প্রচ্ছদ / আধুনিক মাসায়েল / প্রজেক্টরের মাধ্যমে জুমার খোতবা শুনা

প্রজেক্টরের মাধ্যমে জুমার খোতবা শুনা

প্রশ্নঃ

শ্রদ্ধেয় হুজুর, আমার জানার বিষয় হলো মসজিদে জুমুআর খুৎবা প্রোজেক্টের দেখা জায়েজ কিনা? কুরআন ও হাদীসের রেফারেন্স সহ জানালে উপকৃত হব। بارك الله

প্রশ্নকর্তা: Md. Shahjahan [email protected]

بسم الله الرحمن الرحيم

উত্তর:

প্রিয় ভাই! জুমার খুতবা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এটি শুধু একটি “বক্তৃতা” নয়, বরং জুমার নামাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ এমনকি নামাজের শর্তসমূহের একটি।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَنِ اغْتَسَلَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ ثُمَّ يُصَلِّيَ مَعَهُ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى وَفَضْلَ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ ” .

আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেছেন, জুমআর দিনে যে ব্যক্তি গোসল করে অতঃপর জুমআর জন্য যায় এবং সমর্থ অনুযায়ী নামায আদায় করে, এরপর ইমাম খুতবা সমাপ্ত করা পর্যন্ত নীরবে থাকে, এরপর ইমামের সঙ্গে নামায আদায় করে। তবে তার এ জুমআ হতে পরবতীঁ জুমআ পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
সহীহ মুসলিম, আন্তর্জাতিক নং: আন্তর্জাতিক নং: ৮৫৭-১
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় খোতবা মনোযোগ সহকারে শুনতে হয়।

জুমার খুতবায় প্রজেক্টর ব্যবহারের অনুমোদন শরিয়তসম্মত নয়। এর কয়েকটি কারণ নিচে তুলে ধরা হলো:
১. খুতবার মর্যাদা ও গাম্ভীর্য:
জুমার খুতবায় রয়েছে এক বিশেষ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য। আল্লাহ তাআলা একে “আল্লাহর স্মরণ” বলে আখ্যায়িত করেছেন, যেমন তিনি বলেন:
“হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনের নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। যদি তোমরা জানো, তবে সেটাই তোমাদের জন্য উত্তম।”
(সূরা আল-জুমুআ, আয়াত ৯)

প্রজেক্টর ব্যবহার খুতবার এই গাম্ভীর্য ও আধ্যাত্মিক পরিবেশকে ব্যাহত করে, বরং এর মর্যাদা হ্রাস করে দেয়। অথচ খুতবা হলো “আল্লাহর স্মরণ”, বিনোদন বা দৃশ্য প্রদর্শনের স্থান নয়।

২. খুতবা সংক্ষিপ্ত রাখা সুন্নত:

নবী ﷺ-এর নির্দেশনা হলো, খুতবা যেন সংক্ষিপ্ত হয় এবং নামাজ দীর্ঘ হয়। অথচ প্রজেক্টর ব্যবহারের ফলে সাধারণত খুতবা দীর্ঘায়িত হয়, যা সুন্নতের পরিপন্থী।
عَنْ وَاصِلِ بْنِ حَيَّانَ، قَالَ قَالَ أَبُو وَائِلٍ خَطَبَنَا عَمَّارٌ فَأَوْجَزَ وَأَبْلَغَ فَلَمَّا نَزَلَ قُلْنَا يَا أَبَا الْيَقْظَانِ لَقَدْ أَبْلَغْتَ وَأَوْجَزْتَ فَلَوْ كُنْتَ تَنَفَّسْتَ . فَقَالَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” إِنَّ طُولَ صَلاَةِ الرَّجُلِ وَقِصَرَ خُطْبَتِهِ مَئِنَّةٌ مِنْ فِقْهِهِ فَأَطِيلُوا الصَّلاَةَ وَاقْصُرُوا الْخُطْبَةَ وَإِنَّ مِنَ الْبَيَانِ سِحْرًا ” .
আবু ওয়াইল (রাহঃ) বলেন, আম্মার (রাযিঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ খুতবা প্রদান করলেন। তিনি যখন (মিম্বর হতে) নেমে এলেন, তখন আমরা বললাম, হে আবুল ইয়াকযান! আপনি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ খুতবা দিয়েছেন। যদি কিছুটা দীর্ঘ করতেন (তবে আরো ভাল হত)। তিনি (আম্মার) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, নামাযকে দীর্ঘ ও খুতবাকে সংক্ষিপ্ত করা মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধির পরিচায়ক। সুতরাং নামাযকে দীর্ঘ ও খুতবাকে সংক্ষিপ্ত কর। কোন কোন বয়ান অনেক সময় যাদুর ন্যায় হয়ে থাকে।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৮৬৯)

৩. মনোযোগ বিঘ্নিত হওয়া:
প্রজেক্টর ব্যবহারের সময় সাধারণত লাইট নিভানো, স্ক্রিন চালু/বন্ধ করা, ছবির পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে মসজিদে চলাচল ও অমনোযোগ দেখা দেয়। এতে জামাতের মনোযোগ ভঙ্গ হয়, যা জুমার খুতবার আদব বিরুদ্ধ।
অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
وَمَنْ مَسَّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا ” .
“যে ব্যক্তি খুতবার সময় কংকর নেড়েচেড়ে দেখে (অর্থাৎ অমনোযোগ করে), সে নিরর্থক কাজে লিপ্ত হয়।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৮৫৭)

যখন মাটির কংকর নেড়েচেড়াও নিষিদ্ধ, তখন প্রজেক্টর পরিচালনা ও আলো–ছবির ঝলকানি দ্বারা মনোযোগ বিভ্রাট আরও গুরুতর হয়ে দাঁড়ায়।
অতএব, আমাদের মতে জুমার খুতবায় প্রজেক্টর বা অনুরূপ যন্ত্র ব্যবহারের অনুমতি নেই

والله أعلم بالصواب

উত্তর লিখনে
মুহা. শাহাদাত হুসাইন , ছাগলনাইয়া, ফেনী।

সাবেক শিক্ষার্থী: ইফতা বিভাগ
তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

সত্যায়নে
মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী দা.বা.

পরিচালক তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

0Shares

আরও জানুন

জশনে জুলুস বিদআত হলে বার্ষিক মাহফিল বিদআত নয় কেন?

প্রশ্ন আসসালামুআলাইকুম কিছু কথার জবাব দিন। নিয়মিত নির্দিষ্ট তারিখ যেমন: প্রতি বছর একই তারিখে “বার্ষিক …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস