প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / ওরা আহলে হাদীস না আহলে তাকলীদ? [১ম পর্ব]

ওরা আহলে হাদীস না আহলে তাকলীদ? [১ম পর্ব]

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীস ভাইদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের উপর সবচ’বেশি অভিযোগ উত্থাপন করে থাকে তাকলীদ নিয়ে। তাদের ভাষ্যমতে কুরআন হাদীসের ইবারত ছাড়া কোন ব্যক্তির তাকলীদ করা জায়েজ নয়। বরং এটি শিরক।

প্রফেসর আব্দুল্লাহ বাঘলপুরী গায়রে মুকাল্লিদ সাহেব লিখেছেনঃ

প্রতিটি মুশরিক প্রথমে মুকাল্লিদ হয়্ তারপর মুশরিক হয়। যদি তাকলীদ না থাকতো তাহলে শিরক সৃষ্টি হতো না। শিরকের সৃষ্টিই হয় তাকলীদ থেকে।

মাওলানা সানাউল্লাহ উমারতাসরী গায়রে মুকাল্লিদ সাহেব লিখেছেনঃ

“আহলে হাদীসদের কিতাব, রিসালা ও ফাতাওয়া দেখুন, যাতে তাকলীদকে শুধু বিদআত বলা হয়নি, বরং কুফরী সাব্যস্ত করা হয়েছে। {আহলে হাদীস}

গায়রে মুকাল্লিদ মাসউদ সাহেবের লেখা বইয়ের কামাল আহমাদের অনূদিত সালাফী পাবলিকেশন্স ঢাকা থেকে মুদ্রিত “মাযহাব ও তাকলীদ”নামক বইয়ে তাকলীদকে একাধিক স্থানে শিরক এবং মুকাল্লিদকে মুশরিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম নামক এক গায়রে মুকাল্লিদের লেখা মাযহাবীদের গুপ্তধন নামক বইয়েও একই বক্তব্য স্থান পেয়েছে যে, তাকলীদ করা শিরক। আর মুকাল্লিদরা মুশরিক।

আর গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের সংজ্ঞা অনুপাতে তাকলীদ হল, কুরআন হাদীসের দলীল ছাড়া কারো অন্ধ অনুসরণ করার নাম তাকলীদ।

কিন্তু পরিতাপের সেই সাথে মজার ব্যাপার হল, আমাদের গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা এ শিরকী কর্মটি করেছেন খুবই নিষ্ঠার সাথে। কুরআন হাদীসের দলীল ছাড়া অসংখ্য মাসআলায় ব্যক্তির তাকলীদের নজির উপস্থাপন করে নিজেদের পরিভাষা ও ফাতাওয়া অনুযায়ী মুশরিকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন।

গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা যে শুধু মুসলমান ব্যক্তির অনুসরণ করেছেন, তাই নয়, বরং কাফেরের তাকলীদ করাকেও আপন করে নিয়েছেন।

গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মাওলানা আব্দুল হক গজনবী সাহেব আহলে হাদীসদের সর্দার মাওলানা সানাউল্লাহ উমরতাসরী সাহেব সম্পর্কে লিখেনঃ তিনি ফালসাফা, নিচরীউ এবং মুতাজিলাদের মুকাল্লিদ ছিলেন। {আলআরবাঈনা-৫, রাসায়েলে আহলে হাদীস, প্রথম খন্ড}

গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মাওলানা আব্দুল আহাস সাহেব মাওলানা উমরতাসরী সম্পর্কে লিখেনঃ “তিনি সাহাবাদের জামাআত এবং তাদের ইজমাকে বাতিল করে দিয়ে কাফের এবং মুশরিকদের তাকলীদ করতেন। {আলফায়সালাতুল হিযাজিয়্যাহ-৩৩, রাসায়েলে আহলে হাদীস, ১ম খন্ড}

যদিও গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের দাবি হল, তারা কুরআন ও সহীহ হাদীসের মাসআলাই কেবল মেনে থাকেন হুবহু। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায়, তারা কুরআন ও সহীহ হাদীস রেখে নিজের মনগড়া মতের তাকলীদ করে থাকেন। স্মর্তব্য যে, তাকলীদ মানে গায়রে মুকাল্লিদের পরিভাষায় কুরআন হাদীসের দলীল ছাড়া কোন কিছু নেয়া। সুতরাং যদি কোথায় কুরআন ও হাদীসের ইবারত থাকে, তারপরও তারা অন্য মত পোষণ করে থাকেন কারো কথা মেনে কিংবা নিজের মনগড়া তাহলেও তারা তাকলীদ করে থাকেন।

আসুন আমরা গায়রে মুকাল্লিদ আলেমদের মনগড়া তাকলীদের কিছু নমুনা দেখিঃ

গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের কাছে বড় আল্লামা ওহীদুজ্জামান সাহেব। যিনি তাদের প্রসিদ্ধ কিতাব নুজুলুল আবরার এবং হাদিয়াতুল মাহদী ও তাইসীরুল বারী ইত্যাদি কিতাব রচনা করেছেন। গায়রে মুকাল্লিদ আবু ইয়াহইয়া ইমাম খান নৌশহরী ওহীদুজ্জামান সাহেবের নুজুলুল আবরার ও হাদিয়াতুল মাহদী কিতাবের ব্যাপারে মন্তব্য করে বলেনঃ এ দুটি কিতাব আহলে হাদীস ফিক্বহের বিষয়ের উপর লেখা। আর সাধারণ মানুষের মাঝে খুবই গ্রহণযোগ্য। {আহলে হাদীস কি তাসনীফী-৬২}

কুরবানী ওয়াজিব না সুন্নত?

ওয়াহিদুজ্জামান সাহেব বুখারীর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বুখারী ১ম খন্ডের ১৩৪ পৃষ্ঠার হাদীসের ব্যাপারে লিখেন যে, এ হাদীস দ্বারা কুরবানী ওয়াজিব প্রমাণিত হয়। হানাফীদের মত এটাই। {তাইসীরুল বারী-২/৭০}

এখানে তিনি স্বীকার করলেন যে, বুখারীর হাদীস হিসেবে কুরবানী করা ওয়াজিব। কিন্তু তার আরেক কিতাবে লিখেছেনঃ “কুরবানী করা সুন্নত”। {কানযুল হাকায়েক-১৯৩}

বুখারীর সহীহ হাদীস রেখে কার তাকলীদে এ মত পোষণ করে কথিত আহলে হাদীসরা?

মহিলাদের স্পর্শ করার দ্বারা অজু ভাঙ্গে কি?

ওয়াহিদুজ্জামান সাহেব বুখারীর ১ম খন্ডের ৭৪ নং পৃষ্ঠার হাদীসের ব্যাপারে মন্তব্য করে লিখেন যে, এ হাদীস দ্বারা শাফেয়ীদের মতকে বাতিল করে দেয়। কারণ তাদের নিকট মহিলাকে স্পর্শ করা অজু ভঙ্গের কারণ। {তাইসীরুল হাদী-২/২১০}

আল্লামা সাহেব একথা স্বীকার করলেন যে, যারা মহিলাদের স্পর্শের দ্বারা অজু ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বলেন, তাদের মতটি বুখারীর উক্ত হাদীস দ্বারা রদ হয়ে যায়। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল, তার মাসলাক হল, মহিলাদের স্পর্শ করার দ্বারা অজু ভেঙ্গে যায়। {তাইসীরুল বারী-১/১৪২}

ইমাম বসে নামায পড়ালে মুক্তাদীও কি বসে নামায পড়বে?

বুখারীর ১ম খন্ডের ৯৬ পৃষ্ঠার হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাঃ মৃত্যুর আগে অসুস্থ্য থাকার সময় বসে বসে নামায পড়িয়েছেন। কিন্তু সাহাবাগণকে বসার হুকুম দেন নি। ওয়াহিদুজ্জামান সাহেবও লিখেছেন যে, “রাসূল সাঃ বসে বসে নামায পড়ান। আর সাহাবাগণ রাসূল সাঃ এর পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন। {রফউল আজাজাহ আন সুনানি ইবনে মাজাহ-১/৪৩০}

কিন্তু এ স্বীকারোক্তির পরও তিনি তার আরেক গ্রন্থে লিখেন যে, “আহলে হাদীসদের মাযহাব এটাই যে, যখন ইমাম বসে নামায পড়বে, তখন মুক্তাদীরা বসে বসে নামায পড়বে। {তাইসীরুল বারী-১/৪৩৯}

হায়েজ অবস্থায় তালাক দিলে পতিত হয় কি?

মুসলিম শরীফের ১ম খন্ডের ৪৭৬ নং পৃষ্ঠায় এসেছে যে, হযরত ইবনে ওমর রাঃ হায়েজ অবস্থায় স্বীয় স্ত্রীকে তালাক দিলেন। তখন রাসূল সাঃ তাকে স্ত্রীকে রাজআত করার আদেশ দিলেন।

গায়রে মুকাল্লিদ ওয়াহিদুজ্জামান সাহেব এ হাদীসের অধীনে লিখেন যে, রাসূল সাঃ যেহেতু রাজআত করার হুকুম দিয়েছেন। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, হায়েজ অবস্থায় তালাক দেয়ায় তালাক পতিত হয়েছিল। {শরহে মুসলিম-৪/৮৯}

কিন্তু এ সহীহ হাদীস ছেড়ে দিয়ে তিনি ইবনে তাইমিয়া রহঃ এর অন্ধ তাকলীদ করে লিখেছেনঃ হায়েজ অবস্থায় তালাক দিলে তালাক হয় না। {তাইসীরুল বারী-৭/১৬৪, ২৩৫}

কুকুর ও তার ঝুটা পাক না নাপাক?

মুসলিম শরীফের ১ম খন্ডের ১৩৭ পৃষ্ঠার হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কুকুর নাপাক এবং তার উচ্ছিষ্ট নাপাক।

গায়রে মুকাল্লিদ ওয়াহিদুজ্জামান সাহেব এসব হাদীসের অধীনে লিখেনঃ “এসব হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কুকুর নাপাক, এবং তার লালা ও ঘাম নাপাকা। {শরহে মুসলিম-১/৪০৬}

কিন্তু এসব হাদীসের উল্টো নিজের আরেক কিতাবে পূর্বসূরীদের তাকলীদ করে লিখে দিলেনঃ “অধিক সহীহ কথা এটাই যে, কুকুর ও শুকরের উচ্ছিষ্ট পাক। {নুজুলুল আবরার-১/৩১}

ওয়াহিদুজ্জামান সাহেব নিজেই হাদীসের ব্যাখ্যা ও অনুবাদ করতে গিয়ে হাদীসের একটি অর্থ করলেন। তারপর হাদীসের সে অর্থ রেখে নিজের আহলে হাদীস ইমামদের তাকলীদ করে হাদীসের উল্টো আরেক মত পোষন করেছেন। তাহলে হাদীসের বিরোধীতা করে কি তারা আহলে হাদীস থাকে? যারা সারা দিন তাকলীদকে শিরক শিরক বলে চিল্লায় তাদের এ তাকলীদের হুকুম কি হবে?

ইবনে হাজমের তাকলীদ

মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান গায়রে মুকাল্লিদ সাহেবরা শুধু কুরআন ও হাদীস মানার দাওয়াত দিয়ে তাকলীদকে হারাম ও শিরক বললেও নির্লজ্জবাবে কুরআন হাদীসের বিপরীত ইবনে হাজম রহঃ এর তাকলীদ করেছেন।

কুরআনে কারীমে স্পষ্টভাষায় لَهْوَ الْحَدِيثِতথা অবান্তর বিষয়কে হারাম সাব্যস্ত করেছে। {সূরা লুকমান-৬} আর এটা সুনিশ্চিত যে, গান-বাজনা অযথা বিষয়ের মাঝে শামিল। সেই সাথে বুখারীর ২য় খন্ডের ৮৩৭ পৃষ্ঠায় এসেছে যে, রাসূল সাঃ বলেছেনঃ আমার উম্মতের মাঝে কিছু লোক এমন হবে, যারা গান-বাদ্যকে হালাল মনে করবে।

কুরআন ও হাদীসের এসব বর্ণনা সত্বেও গায়রে মুকাল্লিদ ওয়াহিদুজ্জামান সাহেব ইবনে হাজম রহঃ এর তাকলীদ করে ঘোষণা দিলেন যে, গান-বাজনা জায়েজ হওয়ার মতটিই অধিক যুক্তিযুক্ত। {তাইসীরুল বারী-২/৫০, আসরারুল লুগাত-৮৬ আসারে খায়রের উদ্ধৃতিতে-৩৭৭, হাদিয়াতুল মাহদী-১১৮}

অন্ধ তাকলীদ মাযহাবীরা? না নামধারী আহলে হাদীসরা?

হাফেজ মুহাম্মদ সাহেবের তাকলীদ

গায়রে মুকাল্লিদদের কাছে বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন যিনি “তারীখে আহলে হাদীস”তাফসীরে ওয়াজেহুল কুরআন”ইত্যাদি কিতাব রচনা করেছেন। তার নাম হল মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইবরাহীম শিয়ালকুটি। তিনি তাফসীরে সূরা কাহাফের ৬ নং পৃষ্ঠায় আসহাবে কাহাফের নামে ওসীলা সম্পর্কে কতিপয় আমলের উল্লেখ করেছেন।

এ বক্তব্যের উপর পর্যালোচনা করে গায়রে মুকাল্লিদ আরেকজন আলেম মাওলানা আব্দুল কাদের হাসারয়ী সাহেব লিখেছেনঃ “মাওলানা [শিয়াকুটি] এসব নাম নিয়ে ওসীলা গ্রহণের যে আমলের কথা বলেছেন, যাতে এসব নামে উপকার অর্জন আর বিপদ দূরিকরণের প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ÑÑÑÑÑ এ সম্পর্কে তিনি শরীয়তের কোন দলীল পেশ করেন নি। বরং তিনি অন্য একজন আলেমের উপর তাকলীদ করে তা বলে দিয়েছেন। {ফাতাওয়া সেতারিয়া-৩/১৪১}

গায়রে মুকাল্লিদ আলেম স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখও করে দিয়েছেন যে, কার তাকলীদে শিয়াকুটি সাহেব এ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি লেখেনঃ “মাওলানা [শিয়ালকুটি] হাফেজ মুহাম্মদ সাহেব এর বক্তব্যের দ্বারা দলীল দিয়েছেন যে, এ আমল শরীয়তের অনুকুল। অথচ তার কাছে এটি শরীয়ত সম্মত হওয়ার কোন দলীল নেই। {ফাতাওয়া সেতারিয়া-৩/১৪২}

দলীল না দেখে শুধু কথা মানার নামই হল তাকলীদ। তাহলে গায়রে মুকাল্লিদ দাবিদার শিয়াকুটি সাহেব তাকলীদকে অস্বিকার করে নিজে কেন করলেন তাকলীদ?

মুতলাক তাকলীদ গায়রে মুকাল্লিদদের কাছেও ওয়াজিব?

মাওলানা শিয়ালকুটি গায়রে মুকাল্লিদ সাহেব তার শায়েখ মিয়া নজীর হুসাইন দেহলবী সাহেবের কিতাব “মিয়ারে হক”এর রেফারেন্সে লিখেন যে, মুতলাক তাকলীদ ওয়াজিব। দেখুন তার ভাষ্যঃ

“অবশিষ্ট রইল না জানা ব্যক্তিদের তাকলীদ। এটি চার প্রকার। প্রথম প্রকার হল ওয়াজিব। এটি হল মুতলাক তাকলীদ। মুজতাহিদ আহলে সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত হতে হবে। সুনির্দিষ্ট কাউকে নয়, যার উল্লেখ মাওলানা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ “ইকদুল জীদ”গ্রন্থে লিখেছেন যে, “এ তাকলীদ ওয়াজিব এবং সহীহ পুরো উম্মতের ঐক্যমত্বে। আর দ্বিতীয় প্রকার হল সুনির্দিষ্ট মাযহাবের তাকলীদ করা এটি জায়েজ”। {তারীখে আহলে হাদীস-১৪৭}

একদিকে প্রচার করছে তাকলীদ শিরক আর কুফর। অপরদিক দিয়ে এটাকে ওয়াজিব বলে বেড়াচ্ছে! সেই সাথে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ এর উদ্ধৃতিতে এর উপর সমস্ত উম্মতের ঐক্যমত্বের কথাও বলছে। হায়রে গায়রে মুকাল্লিদ!

শুধু কি তাই? গায়রে মুকাল্লিদ অন্যান্য আলেমদের মন্তব্য শুনুন!

# নওয়াব সিদ্দিক হাসান গায়রে মুকাল্লিদ সাহেব লিখেনঃ “সাধারণ মানুষের উপর মুজতাহিদের তাকলীদ করা এবং তার ফাতওয়ার উপর চলা ওয়াজিব।” {লুক্বতাতুল উজলান-১৩৭}

# মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান গায়রে মুকাল্লিদ সাহেব লিখেনঃ “সাধারণ লোকদের জন্য উলামাদের তাকলীদ করা আবশ্যক। {হাদইয়াতুল মাহদী-১১০}

# মাওলানা সানাউল্লাহ উমরতাসরী গায়রে মুকাল্লিদ সাহেব লিখেনঃ “এটাতো স্বীকৃত কথা যে, ইলমহীনের উপর আলেমের তাকলীদ করা জরুরী। {তাকলীদে সখসী-২০}

তাকলীদকে ওয়াজিব বলছেন। অপর দিকে তাকলীদকারীদের মুশরিকও বলে বেড়াচ্ছেন। এ কেমন বিচার?

আল্লামা শাওকানীর তাকলীদ

গায়রে মুকাল্লিদদের কাছে বড় আলেম আল্লামা শাওকানী নামে প্রসিদ্ধ মুহাম্মদ বিন আলী রহঃ ও তাকলীদ করতেন। গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান সাহেব এ বাস্তবতা স্বীকার করে বলেনঃ “বর্তমান জমানার এক জামাত যারা নিজেদের আহলে হাদীস পরিচয় দেয়, তারা সুন্নতের অনুসারী দাবি করার পরও নিজেদের আলেম যেমন ইবনে তাইমিয়া, শাহ ওয়ালী উল্লাহ, শাওকানী এবং মাওলানা ইসমাঈল শহীদ প্রমূখদের এমন মুকাল্লিদ হয়ে যায় যে, তাদের রায়ের বিপরীত দলীল বর্ণনাকারীদের দলীল পর্যন্ত শুনে না। {তাইসীরুল বারী-৬/৪৯৯, নুমানী কুতুবখানা}

শাওকানী প্রমুখদের এমন কট্টর তাকলীদ করার দরূন বিপরীত মতাবলম্বীদের দলীল পর্যন্ত শুনে না এ কথিত আহলে হাদীসরা। এমনকি তাদের ইমামদের তাকলীদ করে পূর্ববর্তী সম্মানী মুজতাহিদদেরও সমালোচনা করতে মুখ কাঁপে না।

ওয়াহিদুজ্জামান সাহেব এ বক্তব্যের পরপরই লিখেনঃ “পূর্ববর্তী আইয়িম্মায়ে দ্বীন যেমন ইমাম আবু হানীফা রহঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ প্রমূখ ও অন্যান্য ওলীআল্লাহ বা সুফিয়ানে কেরাম ছিলেন, তাদের সমালোচনা পর্যন্ত করে বেড়ায়।” {তাইসীরুল বারী-৬/৪৯৯}

এর চেয়ে কট্টর তাকলীদ কাকে বলে?

নাপাক কাপড়ে নামায হয়?

মুসলমানদের শিশু বাচ্চারাও জানে যে, নাপাক কাপড়ে নামায হয় না। কিন্তু এর উল্টো আল্লামা শাওকানী রহঃ এর রায় হল, নাপাক কাপড়ে নামায পড়লে নামায হয়ে যাবে। গায়রে মুকাল্লিদ দলের মুজাদ্দিদ নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব আল্লামা শাওকানী রহঃ এর কট্টর তাকলীদ করে বলে দিলেনঃ “নাপাক কাপড়ে নামায পড়লে নামায হয়ে যায়। {নুজুলুল আবরার-১/৬৪}

কাপড় থাকা অবস্থায় উলঙ্গ হয়ে নামায পড়া জায়েজ?

কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা দ্বারা একথা সবাই জানেন যে, কাপড় থাকা অবস্থায় খালি শরীরে নামায পড়া জায়েজ নয়। কিন্তু এর বিপরীত আল্লামা শাওকানী রহঃ এর সিদ্ধান্ত হল, উলঙ্গ হয়ে নামায পড়া জায়েজ আছে।

নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব এ মাসআলাও আল্লামা শাওকানী রহঃ এর অন্ধ তাকলীদ করে বলে দিলেন যে, “উলঙ্গ হয়ে নামায পড়লে তা সহীহ হয়ে যাবে”। {নুজুলুল আবরার-১/১১১}

২য় পর্ব

আরও জানুন

নবীর ডাকে জমিন চিড়ে গাছের সাড়া দেয়া ও কালিমা পড়া এবং নবীকে পাথরের সালাম দেয়া সংক্রান্ত বর্ণনা কি জাল?

প্রশ্ন শ্রদ্ধেয় মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী সাহেব। আপনি আমাদের এলাকায় এক মাহফিলে এসেছিলেন। সেই মাহফিলে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস