প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / ওরা আহলে হাদীস না শিয়া?

ওরা আহলে হাদীস না শিয়া?

মূলমাওলানা ফজলুর রহমান দহরমকুটি

অনুবাদলুৎফুর রহমান ফরায়েজী 

শিয়ারা যেমন আহলে বাইতের ভালবাসার পর্দার আড়ালে আহলে সুন্নতীদের বিভ্রান্ত করাই মূল লক্ষ্য। ঠিক তেমনি আহলে হাদীস নামধারীরা হাদীসের উপর আমলের মোহাব্বতের নামে আহলে সুন্নতীদের বিভ্রান্ত করা উদ্দেশ্য।

উভয়ের উদ্দেশ্য একই। শিয়ারা যেমন চায় আহলে বাইতের নামে আহলে সুন্নতের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়–ক। আহলে হাদীসরাও চায় আহলে হাদীসের নামে আহলে সুন্নতের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়–ক।

শিয়ারা আহলে বাইত বলে আহলে সুন্নতীদের ধোঁকা দেয়। গায়রে মুকাল্লিদরা আহলে হাদীসের নামে আহলে সুন্নতকে ধোঁকা দেয়। যেমন খারেজীরা আহলে কুরআনের নামে হযরত আলী রাঃ কে ধোঁকা দিত।

শিয়াদের সাথে আহলে হাদীস দাবিদারদের মিলসমূহ

ইজমা কিয়াস অস্বিকার

শিয়ারা যেমন ইজমা কিয়াসকে শরয়ী দলীল মানে না, ঠিক তেমনি আহলে হাদীস নামধারীরাও ইজমা ও কিয়াসকে শরয়ী দলীল বিশ্বাস করে না।

শিয়ারা ইজমা-কিয়াস অস্বিকারকারী বলার দলীল- মানহাজুস সুন্নাহ-১/৮৯।

আহলে হাদীস নামধারীরা ইজমা কিয়াস অস্বিকার করার দলীল আসা করি দেয়ার প্রয়োজন নেই। তাদের প্রায় সকল প্রকাশিত বইয়েই তা বিদ্যমান পাবেন। যেখানেই মাযহাবের বিরোধীতা করেছে, সেখানেই ইজমা কিয়াসকে অস্বিকার করে বক্তব্য দিয়েছে তারা।

আর সবচে’বড় কথা হল, আহলে হাদীসরা ইজমা কিয়াস অস্বিকার করার কারণেই হযরত উমর রাঃ এর আমলে ইজমা হওয়া বিশ রাকাত তারাবীহ মানে না। মানে না তিন তালাকে তিন তালাককে।

চার মাযহাব কেন মানা হয়?

শিয়াদের বক্তব্য হল- চার মাযহাব সঠিক নয়। এ চার মাযহাবের উপর মানুষ কেন আমল করে? {তুহফায়ে ইসনা আশারিয়া-১০৯}

ঠিক একই বক্তব্য প্রদান করে থাকে নামধারী আহলে হাদীসরা। তাই নয় কি?

মানতে হবে দ্বীন মাযহাব নয়

শিয়াদের বক্তব্য হল যে, আল্লাহ তাআলা দ্বীন মানতে আদেশ দিয়েছেন। কোথাও মাযহাব মানার কথা বলেন নি। তাই দ্বীন মানার বদলে মাযহাব মানা কুফরী। তোফায়ে ইসনা আশারিয়া-১০৯}

ঠিক একই দাবি গায়রে মুকাল্লিদদের। তারাও মাযহাব ও দ্বীনের মাঝে ধোঁয়াশা বানিয়ে রাখে। প্রচার করে যে, দ্বীন এক জিনিস আর মাযহাব আরেক জিনিস। মাযহাব মানা মানে দ্বীন মানা নয়। অথচ মাযহাব মানা মানেই দ্বীন মানা। দ্বীন মানার জন্যই মূলত মাযহাবের সৃষ্টি। মাযহাব হল পথের নাম। যা উদ্দিষ্ট লক্ষ্য দ্বীনের পথে চলাকে সহজ করে দেয়।

বর্তমান আহলে হাদীস দল কিয়ামতের নিদর্শন

হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল ইরশাদ করেছেনঃ আমার উম্মতের মাঝে চৌদ্দটি স্বভাব সৃষ্টি হলে তাদের উপর মসিবত আপতিত হওয়া শুরু হবে। তার মাঝে চৌদ্দতম হল এ উম্মতের পূর্ববর্তী ব্যক্তিদের উপর অভিশম্পাত করা। {সুনানে তিরমিজী-২/৪৪}

আমরা ভাল করে খেয়াল করে দেখি। এ উপমহাদেশে কোন দল সবচে’বর্তমানে পূর্ববর্তী নেককারদের বিরোধীতা করে থাকে? কারা বিশ রাকাতের তারাবীহের প্রচলনের কারণে হযরত উমর রাঃ কে, বিভিন্ন কারণে তাবেয়ী, তাবেয়ীগণ, মুজতাহিদ ইমামগণ, হক্কানী পীর মাশায়েখগণ এবং বিশেষ করে এ উপমহাদেশে ইসলামের প্রধান প্রচারক উলামায়ে দেওবন্দ সম্পর্কে জঘন্য সব কটূক্তি করে বেড়ায়। ওরা কারা? সুনিশ্চিতভাবে ওরাই বর্তমানের আহলে হাদীস নামধারী গায়রে মুকাল্লিদ গোষ্ঠি। তাই হাদীসের আলোকে বর্তমানের আহলে হাদীসরা কিয়ামতের নিদর্শন ছাড়া আর কি?

ফিক্বহে হানাফীর বিরুদ্ধে বিষোদগার

ফিক্বহে হানাফীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করার বিষয়ে কথিত আহলে হাদীসদের শিয়াদের মুরীদ বলা যায়।

উপমহাদেশে ফিক্বহে হানাফীর বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম কট্টর শিয়া হামেদ হুসাইন কাস্তুরী সাহেব “ইস্তিকসাউল আফখাম”নামে গ্রন্থ রচনা করে।

এর পরবর্তীতে গায়রে মুকাল্লিদরা যত কিতাব ফিক্বহে হানাফীর বিরুদ্ধে এ উপমহাদেশে লিখেছে তার সব ক’টিই শিয়া লিখকের উর্বর মস্তিস্ক প্রসূত অভিযোগগুলোর ঘষামাজা ছাড়া আর কিছু নয়। {আসসাইফুস সারেম}

ফিক্বহ সম্পূর্ণ অস্বিকারকরণ

মুতলাকানভাবে শিয়ারা যেমন ফিক্বহকে অস্বিকার করে থাকে। ঠিক একই পদ্ধতিতে কথিত আহলে হাদীসরা চার ইমামের ফিক্বহকে অস্বিকার করে থাকে। তাহলে শিয়া আর আহলে হাদীস নামধারীদের মতবাদের মাঝে পার্থক্য রইল কোথায়?

চার খলীফা সমান মর্যাদার?

শিয়াদের আক্বিদা হল হযরত আলী রাঃ এর মর্যাদা হযরত আবু বকর রাঃ হযরত উমর রাঃ ও হযরত উসমান রাঃ এর সমমানের। তাই হযরত আলীকে রেখে বাকি তিনজনকে আগে খলীফা বানানো অবিচার হয়েছে।

ঠিক তেমনিভাবে গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসদের কিতাবে ও হযরত আবু বকর রাঃ, উমর রাঃ অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মানা হয়নি, লিখা হয়েছেঃ

والامام الحق بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم ابو بكر ثم عمر ثم عثمان ثم على ثم الحسن بن على، ولا ندرى ايهم افضل عند الله (نزل الأبرار-1/7)

রাসূল সাঃ এর পর যোগ্য ইমাম হলেন হযরত আবু বকর রাঃ, তারপর হযরত উমর রাঃ, তারপর হযরত উসমান রাঃ, তারপর হযরত আলী রাঃ, তারপর হযরত হাসান বিন আলী রাঃ। আর আমরা জানি না তাদের মাঝে কে আল্লাহ তাআলার কাছে শ্রেষ্ঠ। {নুজুলুল আবরার-১/৭}

অথচ পুরো উম্মতের কাছে রাসূল সাঃ এর পর সবচে’শ্রেষ্ঠতর হলেন আবু বকর রাঃ ও হযরত উমর রাঃ। কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ দাবিদার হয়ে শিয়াদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে পুরো উম্মতের বিপরীত শিয়াদের মত পোষণ করে দিলেন।

সাহাবীরা ফাসিক নাউজুবিল্লাহ!

আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের মতে সকল সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি। সকলেই ন্যায়পরায়ন। কিন্তু শিয়াদের মতে কতিপয় সাহাবী ছাড়া বাকি সকল সাহাবীরাই ফাসিক। শিয়াদের সাথে সুর মিলিয়ে গায়রে মুকাল্লিদদের কিতাবে লিখা হয়েছে “

ومنه تعلم من الصحابة من هو فاسق كالوليد ومثله يقال فى حق معاوية وعمرو ومغيرة وسمرة

এর দ্বারা বুঝা গেল যে, সাহাবাদের মাঝে যারা ফাসিক ছিল, যেমন ওলীদ বিন উকবা রাঃ। এমনই বলা যায় মুয়াবিয়া রাঃ, আমর বিন আস রাঃ, মুগীরা বিন শুবা রাঃ এবং সামুরা বিন জুনদুব রাঃ এর ব্যাপারে। {নুজুলুল আবরার-৩/৯৪}

এ পাঁচজন বড় বড় সাহাবী তার নিকট ফাসিক। এ ব্যক্তি শিয়া নয়তো কি?

শিয়াদের সাথে সূর মিলিয়ে মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে দুশমনী

শিয়ারা যেমন মনগড়া ঐতিহাসিক বর্ণনার আলোকে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর মত জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীকে যাচ্ছেতাই বলে বেড়ায়। ঠিক তাদের সাথে সূর মিলিয়ে গায়রে মুকাল্লিাদ ওহীদুজ্জামান সাহেব তার রচিত বুখারীর অনুবাদ গ্রন্থ তাইসীরুল বারীর একাধিক স্থানে অশ্রাব্য ভাষায় উক্তি করেছেন। কয়েকটি উক্তি নি¤œরূপঃ

৫ নং খন্ডের ৯০ নাম্বার পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ “সাহাবিয়্যাতের আদব আমাদের বাঁধা দেয় যে, আমরা মুয়াবিয়ার ব্যাপারে কিছু না বলি। কিন্তু সত্য কথা হল, তার মনে রাসূল সাঃ এর আহলে বাইতের প্রতি কোন প্রকার মোহাব্বত ও ভালবাসা ছিল না। তার পিতা আবু সুফিয়ান সারা জীবন রাসূল সাঃ এর সাথে যুদ্ধ করেছে। আর তিনি নিজে হযরত আলী রাঃ এর সাথে লড়াই করেছেন। তার ছেলে নালায়েক এজিদের নোংরামীতো গজব ডেকে এনেছে। সে আমীরুল মুমিনীন ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এর সাথে অধিকাংশ আহলে বাইতের উপর বড়ই জুলুম এবং নিষ্ঠুরতার সাথে শহীদ করে দিয়েছে”।

বুখারীর অনুবাদের ৬ নং খন্ডের ৬১ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ “আবু সুফিয়ান জীবন ভর রাসূল সাঃ এর সাথে লড়াই করেছে, আর তার ছেলে মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ান হযরত আলী রাঃ এর মত বরহক খলীফার সাথে যুদ্ধ করেছে। হাজারো মুসলমানদের খুন করেছে। কিয়ামত পর্যন্তের জন্য ইসলামের মাঝে যে দুর্বলতা এসেছে এটি তারই [মুয়াবিয়া রাঃ] কারণে হয়েছে”।

একজন সামান্যতম ঈমানদার মুসলমানও রাসূল সাঃ এর প্রিয় সাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এবং সাচ্চা মুসলমান ও সাহাবী হযরত আবু সুফিয়ান রাঃ এর ব্যাপারে এমন জঘন্য উক্তি করতে পারে না।

কিন্তু শুধুমাত্র শিয়াদের সাথে সাযুজ্যতার জন্য তিনি সেই ভয়ংকর কাজটিই করে দিলেন।

আহলে হাদীস মানেই শিয়া?

কথিত আহলে হাদীসদের বড় আলেম মাওলানা ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ “হে আল্লাহ কিয়ামতের দিন আমাদের হাশর আলীর শিয়াদের সাথে করিও”। {তরজমায়ে বুখারী-৬/১৯৩}

আরেক স্থানে এসেছে “আহলে হাদীস হল আলীর শিয়া”। {নুজুলুল আবরার-১/৭}

নেকায়ে মুতা জায়েজ?

শিয়াদের নিকট নিকাহে মুতআ তথা সাময়িক বিবাহ জায়েজ। শুধু জায়েজই নয়, খুবই সওয়াবের কাজ।

ঠিক একই কথা বলেছেন গায়রে মুকাল্লিদরা। স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেঃ মুতআ বিবাহ জায়েজ। {নুজুলুল আবরার-২/৩৩, হাদিয়াতুল মাহদী-১১২}

অজুর সময় পা না ধুয়ে মাসাহ করলে হবে?

শিয়াদের মাযহাব হল, অজুর সময় পা না ধুয়ে শুধু মাসাহ করলেও হবে। ঠিক একই কথা পাওয়া যায় কথিত আহলে হাদীসের কিতাবে। লিখা হয়েছে, অজুর সময় পা না ধুয়ে শুধু মাসাহ করলেই হবে। {নুজুলুল আবরার-১/১৩}

স্মর্তব্য এ মাসআলা মোজার উপর মাসাহ সংশ্লিষ্ট নয়। বরং মোজা ছাড়া মাসাহ সংশ্লিষ্ট।

আজানে হাইয়্যা আলাল খাইর বলা যাবে?

শিয়াদের মত আহলে হাদীসরাও লিখেছেন যে, আজানে হাইয়্যা আলাস সালাহের পর হাইয়্যা আলাল খাইর বলাতে কোন সমস্যা নেই। {নুজুলুল আবরার-১/৫৯}

ছোট কুপের অল্প পানিতে নাপাক পড়লেও তা নাপাক হবে না?

ছোট কুপের অল্প পানিতে নাপাক পড়লেও কুপের পানি নাপাক হবে না। {নুজুলুল আবরার-১/৩১।

এটিও শিয়াদের মাযহাব। {মান লা ইয়াহজুরুহুল ফিক্বহ-৫}

শ্বাশুরীর সাথে জিনা করলে স্ত্রী হারাম হবে না?

শিয়ারা বলে শ্বাশুরীর সাথে জিনা করলে স্ত্রী হারাম হবে না। {ফুরূয়ে কাফী-২/১৭৪}

ঠিক একই কথা বলে কথিত আহলে হাদীস দাবিদাররা। {নুজুলুল আবরার-২/২৮}

শুকরের অঙ্গ বিশেষ পবিত্র?

শিয়াদের মতে শুকরের চুল দিয়ে বানানো রশি দিয়ে পানি তুললে সেই পানি নাপাক হবে না। {ফুরূয়ে কাফী-২/১০৩}

ঠিক একই মাযহাব আমাদের আহলে হাদীস দাবিদারদের। তাদের মতে মৃত এবং শুকরের চুল পাক। এমন কি শুকরের হাড্ডি, শিং পাক। {নুজুলুল আবরার-১/৩০}

দুই নামায একত্র পড়া প্রসঙ্গে

আরাফার ময়দানে জোহর ও আসর জোহরের সময় পড়া, আর মুজদালিফায় মাগরিব ও ইশার নামায শেষ সময়ে পড়া নিঃসন্দেহে রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত। কিন্তু এ দুই স্থান ছাড়া রাসুল সাঃ কখনোই বিনা উজরে দুই নামায একত্রে পড়েননি।

কিন্তু আহলে হাদীসদের কাছে শিয়াদের অনুকুলে বিনা উজরে দুই নামায একত্রে পড়া জায়েজ আছে। {হাদিয়াতুল মাহদী-১/১০৬}

জানাযার নামায জোরে জোরে পড়া

একথা সর্বজন বিদিত যে, যেহেতু জানাযার নামায মূলত দ্আু। আর দুআ আস্তে পড়ার জন্য কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে। একারণে উলামায়ে উম্মতের ইজমা হল যে, জানাযার দ্আু আস্তে পড়া হবে। গায়রে মুকাল্লিদ শাওকানী রহঃ ও এ ব্যাপারে একমত।

وَذَهَبَ الْجُمْهُورُ إلَى أَنَّهُ لَا يُسْتَحَبُّ الْجَهْرُ فِي صَلَاةِ الْجِنَازَةِ. وَتَمَسَّكُوا بِقَوْلِ ابْنِ عَبَّاسٍ الْمُتَقَدِّمِ: ” لَمْ أَقْرَأْ: أَيْ جَهْرًا إلَّا لِتَعْلَمُوا أَنَّهُ سُنَّةٌ ” وَبِقَوْلِهِ فِي حَدِيثِ أَبِي أُمَامَةَ ” سِرًّا فِي نَفْسِهِ “

অর্থাৎ জমহুর উলামাগণের মতে জানাযার নামায জোরে না পড়া মুস্তাহাব। আর তারা হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ এর বক্তব্য দ্বারা যা ইতোপূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তা দিয়ে দলীল পেশ করে থাকে। অর্থাৎ আর রাসূল সাঃ এ কারণে জোরে পড়তেন যে, যেন অন্যরা এটা জেনে নেয় যে, দুআটি পড়া সুন্নত। আর জমহুরগণ আবু উমামার বক্তব্য আস্তে পড়বে দ্বারাও প্রমাণ পেশ করেছেন। [নাইলুল আওতার-৪/৬৬}

এমনিভাবে ফিক্বহে হাম্বলীর প্রসিদ্ধ কিতাব আলমুগনী লিইবনে কুদামাতে এসেছে যে,

وَيُسِرُّ الْقِرَاءَةَ وَالدُّعَاءَ فِي صَلَاةِ الْجِنَازَةِ لَا نَعْلَمُ بَيْنَ أَهْلِ الْعِلْمِ فِيهِ خِلَافًا،

অর্থাৎ জানাযার নামাযে কেরাত এবং দুআ আস্তে পড়বে, এ ব্যাপারে আহলে ইলমদের নিকট কোন মতভেদ আছে বলে আমার জানা নেই। {মুগনী লিইবনে কুদামা-২/৪৮৬}

চার মাযহাবের চার ইমাম, সেই সাথে জমহুর উলামায়ে কেরামের বিপরীত শুধুমাত্র শিয়াদের সাথে ঐক্যমত্ব পোষণ করার জন্য কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা বলে থাকেন যে, জানাযার নামাযে কেরাত এবং দুআ জোরে জোরে পড়া সুন্নত। {ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস-৫/১৫২, ফাতাওয়া সানায়িয়্যাহ-২/৫৬}

শিয়ারা জানাযার নামাযে দুআকে জোরে পড়াকে সুন্নত মনে করে থাকে, তাই তাদের সাথে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা একাত্মতা প্রকাশ করতে চার ইমাম এবং জমহুরের মতকে ফেলে দিলেন আস্তাকুরে।

নামাযের মাঝে হাত তুলে দুআ করা বিষয়ে একাত্মতা

শিয়া কাফেরদের ব্যাপারে যারা জানেন, তারা ভাল করেই জানেন যে, তারা নামাযের মাঝে বারবার হাত তুলে দুআ করে থাকে। শিয়াদের এ আমল গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের এত পছন্দ যে, তারাও বিতির নামায এবং কুনুতে নাজেলার সময়, সেই সাথে মুতলাক নামাযেও হাত তুলে দুআ করে থাকে। {নুজুলুল আবরার-১১০}

অথচ কোন সহীহ হাদীসে নামাযের মধ্যে হাত তুলে দুআ করার প্রমাণ নেই। বরং হাত না তোলার সহীহ বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। তবুও শিয়াদের সমর্থন করার জন্য আহলে হাদীস ভাইয়েরা একাজ করে থাকে।

মহিলাদের সাথে পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস সংক্রান্ত একতা

শিয়াদের মতে যেমন মহিলাদের পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করা জায়েজ, ঠিক তেমনি কথিত আহলে হাদীসদের মতেও পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করা জায়েজ।

শিয়ারা লিখেছেঃ

عن حماد بن عثمان قال سألت ابا عبد الله عليه السلام عن الرجل يأتى المرأة فى ذلك الموضع وفى البيت جماعة وقال لى ورفع صوته قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من كلف مملوكه ما لا يطيق فليبعه ثم نظر فى وجوه اهل البيت ثم اصغى الى فقال لا بأس به” (الاستصار-2-130)

অনুবাদঃহাম্মাদ বিন উসমান বর্ণনা করেছেনঃ আমি হযরত ইমাম যাফর সাদেককে প্রশ্ন করলাম যে, স্বীয় স্ত্রীর পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করা যায়? তিনি উঁচু আওয়াজে বললেনঃ স্বীয় গোলাম থেকে তার সাধ্যের বেশি কাজ নেয়া জায়েজ নয়। বরং তাকে বিক্রি করে দেয়া উচিত। তারপর স্বীয় আহলে বাইতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে মাথা ঝুকালেন। তারপর বললেনঃ এতে কোন সমস্যা নেই। {আলইস্তিবছার-২/১৩০}

ঠিক একই কথা পাওয়া যায় গায়রে মুকাল্লিদদের কিতাবে। গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা ওহীদুজ্জামান সাহেব স্বীয় তাইসীরুল বারীর ৬ষ্ঠ খন্ডের ৩৭-৩৮ নং পৃষ্ঠায় نسائكم حرث لكم فأتوا حرثكم انى شئتمএর অধীনে টিকায় লিখেনঃ বর্ণনায় এ ব্যাপারে স্পষ্ট রয়েছে যে, [এ আয়াত] মহিলাদের সাথে পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাসের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে। হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে এটি জায়েজ হওয়া বর্ণিত। আর ইমাম মালিক রহঃ এবং ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর প্রথম বক্তব্য এটিই ছিল। ÑÑÑÑ এ আয়াত পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করার অনুমোদনের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে। এক জামাত আহলে হাদীস যেমন বুখারী, যায়লায়ী, বাজ্জার, নাসায়ী, আবু আলী নিশাপুরী রহঃ এদিকেই গিয়েছেন যে, পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাসের নিষেধ সম্বলিত কোন হাদীস বিদ্যমান নেই। সুতরাং বুঝা গেল যে, আয়াত দ্বারা পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করা জায়েজ করা হয়েছে।

একই বক্তব্য রয়েছে। { নুজুলুল আবরার-১/১২৩}

সাবাস আহলে হাদীস মাযহাব! এরকম জঘন্য কর্মটির ক্ষেত্রেও শিয়াদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে দ্বিধা করেনি।

কুকুর পাক হওয়া বিষয়ে একতা

একথা সবাই জানে যে, কুকুর নাপাক। কুকুর যদি কুপে পড়ে যায়, তাহলে কুপ নাপাক হয়ে যায়। তখন কুপের সমস্ত পানি উঠিয়ে ফেলা আবশ্যক।

কিন্তু শিয়াদের মতে, কুকুর কুপে পতিত হওয়ার পর শুধু পাঁচ বালতি পানি উঠালেই কুপ পাক হয়ে যায়। {শিয়াদের কিতাব-ফুরূয়ে কাফী-১/৪}

কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট পাঁচ বালতিরও কোন প্রয়োজন নেই। বরং এমনিতেই কুপের পানি পাক থাকবে। দেখুন আহলে হাদীস ভাইদের কিতাবে কী লিখা হয়েছে-

ولو سقط فى الماء ولم يتغير لا يفسد الماء وان اصاب فمه الماء

অর্থাৎ যদি কুকুর পানিতে পড়ে যায়, আর পানির সিফাত পরিবর্তিত না হয়, তাহলে পানি নাপাক হবে না। যদিও তার মুখ পানিতে ডুবে যায়। {নুজুলুল আবরার-১/৩০}

এ কথা লিখার দুই লাইন আগে লিখেছে

ودم السمك طاهر وكذالك الكلب وريقه عند المحققين

অর্থাৎ মাছের রক্ত পাক, এমনিভাবে কুকুর এবং তার লালাও পাক। {নুজুলুল আবরার-১/৩০}

সাবাস! শিয়ারাতো কুকুর পতিত হলে, পাঁচ বালতি পানি উঠানোর কথা বলেছে, আর আহলে হাদীস ভাইয়েরাতো পুরো কুকুরকেই পাক বানিয়ে দিল।

শুধু কি তাই? একটু পর আরো লিখেছে যে, কুকুর কোলে নিয়ে নামায পড়লে নামায ভাঙ্গবে না। নামায পুরোপুরিই শুদ্ধ হবে। তাদের শব্দ দেখুন-

ولا تفسد صلاة حامله

তথা কুকুর বহনকারীর নামায ভাঙ্গবে না। {নুজুলুল আবরার-১/৩০}

কুকুরের মাসআলায় গায়রে মুকাল্লিদরা শিয়াদের পিছনে ফেলে কুকুরকে পাক বানিয়েছে, কুকুরের লালাকে পাক বানিয়েছে, শুধু তাই নয়, কুকুর কোলে নিয়ে নামায পড়াকেও শুদ্ধ করে দিল!

কুরআন মুখস্ত করার বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষেত্রে একতা

শিয়ারা বর্তমানে বিদ্যমান কুরআনের উপর বিশ্বাস করে না। তাই তারা কুরআন মুখস্ত করবে না, এটাতো স্বাভাবিকভাবেই বুঝে আসে। কিন্তু অত্যাশ্চর্যের বিষয় হল, গায়রে মুকাল্লিদদের মাঝেও তুলনামূলক হাফেজ খুবই কম। কারণ হল, হাদীস! হাদীস বলে চিল্লিয়ে কুরআনের মহানতা আর শ্রেষ্ঠত্ব মন থেকে চলে গেছে। তাদের কাছে আসল হল হাদীস। এ কারণে কুরআন দেখার বেশি প্রয়োজন অনুভব করে না।

যেমন তারা ফাতিহা খালফাল ইমাম তথা ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার মাসআলায় তারা কুরআনের দিকে দৃষ্টিপাতই করে না। সরাসরি কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। শাফেয়ী এবং হাম্বলী মাযহাবীরা যদিও ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ে থাকে, কিন্তু সেই সাথে তারা কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা করে থাকে। তাদের ব্যাখ্যা হল, যখন ইমাম সাহেব জোরে কিরাত পড়ে, তখন মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতিহা পড়া নিষিদ্ধ কুরআনের আয়াত অনুযায়ী। আর যখন আস্তে কিরাত পড়ে ইমাম সাহেব তখন আয়াত দ্বারা মুক্তাদীর জন্য কিরাত পড়া নিষিদ্ধ নয়।

কিন্তু আহলে হাদীস দাবিদাররা মুতলাকানভাবে ইমামের পিছনে কিরাত পড়ার প্রবক্তা। চাই ইমাম জোরে কিরাত পড়–ক বা আস্তে কিরাত পড়–ক। সেই সাথে এ মিথ্যাচার করে যে, নামাযের সাথে واذ اقرئ القرآنআয়াতের কোন সম্পর্কই নেই। বরং এর সম্পর্ক হল খুতবার সাথে।

কিন্তু বোকারা একথা বুঝতে পারছে না যে, যেখানে খুতবার সময় চুপ থাকা জরুরী, অথচ নামায, যা মূলত খুশু খুজুরই নাম এবং وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ [٢:٢٣٨] তথা তোমরা আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও [সূরা বাকারা-২৩৮] এর লক্ষ্য বস্তু সেখানে চুপ থাকা কেন উদ্দেশ্য হবে না?

শুধু তাই নয়, এ আয়াত যে, নামাযের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে, এ বিষয়ে সকল মুহাক্কিকদের ইজমা তথা ঐক্যমত্ব রয়েছে। হযরত ইমাম আহমাদ রহঃ বলেন-

اجمع الناس على ان هذه الآية فى الصلاةতথা এ আয়াতের সম্পর্ক নামাযের সাথে তা ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। {আলমুগনী লিইবনে কুদামা}

কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা নিজের মনের পূজা করার জন্য এ ইজমায়ে উম্মতকেও অস্বিকার করে দেয়।

এক সময়ে তিন তালাকে এক তালাক হওয়া বিষয়ে শিয়া আহলে হাদীস ভাই ভাই

সবার জানা উচিত যে, তিন তালাক দিলে সমস্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী প্রমুখদের নিকট তিন তালাকই গণ্য হয়ে থাকে। সবার কাছেই তিন তালাকপ্রাপ্তা মহিলা স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যায়। নতুন বিয়ে দ্বারাও প্রথম স্বামীর কাছে আর ফিরে আসতে পারে না।

কিন্তু শিয়াদের মত হল, এক সময়ে তিন তালাক দিলে তিন তালাক হয় না, বরং এক তালাক হয়।

শিয়াদের সাথে ভাতৃত্ব বজায় রাখতে আহরে হাদীস ভাইয়েরা একই সুরে সুর মিলিয়ে বলেন যে, এক সময়ে তিন তালাক দিলে তিন তালাক হয় না বরং এক তালাক হয়। শুধু তাই নয়, ঐ তালাকও আবার রাজয়ী তালাক। অর্থাৎ নতুন বিবাহ ছাড়াই আবার প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যেতে পারে।

উম্মতে মুহাম্মদীর এ ইজমায়ী মাসআলার বিপরীত সাত আটশত শত বছর পর এসে সর্বপ্রথম ইবনে তাইমিয়া রহঃ তিন তালাককে এক তালাক বানিয়ে দেন।

কথিত আহলে হাদীসরা ইবনে তাইমিয়া রহঃ এর এ স্বতন্ত্র অবস্থানের তাকলীদ করে থাকে।

মজার ব্যাপার হল, কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা চার ইমামের তাকলীদ করাকে শিরক আর হারাম বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। কিন্তু শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহঃ এর তাকলীদকে গলার মালা বানিয়ে নিয়েছে শিয়াদের সাথে সাম্যতা বজায় রাখার জন্য।

অথচ ইবনে তাইমিয়া রহঃ যখন তিন তালাকে এক তালাকের ফাতওয়া দিয়েছিলেন, তখন উলামায়ে কেরাম খুবই কঠোরভাবে তা খন্ডন করেছিলেন। আর এ কারণে তিনি খুবই অসস্থিকর অবস্থায় পড়েছিলেন।

দেখুন গাযরে মুকাল্লিদ আলেম আবু সাঈদ শরফুদ্দীন দেহলবী সাহেব এ বিষয়টি খোলা মনে স্বীকার করেছেন। তিনি লিখেছেন-

“এই [তিন তালাককে এক তালাক মানার মাসআলা] সাহাবাগণ, তাবেয়ীগণ, তাবে তাবেয়ীগন এবং মুহাদ্দিসীন ইমামগণ এবং পূর্ববর্তীদের নয়। বরং এ মাসলাক সাত শত বছর পরের মুহাদ্দিসীনের। যে ফাতওয়া শাইখুল ইসলাম সপ্তম শতাব্দীর শেষের দিকে বা অষ্টম শতাব্দীতে দিয়েছেন। তখন সে সময়কার উলামায়ে কেরাম এর কঠোর সমালোচনা করেছেন”।

নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব ইতহাফুল নুবালা গ্রন্থের যেখানে শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহঃ এর স্বতন্ত্র মাসআলার ফিরিস্তি উল্লেখ করেছেন, সেখানে তিনি তিন তালাকের মাসআলাটিও উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি লিখেন-

“জনাব, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ এক মজলিসে তিন তালাক দেয়াকে এক সাব্যস্ত করার ফাতওয়া দেয়ার কারণে অনেক শোরগোল পড়ে যায়। শাইখুর ইসলাম এবং তার ছাত্র ইবনে কায়্যিম রহঃ এর অনেক মুসিবত আপতিত হয়। তাদের উটের উপর সওয়ার করে দোররা মেরে মেরে শহরে ঘুরিয়ে অপমান করা হয়। তাদের বন্দি করা হয়। কেননা, সে সময় এ মাসআলা [তিন তালাককে এক তালাক বলা] রাফেজী শিয়াদের প্রতীক ছিল। {ইতহাফ-৩১৮, উমদাতুল আসাস গ্রন্থের বরাতে-১০৩}

তারাবীহ অস্বিকার করার বিষয়ে শিয়া আহলে হাদীস এক

সাধারণ মুসলমানগণ মনে করে থাকেন যে, আহলে সুন্নত এবং কথিত আহলে হাদীসদের মাঝে তারাবীর রাকাত সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধ। অর্থাৎ আহলে সুন্নতের নিকট বিশ রাকাত, আর আহলে হাদীসদের নিকট আট রাকাত।

কিন্তু একথা আসলে ঠিক নয়। বরং আসল কথা হল, আহলে সুন্নত এবং আহলে হাদীস দাবিদারদের মাঝে তারাবীহের অস্তিত্ব বিষয়ে মতভেদ।

কেননা, আহলে সুন্নতের মাঝে সবাই একমত যে, তারাবীহ বিশ রাকাতের কম নয়। আর আট রাকাতের যে দলীল পেশ করা হয়, সেটি তারাবীহ নয়, বরং সেটি হল তাহাজ্জুদ নামায। এ কারণেই আহলে সুন্নতের অনেক হাদীসের কিতাবে আট রাকাতের হাদীস আনা হয়েছে তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে। কিয়ামে রমজান অধ্যায়ে আনা হয়নি।

ইমাম তিরমিজী রহঃ যেখানে তারাবীহ বিষয়ে মাযহাবী বক্তব্য উল্লেখ করেছেন, সেখানে বিশ রাকাত, ছত্রিশ রাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু আট রাকাতের কথা উল্লেখ করেননি। যেন ইমাম তিরমিজী রহঃঃ এর জামানা পর্যন্ত তারাবীহ বিশ রাকাতই পড়া হতো।

আর আট রাকাতের ভ্রান্তিতো শুরু হয়েছে উপমহাদেশে ইংরেজরা আসার পর গায়রে মুকাল্লিদদের মস্তিস্ক প্রসূত ফর্মূলা। যেন এ দেশে হানাফীদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। সেই সাথে এ মাসআলা নিয়ে প্রতিটি মসজিদে ঝগড়া ফাসাদ ছড়িয়ে পরে।

মোটকথা, যে আট রাকাতকে কথিত আহলে হাদীসরা তারাবীহ বলে থাকে, সেটি মূলত তারাবীহই নয়, বরং সেটি হল তাহাজ্জুদ নামায। আর তারাবীহ সংক্রান্ত হাদীস তারা পড়েও না পড়লে মানে না।

এ ব্যাপারে শিয়া এবং আহলে হাদীসদের দাবি হল, বিশ রাকাত তারাবীহ যা হযরত উমর রাঃ জারী করেছেন জামাতের সাথে পড়াকে। সেটি তারা মানে না। সুতরাং শিয়া আর আহলে হাদীস দাবিদাররা এ ব্যাপারে একই প্লাটফর্মে।

রাজআতের মাসআলায় গায়রে মুকাল্লিদ আর শিয়ারা একই

মোল্লা বাকের মাজলিসী সাহেব একটি স্বতন্ত্র পুস্তিকা এ ব্যাপারে লিখেছেন। যার সারমর্ম হল, ইমাম মাহদী আঃ মদীনা মুনাওয়ারায় গিয়ে জিজ্ঞাসা করবেন যে, আবু বকর রাঃ, উমর রাঃ, উসমান রাঃ এবং তাদের অনুসারী এবং হযরত আয়শা ও হাফসা রাঃ দের কোথায় দাফন করা হয়েছে? যখন লোকেরা তাদের কবর কোথায় বলে দিবে, তখন তিনি তাদের টেনে জীবিত করবেন। আর হযরত আলী রাঃ, হযরত হুসাইন রাঃ এবং তাদের পরিবার ও অনুসারীদেরও জীবিত করবেন। তারপর উপরোক্ত সাহাবাগণ এবং রাসূল সাঃ এর সম্মানিতা স্ত্রীগণ রাঃ এবং তাদের অনুসারীদের বিভিন্ন প্রকারের কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলবেন। তারপর তাদের লাশকে গাছের সাথে লটকে দিবেন। তখন হযরত আলী রাঃ, হাসান ও হুসাইন রাঃ এবং তাদের পরিবার ও শিয়ারা এ পরিণাম দেখে খুশিতে বাগ বাগ হয়ে যাবে। {নাউজুবিল্লাহ}

গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মোল্লা মুঈন তার কিতাব “দিরাসাতুল লাবীব”নামক গ্রন্থের ৩১৯ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন-

من مات على الحب الصادق الإمام العصر المهدى عليه السلام ولم يدرك زمانه اذن الله سبحانه ان يحيه فيفوز فوزا عظيما فى حضوره وهذه رجعته فى عهده

অর্থাৎ “যে ব্যক্তি ইমাম মাহদী আঃ এর সত্য মোহাব্বতের উপর ইন্তেকাল করে। যদিও তার জমানা পায়নি। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে এ অনুমতি দিবেন যে, তিনি যেন উক্ত ব্যক্তিকে জীবিত করেন। তখন লোকটি তার দিদারে প্রচন্ড খুশি হবে। আর তার জমানায় উক্ত ব্যক্তির রাজআত হবে”।

তাহলে ফলাফল কি দাঁড়াল? শিয়ারা সুন্নীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোদ নেবার জন্য রাজআতের আক্বিদা প্রতিষ্ঠা করেছে। আর গায়রে মুকাল্লিদরা ইমাম মাহদী আঃ কে দেখার এ মিথ্যার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। তাহলে শিয়া এবং গায়রে মুকাল্লিদ উভয় গ্রুপই রাজআতের মনগড়া আক্বিদায় একই সমতায় রয়েছে।

অথচ আহলে সুন্নত ওয়াল জামআতের মতে রাজআতের উক্ত আক্বিদা সম্পূর্ণই ভ্রান্ত আক্বিদা।

এ কারণেই ইমাম নববী রহঃ মুসলিমের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে,

وَمَعْنَى إِيمَانُهُ بِالرَّجْعَةِ هُوَ مَا تَقُولُهُ الرَّافِضَةُ وَتَعْتَقِدُهُ بِزَعْمِهَا الْبَاطِلِ

রাজআতের আক্বিদা বাতিল। এর বিশ্বাসী হল রাফেজী শিয়া। {আলমিনহাজ শরহে সহীহ মুসলিম বিন হাজ্জাজ}

ইমাম নববী রহঃ তো আর জানতেন যে, একদল গায়রে মুকাল্লিদও আসবে, যারা রাজআতের ভ্রান্ত আক্বিদায় বিশ্বাসী হবে। জানলে তিনি গায়রে মুকাল্লিদের নামও অবশ্যই বলে দিতেন।

ইসমতে আইয়িম্মার আক্বিদায় শিয়াদের সাথে গায়রে মুকাল্লিদদের একাত্মতা

হযরত শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহঃ তুহফায়ে ইসনা আশারিয়া গ্রন্থে [প্রকাশক ইস্তাম্বুল, পৃষ্ঠা-৩৫৮} শিয়াদের আক্বিদা নকল করে লিখেছেন যে, কিছু শিয়াদের ইমামিয়া ও ইসমাঈলিয়্যাহ বলা হয়। যারা ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে ভুল ও গোনাহ বিষয়ে ইসমতে আম্বিয়ার মত ইমামদের জন্যও তা শর্ত বলে থাকে।

অথচ এ আক্বিদা সম্পূর্ণই কুরআন ও হাদীসের খেলাফ। এমনিভাবে গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মোল্লা মুঈন সাহেব তার “দিরাসাতুল লাবীব”নামক গ্রন্থের ২১৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ-

“বার ইমাম এবং হযরত ফাতিমা রাঃ মাসুম। তথা তাদের থেকে গোনাহ হওয়া অসম্ভব। আর হযরত আবু বকর রাঃ সহ যেসব সাহাবাগণ হযরত আলী রাঃ এর হাতে খিলাফতের বাইয়াত হতে অস্বিকৃতি জানিয়েছেন, এবং হযরত ফাতিমা রাঃ এর মিরাস দেয়ার বিরোধিতা করেছেন, তারা সবাই ভুল করেছেন। আর রাসূল সাঃ এর ইসমত তথা নিষ্পাপ হওয়া যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত, আর হযরত ইমাম আঃ এর ইসমত তথা নিষ্পাপ হওয়া বর্ণনা দ্বারা প্রমানিত”।

আল্লাহ মাফ করুন। এরই নাম গায়রে মুকাল্লিদ। নিজের মনের পূজা করে আহলে সুন্নতের সাথে বিদ্রোহ করার জন্য শিয়াদের সাথে গলা মিলিয়েছে। আহলে সুন্নতের মতে শুধুমাত্র নবীগণ মাসুম। আর শিয়ারা যেহেতু ইমামদেরও মাসুম বলে। তাই তারাও তাদের সাথে গলা মিলালো।

আল্লাহ তাআলা স্বাধীনচেতা, মনপূজারী এ ভয়ংকর আহলে হাদীস নামধারী জামাত থেকে মুসলিম জাতিকে হিফাযত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

আরও জানুন

অন্যের হক আমার কাঙ্ক্ষিত পথ রুদ্ধ করবে না তো?

মাওলানা মুহাম্মদ শাহাদাত হুসাইন নশ্বর এই পৃথীবিতে চলতে গেলে যেসকল বস্তুর আমরা মুখাপেক্ষী হই তন্মধ্যে …

No comments

  1. valo likhechen…aro valo lekha chai…ohabi, kadiani, jamati islami erokom bivinno vranto motobadi der somporkeo likhun please.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *