প্রচ্ছদ / ভ্রান্ত মতবাদ / হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ (২৪)

হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ (২৪)

দাজ্জাল কোনো মানুষ নয়,পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ইহুদি খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই হচ্ছে দাজ্জাল।

হেযবুত তাওহীদের বক্তব্যঃ

পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ইহুদি খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই হচ্ছে বিশ্বনবী বর্ণিত সেই দাজ্জাল,যে দানব ৪৭৫ বছর আগেই জন্ম নিয়ে তার শৈশব, কৌশর পার হয়ে বর্তমানে যৌবনে উপনীত হয়েছে এবং দোর্দণ্ড প্রতাপে সারা পৃথিবীকে পদদলিত করে চলছে; আজ মুসলিমসহ সমস্ত পৃথিবী অর্থাৎ মানবজাতি তাকে প্রভু বলে মেনে নিয়ে তার পায়ে সাজদায় পোড়ে আছে। (মহাসত্যের আহ্বান-১৮)

দাজ্জাল এমন কোন বস্তু নয় যা চোখে দেখা যায়( Visible) বা স্পর্শ করা যায় ( Tangible) ।
বর্তমান ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতাই হচ্ছে সেই মহাশক্তিধর দানব দাজ্জাল এবং যান্ত্রিক প্রযুক্তি হচ্ছে তার বাহন।(মহাসত্যের আহ্বান-১৯)

পর্যালোচনাঃ

দাজ্জাল একজন মানুষ। তা কোন সভ্যতার নাম নয়। কেননা, রাসুল ﷺ এর হাদীস সমূহে দাজ্জাল নামক ব্যক্তির অনেক বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়েছে। সেগুলো দিয়ে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সে একজন রক্তমাংশে গড়া আমাদের মতই মানব সন্তান। সেও মায়ের পেট থেকেই দুনিয়ায় এসেছে। আসুন! দাজ্জাল যে মানুষ, কোন সভ্যতা নয় এ ব্যাপারে রাসুল ﷺ এর কয়েকটি অকাট্য হাদীসে চোখ বুলিয়ে নিইঃ

১.ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ

بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ سَبْطُ الشَّعَرِ يَنْطُفُ أَوْ يُهَرَاقُ رَأْسُهُ مَاءً قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا ابْنُ مَرْيَمَ ثُمَّ ذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ فَإِذَا رَجُلٌ جَسِيمٌ أَحْمَرُ جَعْدُ الرَّأْسِ أَعْوَرُ الْعَيْنِ كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ قَالُوا هَذَا الدَّجَّالُ أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ رَجُلٌ مِنْ خُزَاعَةَ

আমি ঘুমের অবস্থায় দেখতে পেলাম যে, আমি কা‘বার তাওয়াফ করছি। হঠাৎ একজন লোককে দেখতে পেলাম ধূসর বর্ণের আলুথালু কেশধারী, তার মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে কিংবা টপকে পড়ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি মারিয়ামের পুত্র। এরপর আমি তাকাতে লাগলাম, হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি স্থুলকায় লাল বর্ণের, কোঁকড়ানো চুল, এক চোখ কানা, চোখটি যেন ফোলা আঙ্গুরের মত। লোকেরা বলল এ-হল দাজ্জাল! তার সঙ্গে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ লোক হল ইবনু কাতান, বানী খুযা‘আর এক লোক। (সহীহ বুখারী-৭১২৮)

 এখানে স্পষ্ট رَجُلٌ (ব্যক্তি) শব্দ এসেছে ।এরপর তাকে ইবনু কাতান নামক এক লোকের সাথে তুলনা করা হয়েছে ।কোন সভ্যতা কি মানুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? এতে স্পষ্ট হয় দাজ্জাল মানুষ হবে।

২. নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ

إِنَّهُ شَابٌّ قَطَطٌ عَيْنُهُ طَافِئَةٌ كَأَنِّي أُشَبِّهُهُ بِعَبْدِ الْعُزَّى بْنِ قَطَنٍ فَمَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ فَلْيَقْرَأْ عَلَيْهِ فَوَاتِحَ سُورَةِ الْكَهْفِ

দাজ্জাল যুবক এবং কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট হবে। তার চক্ষু হবে স্ফীত আঙ্গুরের ন্যায়। আমি তাকে কাফির আবদুল উযযা ইবনু কাতানের সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি। তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূরা কাহফের প্রথমোক্ত আয়াত সমুহ পাঠ করে।(সহীহ মুসলিম-৭১০৬)

এই হাদীসে شَابٌّ (যুবক) শব্দ এসেছে ।সভ্যতা কি যুবক হতে পারে?

৩.আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ

حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ يَوْمًا حَدِيثًا طَوِيلاً عَنْ الدَّجَّالِ فَكَانَ فِيمَا يُحَدِّثُنَا بِهِ أَنَّهُ قَالَ يَأْتِي الدَّجَّالُ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْهِ أَنْ يَدْخُلَ نِقَابَ الْمَدِينَةِ فَيَنْزِلُ بَعْضَ السِّبَاخِ الَّتِي تَلِي الْمَدِينَةَ فَيَخْرُجُ إِلَيْهِ يَوْمَئِذٍ رَجُلٌ وَهُوَ خَيْرُ النَّاسِ أَوْ مِنْ خِيَارِ النَّاسِ فَيَقُولُ أَشْهَدُ أَنَّكَ الدَّجَّالُ الَّذِي حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ حَدِيثَهُ فَيَقُولُ الدَّجَّالُ أَرَأَيْتُمْ إِنْ قَتَلْتُ هَذَا ثُمَّ أَحْيَيْتُهُ هَلْ تَشُكُّونَ فِي الأَمْرِ فَيَقُولُونَ لاَ فَيَقْتُلُهُ ثُمَّ يُحْيِيهِ فَيَقُولُ وَاللهِ مَا كُنْتُ فِيكَ أَشَدَّ بَصِيرَةً مِنِّي الْيَوْمَ فَيُرِيدُ الدَّجَّالُ أَنْ يَقْتُلَهُ فَلاَ يُسَلَّطُ عَلَيْهِ

একদিন নাবী ﷺ আমাদের কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করলেন। তিনি তার সম্পর্কে আমাদেরকে যা কিছু বলেছিলেন, তাতে এও বলেছেন যে, দাজ্জাল আসবে, তবে মাদ্বীনাহর প্রবেশপথে তার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ থাকবে। মাদ্বীনাহর নিকটবর্তী বালুময় একটি স্থানে সে অবস্থান নিবে। এ সময় তার দিকে এক ব্যক্তি আসবে, যে মানুষের মাঝে উত্তম। কিংবা উত্তম ব্যক্তিদের একজন। সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুই সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ আমাদের কাছে তাঁর হাদীস বর্ণনা করেছেন। তখন দাজ্জাল বলবে, তোমরা দেখ- আমি যদি একে হত্যা করে আবার জীবিত করে দেই তাহলে কি তোমরা এ ব্যাপারে সন্দেহ করবে? লোকেরা বলবে, না। এরপর সে তাকে হত্যা করবে এবং আবার জীবিত করবে। তখন সে লোকটি বলবে, আল্লাহর কসম! তোর সম্পর্কে আজকের মত দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলাম না। তখন দাজ্জাল তাকে হত্যা করতে চাইবে। কিন্তু সে তা করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী-১৮৮২)

কোন সভ্যতা কি মানুষের সাথে কথপোকথন করতে পারে?হিযবুত তাওহীদের ঘোষিত দাজ্জালীয় সভ্যতার সাথে এ ধরনের কোন কথপোকথনের প্রমাণ আছে কি?ইহুদি-খ্রিস্টানদের প্রযুক্তির মাধ্যমে কি মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা সম্ভব হয়েছে?

৪.মদীনায় ইবনুস সাইয়াদ নামে এক ছেলের জন্ম হল যার দৈহিক অবয়ব হাদীসে বর্ণিত দাজ্জালের অবয়বের সাথে মিলে যায়।ইবনুস সাইয়াদকে রাসূল ﷺ দাজ্জাল সন্দেহ করেছিলেন।এজন্য পরীক্ষার জন্য সাহাবাদের নিয়ে তাকে দেখতে গেলেন।তার সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে উমার (রাঃ) বললেনঃ

دَعْنِي يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَضْرِبْ عُنُقَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ إِنْ يَكُنْهُ فَلَنْ تُسَلَّطَ عَلَيْهِ وَإِنْ لَمْ يَكُنْهُ فَلاَ خَيْرَ لَكَ فِي قَتْلِهِ

আমাকে অনুমতি দিন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। নাবী ﷺ ইরশাদ করলেন : যদি সে সে-ই (অর্থাৎ মাসীহ্ দাজ্জাল) হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কাবূ করার ক্ষমতা তোমাকে দেয়া হবে না। আর যদি সে-ই (দাজ্জাল) না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করার মধ্যে তোমার কোন কল্যাণ নেই।(সহীহ বুখারী-১৩৫৪)

উক্ত ইবনুস সাইয়াদ ছিল একজন মানুষ।
দাজ্জাল কোন সভ্যতা হলে রাসূল ﷺ কোন ব্যক্তিকে দাজ্জাল বলে সন্দেহ করতেন না।

৫. নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূল ﷺ কে দাজ্জালের স্থায়ীত্বকাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ

أَرْبَعُونَ يَوْمًا يَوْمٌ كَسَنَةٍ وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ ‏”‏ ‏.‏ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَذَلِكَ الْيَوْمُ الَّذِي كَسَنَةٍ أَتَكْفِينَا فِيهِ صَلاَةُ يَوْمٍ قَالَ ‏”‏ لاَ اقْدُرُوا لَهُ قَدْرَهُ
চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে।

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যেদিন এক বছরের সমান হবে, উহাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? জবাবে তিনি বললেন, না, বরং তোমরা এদিন হিসাবে ঐ দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিবে।(সহীহ মুসলিম-৭১০৬)

এই হাদীসে দাজ্জালের স্থায়িত্বকাল বর্ণনা করা হয়েছে ।এসময় সময়ের অস্বাভাবিক আবর্তনের ফলে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) রাসূল নামাজ পড়ার ﷺ পদ্ধতি সম্পর্কে জানাতে চাইলে রাসূল ﷺ তা বাতলে দিয়েছেন ।হিযবুত তাওহীদের দাবিকৃত দাজ্জাল আবির্ভাবের পর এধরনের কোন ঘটনা ঘটেছে কি?

৬. ফাতিমা বিনত কায়স রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যেঃ

أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ﷺ صَعِدَ الْمِنْبَرَ فَضَحِكَ فَقَالَ ‏ “‏ إِنَّ تَمِيمًا الدَّارِيَّ حَدَّثَنِي بِحَدِيثٍ فَفَرِحْتُ فَأَحْبَبْتُ أَنْ أُحَدِّثَكُمْ حَدَّثَنِي أَنَّ نَاسًا مِنْ أَهْلِ فِلَسْطِينَ رَكِبُوا سَفِينَةً فِي الْبَحْرِ فَجَالَتْ بِهِمْ حَتَّى قَذَفَتْهُمْ فِي جَزِيرَةٍ مِنْ جَزَائِرِ الْبَحْرِ فَإِذَا هُمْ بِدَابَّةٍ لَبَّاسَةٍ نَاشِرَةٍ شَعْرَهَا

فَقَالُوا مَا أَنْتِ

قَالَتْ أَنَا الْجَسَّاسَةُ ‏.‏

قَالُوا فَأَخْبِرِينَا ‏.‏

قَالَتْ لاَ أُخْبِرُكُمْ وَلاَ أَسْتَخْبِرُكُمْ وَلَكِنِ ائْتُوا أَقْصَى الْقَرْيَةِ فَإِنَّ ثَمَّ مَنْ يُخْبِرُكُمْ وَيَسْتَخْبِرُكُمْ ‏.‏

فَأَتَيْنَا أَقْصَى الْقَرْيَةِ فَإِذَا رَجُلٌ مُوثَقٌ بِسِلْسِلَةٍ فَقَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ عَيْنِ زُغَرَ ‏.‏ قُلْنَا مَلأَى تَدْفُقُ ‏.‏ قَالَ أَخْبِرُونِي عَنِ الْبُحَيْرَةِ قُلْنَا مَلأَى تَدْفُقُ ‏.‏

قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ نَخْلِ بَيْسَانَ الَّذِي بَيْنَ الأُرْدُنِّ وَفِلَسْطِينَ هَلْ أَطْعَمَ قُلْنَا نَعَمْ ‏.‏

قَالَ أَخْبِرُونِي عَنِ النَّبِيِّ هَلْ بُعِثَ قُلْنَا نَعَمْ ‏.‏

قَالَ أَخْبِرُونِي كَيْفَ النَّاسُ إِلَيْهِ قُلْنَا سِرَاعٌ ‏.‏

قَالَ فَنَزَّ نَزْوَةً حَتَّى كَادَ ‏.‏

قُلْنَا فَمَا أَنْتَ قَالَ إِنَّهُ الدَّجَّالُ وَإِنَّهُ يَدْخُلُ الأَمْصَارَ كُلَّهَا إِلاَّ طَيْبَةَ ‏.‏ وَطَيْبَةُ الْمَدِينَةُ

একবার নাবী ﷺ মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং হাসলেন। পরে বললেনঃ তামীম দারী আমাকে একটি বিষয় বর্ণনা করেছে। বিষয়টি শুনে আমি খুশী হয়েছি। সুতরাং সে বিষয়টি তোমাদেরকে বর্ণনা করতে আমি ভাল মনে করি ফিলিস্তিনবাসী কিছু লোক জাহাজে সওয়ার হয়ে সমুদ্র যাত্রা করছিল। পথে তারা ঝড়ে পড়ে দিকভ্রান্ত হয়ে যায় এবং তারা সাগরের এক অজানা দীপে যেয়ে নিপতিত হয়। সেখানে তারা এক বিভ্রান্তকারী প্রাণীর তারা দেখা পায়। এর তুন ছিল চতুর্দিকে বিস্তৃত। তাঁরা বললঃ তুমি কে?

প্রাণীটি বললঃ আমি হলাম জাসসাসা (অনুসন্ধানী)।

তারা বললঃ আমাদের কিছু অনুসন্ধান দাও।

প্রাণীটি বললঃ তোমাদের আমি কিছু জানাবনা এবং তোমাদের কাছে কিছু জানতেও চাইব না। বরং তোমরা এই বস্তিটির মেষভাগে চল। সেখানে এমন একজন আছে যে তোমাদের কিছু জানাতে পারবে এবং তোমাদের কাছ থেকে কিছু জানতেও চাইবে।

তারপর আমরা বস্তিটির শেষ প্রান্তে গেলাম। দেখি, সেখানে একটি লোককে জিঞ্জির দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। সে বললঃ আমাকে তোমরা যুগার (শামের এক এলাকা) ঝর্না সম্পর্কে বলতো? আমরা বললামঃ সেটি তো পানি ভর্তি। এখনো পানি সবেগে প্রবাহিত হচ্ছে। সে বললঃ তাবারীয়া উপসাগর কেমন বলতো? আমরা বললামঃ সেটি তো পানিতে পরিপূর্ণ, সবেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সে বললঃ জর্ডান এবং ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী বায়সান খেজুর উদ্যানটি কেমন? এখনও কি ফল উৎপাদিত হয়? আমরা বললামঃ হ্যাঁ।

সে বললঃ নাবী সম্পর্কে বলতো, তিনি কি আবির্ভুত হয়েছেন।

আমরা বললামঃ হ্যাঁ।

সে বললেনঃ মানুষ তাঁর দিকে কেমন ধাবিত হচ্ছে?

আমরা বরলামঃ খুবই দ্রুত।

তামীম দারী বলেনঃ (এই কথা শুনে) সে এমন এক লাফ দিল যে বন্ধন ছিন্ন করে ফেলছিল প্রায়।

আমরা বললামঃ তুমি কে?

সে বললঃ আমিই দাজ্জাল।

এ দাজ্জাল তায়বা ছাড়া সব ঘরেই প্রবেশ করবে। তায়বা হল মদীনা।

(সুনানে তিরমিজী-২২৫৬ ,সহীহ মুসলিম-৭২৭৬)

এই দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তামীম দারী (রাঃ) দাজ্জালকে শৃঙ্খলবদ্ধ অবস্থায় দেখেছেন ।কোন সভ্যতাকে কি বেঁধে রাখা যায়?

৭. আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ

فَإِذَا جَاءُوا الشَّأْمَ خَرَجَ فَبَيْنَمَا هُمْ يُعِدُّونَ لِلْقِتَالِ يُسَوُّونَ الصُّفُوفَ إِذْ أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ فَأَمَّهُمْ فَإِذَا رَآهُ عَدُوُّ اللَّهِ ذَابَ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ فَلَوْ تَرَكَهُ لاَنْذَابَ حَتَّى يَهْلِكَ وَلَكِنْ يَقْتُلُهُ اللَّهُ بِيَدِهِ فَيُرِيهِمْ دَمَهُ فِي حَرْبَتِهِ

তারা(মুসলিমরা) যখন সিরিয়া পৌছবে তখন দাজ্জালের আগমন ঘটবে।যখন মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হতে শুরু করা মাত্র সলাতের সময় হবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন এবং সলাতে তাদের ইমামাত করবেন। আল্লাহর শত্রু (দাজ্জাল)তাঁকে দেখামাত্রই বিচলিত হয়ে যাবে যেমন লবণ পানিতে মিশে যায়। যদি ঈসা (আঃ) তাকে এমনিই ছেড়ে দেন তবে সেও নিজে নিজেই বিগলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অবশ্য আল্লাহ তা’আলা ঈসা (আঃ) এর হাতে তাকে হত্যা করবেন এবং তার রক্ত ঈসা (আঃ) এর বর্শাতে তিনি তাদেরকে(তাঁর ঈমানদার সাথীদের) দেখিয়ে দিবেন।(সহীহ মুসলিম-৭১৭০)

কোন সভ্যতাকে কি হত্যা করা যায়? সভ্যতার কি রক্ত থাকে?

৮. আবূ বাকরাহ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেনঃ

لاَ يَدْخُلُ الْمَدِينَةَ رُعْبُ الْمَسِيحِ لَهَا يَوْمَئِذٍ سَبْعَةُ أَبْوَابٍ عَلَى كُلِّ بَابٍ مَلَكَانِ

মাদ্বীনায় মাসীহ্ দাজ্জাল-এর প্রভাব পড়বে না। সে সময় মাদ্বীনাহর সাতটি প্রবেশদ্বার থাকবে। প্রতিটি প্রবেশদ্বারে দু’জন করে ফেরেশ্তা নিযুক্ত থাকবেন।(সহীহ বুখারী-৭১২৬)

 ইহুদি-খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতা যদি দাজ্জাল হয় এবং প্রযুক্তি যদি হয় তার বাহন, তবে সেই প্রযুক্তির ছোঁয়া কি মদীনায় পৌঁছে নি? ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতার অন্যতম উপাদান টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদিতো মক্কা মদীনায় দেদারসে ব্যবহার হচ্ছে ।

উল্লেখিত হাদীসগুলো থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে দাজ্জাল কোনো যান্ত্রিক সভ্যতা নয়,বরং সে হবে রক্তে মাংশে গড়া একজন মানুষ ।

ইহুদি-খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতাকে দাজ্জাল প্রমাণের জন্য পন্নী সাহেব তার রচিত ‘দাজ্জাল? ইহুদি-খৃষ্টান সভ্যতা!’ -বইয়ে দাজ্জাল সম্পর্কিত হাদীসগুলোর যে মনগড়া ব্যাখ্যা ও হাদীসের ইবারতে যেভাবে কারচুপি করেছেন তার জবাব দেখতে আগ্রহী পাঠকগণ মুফতি রেজাউল করীম আবরার (হাঃফিঃ) এর রচিত ‘দাজ্জাল’ বইটি সংগ্রহ করুন।

0Shares

আরও জানুন

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতপ্রাপ্তির আগে শিরক করেছেন?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। হযরত আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি দাবী করছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম …