাম।

তাকিয়ে দেখলাম আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের হাতে মাযহাব বিষয়ক একটি বই দেখা যাচ্ছে। আমি আগ্রহী হয়ে উঠলাম উক্ত বইটির দিকে। হযরতের দিকে মুচকি হেসে বললাম, “হযরত বইটি কি একটু দেখা যাবে?”

সৌজন্যতা রক্ষা করে এগিয়ে দিলেন বইটি। মাযহাব বিষয়ক বই। লেখক জনাব ফাখরুল ইসলাম। ফখরুল নয় ফাখরুল। বইয়ের উপরে এ নামই শোভা পাচ্ছিল। পৃষ্ঠা উল্টালাম। পড়তে শুরু করি। মনটা বিষিয়ে উঠে পৃষ্ঠাতেই। মাযহাব মানেই ফিতনা। চার মাযহাব দিয়ে দ্বীনকে চার টুকরো করা হয়েছে। ইত্যাদি ইত্যাদি।

প্রমাদ গুণলাম। তাহলে আজকে আব্দুর রাজ্জাক সাহেব এসব বলবেন টকশোতে? মনে মনে প্রস্তুত নিলাম এসবের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার জন্য। ভাল হয়েছে বইটি আগে ভাগে দেখে।

নজরুল সাহেব তার কথা চালিয়ে যাচ্ছেন- “আলেম উলামা ঠিক হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি পুরোদমে। প্রতিদিন দাওয়াত দেই।”

মুফতী মাহবুবুর রহমান প্রশ্ন করল- আচ্ছা, মুরুব্বী! আপনি দাওয়াত দেন কাকে? নামাযীদের না বেনামাযীকে?

নজরুল ইসলাম- নামাযীদের। যারা নামায পড়ে, কিন্তু কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী যাদের নামায হয় না? তাদের দাওয়াত দেই।

পাল্টা প্রশ্ন করলেন মুফতী মাহবুব- “তাহলে আপনি বেনামাযীদের নামাযী বানানোর কোন দাওয়াত আপনাদের নেই?”

জবাবে নজরুল সাহেব বলেন- “আছে, দেই তাদেরও দাওয়াত দেই। তবে কম। কারণ যারা পড়ে কিন্তু হয় না, তাদের নতুন করে মুসলমান বানাই। নামায শিখিয়ে নতুন করে মুসলমান বানাই”।

এবার আর নিজেকে চুপ রাখতে পারলাম না। নতুন করে মুসলমান বানায় মানে কি? তাহলে কি যারা হানাফী মাযহাব অনুপাতে নামায পড়ে, তারা সবাই মুরতাদ। তাদের নতুন করে আহলে হাদীসী মাযহাব গ্রহণ করে মুসলমান হতে হয়?

শরীরটা জ্বলে গেল মুরুব্বীর কথা শুনে। প্রশ্ন করলাম- “মুরুব্বী! আপনি কি তাহলে বলতে চাচ্ছেন, যারা হানাফী মাযহাব অনুপাতে নামায পড়ে, তারা কাফের। তাদের আপনাদের মতবাদ গ্রহণ করে নতুন করে মুসলমান হতে হয়?”

–     না, না, আমি কি কাফের বলেছি?

–     নতুন করে মুসলমান হতে হয় কাকে? মুসলমানকে না মুরতাদকে যে কাফের হয়ে গেছে?

–     তারপরও আমি কিন্তু একথা বলিনি।

–     আপনি শালিন ভাষায় মারাত্মক অশালিন কথাটি বলেছেন। যেমন আমরা অনেক সময় কোন মিথ্যা কথার ক্ষেত্রে বলি, তিনি মিথ্যা বলেছেন, বা কখনো শালিন ভাষায় বলি তিনি অসত্য বলেছেন। কথা কিন্তু একই। আপনিও এখানে একই কাজ করেছেন। সরাসরি কাফের না বলে, বললেন নতুন করে মুসলমান হতে হয়। মুসলমান হবারতো তারই দরকার হয়, যে মুসলমান নয়। যে মুসলমান, তারতো মুসলমান হবার দরকারই নেই। এত বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয় মুরুব্বী। আপনি জানেন? যে কাফের নয়, তাকে কাফের বললে সেই কুফরী নিজের দিকে ফিরে আসে?

–     হাদীসেতো এসেছে, যারা আমাদের নামায পড়ে এবং আমাদের মত কুরবানী করে।

–     আস্তাগফিরুল্লাহ! ব্যস, মুরুব্বী এ বিষয়ে আর কথা না বললেই খুশি হবো।

চেহারাটি লাল হয়ে গেল নজরুল সাহেবের। চুপ হয়ে গেলেন। বন্ধ হল তার টকিং মেশিন। সবাই চুপ। এবার আব্দুর রাজ্জাক সাহেব আমার হাতে থাকা তার নিয়ে জনাব ফাখরুল ইসলামের মাযহাব বিষয়ক বইটি নিয়ে যেতে চাইলেন। আমিও দিয়ে দিলাম। কোন কিছু না বলেই। এর মাঝ দিয়ে আর কোন কথা আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের সাথে আমরা হয়নি।

এ সময় প্রবেশ করলেন মাওলানা ইসহাক খান। প্রোগ্রামের বিষয়ে কথা বলতে।

রুমে ঢুকতেই আব্দুর রাজ্জাক সাহেব তাকে বললেন, আপনাদের অনুষ্ঠান কিভাবে ধারণ করবেন?

ইসহাক খানঃ আমাদের এটা রমজান বিষয়ক অনুষ্ঠানতো। এখানে দুইজন আলোচক থাকেন। আর একজন পরিচালক থাকেন।

আব্দুর রাজ্জাকঃ আমার সাথে আলোচক থাকবে কে?

ইসহাক খানঃ এই যে, মুফতী লুৎফুর রহমান সাহেব আছেন ওনি থাকবেন।

আব্দুর রাজ্জাকঃ টকশো হিসেবে ধারণ হবে ভিডিও?

ইসহাক খানঃ হ্যা, এমনি বলা যায়।

আব্দুর রাজ্জাকঃ না, না, তা হয় না। আমি টকশো করবো না। টিভি টক হলে প্রোগ্রাম করবো।

 

এ আলোচনা আমি মনযোগ সহকারে লক্ষ্য করছিলাম। যে কারনে কথাই বলছিলাম না, দেখি সেই কারণ ছাড়াই আব্দুর রাজ্জাক সাহেব পালিয়ে যাওয়ার ছুতো খুঁজছেন। আমার পাশে বসা মুফতী মাহবুবকে আমার মোবাইলটি দিলাম। বিষয়টি ভিডিও করার জন্য। কারণ আমি পরিস্কার বুঝে গেছি আব্দুর রাজ্জাক সাহেব অনুষ্ঠান করবেন না। তিনি চলে যাবেন। আর তার ভক্তরা প্রচার করবে, তিনি হয়তো আসেনইনি। তাই প্রমাণ রাখার জন্য বলি আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের আচরণ ও কথোপকথনটি ভিডিও করার জন্য।

এবার দেখুন এই ভিডিওটি প্রথম থেকে ৭ মিনিট ২৬ সেকেন্ড পর্যন্তঃ-

ভিডিওটিতে লক্ষ্য করুন! আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের ডান পাশে বসা আছে মাওলানা ইসহাক খান। সামনে একটি টেবিল। সেই টেবিলের এপারের সোফায় বসা হযরতের দুই ভক্ত। এর সাথেই মুফতী মাহবুব। যার হাতের মোবাইল দিয়ে রেকর্ড হচ্ছে। পাশেই আমি। এর পাশেই নজরুল ইসলাম সাহেব বসা। সামনা সামনি ভিডিও হচ্ছে, তারপরও কি করে আব্দুর রাজ্জাক সাহেব ভিডিও হচ্ছে একথা জানেন না বলে প্রচার করেছেন, তা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন।

ভিডিওর বক্তব্যগুলো লক্ষ্য করুন-

ইসহাক খানকে আব্দুর রাজ্জাক সাহেব বলছেন- “টকশো করা যাবে না, টকশো করা হবে না, টকশো করলে চালাতে পারবা না, পরিবেশ উল্টা হবে, তর্ক বিতর্ক বেশি হবে। মিডিয়াতে তর্ক বিতর্ক করা হয় না। টিভি টক করতে হবে।”

এ পর্যায়ে মোবাইলে কথা বলতে থাকেন ইসহাক খান। কিন্তু কথা বলতেই থাকেন আব্দুর রাজ্জাক সাহেব। রেকর্ড হচ্ছে দেখে ক্যামেরার দিকে তাকাচ্ছেন বারবার। সেদিকে তাকিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন বেশি করে। আর আপন মনেই বলে যাচ্ছেন- “ আমাদের তিনটা পর্ব, পাঁচটা পর্ব যেটাই হোক, একটা আলোচনা শরীয়ত মানার ব্যাপারে, মাযহাব কতটুকু ভূমিকা রাখে? বা মাযহাবের অনুযায়ী শরীয়ত মানা সঠিক কি না? সেটা আমরা আলোচনা করবো। তারা মাযহাব মেনেই চলতে হবে। এটির ফলাফল ভাল তা পেশ করবে।”

এর মাঝ দিয়ে ইসহাক খান সাহেবের মোবাইলের কথা বলা শেষ হয়ে যায়। এবার আব্দুর রাজ্জাক সাহেব আবার ইসহাক খানের দিকে মনযোগী হলেন। তাকে বলছেন- “তোমার আর কেউ থাকলে পরামর্শ কর। এটা টকশো হবে না, টিভি টক হতে হবে।”

এবার কথা বললেন ইসহাক খানঃ “শিরোনাম টকশো না, এই যায়গায় হচ্ছে একটা ইসলামিক সমসাময়িক বিষয়াবলীর উপর আলোচনা পর্যালোচনা হয়ে থাকে।”

আব্দুর রাজ্জাক সাহেব কান চুলকাতে চুলকাতে বলেনঃ “হ্যাঁ, সেটাই, এটাই টিভি টক হিসেবে কর।”

ইসহাক খানঃ “এটাতো বিষয় ভিত্তিক”

আব্দুর রাজ্জাকঃ “এ বিষয়কে সামনে রেখে আমাদের আলোচনা হবে। তুমি স্যুটিং একটা দু’টা, পাঁচটা আমরা যা করলাম তিনটা করি পাচটা করি, আমাদের যখন শেষ হল। তখন আমাদের মাযহাবী ভাইয়েরা বা মাযহাবী ভাইয়েরা আরো বলবেন, তাদের টিভি টক হল। যেটাই হোক, তিনটা হোক পাঁচটা হোক। তারপর এমনে বলবেন যে, আমরা এই সময় পর্যন্ত করবো। কাজেই এ সময়ের মাঝে আমাদের অন্তত ১০টা লাগবে। তাহলে ৫টা টিভি টক তাদের নিয়ে ৫টা আপনাদের নিব। কথা কি বুঝা গেছে? একটা সময়, বারোটা বা একটা পর্যন্ত এডা চলতে থাকবে। আমরা একটা…..।”

ইসহাক খানঃ ২৫ মিনিটের।

আব্দুর রাজ্জাকঃ …২৫ মিনিটের। তো তাহলে আমরা ২৫ মিনিটে।

ইসহাক খানঃ দশ মিনিট দশ মিনিট করে বিশ মিনিট হচ্ছে মূল অনুষ্ঠান। ….তো আপনি ধরেন, দুই মিনিট করে চারবার কথা বলবেন।

আব্দুর রাজ্জাকঃ না, তোমার কথা আমি বুঝেছি।

ইসহাক খানঃ এটা একটা। এরপর আবার বিশ মিনিট। ৪০ মিনিট।

এবার কথা বলে উঠলাম আমি। কারণ আমাকে জানানো হয়েছিল প্রোগ্রাম হবে ৪০ মিনিট করে। যেহেতু এখানে ৪০মিনিটের কথা হচ্ছে, তাই আমি আগ্রহী হলাম। আমি বললাম- “মানে চল্লিশ মিনিট হচ্ছে….”।

আমার মুখে কথা শেষ হতেই ইসহাক খান বললেন- দুইটা, দুইটা পর্ব।  দুইদিন দেখাবে। দুইটা…।

আমি- আমাকে কিন্তু এটা বলছিলেন যে, এ অনুষ্ঠানটা হবে চল্লিশ মিনিট করে।

ইসহাক খানঃ এইটা রেকর্ডিং হবে চল্লিশ মিনিটেরই। তবে এইটা দেখাবে হচ্ছে দুইদিন। একদিন আমাদের সময় হচ্ছে ২৫ মিনিট করে।”।

স্টেজ ঠিক করা হচ্ছে। আবার মোবাইল নিয়ে মেতে উঠেন ইসহাক খান ভাই। তারপর আবার কথা বলেন আব্দুর রাজ্জাক সাহেব। বলেন- মোট ২৫মিনিট।

ইসহাক খানঃ মানে ৫০ মিনিট।

আব্দুর রাজ্জাক সাহেবঃ মোট ৫০ মিনিট।

আস্তে আস্তে আরো কিছু বলেন আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ। তারপর আবার বলতে থাকেন ও ইসহাক খানকে বুঝাতে থাকেন- “টিভি টক হিসেবে নাও! টকশো না, একটানা দশ মিনিট বা বার মিনিট বলল, তারপর একটি বিরতি তারপর আবার……।

এমন সময় মাওলানা ইখতিয়ার নামে এক মাওলানা সাহেব আসেন। ইসহাক খান ভাই উঠে চলে যান।

৩য় পর্ব

আরও জানুন

রব্বে কারীম যাদের নিয়ে গর্ব করেন!

মাওলানা মুহাম্মদ ইমরান হুসাইন বড় কেউ যদি কাউকে স্মরণ করে, সে গর্বিত হয় এবং নিজেকে ধন্য …

No comments

  1. Md. Arshed Ali (Nantu )

    ami facebook thake koran o hadis porte pari and sunte pari ap0nader maddome ajonno aponader donnobad janay

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস