প্রশ্ন
ইউটিইবসহ বেশ কিছু সামাজিক সাইটে আমীরে শরীয়ত আল্লামা আতাউল্লাহ শাহ বুখারী রহঃ এর দিকে নিসবত করা একটি জুমআর খুতবার ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। এটি কি আসলেই আতাউল্লাহ শাহ বুখারীর রহঃ এর জুমআর খুতবা? আর এ খুতবাটি কি আমরা জুমআর খুতবায় পড়তে পারি? ভিডিওটির লিংক হল- <
দয়া করে জানালে খুশি হতাম।
প্রশ্নকর্তা-আহমদুল্লাহ কওমী মাদরাসা, ঢাকা।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
ঐ খুতবার ভিডিওটি আমাদের কাছেও এসেছে অনেক আগেই। আমরা এটি ভাল করে শুনেছি। ভয়েসটি ভরাটও সুন্দর। বক্তব্যগুলোও চমৎকার। কিন্তু এক স্থানের বক্তব্যটি আমাদের সন্দেহে ফেলে দিয়েছে। উক্ত খুতবার এক স্থানে এমন একটি বক্তব্য রয়েছে, যা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের সর্বসম্মত আক্বিদার পরিপন্থী। সেই সাথে সাহাবায়ে কেরামদের প্রতি বিদ্বেষ ও রাসূল সাঃ এর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য বিদ্যমান রয়েছে সেই খুতবায়। সেই অংশটি হল-
او يتبرك بغيره من نبى وولى وتقى ونقى ونسيم وحسين وجميل وصغير وكبير فعليه الخسران والوبال
অনুবাদ- অথবা যে ব্যক্তি তাবাররুক হাসিল করে আল্লাহ ছাড়া কোন নবী, ওলী, বুযুর্গ, মুত্তাকী, পরহেযগার, উত্তম, অনুপম, বা ছোট বড় কারো দ্বারা, তাহলে তার জন্য ধ্বংস ও কঠিন শাস্তি। খুতবার এ অংশটি পরিস্কার বুঝাচ্ছে, এটি আতাউল্লাহ শাহ বুখারী রহঃ এর খুতবা হতে পারে না। কিংবা যদিও এটি আতাউল্লাহ শাহ বুখারী রহঃ এর খুতবা হয়েও থাকে, তাহলে এ জঘন্য অংশটি অবশ্যই আতাউল্লাহ শাহ বুখারী রহঃ এর নয়। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকাবীর উলামাদের দিকে নিসবত করা বক্তব্যকে আমরা সেই মানদন্ডেই দেখবো, যে মানদন্ডে তারা চলেছেন। যেহেতু আতাউল্লাহ শাহ বুখারী রহঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামআতের মাসলাকের অনুসারী, তাই তিনি কি করে নবীর তাবাররুক গ্রহণকেও ধ্বংস আর কঠিন শাস্তির কারণ বলতে পারেন? অথচ সকল উলামায়ে উম্মত একমত যে, নবীজী সাঃ এর দ্বারা তাবাররুক গ্রহণ শুধু জায়েজই নয় বরং ফযীলতের বিষয়ও বটে। সাহাবায়ে কেরামগণ রাঃ থেকে অসংখ্য ঘটনা বর্ণিত আছে, যাতে সাহাবাগণ রাঃ রাসূল সাঃ এর দ্বারা তাবাররুক হাসিল করেছেন। তাই এ খুতবা আতাউল্লাহ বুখারী রহঃ এর হতে পারে না। মূলত এ খুতবাটি কালের মহা বেয়াদব আহমদ সাঈদ চাতরূরীর। যে তার জুমআর খুতবায় এটি পাঠ করতো। এখানে সংক্ষিপ্তকারে তাবাররুক কাকে বলে? তাবাররুকের প্রমাণ উপস্থাপিত করা হল।
তাবাররুক কাকে বলে?
তাবাররুক শব্দটি এসেছে বরকত থেকে। সুতরাং তাবাররুক মানে হল বরকত নেয়া।
বরকত কাকে বলে?
লিসানুল আরব প্রণেতা লিখেছেন,
البَرَكة: النَّماء وَالزِّيَادَةُ. والتَّبْريك: الدُّعَاءُ للإِنسان أَوْ غَيْرِهِ بِالْبَرَكَةِ
অনুবাদ- বরকত হল, বাড়ন্ত ও অতিরিক্ত হওয়া। আর তাবরীক হল, মানুষ বা অন্য কারো জন্য বরকতের দুআ করা। {লীসানুল আরব-১০/৪৭৭} বরকত বিষয়ে আল্লামা রাগেব ইস্ফাহানী রহঃ মুফরাদাতুল কুরআনে লিখেছেন, কোন বস্তুতে বরকত থাকার মানে হল, এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ ও সৌভাগ্য রাখা হয়েছে। আর তাবাররুক হল সেই কল্যাণ ও সৌভাগ্য তালাশ করাকে বলা হয়। এ কারণেই সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে রাসূল সাঃ এর ব্যবহৃত বস্তু দিয়ে তাবাররুক হাসিল করার অসংখ্য বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। কয়েকটি উদাহরণ নিচে উদ্ধৃত করা হল,
১
রাসূল সাঃ একবার পানির পাত্র চাইলেন। তারপর ঐ পাত্রে স্বীয় হাত মুবারকও চেহারা মুবারক ধৌত করলেন। সেই সাথে তাতে কুলি করলেন। তারপর সেখানে উপস্থিত দুইজন সাহাবীকে বললেন, এটাকে পান করে নাও, আর নিজের চেহারা এবং ঘাড়ে প্রবাহিত কর। {বুখারী শরীফ-১/৯৩, হাদীস নং-১৮৮, ১৮৫} বুখারীতে নি¤œ বর্ণিত শব্দে উক্ত হাদীসটি এসেছে-
وَقَالَ أَبُو مُوسَى: دَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَدَحٍ فِيهِ مَاءٌ، فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ فِيهِ، وَمَجَّ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ لَهُمَا: «اشْرَبَا مِنْهُ، وَأَفْرِغَا عَلَى وُجُوهِكُمَا وَنُحُورِكُمَا»
২
রাসূল সাঃ যখন অজু করতেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম রাঃ রাসূল সাঃ এর শরীরে লাগা পানি নেয়ার জন্য এমনভাবে প্রতিযোগিতা করতেন যে, দেখলে মনে হতো পরস্পর বুঝি ঝগড়াতে লিপ্ত। দেখুন সহীহ বুখারী-১/৯৪, হাদীস নং-১৮৯, ১৮৬} মূল আরবী-
189 – حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ صَالِحٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي مَحْمُودُ بْنُ الرَّبِيعِ، قَالَ «وَهُوَ الَّذِي مَجَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي وَجْهِهِ وَهُوَ غُلاَمٌ مِنْ بِئْرِهِمْ» وَقَالَ عُرْوَةُ، عَنِ المِسْوَرِ، وَغَيْرِهِ يُصَدِّقُ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا صَاحِبَهُ «وَإِذَا تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ
৩
রাসূল সাঃ হযরত জাবের রাঃ এর অসুস্থ্য থাকার সময় দেখার সময় গেলেন। যাওয়ার পর সেখানে অজু করলেন, তারপর অজু শেষে অবশিষ্ট পানি হযরত জাবের রাঃ এর এর উপর ছিটিয়ে দিলেন, ফলে হযরত জাবের রাঃ এর হুশ ফিরে এল। {সহীহ বুখারী-১/৯৪, হাদীস নং-১৯১, ১৯৪} আরবী পাঠ হল-
194 – حَدَّثَنَا أَبُو الوَلِيدِ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ المُنْكَدِرِ، قَالَ: سَمِعْتُ جَابِرًا يَقُولُ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُنِي، وَأَنَا مَرِيضٌ لاَ أَعْقِلُ، فَتَوَضَّأَ وَصَبَّ عَلَيَّ مِنْ وَضُوئِهِ، فَعَقَلْتُ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَنِ المِيرَاثُ؟ إِنَّمَا يَرِثُنِي كَلاَلَةٌ، فَنَزَلَتْ آيَةُ الفَرَائِضِ
৪
রাসূল সাঃ এর ঘাম মাটিতে পড়ার আগেই সাহাবায়ে কেরাম স্বীয় হাতে নিয়ে নিতেন। হাতে নিয়ে তা স্বীয় চেহারায় এবং শরীরে মেখে ফেলতেন। {সহীহ বুখারী-১/১০০} মূল ইবারত হল-
قَالَ عُرْوَةُ، عَنِ المِسْوَرِ، وَمَرْوَانَ خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَمَنَ حُدَيْبِيَةَ فَذَكَرَ الحَدِيثَ: «وَمَا تَنَخَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نُخَامَةً، إِلَّا وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ (صحيح البخارى، كتاب الوضوء، بَابُ البُزَاقِ وَالمُخَاطِ وَنَحْوِهِ فِي الثَّوْبِ)
৫
বরকতের জন্যই রাসূল সাঃ সাহাবায়ে কেরামের নবপ্রসূত বাচ্চার মুখে খেজুর চিবিয়ে মুখে দিতেন। {সহীহ বুখারী-২/৮২২, হাদীস নং-৩৯০৯, ৩৬৯৭
আরবী পাঠ হল-
3909 – حَدَّثَنِي زَكَرِيَّاءُ بْنُ يَحْيَى، عَنْ أَبِي أُسَامَةَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّهَا حَمَلَتْ بِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، قَالَتْ: فَخَرَجْتُ وَأَنَا مُتِمٌّ فَأَتَيْتُ المَدِينَةَ فَنَزَلْتُ بِقُبَاءٍ فَوَلَدْتُهُ بِقُبَاءٍ، ثُمَّ أَتَيْتُ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعْتُهُ فِي حَجْرِهِ، ثُمَّ «دَعَا بِتَمْرَةٍ فَمَضَغَهَا، ثُمَّ تَفَلَ فِي فِيهِ، فَكَانَ أَوَّلَ شَيْءٍ دَخَلَ جَوْفَهُ رِيقُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ حَنَّكَهُ بِتَمْرَةٍ ثُمَّ دَعَا لَهُ، وَبَرَّكَ عَلَيْهِ
৬
হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ থেকে বর্ণিত। একবার তিনি যখন রাসূল সাঃ এর খিদমাতে উপস্থিত হলেন, তখন রাসূল সাঃ সিঙ্গা লাগাতে ছিলেন। যখন রাসূল সাঃ সিঙ্গা লাগানো থেকে ফারিগ হলেন, তখন তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ কে সিঙ্গা লাগানো দ্বারা বের হওয়া রক্ত দিয়ে বললেন, এ রক্ত নিয়ে যাও, তারপর এটাকে এমন স্থানে প্রবাহিত করে দাও, যেখানে কারো দৃষ্টিগোচর না হয়। হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ উক্ত প্রবাহিত করার বদলে পান করে ফেললেন। যখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ ফিরে আসলেন। তখন রাসূল সাঃ জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ রক্তকে তুমি কি করেছো? হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ জবাব দিলেন, আমি ঐ রক্তকে এমন লুকায়িত স্থানে প্রবাহিত করে দিয়েছি, যা মানুষের দৃষ্টির একদম আড়ালে। রাসূল সাঃ স্বীয় আশেকের অবস্থা বুঝে গেলেন। বললেন, তুমি মনে হয় উক্ত রক্ত পান করে ফেলেছে? ইবনে যুবায়ের রাঃ বললেন, হ্যাঁ, আমি তা পান করে ফেলেছি। রাসূল সাঃ তখন ইরশাদ করলেন, যার রক্তের সাথে আমার রক্ত মিলে যায় তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না। লোকদের রায় এই ছিল যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাঃ এর শারিরিক শক্তিমত্বা আর দৃঢ়তা এ রক্তের বদৌলতে অর্জিত হয়েছিল। {আলখাসায়েসুল কুবরা-১১৭, যিয়াউদ্দীন আলমাকদিসীকৃত আলআহাদিসুল মুখতারাহ, হাদীস নং-২৬৭, আলমুসতাদরাক আলাস সাহিহাইন, হাদীস নং-৬৩৪৩, আবু বকর আশশায়বানীকৃত আলআহাদ ওয়ালমাসানী, হাদীস নং-৫৭৮}
আরো যেসব কিতাবে উক্ত বর্ণনাটি বিদ্যমান
১-
মুহাম্মদ বিন ইউসুফ আশশামীকৃত “সাবীলুল হুদা ওয়ার রাশাদ”- চতুর্থ অধ্যায়, ফি তাবাররুকি আসহাবীহি রাঃ।
২-আবূ নুয়াইম আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ আলইসফাহানীকৃত “হুলয়াতুল আওলিয়া ওয়া তাবকাতুল আসফিয়া”-আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের অধ্যায়।
৩-আহমাদ বিন আলী আলমাকরিজীকৃত “ইমতাউল আসমা”-আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের অধ্যায়।
৪-আলী ইবনে ইবরাহীমকৃত “ইনসানুল উয়ূন ফী সীরাতি আমীনি মামুন”-গাযওয়ায়ে উহুদ অধ্যায়। ইমাম সুয়ুতী রহঃ এর আলখাসায়েসুল কুবরা গ্রন্থের মূল আরবী পাঠ হল-
اخْرُج الْبَزَّار وَأَبُو يعلى وَالطَّبَرَانِيّ وَالْحَاكِم وَالْبَيْهَقِيّ عَن عبد الله بن الزبير انه اتى النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَهُوَ يحتجم فَلَمَّا فرغ قَالَ يَا عبد الله اذْهَبْ بِهَذَا الدَّم فاهرقه حَيْثُ لَا يراك أحد فشربه فَلَمَّا رَجَعَ قَالَ يَا عبد الله مَا صنعت قَالَ جعلته فِي أخْفى مَكَان علمت انه مخفي عَن النَّاس قَالَ لَعَلَّك شربته قلت نعم قَالَ ويل للنَّاس مِنْك وويل لَك من النَّاس فَكَانُوا يرَوْنَ أَن الْقُوَّة الَّتِي بِهِ من ذَلِك الدَّم
৭
রাসূল সাঃ স্বীয় চুল মুবারক নিজেই সাহাবায়ে কেরামের মাঝে বন্টন করেছিলেন। সাহাবায়ে কেরামগণও তা সংগ্রহ করার জন্য উদগ্রিব থাকতেন। সংগ্রহ করে তা খুব যতœ করে রাখতেন। হাদীসে এসেছে, রাসূল সাঃ কুরবানীর দিন হলক করলেন। তারপর হযরত আবূ তালহা রাঃ কে স্বীয় চুল দিয়ে বললেন, তুমি এসবকে সাহাবাগণের মাঝে বন্টন করে দাও। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ বলেন, তিনি রাসূল সাঃ এর সামনের দিকের চুল তিনি সর্বদা তার টুপির নিচে রাখতেন। এর বরকতে তিনি সবসময় বিজয়ী হতেন। {সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মানাসিক, বাবু বয়ানি আন্নাসসুন্নাতা ইয়ামান নাহরি, আলখাসায়েসুল কুবরা-১১৭} সহীহ মুসলিমের বর্ণনার আরবী পাঠঃ
326 – (1305) وحَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، سَمِعْتُ هِشَامَ بْنَ حَسَّانَ، يُخْبِرُ عَنِ ابْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: «لَمَّا رَمَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْجَمْرَةَ وَنَحَرَ نُسُكَهُ وَحَلَقَ نَاوَلَ الْحَالِقَ شِقَّهُ الْأَيْمَنَ فَحَلَقَهُ، ثُمَّ دَعَا أَبَا طَلْحَةَ الْأَنْصَارِيَّ فَأَعْطَاهُ إِيَّاهُ، ثُمَّ نَاوَلَهُ الشِّقَّ الْأَيْسَرَ»، فَقَالَ: «احْلِقْ فَحَلَقَهُ، فَأَعْطَاهُ أَبَا طَلْحَةَ»، فَقَالَ: «اقْسِمْهُ بَيْنَ النَّاسِ»
এ বর্ণনাটি আরো রয়েছে সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-২৯২৮ সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩৮৭৯ মুসাতাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১৭৪৩ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা নববী রহঃ লিখেনঃ
ومنها التبرك بشعره صلى الله عليه وسلم وجواز اقتنائه للبركة (صحيح مسلم،كتاب المناسك، باب بيان ان السنة يوم النحر أن يرى ثم ينحر ثم يحلق والإبتداء الخ)
অনুবাদ- এর দ্বারা রাসূল সাঃ এর চুল দ্বারা তাবাররুক প্রমাণিত হয়। সেই সাথে বরকতের জন্য তা সংগ্রহ করার বৈধতা প্রমাণিত হয়। সুয়ূতী রহঃ এর আলখাসায়েসুল কুবরা গ্রন্থের বর্ণনার আরবী পাঠ হল-
اخْرُج سعيد بن مَنْصُور وَابْن سعد وَأَبُو يعلى وَالْحَاكِم وَالْبَيْهَقِيّ وَأَبُو نعيم عَن عبد الحميد بن جَعْفَر عَن أَبِيه ان خَالِد بن الْوَلِيد فقد قلنسوة لَهُ يَوْم اليرموك فطلبها حَتَّى وجدهَا وَقَالَ اعْتَمر رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فحلق رَأسه فابتدر النَّاس جَوَانِب شعره فسبقتهم إِلَى ناصيته فجعلتها فِي هَذِه القلنسوة فَلم أشهد قتالا وَهِي معي إِلَّا رزقت النَّصْر
এ বর্ণনাটি আরো যেসব কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে- ১-আলমুজামুল কাবীর লিতবারানী, হাদীস নং-৩৮০৪। ২-মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৫২৯৯। ৩-দালায়েলুন নাবুয়্যাহ লিআবী নাঈম আলইসফাহানী, হাদীস নং-৩৬৭। ৪-দালায়েলুন নাবুয়্যাহ লিলবায়হাকী, খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ এর টুপি অধ্যায়। ৫-মাযমাউজ যাওয়ায়েদ-৯/৩৪৯।
৮
হযরত সাহাল বিন সাদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ এর খিদমাতে পানি পেশ করা হল। রাসূল সাঃ উক্ত পানি থেকে অল্প পানি পান করলেন। রাসূল সাঃ এর ডান দিকে অল্প বয়স্ক একজন সাহাবী বসা ছিলেন। [সেই সাহাবী হলেন হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ] অপরদিকে অনেক বড় বড় সাহাবীগণ বসা ছিলেন। রাসূল সাঃ অল্প বয়স্ক সাহাবীকে বললেন, যদি তুমি অনুমতি দাও, তাহলে আমি অবশিষ্ট পানি বড়দের দিকে বাড়িয়ে দিব। কেননা, হক ডান দিকে বসা ব্যক্তির হয়ে থাকে] তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ বললেন, খোদার কসম! হে আল্লাহর রাসূলঃ আপনার থেকে অর্জিত বস্তুর ক্ষেত্রে আমি কাউকে অগ্রধিকার দিব না। তখন রাসূল সাঃ পানির পেয়ালা তাঁর দিকেই বাড়িয়ে দেন। {সহীহ বুখারী-২/৮৪০, হাদীস নং-৫৬২০, ৫২৯৭} হাদীসটি আরবী ইবারত হল-
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِشَرَابٍ فَشَرِبَ مِنْهُ، وَعَنْ يَمِينِهِ غُلاَمٌ، وَعَنْ يَسَارِهِ الأَشْيَاخُ، فَقَالَ لِلْغُلاَمِ: «أَتَأْذَنُ لِي أَنْ أُعْطِيَ هَؤُلاَءِ؟» فَقَالَ الغُلاَمُ: وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ، لاَ أُوثِرُ بِنَصِيبِي مِنْكَ أَحَدًا، قَالَ: فَتَلَّهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي يَدِهِ
৯
ইমাম আহমাদ রহঃ মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ জায়েদ রহঃ থেকে তার পিতা জায়েদ রাঃ এর উদ্ধৃতিতে হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তিনি কুরবানীর ঈদের দিন রাসূল সাঃ কে এমন অবস্থায় দেখেন যে, রাসূল সাঃ স্বীয় কুরবানীর গোস্ত বন্টন করছিলেন। কিন্তু ঐ গোস্ত থেকে কোন অংশ তিনি এবং তার সাথিরা পেলেন না। তারপর রাসূল সাঃ স্বীয় চুল কামালেন। তারপর স্বীয় চুল বন্টন করার আদেশ দিলেন। তারপর নখ কাটলেন। আর তা হযরত জায়েদ রাঃ সহ তার সাথি অন্যান্য সাহাবীদের দিলেন। {যাদুল মাআদ-২/২৭০, আলআহাদীসুল মুখতারাহ, হাদীস নং-৩৫৪, সাবিলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, খেজাব অধ্যায়} এ হাদীসের আরবী ইবারত হল-
وَذَكَرَ الْإِمَامُ أَحْمَدُ – رَحِمَهُ اللَّهُ – مِنْ حَدِيثِ محمد بن عبد الله بن زيد، أَنَّ أَبَاهُ حَدَّثَهُ أَنَّهُ شَهِدَ النَّبِيَّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – عِنْدَ الْمَنْحَرِ، وَرَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ، وَهُوَ يَقْسِمُ أَضَاحِيَ فَلَمْ يُصِبْهُ شَيْءٌ، وَلَا صَاحِبَهُ فَحَلَقَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – رَأْسَهُ فِي ثَوْبِهِ، فَأَعْطَاهُ فَقَسَمَ مِنْهُ عَلَى رِجَالٍ، وَقَلَّمَ أَظْفَارَهُ فَأَعْطَاهُ صَاحِبَهُ، قَالَ: فَإِنَّهُ عِنْدَنَا مَخْضُوبٌ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ يَعْنِي شَعْرَهُ.
১০
হযরত আসমা বিনতে আবী বকর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি একটি তায়ালিসী চাদর বের করে বললেন, রাসূল সাঃ এ চাদরটি পরিধান করতেন। আমরা এটিকে ধৌত করে অসুস্থ্যদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করে থাকি। {সহীহ মুসলিম-২/১৯০-১৯১, হাদীস নং-২০৬৯, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪২১০} হাদীসটির আরবী ইবারত হল-
فَرَجَعْتُ إِلَى أَسْمَاءَ فَخَبَّرْتُهَا، فَقَالَتْ: هَذِهِ جُبَّةُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَخْرَجَتْ إِلَيَّ جُبَّةَ طَيَالِسَةٍ كِسْرَوَانِيَّةٍ لَهَا لِبْنَةُ دِيبَاجٍ، وَفَرْجَيْهَا مَكْفُوفَيْنِ بِالدِّيبَاجِ، فَقَالَتْ: هَذِهِ كَانَتْ عِنْدَ عَائِشَةَ حَتَّى قُبِضَتْ، فَلَمَّا قُبِضَتْ قَبَضْتُهَا، وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلْبَسُهَا، فَنَحْنُ نَغْسِلُهَا لِلْمَرْضَى يُسْتَشْفَى بِهَا
এ হাদীসের অধীনে ইমাম নববী রহঃ লিখেনঃ
وفى هذا الحديث دليل على استحباب التبرك بآثار الصالحين وثيابهم (صحيح مسلم، باب تحريم استعمال اناء الذهب والفضة على الرجال والنساء الخ-2/190-191
অনুবাদ- এ হাদীস প্রমাণ বহন করে যে, বুজুর্গদের ব্যবহৃত বস্তু ও কাপড় দ্বারা তাবাররুক গ্রহণ করা মুস্তাহাব। {শরহে মুসলিম মাআ সহীহ মুসলিম-২/১৯০-১৯১} এরকম অসংখ্য বর্ণনা সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণ থেকে বর্ণিত। যা স্পষ্টভাবে রাসূল সাঃ এবং বুজুর্গানের দ্বীন এবং তাদের বস্তু দ্বারা তাবাররুক হাসিলের প্রমাণ বহন করে। সুতরাং যে ব্যক্তি এরকম জঘন্য কথা ও বদদুআ জুমআর খুতবায় বলে যে, او يتبرك بغيره من نبى وولى وتقى ونقى ونسيم وحسين وجميل وصغير وكبير فعليه الخسران والوبال অনুবাদ- অথবা যে ব্যক্তি তাবাররুক হাসিল করে আল্লাহ ছাড়া কোন নবী, ওলী, বুযুর্গ, মুত্তাকী, পরহেযগার, উত্তম, অনুপম, বা ছোট বড় কারো দ্বারা, তাহলে তার জন্য ধ্বংস ও কঠিন শাস্তি। তার ক্ষেত্রে শুধু এতটুকুই বলা যায় যে, লোকটি পথভ্রষ্ট এবং সুনিশ্চিত ফাসিক। সুতরাং এ খুতবাটি কিছুতেই জুমআর খুতবায় পড়া জায়েজ হবে না। যেখানে সাহাবায়ে কেরামকেই গালাগাল করা হচ্ছে। যেহেতু সাহাবাগণ তাবাররুক হাসিল করেছেন রাসূল সাঃ থেকে। আর খোদ রাসূল সাঃ নিজেই তাবাররুকের জন্য নিজেই আদেশ দিয়েছেন ও প্রলুব্ধ করেছেন। সেখানে নবী ও বুজুর্গদের থেকে তাবাররুক হাসিলকারীদের উপর ধ্বংস আর শাস্তির কথা বলা কতটা মারাত্মক বিভ্রান্তিকর এবং নিকৃষ্ট মানসিকতা তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকিদা পরিপন্থী এ খুতবা পড়া কোন মুসলমানের জন্য জায়েজ হবে না। তবে যদি উক্ত অংশটিকে বাদ দিয়ে বাকি খুতবা পড়া হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের বিভ্রান্তিকারীদের বাতিল আকিদা থেকে মুসলিম জাতিকে হিফাযত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
জাযাকুমুল্লাহ। আল্লাহ তা’আলা আপনাদের প্রচেষ্টা ও মেহনতকে কবুল করুন।
এ খুতবার বাস্তবতা সম্পর্কিত আরেকটি মজার ভিডিও দেখুন:
https://www.youtube.com/watch?v=uqz12gTS4NU