লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
আহলে হাদীস কারা?
আহলে হাদীস দুই প্রকার। যথা-১-খাঁটি আহলে হাদীস। ২-ভেজাল আহলে হাদীস।
খাঁটি আহলে হাদীস হলেন সে সকল মুহাদ্দিসীনে কিরাম যারা সর্বদা হাদীস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাদের আমরা নিজের মাথার তাজ মনে করি। ইমাম বুখারী রহঃ আহলে হাদীস আমরা মানি। ইমাম মুসলিম রহঃ আহলে হাদীস আমরা মানি। ইমাম আবু হানীফা রহঃ আহলে হাদীস আমরা মানি। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ আহলে হাদীস আমরা মানি। ইমাম শাফেয়ী রহঃ আহলে হাদীস আমরা মানি। কারণ ওনারা সবাই হাদীস নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তথা গবেষণা করেছেন। আর হাদীস নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা “আহলে হাদীস” একথা মানতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
কিন্তু ভেজাল আহলে হাদীস যারা দু’ একটি হাদীস জানে। তাও সনদের পূর্ণ বিবরণ ও রাবীদের অবস্থা ছাড়াই আমরা তাদের “আহলে হাদীস” মানি না। ওরা খাঁটি আহলে হাদীস নয়। ভেজাল ও ধোঁকাবাজ আহলে হাদীস।
যারা তাফসীর নিয়ে ব্যস্ত গবেষকদের আমরা আহলে তাফসীর মানি। কিন্তু যারা এক দু’টি আয়াতের তাফসীর জানে আমরা তাদের আহলে তাফসীর মানি না।
যারা কুরআন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, গবেষণা করেন তাদের বলি আহলে কুরআন। এক দু আয়াতের অনুবাদ জানা ব্যক্তিদের আমরা আহলে কুরআন মানি না।
যারা তারীখের উপর বিশেষজ্ঞ তাদের আহলে তারীখ মানি। কিন্তু যারা দুএক টি তারীখী ঘটনা জানে তাদের আমরা আহলে তারীখ মানি না।
কুরআনের উপর বিশেষজ্ঞ না হলে যদি আহলে কুরআন না হয়, তারীখের উপর বিশেষজ্ঞ না হলে যদি আহলে তারীখ না হয়, তাফসীরের উপর বিশেষজ্ঞ না হলে যদি আহলে তাফসীর না হয়, তাহলে হাদীসের উপর বিশেষজ্ঞ না হয়েও কি করে আহলে হাদীস হওয়া যায়?
কথিত আহলে হাদীসদের যদি প্রশ্ন করা হয় আপনারা কে? ওরা তখন খুব গর্ব করে উত্তর দিবে-“আমরা আহলে হাদীস”।
তারপর যদি প্রশ্ন করেন কেন আপনারা আহলে হাদীস?
বলবে-আমরা সহীহ হাদীসের উপর আমল করি, তাই আমরা আহলে হাদীস।
তখন তাদের বলুন-
হাদীস সম্পর্কে প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিস না হয়েও যদি আপনি কয়েকটি হাদীস শিখে আহলে হাদীস হয়ে যান, তাহলে আপনারা মেথর এবং ধোপাও। আপনাদেরকে মেথর বলে সম্বোধন করা উচিত। ধোপা বলে সম্বোধন করা উচিত। কারণ মেথর বলা হয়, যারা পায়খানা পরিস্কার করে, আপনারাও নিজেদের পায়খানা নিজের হাতে পরিস্কার করেন, সুতরাং আপনারাও মেথর। যেমন আপনারা বলে থাকেন যে, হাদীসের উপর আমল করার কথা বললেই আহলে হাদীস হওয়া যায়।
আপনারা ধোপাও। কারণ আপনারা নিজেদের কাপড় নিজেরাই ধৌত করেন। আর ধোপা বলা হয়, তাকে যে কাপড় ধৌত করে। দু একটি হাদীস মানলেই আহলে হাদীস হওয়া গেলে, দু একটি কাপড় ধৌত করলে কেন ধোপা হবেন না?
যদি মাথায় কিছু থাকে ওদের তাহলে বলবে-আরে ভাই! কাপড় ধৌত করলেই তাকে ধোপা বলে না। শুধু পায়খানা পরিস্কার করলেই তাকে মেথর বলে না, বরং যিনি এটাকে পেশা বানিয়ে পায়খানা পরিস্কার করেন, তাকে বলে মেথর। আর যিনি কাপড় ধৌত করাকে পেশা বানান তাকে বলে ধোপা। আর আমরাতো এসব পেশা বানিয়ে করিনা, তাই আমরা মেথরও নই, তেমনি আমরা ধোপাও নই।
এবার শান্ত মাথায় তাদের বলুন-যদি পেশাদার না হয়ে এমনিতে কাপড় পরিস্কার করলে ধোপা না হয়, যদি পেশাদার না হয়ে শুধু প্রয়োজনে পায়খানা পরিস্কার করলে মেথর না হয়, তাহলে হাদীসের নাসেখ-মানসুখ, সনদ-মতন ও হাদীস সংশ্লিষ্ট সমুদয় বিষয়ের উপর বিশেষজ্ঞ না হয়েও কয়েকটি হাদীস শিখে আপনারা নিজেরা আহলে হাদীস বনে যান কি করে?
বুখারী কাদের? আমাদের না কথিত আহলে হাদীসদের?
হাদীস অস্বিকারকারী দলের নাম আহলে কুরআন। আর ফিক্বহ অস্বিকারকারী দলের নাম হল আহলে হাদীস।
ফিক্বহ অস্বিকারকারী কথিত আহলে হাদীসরা প্রচার করে থাকে যে, যেহেতু হাদীস বিদ্যমান আছে তাই এখন ফিক্বহের কিতাব পড়ার কোন দরকার নেই। অধিকাংশ সময় তারা একথা বলে থাকে যে, যেহেতু বুখারী আছে তাই ফিক্বহী কিতাবের কোন দরকার নেই। এমনভাবে বুখারীর ব্যাপারে প্রচারণা চালায়, যেন বুখারী শরীফ ওদের বাপ দাদার সম্পত্তি। শুধু তারাই বুখারীর উপর আমল করে আর যারা ইমামদের পথপ্রদর্শনে কুরআন সুন্নাহর উপর আমল করে তারা বুখারী শরীফ মানেই না। অথচ বুখারী শরীফ আমাদের কথাই প্রমাণ করে কথিত আহলে হাদীসদের কথা নয়।
বুখারী শরীফ আমাদের কথিত আহলে হাদীসদের নয়। একথাটি প্রমাণ করাই এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। একের পর এক পয়েন্ট লক্ষ্য করুন।
১ নং দলিল
ইমাম বুখারীর নাম হল-মুহাম্মদ বিন ইসমাইল রহঃ। ইমাম বুখারীর পিতার নাম হল ইসমাইল। সিয়ারু আলামিন নুবালা নামক রিজালশাস্ত্রের গ্রন্থে ইমাম বুখারী রহঃ এর বরাতে বর্ণনা করা হয়েছে-
إسحاق بن أحمد بن خلف، أنه سمع البخاري يقول: سمع أبي من مالك بن أنس، ورأى حماد بن زيد، وصافح ابن المبارك بكلتا يديه (سير اعلام النبلاء، الطبقة الرابعة عشر، أبو عبد الله البخاري، رقم -171)
অনুবাদ-ইসহাক বিন আহমাদ খালফ বলেন-আমি ইমাম বুখারী রহঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন-আমার পিতা মালেক বিন আনাস থেকে শুনেছেন, আর তিনি হাম্মাদ বিন জায়েদকে দেখেছেন, আর তিনি ইবনুল মুবারকের সাথে দুই হাতে মুসাফাহা করেছেন। {সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৪ তম তবক্বা, নং-১৭১, রাবী ইমাম বুখারী}
ইমাম বুখারীর পিতা ইসমাইল রহঃ ইবনুল মুবারক রহঃ এর সাথে দুই হাতে মুসাফাহা করেছেন। দুই হাতে মুসাফাহা আমরা করি আর কথিত আহলে হাদীসরা করে এক হাতে, দুই হাতে করাকে অস্বিকার করে। তাই বুখারী রহঃ এর পিতা আমাদের কথিত আহলে হাদীসদের নয়।
২ নং দলিল
ইমাম বুখারী রহঃ জন্ম নেবার পর ছোটকালে কোন কারণে অন্ধ হয়ে যান। তখন তার পিতা আল্লাহর কাছে বারবার দুআ করতে থাকেন সন্তানের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। তারপর একদা স্বপ্নে দেখেন হযরত ইবরাহীম আঃ কে।
روى غنجار في تاريخ بخاري واللالكائي في شرح السنة في باب كرامات الأولياء منه أن محمد بن إسماعيل ذهبت عيناه في صغره فرأت والدته الخليل إبراهيم في المنام فقال لها يا هذه قد رد الله على ابنك بصره بكثرة دعائك قال فأصبح وقد رد الله عليه بصره (مقدمة فتح البارى لابن حجر، سير اعلام النبلاء ، الطبقة الرابعة عشر، أبو عبد الله البخاري، رقم -171)
তারীখে বুখারাতে গুনজর রহঃ এবং আবুল কাসেম লালকাই রহঃ তার শরহুস সুন্নাহের কারামাতুল আউলিয়া অধ্যায়ে বর্ণনা করেন-মুহাম্মদ বিন ইসমাইল ছোটকালে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর তার মাতা স্বপ্নে ইবরাহীম খলীল আঃ কে দেখে। ইবরাহীম আঃ তাকে বলেন-কি আজব বিষয়! আল্লাহ তাআলা তোমার ছেলের চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন তোমার অধিক দুআর বরকতে। তারপর সকালে উঠে দেখেন তার চোখের দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন। {হাদইউস সারী, সীয়ারু আলামীন নুবালা, তারীখে বাগদাদ, তারীখে দামেশক, তাহযীবুল কামাল}
বরকত আর তাবাররুক আমরা মানি। কথিত আহলে হাদীসরা মানে না। যেহেতু এ মতদর্শ আমাদের। তাই ইমাম বুখারী আমাদের দাবি করা সাজে। ওদের নয়।
৩ নং দলিল
ইমাম বুখারী রহঃ এর সর্বপ্রথম উস্তাদ কে? পাঁচ বছর বয়সে তার পিতা তাকে কুরআন পড়ান। তারপর সর্বপ্রথম মক্কী বিন ইবরাহীম রহঃ এর কাছে কিতাব পড়েন। ইমাম আব্দুল্লাহ বিন মুবারকের কিতাব পড়েন। ইমাম সুফিয়ান সাওরীর আল জামেউল কুবরা পড়েন। আবু হাফস রহঃ এর কিতাব পড়েন।
এখানে লক্ষ্য করুন মক্বী বিন ইবরাহীম ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র। আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রহঃ ও ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র । ইমাম সুফিয়ান সাওরীও ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র এবং হানাফী। ইমাম আবু হাফস রহঃ হানাফী।
তাহলে ইমাম বুখারী রহঃ এর পড়াশোনা শুরু হানাফী মাযহাবের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কিতাব পড়ার মাধ্যমে। যার কাছে পড়েছেন তিনিও ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র।
৪ নং দলিল
ইমাম বুখারী রহঃ এর বয়স যখন ১৫/১৬ বছর হয় তখন আরো পড়াশোনা করার জন্য ২১০ হিজরীতে নিজের পিতা ও তার ভাই আহমাদের সাথে মক্কায় গিয়ে হজ্ব করেন।
তারপর সেখানে গিয়ে যাদের কাছে হাদীস পড়েন তাদের মাঝে সবচে’ বড় উস্তাদ হল আবু আব্দুর রহমান আল মুকরী রহঃ। যিনি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র।
ইমাম বুখারী যখন বসরায় গেলেন। তখন সেখানে যাদের কাছে হাদীস পড়েন, তাদের মাঝে বড় উস্তাদ হলেন ইমাম আবু আসেম রহঃ, যিনি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র। তারপর আরো একজন বড় উস্তাদ হলেন-মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল আনসারী রহঃ। তিনিও আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র।
তারপর কুফা গেলেন সেখানে যাদের কাছে কিতাব পড়লেন, তাদের মাঝে বড় উস্তাদ হলেন উবায়দুল্লাহ বিন মুসা। তিনিও ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র। আরেক উস্তাদের নাম আবূ নুয়াঈম ফজল বিন দুকাইন রহঃ তিনিও ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র।
তারপর পড়ার জন্য বাগদাদ গেলেন, সেখানে যাদের কাছে পড়েছেন। তাদের মাঝে বড় উস্তাদের নাম হল ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ। যিনি ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর ছাত্র। আর ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর খাস ছাত্র।
লক্ষ্য করুন! ইমাম বুখারী রহঃ নিজের শহরে পড়াশোনা করেছেন তো ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্রদের কাছে পড়েছেন। অন্য শহরে গিয়ে পড়াশোনো করেছেন, তো ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্রদের কাছেই পড়েছেন। তাহলে ইমাম বুখারী আমাদের না কথিত আহলে হাদীসদের?
এছাড়া আমাদের দেওবন্দী মাদরাসায় প্রথমে ফিক্বহ পড়ানো হয়, তারপর হাদীস। প্রথমে তালীমুল ইসলাম, তারপর কুদুরী, তারপর শরহে বেকায়া, তারপর হেদায়া এরপর হাদীস পড়ানো হয়। দেখুন ইমাম বুখারী রহঃ এর শিক্ষার পদ্ধতিও একই। তিনি প্রথমে মক্বী বিন ইবরাহীমের কাছ থেকে ফিক্বহ পড়েছেন, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন মুবারকের ফিক্বহ পড়েছেন। সুফিয়ান সাওরী রহঃ এর আল জামে পড়েছেন যা ফিক্বহী আন্দাজে লিখা। তারপর অন্যত্র গিয়ে হাদীস পড়েছেন। প্রথমে ফিক্বহ তারপর হাদীস পড়েছেন। তাহলে আমাদের কওমী মাদরাসার দরসে নেজামীর সাথে ইমাম বুখারী রহঃ এর পড়াশোনার সাথে মিল। কথিত আহলে হাদীসদের পড়াশোনার পদ্ধতির সাথে নয়। কারণ ওদের মাদরাসায় প্রথমেই বুখারী- মুসলিম পড়ানো হয়। তাহলে ইমাম বুখারী রহঃ আমাদের হল না ওদের?
কুফার উপর অভিযোগ করা আহমকী
ইমাম বুখারী রহঃ যেসব শহরে গিয়েছেন তার মাঝে কুফা নগরীতে তিনি সবচে’ বেশি গিয়েছেন। সেখান থেকে সবচে’ বেশি ইলম অর্জন করেছেন। এজন্য বুখারীর পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় কুফী রাবী বিদ্যমান।
কুফার বিরুদ্ধাচারনকারীরা কার বিরুদ্ধাচরণ করছে বুঝতেও পারে না। কুফাকে আবাদকারী হলেন হযরত সাদ বিন আবী ওয়াক্বাস। আবাদের নির্দেশকারী হযরত ওমর রাঃ। আবাদ করার জন্য প্রথম আমীর হিসেবে যিনি কুফায় আসেন তিনি হলেন আম্মার বিন ইয়াসির রাঃ। সেখানের প্রথম শিক্ষক হলেন আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ। যারা প্রথমে আবাদ করেছেন ১০৫০ সাহাবীদের মাঝে ৭০ জনই বদরী সাহাবী। আর ৩১৩ জন রাসূল সাঃ এর সাথে হুদাইবিয়ার সন্ধীতে অংশগ্রহণকারী সাহাবী।
তাহলে কুফা আবাদ করার হুকুম দিলেন খলীফায়ে রাশেদ রাসূল সাঃ এর প্রিয় সাহাবী হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাঃ। কুফা আবাদকারী হলেন নবীজী সাঃ এর সাহাবী সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাঃ। প্রথম আমীর আম্মার বিন ইয়াসীর রাঃ। প্রথম শিক্ষক আব্দুল্লা্হ বিন মাসউদ রাঃ। আবাদকারী সাহাবীদের মাঝে ৭০ জন বদরী সাহাবী। আর ৩১৩ জন রাসূল সাঃ এর সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধিতে অংশগ্রহণকারী সাহাবী। সুতরাং কুফার বদনাম করলে মূলত কার বদনাম করা হয়? বদনামতো প্রতিষ্ঠানের হয় না, হয় প্রতিষ্ঠাতার। তাহলে কুফার বদনাম করা মানে হল কুফা প্রতিষ্ঠাতার উপর বদনাম করা।
কথিত আহলে হাদীসরা একটি খোড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে থাকে যে, কুফাতে হযরত হুসাইন রাঃ শহীদ হয়েছেন তাই এটি অভিশপ্ত ভূমি। কোন এলাকায় আল্লাহর কোন প্রিয় বান্দা শহীদ হলে বা কষ্ট পেলে সে স্থান যদি অভিশপ্ত হয়, তাহলে মক্কা ও অভিশপ্ত হয়ে যাবে নাউজুবিল্লাহ। কারণ মক্কায় রাসূল সাঃ কে অনেক কষ্ট দেয়া হয়েছে। ওহুদে ৭০ জন সাহাবী শহীদ হয়েছেন। রাসূল সাঃ এর মিম্বরে হযরত ওমর রাঃ শহীদ হয়েছেন। মদীনার মিম্বরে হযরত উসমান রাঃ শহীদ হয়েছেন। তায়েফে রাসূল সাঃ এর উপর আক্রমণ হয়েছে। তাই মক্কা-মদীনা, উহুদ, তায়েফের বদনাম করাটা কতটা বুদ্ধিমানের কাজ? না চূড়ান্ত পর্যায়ের বোকামী?
তেমনি হযরত হুসাইন রাঃ শহীদ হওয়ার কারণে কুফাকে বদনাম করা যাবে না। যারা শহীদ করেছেন তাদের বদনাম হতে পারে, কিন্তু যেখানে শহীদ হয়েছেন সে স্থানের বদনাম করাটা চূড়ান্ত পর্যায়ের আহমকীর নিদর্শন।
৫ নং দলিল
কুফার সাথে ইমাম বুখারীর কতটা সম্পর্ক?
ইমাম বুখারী রহঃ নিজেই বলেন-
قال البخاري دخلت إلى الشام ومصر والجزيرة مرتين وإلى البصرة أربع مرات وأقمت بالحجاز ستة أعوام ولا أحصي كم دخلت إلى الكوفة وبغداد مع المحدثين (مقدمة فتح البارى، كتاب البيوع الى السلم، ذكر عدة ما لكل صحابي في صحيح البخاري موصولا ومعلقا على ترتيب حروف المعجم-1/147)
আমি সিরিয়াতে এবং মিশরে ও জাজিরাতুল আরবে গিয়েছি ৪ বার। আর হেজাযে অবস্থান করেছি ৬ বছর। আর কতবার যে কুফা আর বাগদাদে মুহাদ্দিসদের সাথে গিয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। {মুকাদ্দিমায়ে ফাতহুল বারী)
ইমাম বুখারী হেজাযে কতদিন ছিলেন মনে আছে, মিশর, সিরিয়া ও জাজিরাতুল আরবে কতবার গেছেন মনে আছে। কিন্তু কুফা আর বাগদাদের কত অগণীত বার গেছেন তা আধিক্যের কারণে তিনি ভুলেই গেছেন।
একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণ করে ইমাম বুখারী রহঃ এর কুফার সাথে তার ইলমী নিসবত কতটা গভীর ছিল। একারণেই বুখারী শরীফের এমন পৃষ্ঠা খুব কমই আছে যাতে কুফী বর্ণনাকারী নেই। পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় কুফী রাবী। এটাও সুষ্পষ্ট প্রমাণ ইমাম বুখারী কুফার প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ।
একটি প্রশ্ন ও জবাব
ইমাম বুখারী রহঃ মক্কা-মদীনায় এত কম আর কুফাতে এতবার গেলেন কেন? কারণ হল রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-
عن ابن عباس قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : أنا مدينة العلم وعلي بابها فمن أراد العلم فليأته من بابه، (المعجم الكبير، باب العين، أحاديث عبد الله بن العباس بن عبد المطلب بن هاشم بن عبد مناف يكنى أبا، رقم الحديث- 11061)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আমি ইলমের শহর। আর আলী হল সে শহরের দরজা। সুতরাং যে ইলম শিখতে চায় সে যেন দরজা দিয়ে আসে। {আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-১১০৬১, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-৪৫৭৬}
এ হাদীসটির হিকমতের দিকে লক্ষ্য করলেই এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে। রাসূল সাঃ ইলমের মূল। তিনি ছিলেন মক্কা মদিনায়। আর হযরত আলী রাঃ হলেন ইলমের দরজা। যিনি তার খিলাফতের সময় দারুল খিলাফাত তথা রাজধানী বানিয়েছিলেন কুফা নগরীকে। যেখানে আজো শুয়ে আছেন। শত শত সাহাবীদের পদভরে কুফা নগরী হয়ে উঠেছিল এক ইলমী নগরী। সে দরজা না পেড়িয়ে ইলমের শহর মক্কা-মদীনায় ঢুকা কি ঠিক?
গেইট ছাড়া যে শহরে প্রবেশ করে তাকে বাআদব বলা হয় না, বলা হয় বেআদব। আর মানুষ মূল স্থানে কতক্ষণ থাকে তা মনে রাখলেও দরজা দিয়ে কতবার ঢুকেছে তা মনে রাখতে পারে না। যেমন কোন ছাত্র যদি জামিয়াতুল আস’আদে পড়েছে ৫ বছর। তাহলে তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, আপনি কত বছর ছিলেন জামিয়াতুল আস’আদে? তখন সে জবাব দিবে-৫ বছর। কিন্তু তাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, আপনি জামিয়াতুল আস’আদের দরজায় কতবার গেছেন আর এসেছেন? তখন ছাত্রটি বলবে-এর কোন ইয়ত্তা নেই। অসংখ্যবার গিয়েছে। তেমনি ইমাম বুখারী রহঃ কুফাতে কতবার গিয়েছেন তাই তিনি বলতে পারেন না। কারণ এত বেশি সংখ্যক গিয়েছেন যে, তিনি ভুলেই গেছেন। সুতরাং বুঝা গেল কুফার ভক্ত ছিলেন ইমাম বুখারী। বিদ্বেষী নয়। বরং ইমাম বুখারী হানাফী মাযহাবের প্রাণকেন্দ্রের ভক্ত ও ঋণী।
ইমাম বুখারী রহঃ যাদের কাছে পড়েছেন তাদের সম্পর্ক হানাফীদের সাথে। যেসব শহরে গিয়েছেন তাদের সাথেও হানাফীদের সম্পর্ক।
৬ নং দলিল
ইমাম বুখারী রহঃ পড়াশোনা শেষ করে যখন লেখালেখি ও পড়ানো শুরু করেন। তখন তিনি যত কিতাব লিখেছেন তার মাঝে সবচে’ প্রসিদ্ধ কিতাবের নাম হল বুখারী শরীফ। বুখারী শরীফের দিকে আমরা একটু নজর দেই।
বুখারীতে শাওয়াহেদ, মুরসালসহ সর্বমোট ৯০০৮২ বর্ণনা আছে। সনদের মাঝে বুখারী রহঃ যার কাছ থেকে হাদীস নিয়েছেন তিনি হলেন ইমাম বুখারী রহঃ এর শায়েখ। আর সনদের সর্বশেষে যিনি হন তিনি হন সাহাবী রাঃ।
বুখারীতে এমন বর্ণনা অনেক আছে যাতে ইমাম বুখারীর শায়েখ ও কুফী এবং হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীও কুফাতে অবস্থানকারী। শুধু তাই নয়, এমন বর্ণনাও আছে যার প্রতিটি বর্ণনাকারী কুফী। যেমন-
392 – حدثنا عثمان قال حدثنا جرير عن منصور عن إبراهيم عن علقمة قال قال عبد الله : صلى النبي صلى الله عليه و سلم – قال إبراهيم لا أدري – زاد أو نقص الخ (صحيح البخارى، كتاب الصلاة، باب التوجه نحو القبلة حيث كان، رقم الحديث-392)
বুখারীর এ বর্ণনাটিতে লক্ষ্য করুন-ইমাম বুখারীর শায়েখ উসমান, তার শায়েখ জারীর, তার শায়েখ মানসুর, তার শায়েখ ইবরাহীম নাখয়ী, তার শায়েখ আলকামা, তার শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ। এ হাদীসের সনদের ৬ জন রাবী আছে। আর ৬ জনই কুফী রাবী।
শুধু কি তাই? বুখারী শরীফের সর্বশেষ হাদীসের সনদের দিকে লক্ষ্য করুন-
7124 – حدثنا أحمد بن إشكاب حدثنا محمد بن فضيل عن عمارة بن القعقاع عن أبي زرعة عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال النبي صلى الله عليه و سلم ( كلمتان حبيبتان إلى الرحمن خفيفتان على اللسان ثقيلتان في الميزان سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم )
এ হাদীসের সনদের শুধুমাত্র হযরত আবু হুরায়রা রাঃ ছাড়া বাকি সকল রাবী কুফী। আহমাদ বিন ইশকাব, মুহাম্মদ বিন ফুযাইল, আমারা বিন কা’কা’ , আবু জুরআ সবাই কুফী।
সুতরাং বুঝা গেল যে, ইমাম যাদের কাছে পড়েছেন তারাও কুফী। যাদের সনদে হাদীস এনেছেন তারাও কুফী। ইমাম বুখারী রহঃ এর সাথে কুফার সম্পর্ক নিবিড়।
৭ নং দলিল
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারীতে যেসব হাদীস এনেছেন সনদ সহকারে। তাতে ৫ সনদও আছে। ৪ সনদও আছে। ৩ সনদও আছে। ইমাম বুখারী রহঃ এর সবচে’ গর্ব হল ৩ সনদের উপর। সনদ কম হলে হাদীসের মাঝে শক্তিমত্বা বেশি হওয়ায় ইমাম বুখারী সুলাসিয়াত তথা ৩ সনদওয়ালা হাদীসের উপর গর্ব করেন। এবার দেখুন সেসব সুলাসিয়্যাতের কি হাল!
বুখারীতে মোট সুলাসিয়্যাত হল ২২ টি। এ ২২টি সুলাসিয়্যাতের ১১টি সনদে ইমাম বুখারী রহঃ এর শায়েখ হলেন-মক্বী বিন ইবরাহীম। যিনি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র।
এর মাঝে ৬ টি হাদীদের বর্ণনাকারী রাবী হলেন-আবু আসেম আন নাবীল রহঃ। তিনিও ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র।
এর মাঝে ৩ তিনটি হাদীসের বর্ণনাকারী রাবী মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আনসারী। যিনি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র।
এর মাঝে একটি হাদীসের বর্ণনাকারী রাবী হযরত হাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া রহঃ। তিনি কুফী তথা কুফায় অবস্থানকারী ব্যক্তি।
এর মাঝে একজন রাবী হলেন ইসাম বিন খালেদ আল হিমসী। যিনি হেমসের অধিবাসী।
এবার লক্ষ্য করুন-ইমাম বুখারী রহঃ যে সুলাসিয়্যাতের উপর গর্ব। সেই ২২ টি সুলাসিয়্যাতের ২০টির বর্ণনাকারী ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্রের। আর একটি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর নিজের এলাকা কুফার। আর একজন শুধুমাত্র অন্য স্থানের।
তাহলে ইমাম বুখারী গর্ব করতে চানতো ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্র ছাড়া করতেই পারেন না। তারপরও ইমাম বুখারী রহঃ কথিত আহলে হাদীসদের হয় কি করে?
আমরা ইমাম বুখারী রহঃ এর তাক্বলীদ না করে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর তাক্বলীদ করি কেন?
আমরা ইমাম বুখারী রহঃ কে মানি। মানি ইমাম আবু হানীফা রহঃ কেও। তবে তাক্বলীদ করি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর। ইমাম বুখারী রহঃ এর তাক্বলীদ করি না। কেন?
উদাহরণ দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি বিষয়টি-
একদল লোক মদীনা যেতে চায়। তাহলে দু’টি জাহাজ যদি প্রস্তুত করা হয়। উভয়টিই মদীনা যাবে। উভয়টির ভাড়াও এক। তবে একটি মদীনা পৌছাবে ১২ ঘন্টায়। আরেকটি পৌছাবে ৬ ঘন্টায়। তাহলে তারা কোন জাহাজে উঠবো? স্বাভাবিকভাবেই ৬ ঘন্টায় যে জাহাজ পৌঁছবে সে জাহাজে উঠবে।
এমনি ইমাম আবু হানীফা রহঃ ও মদীনার ইলম পর্যন্ত আমাদের পৌছিয়েছেন সনদসহ। ইমাম বুখারী রহঃ ও মদীনার ইলম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন সনদসহ। লক্ষ্য করুন ইমাম বুখারী রহঃ এর মদীনায় নিয়ে যাওয়ার সনদ-
حدثنا أحمد بن إشكاب حدثنا محمد بن فضيل عن عمارة بن القعقاع عن أبي زرعة عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال النبي صلى الله عليه و سلم
ইমাম বুখারী রহঃ রাসূল সাঃ পর্যন্ত সনদ পৌঁছাতে মাধ্যম নিলেন ৫টি। আহমদ বিন ইশকাব, তারপর মুহাম্মদ বিন ফুযাইল, তারপর আম্মারাহ বিন কা’কা’ তারপর আবু জুরআ, তারপর আবু হুরায়রা রাঃ।
তাহলে ইমাম বুখারী রহঃ ইমাম বুখারী রহঃ আমাদের মদীনায় পৌঁছাতে মাধ্যম বানালেন ৫টি। এবার লক্ষ্য করুন ইমাম আবু হানীফা রহঃ আমাদের মদীনায় পৌঁছাতে কয়টি মাধ্যম ব্যবহার করেন-
عن ابى حنيفة عن عبد الله بن انيس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم
عن ابى حنيفة عن عبد الله بن ابى اوفى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم
عن ابى حنيفة عن عبد الله بن حارث قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم
عن ابى حنيفة عن جابر بن عبد الله قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم
ইমাম বুখারী যেখানে আমাদের মদীনায় পৌঁছাতে ব্যবহার করেন ৫টি মাধ্যম। আর ইমাম আবু হানীফা রহঃ ব্যবহার করেন মাত্র একটি মাধ্যম। তিনি বর্ণনা করেন সরাসরি
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উনাইস রাঃ থেকে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবী আওফা রাঃ থেকে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন হারেস রাঃ থেকে।
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে।
যেহেতু আমরা মদীনার ইলমে পৌঁছতে চাই। আর সেখানে পৌঁছতে ইমাম বুখারীর মাধ্যম বেশি আর ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মাধ্যম কম। তাই আমরা আবু বুখারী রহঃ কে রেখে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর তাক্বলীদ করে দ্রুত মদীনার ইলমের শহরে পৌঁছে যাই।
৮ নং দলিল
ইমাম বুখারী রহঃ থেকে তার কিতাব ৯০ হাজার ছাত্ররা পড়েছেন। কিন্তু বুখারী শরীফের সনদ প্রসিদ্ধ চারজনের মাধ্যমে। যথা-
১-ইবরাহীম বিন মা’কাল বিন হাজ্জাজ আন নাসাফী রহঃ। তিনি ২৯৪ হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন।
২- হাম্মাদ বিন শাকের আন নাসাফী রহঃ। যিনি ৩১১ হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন।
৩-মুহাম্মদ বিন ইউসুফ আল ফিরাবরী রহঃ। তিনি ৩২০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন।
৪-আবু তালহা মানসুর বিন মুহাম্মদ রহঃ। তিনি ২৬৯ হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন।
লক্ষ্য করুন-৯০ হাজার ছাত্রদের মাঝে যে চারজনের সনদ প্রসিদ্ধ বুখারীর। এর মাঝে প্রথম দুইজন তথা ইবরাহীম বিন মা’কাল বিন হাজ্জাজ আন নাসাফী রহঃ এবং হাম্মাদ বিন শাকের আন নাসাফী রহঃ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মুকাল্লিদ।
তাহলে কি বুঝা গেল? ইমাম বুখারী রহঃ যাদের কাছে পড়েছেন তারাও হানাফী। যে শহরে বেশি গেছেন সেটাও হানাফী। যাদের মাধ্যমে বুখারী প্রচার করেছেন তারাও হানাফী। কথিত আহলে হাদীসদের হল কিভাবে?
৯ নং দলিল
আল্লামা তাজুদ্দীন সুবকী রহঃ। আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ এবং কথিত আহলে হাদীসদের আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব এ তিনজনই বলেন ইমাম বুখারী রহঃ ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মুকাল্লিদ। {আল ইনসাফ=৬৭, তাবাকাতুশ শাফেয়িয়্যাহ-২/২, আবজাদুল উলুম—৮১০}
হাফেজ ইবনে তাইমিয়া রহঃ ও হাফেজ ইবনুল কায়্যিম রহঃ এর মতামত হল ইমাম বুখারী রহঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর মুকাল্লিদ ছিলেন।
প্রথম মতটি মানলেও ইমাম বুখারী রহঃ আমাদেরই রয়ে যান। তথা মুকাল্লিদ। দ্বিতীয় মত মানলেও ইমাম বুখারী রহঃ আমাদেরই রয়ে যান। কারণ যারাই মুকাল্লিদ মুজতাহিদের তারা পরস্পর ভাই ভাই। আর গায়রে মুকাল্লিদরা ঘরছাড়া। কারণ তারা তাক্বলীদকে শিরক
বলে। আর মুকাল্লিদকে মুশরিক বলে। সুতরাং যারাই মু্কাল্লিদ তারাই ওদের ভাষায় মুশরিক। আর ওদের দাবি অনুযায়ী তারা মুআহহিদ।
আর মুশরিক ও মুমআহহিদের মাঝে ভাতৃত্বের সম্পর্ক হতে পারে না। তাই ইমাম বুখারী মুকাল্লিদ হওয়ার কারণে কথিত আহলে হাদীসদের ভাষায় মুশরিক, তাই তাদের সাথে কোন সম্পর্ক হতেই পারে না। সম্পর্ক হল আমাদের সাথে। তাই ইমাম বুখারী রহঃ ওদের নয় আমাদের।