লেখক– মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকাড়বী রহঃ
অনুবাদঃ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
এটি একটি অনস্বিকার্য ঐতিহাসিক সত্য যে, গায়রে মুকাল্লিদদের আহলে কুরআন ও আহলে হাদীস এ দুই দলের কোন দলই দল হিসেবে কোন কালেই পাওয়া যায়নি। বরং এটি কিছু দিন পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে।
এ কারণেই পূর্ববর্তীদের সাথে তাদের কোন সনদই মিলে না। রাফজীরা যেমন যে সাহাবীকে ইচ্ছে রাফেজী বলে দেয়, যেমন হযরত আলী রাঃ, হযরত আবু জর রাঃ, হযরত ফাতেমা রাঃ প্রমূখ। অথচ তারা সকলেই সাচ্চা আহলে সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।
এমনিভাবে বেচারা গায়রে মুকাল্লিদরা কখনো মুহাদ্দিসীনদের গায়রে মুকাল্লিদ বলে, যদিও মুহাদ্দিসীনদের অবস্থা তবাক্বাতের কিতাবে চারটি তবক্বায় পাওয়া যায়, যথা তবক্বাতে হানাফিয়্যাহ, তবক্বাতে মালিকিয়্যাহ, তবক্বাতে শাফিয়িয়্যাহ, তবক্বাতে হানাবেলা। ত
বক্বাতে গায়রে মুকাল্লিদ নামে কোন কোন কিতাব কোন মুহাদ্দিস বা ইতিহাসবীদ লিখেছেন বলে দুনিয়াতে পাওয়া যায় না। আর কোন একটিও গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসের ব্যাপারে কোন ইতিহাসগ্রন্থে বা হাদীসের কিতাবে প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, তিনি كان لا يجتهد ولا يقلد তথা তার মাঝে ইজতিহাদের যোগ্যতাও নেই, আবার তিনি কারো তাক্বলীদও করতেন না, বরং তিনি গায়রে মুকাল্লিদ ছিলেন। এমন একটি নজীরও ইতিহাস বা হাদীসের কিতাবে পাওয়া যাবে না।
কতিপয় লোক বলে থাকে যে, বড়পীর হযরত শায়েখ আব্দুল কাদীর জিলানী রহঃ যার বড়ত্বের ব্যাপারে পৃথিবীব্যাপী খ্যাতি আছে তিনি নাকি গায়রে মুকাল্লিদ ছিলেন।
অথচ একথাটি সম্পূর্ণ ভুল। কোন একটি গ্রহণযোগ্য ইতিহাসগ্রন্থে একথা পাওয়া যায় না যে, তিনি না ইজতিহাদের যোগ্যতা রাখতেন, না মুকাল্লিদ ছিলেন। বরঞ্চ হযরত রহঃ এর কথা তবক্বাতে হানাবেলায় উল্লেখ আছে। একথা দিবালোকের মতই দেদীপ্যমান সত্য যে, তিনি হাম্বলী ছিলেন।
প্রসিদ্ধ গায়রে মুকাল্লিদ জনাব ফয়েজ আলম সিদ্দিকী “আল মুগনী” এর লেখক আল্লামা ইবনে কুদামা রহঃ, “গুনিয়াতুত তালেবীন” এর লেখক শায়েখ আব্দুল কাদের জিলানী রহঃ, শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহঃ এবং ইবনুল কাইয়্যুম রহঃ কে হাম্বলী বলে গণ্য করেছেন। {ইখতিলাফে উম্মত কা আলমিয়াহ-২৯}
তিনি আরো লিখেন যে,
গুনিয়াতুত তালেবীন এর উপর পর্যালোচনা
[গায়রে মুকাল্লিদ সাহেব আরো লিখেনঃ] ঐতিহাসিকভাবে সর্ব প্রথম সাইয়্যিদ আব্দুল কাদীর জিলানী রহঃ হাম্বলী তার বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জনকারী লিখিত কিতাব গুনিয়াতুত তালেবীন” এর মাঝে শিয়াদের কথা উল্লেখ করেন।গুনিয়াতুত তালেবীন কিতাবটি হাম্বলী মাযহাবের একটি বিশ্বকোষ। কিন্তু এ কিতাবে কিন্তু তিনি তাসাউফের নামে এমন কিছু কথা সংযোজন করেছেন যার কোন জবাব নেই।
দ্বীন-ধর্ম সম্পর্কে সামান্য জ্ঞানসম্পন্ন বা নিম্নশ্রেণীর আলেমও এসব এক নজর দেখেই এ আন্দাজ লাগাতে পারবেন যে, আসল গুনিয়াতুত তালেবীন এর লেখক একজন পরহেযগার, সুন্নাতের অনুসারী, দুনিয়াত্যাগী এবং আলেম ব্যক্তি। আর এ তাসাওউফের অধ্যায়ের লেখক কোন বদ্বীন, প্রবৃত্তিপূজারী, মুক্তমনা রোগে অসুস্থ্য এবং অল্প জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি।
চিন্তার বন্ধ্যাত্ব, শব্দের অপপ্রয়োগ, সেই সাথে আলোচ্যিক অংশে মর্মার্থ উদ্ধারও সত্য উদঘাটনে হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছে। কোথায় কুরআন হাদীসের সুগন্ধিমাখা সুভাসিত খুশবো! আর কোথায় নোংরা মস্তিস্ক থেকে উদ্ভুদ দুর্গন্ধ! {ইখতিলাফে উম্মত কা আলমিয়া-৩৩১}
লক্ষ্য করুন! এ তিরস্কারকারী গায়রে মুকাল্লিদ সাহেব এক শ্বাসে হযরত শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী রহঃ কে কিতাব ও সুন্নাত থেকে হাজার মাইল দূরে, বদ্বীন, প্রবৃত্তিপূজারী, মুক্তমনা রোগে অসুস্থ্য এবং অল্প জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি বলে মন্তব্য করেছে। সেই সাথে গুনিয়াতুত তালেবীনকে নোংরা মস্তিস্ক থেকে উদ্ভুদ দুর্গন্ধ সাব্যস্ত করেছে।
তবে হ্যাঁ, সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য গুনিয়াতুত তালেবীনের ফিক্বহী মাসায়েলের লেখক একজন, আর তাসাউফ অংশের লেখক অন্য একজনকে সাব্যস্ত করার মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে।
এটি ঠিক ঐ পদ্ধতির মতই, যেমন মির্যা কাদিয়ানী ঈসা আঃ কে গালিাগালাজ করতো, অবশেষে নিজেই ঈসা আঃ বলে দাবি করে বসে। আর বলতে থাকে যে, সেই ঈসা একজন আর সে আরেক ঈসা।
আসল কথা হল, গায়রে মুকাল্লিদদের মুখ ও কলম লাগামহীন। দেখুন এ ফায়েজ আলম সাহেবই আবার লিখে যে,
বুখারী শরীফের উপর পর্যালোচনা
ঐ সকল মুহাদ্দিসীন, হাদীসের ব্যাখ্যাতাগণ, ঐতিহাসিকগণ, এবং মুফাসসিরীনদের তাক্বলীদী মনোভাবের উপর মাতম করার ইচেছ হয়, যারা এতটুকু কথাটুকুকেও গবেষণা ও যাচাই বাছাই করতে অক্ষম ছিলেন যে, ঘটনাটি একেবারেই ভুল। কিন্তু এই দ্বীনী ও যাচাই-বাছাইয়ের ভুল নির্ভীকতা হাজারো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে আরো সৃষ্টি করবে।
আমাদের ইমাম বুখারী রহঃ সহীহ বুখারীতে যা কিছু তিনি বলেছেন তা সহীহ এফটি নিঃসন্দেহ বিষয়। চাই তা আল্লাহ তাআলার উলুহিয়্যাত, আম্বিয়াগণের নিষ্পাপতা, এবং তাদের সম্মানিত স্ত্রীগণের নিষ্কলুষতা বিষয়ে হোক না কেন। {সিদ্দিকায়ে কায়েনাত-১০৬}
ইমাম বুখারীর অন্ধ তাকলীদের যে পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করা হল, তা কোন মাযহাবের মুকাল্লিদদের মাঝে আছে কি?
দেখুন! সমস্ত মুহাদ্দিসীন, সমস্ত হাদীস ব্যাখ্যাকারীগণ, সমস্ত সীরাতপ্রণেতা, এবং মুফাসসিরীনগ কে তাহক্বীক তথা গবেষণার ক্ষেত্রে অক্ষম এবং দ্বীনী বিষয়ে নির্ভীক সাব্যস্ত করে সহীহ বুখারীর ব্যাপারে এমন পর্যালোচনা লিখেছে যে, পাদ্রী, ফাদার, পন্ডিতভক্তি এবং গুরুভক্তরাও এতে লজ্জা পাবে।
প্রসঙ্গ অহদাতুল ওজুদ ও শায়েখ জিলানী রহঃ
আজকাল গায়রে মুকাল্লিদগণ অহদাতুল ওজুদ এর ভুল ব্যাখ্যা (মিশ্রণ ও একাত্মতা) করে সুফিয়ানে কেরামের উপর মিথ্যার বেসাতী করে বেড়ায়। অথচ সুফিয়ানে কেরাম আল্লাহর সাথে একাত্ম হওয়া এবং মিশ্রিত হওয়ার আক্বিদাধারীকে জিন্দীক এবং গোমরাহী সাব্যস্ত করেছেন। {মাকালাতে সাওয়াতী-১/৩৭৭}
শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী রহঃ নিজেই অহদাতুল ওজুদের বিশ্বাসী ছিলেন। {মাকালাতে সাওয়াতী-১/৩৭৭} তাহলে গায়রে মুকাল্লিদদের মতে তিনি পথভ্রষ্ট ও জিন্দীক নাউজুবিল্লাহ! তাহলে হযরতের সাথে তাদের কী সম্পর্ক?
সুফিয়ানে কেরামের ব্যাপারে নবাব সিদ্দীক হাসান সাহেবের নসিহত
নবাব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব লিখেন-সুফিয়ানে কেরাম রহঃ এর হালাতের উপর চারটি বিষয় আলোচনাযোগ্য।
১–মুজাহাদা। এর সম্পর্ক অন্তর পরিশুদ্ধায়ন, এবং আমলের সাথে। এসব বিষয় তার চূড়ান্ত সীমার নামে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে।
২– কাশফ, ইলমে গায়েবের হাকীকত, যার সম্পর্ক আল্লাহ তাআলার গুণাবলীর সাথে। আরশ, কুরসী, ফেরেস্তা, অহী, নবুওত, রূহ, দৃশ্য ও অদৃশ্য বিষয়ের হাকীকত সম্পর্কিত বিষয়াবলী।
৩–কারামত প্রসঙ্গ।
৪–শাতিহাত তথা বাহ্যিক শরীয়তপরিপন্থী কথাবার্তা।
কতিপয় লোক এ চারটি বিষয়কে অস্বিকার করে থাকে। কেউ কেউ ভাল মনে করে। আর একদল ব্যাখ্যা স্বাপেক্ষ বিষয় বলে মনে করেন।
মোটকথা, প্রথম বিষয়টির কোন কিছুকেই অস্বিকার করা জো নেই। সুফিয়ায়ে কেরামের পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ ঠিক। আর তারা এজন্য সৌভাগ্যমন্ডিত। এমনিভাবে দ্বিতীয় বিষয়টিও সহীহ এটা অস্বিকার করা যাবে না। যদিও কতিপয় ওলামা এটাকে অস্বিকার করেছেন।
কিন্তু এ অস্বিকার হকের বিপরীতে ধর্তব্যতার মধ্যে পরে না। আর তৃতীয় বিষয়টি মুতাশাবিহাত এর অন্তুর্র্ভূক্ত। এর সম্পর্ক অন্তরের গভীরতার সাথে। শুধু শব্দ ও অভিধান দিয়ে এর মর্মার্থ উদ্ধার করা সম্ভব নয়। শব্দকেতো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়কে প্রকাশ করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর চতুর্থ বিষয় তথা বাহ্যিক শরীয়ত গর্হিত কথাবার্তা এর সম্পর্ক হল ভাবাবেগের চূড়ান্ত হালাতের সাথে। দুনিয়ার কর্মকান্ড থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ আলাদা রাখার কারণে কখনো সখনো সুফিয়ানে কেরামের মুখ দিয়ে এমন কথাবার্তা বেরিয়ে যায়, যা তারা ইচ্ছেকৃত বলেন না।
যেহেতু যে ব্যক্তি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পরেন, সে মাজুর এবং অপারগ হয়ে থাকেন। তাই তাদের মাঝে যারা গ্রহণযোগ্য ও পথিকৃত তাদের বাহ্যিক শরীয়ত গর্হিত কথার সুন্দর ব্যাখ্যা দাঁড় করানো উচিত। {মা’সারে সিদ্দীকী-৪/৫১}
এক কলেজের লেকচারার গায়রে মুকাল্লিদ “আদ দেওবন্দিয়াহ” তথা দেওবন্দী ওলামাদের আক্বিদা, “দেওবন্দিয়্যাত” , “বেরেলবী দেওবন্দী এক হ্যায়” এবং “তাবলীগী জামাতের ইসলাম” নামে কয়েকটি রেসালা লিখেন। যাতে তিনি সুফিয়ায়ে কেরামের মুতাশাবিহাত তথা অস্পষ্ট বিষয়াদী ও শাতিহাত তথা বাহ্যিক শরীয়ত গর্হিত বিষয়াদী একত্র করলেন। কিন্তু তিনি তার কোন রেসালায় “মুতাশাবিহা” ও “শাতিহাত” এর শরয়ী হুকুম কি? একথা বলেন নি।
অথচ পুরো উম্মতের ইজমা একথার উপর যে, যেহেতু কারাম এবং শাতিহাত এর মাঝে যেহেতু সে সকল লোকদের কোন দখল থাকে না। এ কারণে তারা মারফুউল কলম তথা হিসাব-নিকাশের বাহিরে থাকেন।
যেমন স্বপ্নে কুফরী কালাম মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলে তাকে কাফের বলা যাবে না। স্বপ্নে কোন গোনাহের কাজ করলে তাহলে তাকে কখনোই গোনাহগার বলা যাবে না। কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদদের বদনসীবী যে, কুরআনের মুতাশাবিহাত, হাদীসের মুতাআরিজাত, আর ফিক্বহের শাওয়াজ এবং তাসাউফের শাতিহাত নিয়ে বিতর্ক করাই তাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞানের পরিধি।
অহদাতুল ওজুদ
অহদাতুল ওজুদ ও অহদাতুশ শুহদের ব্যাপারে নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান লিখেন- “আমাদের উপর এ বিশ্বাস রাখা আবশ্যক যে, আমরা কিছুতেই ভ্রষ্টতা ও গোমরাহীর চিন্তা মনে আনবো না। কেননা, এতে অনেক ওলাময়ে কেরাম ও মাশায়েখে ইজামকে কাফের ও গোমরাহ বলা আবশ্যক হয়।
অহদাতুল ওজুদকে প্রমাণ করা ও বাতিল করতে প্রচেষ্টা না করা উচিত। যদি কোন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি নিজের প্রজ্ঞার উপর আস্থা রাখে, তাহলে বুঝলেতো ভাল, নতুবা এটাকে এর প্রবক্তাদের উপরই ন্যস্ত করা উচিত। {মাসারে সিদ্দিকী-৪/৩৯}
হযরত শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী রহঃ ও মৃত ব্যক্তির শ্রবণ প্রসঙ্গ
হযরত রহঃ বলেন, মৃতকে দাফন করার পর যদি তুমি তার কবরকে বরাবর চিড়ে ফেল, তখন এক ব্যক্তি তার শিয়রে দাঁড়িয়ে বল, হে ওমুকের ছেলে ওমুক! এ আওয়াজ মুর্দা শুনে। কিন্তু জবাব দেয় না।
তারপর আবার ডাক-হে ওমুকের ছেলে ওমুক! তখন মৃত আওয়াজ শুনে কবরে উঠে বসে যায়। তারপর তৃতীয়বার আওয়াজ দিলে মৃত ব্যক্তি বলে-“ তুমি আমাকে সোজা রাস্তা দেখিয়েছো! আল্লাহ তাআলা তোমার উপর রহমাত করুন। কিন্তু আমার এ কথা তুমি শুনতে পাওনা। {গুনিয়াতুত তালেবীন-২/১২১}
হযরত শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী রহঃ ও হায়াতুন নবী সাঃ প্রসঙ্গ
হযরত শায়েখ রহঃ বলেনঃ যখন রওযায় আতহারে উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়, তখন কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে রওযার দিকে মুখ দিয়ে প্রথমে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ কর, হে আল্লাহ! আপনি কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন যে, যদি লোকেরা নিজের প্রাণের উপর জুলুম [গোনাহ] করে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চায়, এবং রাসুল সাঃ ও সেই গোনাহের জন্য ক্ষমা চায়, তাহলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমাকারী মেহেরবান।
হে আল্লাহ! আমিও এমনিভাবে তোমার নবীয়ে পাক সাঃ এর কাছে দুআ চাওয়াত এসেছি। যেমন রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় গোনাহ মাফ চাওয়াতে আসত। তারপর বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার অসিলায় আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। {গুনিয়াতুত তালেবীন-১/১১১}
গায়রে মুকাল্লিদরা মৃত ব্যক্তির শোনা ও চিনতে পারাকে শিরকী আক্বিদা বলে প্রচার করে থাকে, আর হায়াতুন নবী আক্বিদাকেও শিরক বলে থাকে। তাহলে শায়েখ আব্দুল কাদীর জিলানী রহঃ যেহেতু তাদের পরিভাষায় মুশরিক, তাহলে সাধারণ মুসলমানদের ওরা কেন ধোঁকা দেয় যে, শায়েখ জিলানী রহঃ গায়রে মুকাল্লিদ ছিলেন? আলইয়াজুবিল্লাহ!
শায়েখ আব্দুল কাদের জিলানী রহঃ এর নামায
হযরত শায়েখ রহঃ বলেনঃ নামাযে ১৫টি রুকন, ১৯টি ওয়াজিব, ১৪টি সুন্নাত এবং ২৫টি হাইয়াত তথা আদব আছে। রুকন না পাওয়া গেলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। ওয়াজিব ছেড়ে দিলে সেজদায়ে সাহু আবশ্যক। আর সুন্নাত ও হাইয়াতকে ছেড়ে দিলে নামাযও বাতিল হয় না, আবার সেজদায়ে সাহু ও আবশ্যক হয় না। {গুনিয়াতুত তালেবীন-১/৫}
তিনি আরো বলেনঃ নামাযের নিয়ত মুখে বলা উত্তম। {গুনিয়াতুত তালেবীন-১/১০২}
আর মুক্তাদীর জন্য ইমামের অনুসরণের নিয়ত জরুরী। {গুনিয়াতুত তালেবীন-২/১০৪}
তিনি আরো বলেনঃ রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, ইমাম যখন আল্লাহু আকবার বলবে তখন তোমরা আল্লাহু আকবার বল, আর যখন ইমাম কিরাত [ফাতিহা] পড়বে তখন তোমরা চুপ থাক। আর যখন ইমাম غير المغضوب عليهم ولا الضالين বলবে তখন তোমরা আমীন বলবে। {গুনিয়াতুত তালেবীন-২/১০৫}
হযরত শায়েখ রহঃ এ দুআ করতেন যে, “হে আল্লাহ! আমাকে উসুল ও ফুরুয়ী মাসআলায় ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর মাযহাবের উপর মৃত্যু দিন। আর ইমাম আহমাদ রহঃ এর মুকাল্লিদীনদের সাথে আমার হাশর করুন। {গুনিয়াতুত তালেবীন-২/১০৫}
হযরত শায়েখ রহঃ যেই ২৮টি হাইয়াত তথা নামাযের ২৫টি মুস্তাহাব বিষয় বর্ণনা করেছেন,তা ইমাম আহমাদ রহঃ এর তাক্বলীদ করেই বর্ণনা করেছেন।
তাহলে গায়রে মুকাল্লিদদের আক্বিাদ অনুযায়ী হযরত শায়েখ নামাযের ২৫টি মাসআলায় তাক্বলীদী শিরক করেছেন! শুধু তাই নয়, ইমামের পিছনে ফাতিহা না পড়ার কারণে তার নামাযও ফাসিদ হয়ে গেছে?!
তিন তালাক
হযরত শায়েখ রহঃ কোন একটি বিষয়ে রাফেজীদের ইহুদীদের সাথে সাদৃশ্যতা বর্ণনা করেছেন। যাতে তিনি একটি লিখেছেন যে, ইহুদীরা তিন তালাককে কিছুই মনে করে না। ঠিক একই অবস্থা রাফেজীদের।
আমি বলি গায়রে মুকাল্লিদরাও তিন তালাকের পর আবার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনে। [সুতরাং এটা কাদের সাথে সাদৃশ্যতা?]
ইবলিসের বংশধর!
হযরত শায়েখ রহঃ বলেনঃ লোকেরা দেখল যে, রাসূল সাঃ এর কপালে ঘাম মুক্তার মত চকচক করছিল। আর তিনি অভিশাপ দিলেন। হযরত আলী রাঃ বললেন, হযরত! আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান হোক! আপনি কাকে ধমকাচ্ছেন?
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, দুশমন ইবলীশ খবীশ তার শ্বাস তার পশ্চাদ্দেশ দিয়ে প্রবিষ্ট করিয়েছে। আর সাতটি ডিম পেড়েছে। ফলে তার সাতটি বাচ্চা হয়েছে। যাদের আদম সন্তানকে গোমরাহ করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের মাঝে শয়তানের যে সন্তান দ্বিতীয় ডিম দ্বারা জন্ম নিয়েছে, তার নাম হল “হাদীস”। তাকে নামাযীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। {গুনিয়াতুত তালেবীন-১/৮৮}
এবার একটু চিন্তা করে দেখি! আসুন! খুজে বের করি কারা সারা জীবনের একটাই উদ্দেশ্য তথা নামাযীদের মনে ওয়াসওয়াসা ঢুকানোর পায়তারা নিয়ে কাজ করে বেড়ায়? নামাযীদের পেরেশান করে রাখে যে, তোমাদের নামায ভুল। তোমাদের নামায হয় না। তোমাদের নামায মুহাম্মদী নামায না হানাফী নামায ইত্যাদি ইত্যাদি। এ সকল লোকেরা এ “হাদীস” এর সাথেই সম্পর্ক রাখে। বরঞ্চ ওরাতো হাদীসেরই আহল বলে প্রচার করে থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব কথিত “আহলে হাদীস” এর ওয়াসওয়াসা থেকে হিফাযত করুন।
মোটকথা, গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট যেহেতু পীরানে পীর মাআজাল্লাহ মুশরিক, এবং বেদআতি। আর মুশরিক ও বেদআতির কোন ইবাদত কবুল হয় না, তাহলে গায়রে মুকাল্লিদরা মানুষদের ধোঁকা কেন দেয়?
আমি আমার রেসালা “গায়রে মুকাল্লিদ কি গায়রে মুসতানাদ নামায” বইয়ে একথা প্রমাণ করেছি যে, গায়রে মুকাল্লিদদের নামায না কুরআন দিয়ে প্রমাণিত, না হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু এর জবাব ওরা আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি।
আপনাদের কাছে কি রফয়ে ইয়াদাইনই এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, যে ব্যক্তি পরিস্কারভাবে রফয়ে ইয়াদাইন সুন্নাত হওয়াকে অস্বিকার করেও, শুধু নিজের ইমামের অনুসরণে রফয়ে ইয়াদাইন করে থাকে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি কি আহলে হাদীস বনে যায়? তাহলে শিয়ারা কি দোষ করেছে? ওরাতো কথিত আহলে হাদীসদের তুলনায় আরো কড়াভাবে রফয়ে ইয়াদাইন করে থাকে। ওরাও তাহলে আহলে হাদীস?
যারা ইমাম শাফেয়ী রহঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহঃ এর তাক্বলীদে সখছী করা হিসেবে রফয়ে ইয়াদাইন করে থাকে, তারা কি আহলে হাদীস? যদি হয়ে থাকে, তাহলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত আহনাফকে তাক্বলীদের কারণে মুশরিক ও বেদআতি কেন বলা হয়?