প্রচ্ছদ / ভ্রান্ত মতবাদ / হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ (২৩)

হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ (২৩)

নাস্তিকদের বিশ্বাসের স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা একজন ধার্মিকের কর্তব্য

হেযবুত তাওহীদের বক্তব্যঃ 

নাস্তিক বা আস্তিক যে কোনোটি হওয়ার স্বাধীনতা আল্লাহই মানুষকে দিয়েছেন ।তাই যারা বিশ্বাস করেন যে নিখুঁত সৃষ্টি আছে,কিন্তু তার কোন স্রষ্টা নেই,তাদের এই বিশ্বাস করার স্বাধীনতা( Freedom of thinking) সংরক্ষণ করাও একজন প্রকৃত ধার্মিকের কর্তব্য।আল্লাহ যখন মেঘমালা থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন সেই বৃষ্টি ধার্মিকের বাড়িতেও পড়ে,আল্লাহদ্রোহীর বাড়িতেও পড়ে।আল্লাহ প্রদত্ত কোনো নেয়ামত থেকেই তারা কেউ বঞ্চিত হয় না,বৈষম্যের শিকারও হয় না।সুতরাং আল্লহর এই উদারতা ধার্মিকেরও অনুসরণীয়। (চলমান সংকট নিরসনে আদর্শিক লড়াইয়ের অপরিহার্যতা-১৩)

পর্যালোচনাঃ

কুরআনুল কারীমে এক ও অদ্বিতীয় আল্লহ ﷻ এর অস্তিত্বের বিকল্প যে কোন প্রকারের ধারণা হতে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।পবিত্র কুরআনের বাণী সমূহের প্রতি আস্থাশীল ও অকৃত্রিম বিশ্বাসী থাকার আহ্বান জানান হয়েছে। এতদসত্ত্বেও কেউ কল্পনাপ্রসূতভাবে নিত্যনতুন কর্মকান্ডে প্রবৃত্ত হলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ।মহান আল্লহ ﷻ রাসূল ﷺ -কে সতর্ককারীরূপে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তাঁর মাধ্যমেই মানুষকে হুঁশিয়ার করেছেন।

পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ

قُلۡ اِنَّمَاۤ اَنَا مُنۡذِرٌ ٭ۖ وَّ مَا مِنۡ اِلٰہٍ اِلَّا اللّٰہُ الۡوَاحِدُ الۡقَہَّارُ . رَبُّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ مَا بَیۡنَہُمَا الۡعَزِیۡزُ الۡغَفَّارُ

বলুন, আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র এবং সত্য কোন ইলাহ্ নেই আল্লাহ ছাড়া, যিনি এক, প্রবল প্ৰতাপশালী।যিনি আসমানসমূহ, যমীন ও তাদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর রব, প্রবল পরাক্রমশালী, মহাক্ষমাশীল।(সূরা সোয়াদঃ৬৫-৬৬)

اَمۡ خُلِقُوۡا مِنۡ غَیۡرِ شَیۡءٍ اَمۡ ہُمُ الۡخٰلِقُوۡنَ . اَمۡ خَلَقُوا السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ ۚ بَلۡ لَّا یُوۡقِنُوۡنَ

তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা ?নাকি তারা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছে? বরং তারা দৃঢ় বিশ্বাস করে না।(সূরা তূরঃ৩৫-৩৬)

এধরনের আরও অনেক আয়াতে আল্লহ ﷻ তাঁর অস্তিত্বের জানান দিয়েছেন ।কেউ যদি তার আয়াতসমূকে অস্বীকার করে তবে তার সম্পর্কে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ

اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاٰیٰتِنَا سَوۡفَ نُصۡلِیۡہِمۡ نَارًا ؕ کُلَّمَا نَضِجَتۡ جُلُوۡدُہُمۡ بَدَّلۡنٰہُمۡ جُلُوۡدًا غَیۡرَہَا لِیَذُوۡقُوا الۡعَذَابَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَزِیۡزًا حَکِیۡمًا

নিশ্চয় যারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে অবশ্যই তাদেরকে আমি আগুনে পোড়াব; যখনই তাদের চামড়া পুড়ে পাকা দগ্ধ হবে তখনই তার স্থলে নতুন চামড়া বদলে দেব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা-৫৬)

নাস্তিক বলতে আমরা তাদেরকেই বুঝি যারা আল্লহ ﷻ এর অস্তিত্ব কে অস্বীকার করে।ফলে তারা আল্লহ ﷻ এর আয়াতসমূকে অস্বীকার করার মাধ্যমে নিজেদের ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নিয়েছে ।তারা ওহীর জ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের খোঁড়া যুক্তি ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আল্লাহ ﷻ এর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে থাকে।এসকল প্রবৃত্তি পূজারীদের সম্পর্কে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ

وَ اِنَّ کَثِیۡرًا لَّیُضِلُّوۡنَ بِاَہۡوَآئِہِمۡ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ؕ اِنَّ رَبَّکَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُعۡتَدِیۡنَ
আর নিশ্চিত অনেকে অজ্ঞতাবশত নিজেদের খেয়াল –খুশী দ্বারা অন্যকে বিপদ্গামী করে; নিশ্চয় আপানার রব সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্বদ্ধে অধিক জানেন। (সূরা আনআম-১১৯)

وَ مَنۡ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ بِغَیۡرِ ہُدًی مِّنَ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ

আর আল্লাহ্‌র পথ নির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে ব্যাক্তি নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে বেশী বিভ্রান্ত আর কে? আল্লাহ্‌ তো যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না। (সূরা কাসাস-৫০)

সুতরাং প্রবৃত্তির অনুসারীরা যে পথভ্রষ্ট তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

যারা নিজেদেরকে নাস্তিক বলে দাবি করে তারা ওহীর অস্তিত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করেন ।এরূপ নাস্তিকতার দাবিদারগণও মনের গভীরে স্রষ্টার অস্তিত্বের কথা অনুভব করে।এ বিজ্ঞানময় বিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে বিরাজমান অভাবনীয় বৈজ্ঞানিক শৃঙ্খলার মধ্যে যার অস্তিত্বের সাক্ষ্য বিদ্যমান তাঁকে অস্বীকার করি বলে গায়ের জোরে দাবি করলেও বিবেক এরূপ দাবি পুরোপুরি মানতে পারে না।তবে শয়তানের প্ররোচনা ও প্রবৃত্তির তাড়নায় মনের গভীরের বিশ্বাসের অনুভূতিকে তারা বাড়তে দেয় না।নিঃসন্দেহে তাদের এসব চিন্তাধারা চরম গর্হিত এবং সীমালঙ্ঘন।

পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ
وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ

এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না।(সূরা মায়িদা-২)

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেনঃ

سَمِعتُ رَسُولَ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ مَنْ رَأى مِنْكُمْ مُنْكَراً فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أضْعَفُ الإيمَانِ

আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন গর্হিত কাজ দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। যদি (তাতে) ক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজ জিভ দ্বারা (উপদেশ দিয়ে পরিবর্তন করে)। যদি (তাতেও) সামর্থ্য না রাখে, তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে)। আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল ঈমান।” (আহমাদ ১১০৭৪, মুসলিম ১৮৬)

আল্লহ ﷻ এর অস্তিত্ব অস্বীকারের চাইতে নিকৃষ্ট গর্হিত কাজ আর কি হতে পারে?

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

قَالَ رَسُولُ اللهِﷺ انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَذَا نَنْصُرُهُ مَظْلُومًا فَكَيْفَ نَنْصُرُهُ ظَالِمًا قَالَ تَأْخُذُ فَوْقَ يَدَيْهِ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে যালিম হোক অথবা মাযলুম। তিনি (আনাস) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মাযলুমকে সাহায্য করব, তা তো বুঝলাম। কিন্তু যালিমকে কি করে সাহায্য করব? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তার হাত ধরে তাকে বিরত রাখবে। (অর্থাৎ তাকে যুলুম করতে দিবে না)।(সহীহ বুখারী-২৪৪৪)

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে প্রমাণ হল যে অন্যায় ও গর্হিত কাজের প্রশ্রয় বা সংরক্ষণ নয়,বরং তা প্রতিরোধ করতে হবে।

আল্লহ ﷻ এর আয়াতের সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করে যারা আল্লহ ﷻ এর অস্তিত্বের অস্বীকার করে তাদের এহেন চিন্তাভাবনাকে সংরক্ষণ করা কি করে একজন ধার্মিকের কর্তব্য হতে পারে? আল্লহ ﷻ এর অস্তিত্ব অস্বীকার করার মত নিকৃষ্ট পাপকাজের সংরক্ষণ করা ধার্মিকের কর্তব্য বলে ঘোষণাকারীরা কি আদৌ তাওহীদের দল হতে পারে?

শেষের দিকে আস্তিক-নাস্তিক সকলের আল্লহ ﷻ এর নিয়ামতপ্রাপ্তি সম্পর্কে হিযবুত তাওহীদ হাস্যকর যুক্তি উপস্থাপন করেছে।সকলেই আল্লাহ ﷻ এর নিয়ামতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে যদি নাস্তিকের বিশ্বাসের স্বাধীনতা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়,তবে চোর-ডাকাত,ব্যভিচারী ইত্যাদি অপরাধীরাও তো আল্লহ ﷻ এর নিয়ামতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে।এখন কি তথাকথিত উদারতা ও কর্মস্বাধীনতার স্লোগানে তাদেরকেও বিচারের আওতাধীন করা থেকে বিরত থাকতে হবে?

নযরে সানীঃ ফাদ্বিলাতুশ শায়খ Abdullah Al Mamun হাঃফিঃ

 

0Shares

আরও জানুন

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতপ্রাপ্তির আগে শিরক করেছেন?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। হযরত আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি দাবী করছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম …