আল্লামা আব্দুল মতীন দামাত বারাকাতুহু
লেখক মুযাফফর বিন মুহসিন তার জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছালাত বইতে হানাফী জাল হাদীস ধরার জন্য যেন জাল পেতেছেন।
অবশেষে নিজের পাতা জালে নিজেই আটকা পড়েছেন। মানসুখ কাহিনী : ঐতিহাসিক মিথ্যাচার শিরোনামে তিনি রাসূল সা. যে সারা জীবন রফয়ে ইয়াদায়ন করেছেন তার প্রমাণ পেশ করতে গিয়ে ইবনে উমর রা. বর্ণিত একটি হাদীস পেশ করেছেন, যার শেষ বাক্যটি হলো আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত তার ছালাত সর্বদা এরূপই ছিল।
এ হাদীসটি জাল। এর সনদে দু’জন রাবী আছেন, যাদের ব্যাপারে প্রচ- আপত্তি রয়েছে। একজন হলেন আব্দুর রহমান ইবনে কুরাইশ। দারাকুতনী আল মু’তালিফ গ্রন্থে (৪/১৮৭৯) বলেছেন, له أحاديث غرائب তার অজানা অচেনা কিছু হাদীস রয়েছে।
মীযানুল ইতিদাল গ্রন্থে যাহাবী ও লিসানুল মীযান গ্রন্থে ইবনে হাজার উল্লেখ করেছেন, اتهمه السليماني بوضع الحديث অর্থাৎ (মুহাদ্দিস) সুলায়মানী তাকে হাদীস জাল করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। অপর রাবী হলেন ‘ঈসমা ইবনে মুহাম্মদ আল আনসারী’।
তার সম্পর্কে আবু হাতেম ও ইয়াহয়া ইবনে মাঈন বলেছেন, كذاب يضع الحديث বড় মিথ্যুক, হাদীস জাল করতো। মুহাদ্দিস উকায়লী বলেছেন, يحدث بالبواطيل বাতিল ও অসত্য হাদীস বর্ণনা করতো। ইবনে আদী বলেছেন, وكل حديثه غير محفوظ وهو منكر الحديث তার সব হাদীসই বেঠিক, সে আপত্তিকর হাদীস বর্ণনাকারী।
আশ্চর্য হলেও সত্য, ড. আসাদুল্লাহ গালিবও তার ছালাতুর রাসূল ছা. গ্রন্থে এ জাল হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। (দ্র. পৃ. ১০৯)
আসল কথা কী, এ হাদীসটি তাদের খুবই দরকার। কারণ রাসূল সা. যে এক সময় একাধিক জায়গায় রফয়ে ইয়াদায়ন করতেন তা কোন হানাফী আলেম অস্বীকার করেন না।
বরং তারা বলেন, রাসূল সা. ইন্তেকাল পর্যন্ত রফয়ে ইয়াদায়ন করেছেন এমন দাবির কোন দলিল নেই। এদিকে ইবনে মাসউদ রা. সহ একাধিক সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে শুধু একবার হাত ওঠানোর কথা এসেছে। সেই সঙ্গে প্রবীন সাহাবী হযরত উমর, আলী ও ইবনে মাসউদ রা. সহ কূফার শত শত সাহাবীর শুধু একবার রফয়ে ইয়াদায়ন করেছেন।
এসব থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমৃত্যু রফয়ে ইয়াদাইন করেন নি। আর এজন্যই এমন একটি হাদীস জাল করা হয়েছে।
ইবনে উমর রা.এর হাদীসটি বুখারী-মুসলিম সহ প্রায় হাদীসের সকল গ্রন্থেই উদ্ধৃত হয়েছে। কিন্তু বায়হাকী ছাড়া তাদের কেউই এ অংশটি উল্লেখ করেন নি।
বাকি রইল, ইমাম বুখারী রহ. যে বলেছেন, ‘কোন সাহাবী থেকে রফা না করা প্রমাণিত নয়’, এ কথা ঠিক নয়। ইমাম বুখারীর শিষ্য ইমাম তিরমিযী পরিস্কার বলে দিয়েছেন, এটা একাধিক সাহাবী ও তাবিঈর মত (অর্থাৎ শুধু একবার রফয়ে ইয়াদায়ন করা)।
এটাই সুফিয়ান ছাওরী ও কূফাবাসীর মত। ইমাম তিরমিযী ইমাম বুখারীর মতো একথাও বলেন নি যে, সকল সাহাবী তাবিঈ ও আলেমগণ রফয়ে ইয়াদাইনের ব্যাপারে একমত। তিনি বরং স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন,
وبهذا يقول بعض أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه و سلم منهم ابن عمر و جابر بن عبد الله و أبو هريرة و أنس و ابن عباس و عبد الله بن الزبير وغيرهم ومن التابعين الحسن البصري و عطاء و طاووس و مجاهد و نافع و سالم بن عبد الله و سعيد بن جبير وغيرهم
অর্থাৎ আর এটাই মত হলো কিছু আলেমের, সাহাবীগণের মধ্যে ইবনে উমর, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ, আবু হুরায়রা, আনাস, ইবনে আব্বাস ও ইবনে যুবায়ের প্রমুখের মত। তাবিঈদের মধ্যে হাসান বসরী, আতা, তাউস, মুজাহিদ, নাফি, সালিম ও সাঈদ ইবনে জুবায়র প্রমুখের মত।
লেখক মুযাফফর বিন মুহসিন বলেছেন, রাফউল ইয়াদায়েনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমলটি জাল হাদীসের ফাঁদে আটকা পড়ে আছে। আর এর কারখানা ছিল ইরাকের কুফা ও বসরায়। তাই তিরমিযী বলেন, এটা সুফিয়ান ছাওরী ও কূফাবাসীর বক্তব্য।
এরই নাম হলো লা-মাযহাবী ফেতনা। কুফায় জাল হাদীসের কারখানা কখন থেকে হলো? সাহাবীযুগ থেকে? না তাবিঈদের যুগ থেকে? লেখক তা বলেন নি।
সুফিয়ান ছাওরীর মতো হাদীসসম্রাট কি করে জাল হাদীসের ফাঁদে আটকা পড়লেন? লেখক তাও বলেন নি। মুুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে নসর মারওয়াযী ও ইবনে আব্দুল বার ও তিরমিযী রহ.এর কথা থেকে তো বোঝা যায়, সব যুগেই কূফার এ আমল ছিল।
তাহলে এত শত শত সাহাবী ও তাবিঈ কিভাবে জাল হাদীসের ফাঁদে আটকা পড়লেন? আর ইমাম বুখারী কিভাবে বললেন, আমি হাদীস শিক্ষার জন্য অন্যান্য শহরে কতবার গিয়েছি তা বলতে পারব, কিন্তু কূফা ও বাগদাদে কতবার গিয়েছি তার হিসাব দিতে পারব না?
হাকেম আবু আব্দুল্লাহ যখন বিভিন্ন শহরের বিশ্বস্ত মুহাদ্দিসগণের পরিসংখ্যান দিলেন তার মারিফাতু উলূমিল হাদীস গ্রন্থে, তখন সর্বাধিক সংখ্যক মুহাদ্দিসের তালিকায় আসল কূফা নগরী, এরই বা কারণ কি?
আমাদের জানামতে এত বড় শক্ত ও জঘন্য কথা ইতিপূর্বে কেউ বলেন নি। কূফা নগরী যে মদীনা শরীফের পরে বৃহত্তম ইলমী নগরী ছিল সে কথা শুরুতেই আমরা বলে এসেছি।
এছাড়া আসওয়াদ ও আলকামা রহ. দুজনই ছিলেন মুখাযরাম অর্থাৎ রাসূল সা. এর যুগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ পান নি। তাই বড় বড় সাহাবীর কাছ থেকে হাদীস ও ইলম অর্জন করেছেন।
একাধিকবার সফর করে কূফা থেকে মদীনায় গেছেন। হযরত উমর রা.এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.এর এ শীর্ষ দুই ছাত্র স্বীয় উস্তাদ থেকে শিখেছিলেন রুকু করার সময় দুহাত জোড় করে উভয় হাঁটুর মাঝখানে রাখতে হয়। কিন্তু মদীনায় গিয়ে তারা হযরত উমর রা. থেকে নিজেদের আমল সংশোধন করে নিয়েছিলেন। তখন থেকে তারা হাঁটুর উপর হাত রাখতে শুরু করলেন।
রফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে কুফার জাল হাদীসের কারখানা দ্বারা তারা যদি প্রতারিত হয়ে থাকতেন, তাহলে মদীনা শরীফে যাওয়ার পর উমর রা. থেকে এটা কি সংশোধন করতে পারতেন না?
ইবনে আবী শায়বার মুসান্নাফে সহীহ সনদে তাদের থেকে বর্ণিত আছে, তারা শুধু প্রথম তাকবীরের সময়ই হাত তুলতেন। আর শুধু তারা কেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ও আলী রা.এর সকল ছাত্র এমনটি করতেন।
এটি ইবনে আবু শায়বা বর্ণনা করেছেন ওয়াকী ও আবু উসামা থেকে, তারা শোবা থেকে, তিনি আবু ইসহাক থেকে। (নং ২৪৪৬) এর বর্ণনাকারীরা সকলে বুখারী ও মুসলিমের রাবী। তাহলে এটা কে জাল করল? হাদীস জালকারীর সূত্রেও কি ইমাম বুখারী-মুসলিম হাদীস নিয়েছেন?
আব্দুল মালেক ইবনে আবজার মুসলিম শরীফের রাবী। তিনি বলেছেন, আমি শাবী, ইবরাহীম ও আবু ইসহাককে দেখেছি তারা শুধু নামাযের শুরুতেই হাত তুলতেন। (মুসান্নাফ, ২৪৫৪) এত বড় বড় ফকীহও জাল হাদীসের ফাঁদে পা দিলেন? এরা তিনজনই তো বুখারী ও মুসলিমের রাবী।
শুধু কি তাই, তাহাবী বর্ণনা করেছেন ইবনে আবী দাউদ থেকে, তিনি আহমদ ইবনে ইউনুস (বুখারী-মুসলিমের রাবী) থেকে, তিনি আবু বকর ইবনে আইয়াশ থেকে, তিনি বলেছেন, আমি কোন ফকীহকেই কখনো এমনটা করতে দেখিনি যে, তারা প্রথম তাকবীর ছাড়া হাত উত্তোলন করতেন। (নং ১৩৬৭)
এই আবু বকর ইবনে আইয়াশ বুখারী শরীফের রাবী। ১৯৩ বা ১৯৪ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। তিনি কি মিথ্যা কথা বলেছেন? যদি তাই হয়, তবে ইমাম বুখারী কি মিথ্যুকের হাদীস নিয়েছেন?
রফয়ে ইয়াদায়নের হাদীস সংখ্যা
মুযাফফর বিন মুহসিন লিখেছেন, ‘ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন,
وذكر البخاري أيضا أنه رواه سبعة عشر رجلا من الصحابة وذكر الحاكم وأبو القاسم بن منده ممن رواه العشرة المبشرة وذكر شيخنا أبو الفضل الحافظ أنه تتبع من رواه من الصحابة فبلغوا خمسين رجلا.
ইমাম বুখারী ১৭ জন ছাহাবী থেকে রফউল ইয়াদায়েনের হাদীছ বর্ণনা করেছেন। হাকেম ও আবুল কাসেম ইবনু মান্দাহ জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন ছাহাবী থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। আর হাফেয আবুল ফাযল অনুসন্ধান করে ছাহাবীদের থেকে যে সমস্ত বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, তার সংখ্যা ৫০ জনে পৌঁছেছে।
এখানে লেখক অনুবাদে মারাত্মক ভুল করেছেন। তিনি যে আরবী বোঝেন না তার এটিও একটি প্রমাণ। সঠিক অনুবাদ হবে, বুখারী রহ. এও উল্লেখ করেছেন যে, ১৭ জন সাহাবী রাফউল ইয়াদায়নের হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাকেম ও আবুল কাসেম ইবনে মান্দাহ উল্লেখ করেছেন যে, তন্মধ্যে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজনও আছেন।
আর আমাদের উস্তাদ হাফেয আবুল ফাযল উল্লেখ করেছেন যে, যে সব সাহাবী রফয়ে ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাদের ব্যাপারে তিনি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছেন, তাদের সংখ্যা ৫০ জনে পৌঁছেছে।
হাফেয আবুল ফাযল ইরাকীর এই বক্তব্য উল্লেখ করতে গিয়ে আবার আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব নিজের পক্ষ থেকে ‘অন্যুন’ শব্দ যোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, রুকুতে যাওয়া ও রুকু থেকে ওঠার সময় রাফউল ইয়াদায়েন করা সম্পর্কে চার খলীফাসহ প্রায় ২৫ জন ছাহাবী থেকে বর্ণিত ছহীহ হাদীছসমূহ রয়েছে।
একটি হিসাব মতে রাফউল ইয়াদায়েন এর হাদীছের রাবী সংখ্যা আশারায়ে মুবাশশারাহসহ অন্যুন ৫০ জন সাহাবী। এবং সর্বমোট ছহীহ হাদীছ ও আছারের সংখ্যা অন্যূন চারশত।
লক্ষ করুন, অতিশয়োক্তি কাকে বলে? মাজদুদ্দীন ফিরোজাবাদী বলেছেন, হাদীস ও আছার মিলে চারশত। এটাই অতিশয়োক্তির সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তার ওপর গালিব সাহেব যোগ করলেন ছহীহ হাদীস ও আছারের সংখ্যা অন্যুন চারশত। তার মানে আরো বেশিও হতে পারে। সুবহানাল্লাহ।
গালিব সাহেবের মতে চার খলীফাসহ প্রায় ২৫ জন সাহাবীর হাদীস ছহীহ। তার অর্থ দাঁড়ায় কমপক্ষে ৩৭৫টি আছার রয়েছে এ বিষয়ে। এসব কি মানুষকে প্রভাবিত করার জন্য প্রতারণা নয়! তিনশটিই বাদ দিলাম, ৭৫টি আছারও কি দেখাতে পারবেন গালিব সাহেবরা?
তাছাড়া তারা যে বলেছেন ‘চার খলীফাসহ জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন থেকে এ হাদীস বর্ণিত আছে’ এটা শোনা কথা। কারণ এই দশজনের মধ্যে চার খলীফাসহ কারো থেকেই সহীহ সনদে এই হাদীস বর্ণিত হয়নি। ইমাম বুখারী তো এ বিষয়ে স্বতন্ত্র গ্রন্থই রচনা করে ফেলেছেন। কিন্তু সেখানে এই দশজনের মধ্যে শুধুমাত্র আলী রা. বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। বাকি নয়জনের কারো বর্ণনাই তিনি উল্লেখ করতে পারেন নি। হ্যাঁ, উমর রা.এর বর্ণনার প্রতি তিনি ইঙ্গিত করেছেন। যেমন ইঙ্গিত করেছেন ইমাম তিরমিযীও।
বাস্তব কথা হলো চার খলীফার কারো থেকেই সহীহ সনদে রফয়ে ইয়াদায়নের হাদীস বর্ণিত হয়নি। হযরত উছমান রা. থেকে তো যঈফ সনদেও কোন হাদীস নেই। আবু বকর সিদ্দীক রা. এর হাদীসটি তো দীর্ঘ চারশত বছর পর্যন্ত লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। এ সময়ে হাদীসের প্রসিদ্ধ ছয় কিতাবসহ শতাধিক হাদীসগ্রন্থ রচিত ও সংকলিত হয়েছে।
কিন্তু আমাদের জানামতে কোন হাদীস গ্রন্থেই এটি উদ্ধৃত হয়নি। এমনকি কেউ ইশারাও করেন নি। ইমাম বুখারী এ বিষয়ে স্বতন্ত্র পুস্তক রচনা করলেও এর প্রতি ইঙ্গিত পর্যন্ত করেন নি। সর্বপ্রথম ইমাম বায়হাকী রহ. (শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী, মৃত্যু ৪৫৮ হি.) এটি উদ্ধৃত করেছেন। তিনি না হলে মনে হয় এটি আড়ালেই থেকে যেত। তদুপরি এর সনদও ঝামেলা মুক্ত নয়। (দ্র. নায়লুল ফারকাদাইন, পৃ. ৫৬, ৫৭)
হযরত উমর রা.এর হাদীসটির প্রতি অবশ্য ইমাম বুখারী ও তিরমিযী ইঙ্গিত করেছেন। তবে এটি উদ্ধৃত করেছেন বায়হাকী রহ. আসসুনানুল কুবরা গ্রন্থে (২/৭৪, হাদীস ২৫২১)। খতীব বাগদাদী আল জামে লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে’ গ্রন্থে (নং ১০১) ও ইবনুল আ’রাবী তার মু’জাম গ্রন্থে (নং ১১৪৭, ২৩১)
তিনজনই শো’বার সূত্রে হাকাম থেকে, তিনি বলেছেন, আমি তাউসকে দেখলাম, তিনি (প্রথম) তাকবীরের সময়, রুকুর সময় ও রুকু থেকে মাথা তোলার সময় কাঁধ পর্যন্ত হাত উত্তোলন করলেন। আমি তার জনৈক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন, তিনি (তাউস)
এটি বর্ণনা করেন ইবনে উমর থেকে, তিনি উমর রা.এর সূত্রে নবী সা. থেকে। এরপর বায়হাকী রহ. হাকেম আবু আব্দুল্লাহর এ উক্তিও উল্লেখ করেছেন, দুটি হাদীসই সঠিক। ইবনে উমর রা. উমর রা.এর সূত্রে নবী সা. থেকে এবং ইবনে উমর রা. (সরাসরি) নবী সা. থেকে।
কিন্তু বাস্তবে উমর রা.এর সূত্রে হাদীসটি সহীহ নয়। হাকেম রহ. যদিও এটিকে সঠিক আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু তারই উস্তাদ দারাকুতনী রহ. স্পষ্ট বলেছেন, শো’বা থেকে এটি এভাবে বর্ণনা করেছেন আদম ইবনে আবু ইয়াস ও আম্মার ইবনে আব্দুল জাব্বার মারওয়াযী।
আর তারা দুজনই ভুলের শিকার হয়েছেন। সঠিক বর্ণনা হলো, ইবনে উমর নবী সা. থেকে। শুধু দারাকুতনীই নন, তার অনেক পূর্বে ইমাম আহমদও তাই বলেছেন।
খাল্লাল রহ. তার ইলাল গ্রন্থে আহমদ ইবনে আসরাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি আবূ আব্দুল্লাহ অর্থাৎ আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.কে এ হাদীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, শোবা থেকে এভাবে কে বর্ণনা করেছেন? আমি বললাম, আদম ইবনে আবু ইয়াস। তিনি বললেন, ‘এটা কোন কিছুই নয়। এটি আসলে হবে ইবনে উমর রা. নবী সা. থেকে।’
তাছাড়া তাউসের জনৈক ছাত্র কে: তার কোন পরিচয় পাওয়া যায় নি। এমন অজ্ঞাত ব্যক্তির বর্ণনা প্রামাণ্য হতে পারে না।
হযরত আলী রা.বর্ণিত হাদীসটিতে চার জায়গায় রফয়ে ইয়াদায়ন এবং রুকু-সেজদা ও কওমা জলসার বিভিন্ন দুআ ও যিকিরের কথা এসেছে। এটি উদ্ধৃত করেছেন আবু দাউদ (৭৪৪) তিরমিযী (৩৪২৩), ইবনে মাজাহ (৮৪৬) ও আহমদ (৭১৭) প্রমুখ।
কিন্তু ইমাম তিরমিযী এটিকে সহীহ আখ্যা দিলেও অন্যান্য অধিকাংশ মুহাদ্দিসের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে এটি সহীহ বা হাসান হতে পারছে না। কারণ :
ক
এর একাধিক সূত্র আছে। কিন্তু আব্দুর রহমান ইবনে আবুয যিনাদের সূত্রেই কেবল রফয়ে ইয়াদায়নের উল্লেখ এসেছে। এমনকি আব্দুর রহমানের উস্তাদ মূসা ইবনে উকবা থেকে ইবনে জুরাইজ, ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মদ ও আসিম ইবনে আব্দুল আযীয আশযাঈ তিনজনই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাদের বর্ণনায় দুআ ও যিকির-আযকারের উল্লেখ এসেছে। রফয়ে ইয়াদায়নের উল্লেখ আসে নি।
খ
মূসা ইবন উকবার সঙ্গী আব্দুল আযীয মাজেশূন একই উস্তাদ আব্দুল্লাহ ইবনুল ফাযল থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণনায়ও রফয়ে ইয়াদায়েনের উল্লেখ নেই।
গ
আব্দুল্লাহ ইবনুল ফাযলের সঙ্গী ইয়াকুব আল মাজেশূন থেকে তার ছেলে ইউসুফ (এ বর্ণনাটি মুসলিম শরীফে এসেছে) ও ভাতিজা আব্দুল আযীয একই উস্তাদ আল আরাজ থেকে এটি বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণনায়ও রফয়ে ইয়াদায়নের উল্লেখ আসে নি। শুধু দুআ ও যিকির-আযকার প্রসঙ্গ উদ্ধৃত হয়েছে। সারকথা, হাদীসটি বহুসূত্রে বর্ণিত হলেও এতে রফয়ে ইয়াদায়নের কথা উল্লেখ করার ক্ষেত্রে আব্দুর রহমান নিঃসঙ্গ।
ঘ
এই আব্দুর রহমান ইবনে আবুয যিনাদকে অধিকাংশ মুহাদ্দিস যঈফ বলেছেন। আলী ইবনুল মাদীনী বলেছেন, كان عند أصحابنا ضعيفا তিনি আমাদের উস্তাদগণের দৃষ্টিতে যঈফ ছিলেন। ইমাম আহমদ বলেছেন, ضعيف الحديث তিনি হাদীস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনে মাঈন, আবু হাতেম ও নাসাঈ বলেছেন, لا يحتج بحديثه তার হাদীস প্রমাণস্বরূপ পেশ করা যায় না।
এ ছাড়াও আমর ইবনে আলী আল ফাল্লাস, যাকারিয়া আস সাজী, ইবনে আদী, জাওযাকানী, ইবনে হিব্বান ও ইবনুল জাওযী তার দুর্বলতার ব্যাপারে স্ব স্ব মত প্রকাশ করেছেন।
যাহাবী রহ. অবশ্য তাকে মধ্যম স্তরের হাসানুল হাদীস আখ্যা দিয়েছেন। আর সেটিকেই গ্রহণ করে নিয়েছেন আলবানী সাহেব। তবে তিনি একথাও বলেছেন, فان عبد الرحمن مختلف فيه والمتقرر أنه حسن الحديث إذا لم يخالف কেননা আব্দুর রহমানের ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে। সিদ্ধান্তের কথা হলো, তিনি হাসানুল হাদীস (যার হাদীস হাসান মানের হয়), যদি না কারো বিরোধী বর্ণনা পেশ করেন। (সহীহা, নং ২৯২৪)
দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মতে আব্দুর রহমান দুর্বল হওয়ার কারণে এ হাদীসটি যঈফ। আবার অন্যদের বর্ণনা থেকে তার বর্ণনাটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণেও এটি যঈফ।
আলবানী সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকেও এটি যঈফ। যদিও তিনি এ বক্তব্যের বাইরে গিয়ে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
উল্লেখ্য যে, ইমাম আহমদ রহ. স্পষ্টভাবে আব্দুর রহমানকে দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। সুতরাং খাল্লালের ইলাল গ্রন্থে আহমদ কর্তৃক এ হাদীসকে সহীহ আখ্যা দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে তা মূলত দুআ ও যিকির-আযকার সম্বলিত হাদীসটি সম্পর্কে হবে। হাত উত্তোলন করা সম্বলিত হাদীসটি সম্পর্কে নয়। হযরত কাশ্মিরী রহ.ও এমত গ্রহণ করেছেন। (দ্র. নায়লুল ফারকাদাইন, পৃ. ৬০)
এবার লক্ষ করুন, রফয়ে ইয়াদাইনের মত অবলম্বনকারী উছমান দারিমী কিভাবে এই দুর্বল বর্ণনাটি দ্বারা নাহশালী কর্তৃক বর্ণিত ( যে নাহশালী অধিকাংশ মুহাদ্দিসের নিকট বিশ্বস্তও বটে) হযরত আলী রা.এর আমল সংক্রান্ত হাদীসটি (যা হানাফীদের দলিল)কে খ-ন করার চেষ্টা করেছেন। আর আমাদের লা-মাযহাবী বন্ধুরা অন্ধ অনুসরণ করে সেটাকেই এখনো উদ্ধৃত করে বেড়াচ্ছেন। এটা বড়ই লজ্জাজনক।
এ হলো চার খলীফা থেকে বর্ণিত হাদীসের অবস্থা। সুতরাং গালিব সাহেবসহ লা-মাযহাবী বন্ধুরা মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য ঢালাওভাবে এগুলোকে সহীহ বললেও প্রকৃত অবস্থা তাই, যা উপরে তুলে ধরা হলো।
সবশেষে মুযাফফর বিন মুহসিন শাহ ওয়ালীউল্লাহ রহ.এর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি রফয়ে ইয়াদাইনের আমলকারী সম্পর্কে বলেছেন, সে আমার নিকট অধিক প্রিয়। কেননা এ হাদীসের সংখ্যাও বেশি আবার তুলনামূলক মজবুতও বেশি।
কিন্তু লেখক এখানে ধোঁকা দিয়েছেন। শাহ সাহেবের পুরো বক্তব্য উদ্ধৃত করেন নি। শাহ সাহেব বলেছেন,
وهو من الهيئات التي فعلها النبي صلى الله عليه وسلم مرة وتركها أخرى والكل سنة وأخذ بكل جماعة من الصحابة والتابعين ومن بعدهم وهذا أحد المواضع التي اختلف فيها الفريقان أهل المدينة وأهل الكوفة ولكل واحد أصل أصيل والحق عندي في ذلك أن الكل سنة ونظيره الوتر بركعة واحدة أوبثلاث. والذي يرفع أحب إلي ممن لا يرفع فإن أحاديث الرفع أكثر وأثبت غير أنه لا ينبغي لإنسان في مثل هذه الصور أن يثير على نفسه فتنة عوام بلده.
অর্থাৎ রফয়ে ইয়াদাইনের আমল নবী সা. কখনো করেছেন, কখনো ছেড়ে দিয়েছেন। উভয় আমলই সুন্নত। সাহাবা তাবিঈন ও পরবর্তীগণের এক এক জামাত একেকটিকে গ্রহণ করেছেন। এটা সেইসব বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, যেসব বিষয়ে মদীনাবাসী ও কূফাবাসীর মধ্যে দ্বিমত রয়েছে, এবং প্রত্যেকের মতের পক্ষে মজবুত ভিত্তি রয়েছে। আমার দৃষ্টিতে এক্ষেত্রে সত্য হলো উভয় আমলই সঠিক। এর নজির হলো, এক রাকাত বা তিন রাকাত বেতের।
তবে যে ব্যক্তি রফয়ে ইয়াদাইন করে সে আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। কেননা এ ব্যাপারে হাদীসও বেশি। সেগুলো মজবুতও অধিক। তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে কারো জন্য উচিত হবে না, নিজের বিরুদ্ধে তার শহর বা দেশের জনগণের মধ্যে ফেতনা উসকে দেওয়া। (দ্র. ২/১৬)
মুযাফফর বিন মুহসিনগণ কি শাহ সাহেবের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন? হলে এত ফেতনা ছড়াচ্ছেন কেন? শাহ সাহেবের মতো উভয় আমলকে সুন্নত বলারও কি সৎসাহস হবে তার?
জালিয়াতির আরেক চিত্র
আল্লামা আলবানী একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত বুখারী শরীফের টীকায় আহসানুল্লাহ বিন সানাউল্লাহ এ মাসআলায় প্রায় আঠার পৃষ্ঠা কলমবন্দ করেছেন। তথ্য বিকৃতি, জালিয়াতি, সাহাবী-তাবিঈ ও অন্যান্য মনীষীগণের নাম ও কিতাবের নামের বিকৃতিতে ভরা এই আঠার পৃষ্ঠা। নমুনা হিসাবে এখানে কিছু তুলে ধরা হলো।
১
রফয়ে ইয়াদায়নের পক্ষের হাদীসগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে ১ নম্বরে ইবনে উমর রা. বর্ণিত ও বুখারী-মুসলিমসহ বহু হাদীসগ্রন্থে উদ্ধৃত হাদীসদুটি তুলে ধরার পর ২ নম্বরে লেখক বলেছেন, উপরোক্ত হাদীসটি বায়হাকীতে বর্ধিতভাবে বর্ণিত আছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ স. মহান আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভ অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত সর্বদাই উক্ত নিয়মেই সলাত আদায় করতেন (অর্থাৎ তিনি আজীবন উক্ত তিন সময়ে রফউল ইয়াদাইন করতেন।) (বায়হাকী, হিদায়াহ দিরায়াহ, ১/১১৪, ইমাম বুখারীর উস্তাদ আলী ইবনুল মাদীনী রহ. বলেন, এ হাদীস আমার নিকট সব উম্মাতের উপর হুজ্জাত বা দলীলস্বরূপ। (পৃ. ৫১৬)
এখানে এই জালিয়াতি করা হয়েছে যে, আলী ইবনুল মাদীনীর মন্তব্যটি প্রথম হাদীসটি সম্পর্কে। অথচ তিনি এটি দ্বিতীয় হাদীসটির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। এতে করে পাঠক মনে করবেন, এ হাদীসটিও সহীহ। অথচ এটি একটি জাল হাদীস। পেছনে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
২
রফউল ইয়াদায়ন সম্পর্কে হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ আলেমগণের অভিমত শিরোনামে ১ নম্বরে তিনি লিখেছেন, মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহ.) বলেন, সলাতে রুকু’তে যাওয়ার সময় ও রুকু’ থেকে উঠার সময় দু’হাত না তোলা সম্পর্কে যেসব হাদীস রয়েছে সেগুলো সবই বাতিল। তন্মধ্যে একটিও সহীহ নয়। (মাওযু’আতে কাবীর, পৃ. ১১০)
এখানে এই জালিয়াতি করা হয়েছে যে, একথাগুলো আসলে মোল্লা আলী কারীর নয়। বরং হাফেয ইবনুল কায়্যিমের, মোল্লা আলী কারী তা উল্লেখ করার পর খ-ন করেছেন। মনে হচ্ছে, এই লেখক কারী সাহেবের কিতাবটি দেখেন নি, অন্য কারো পুস্তক থেকে নকল করে দিয়েছেন।
৩
একই শিরোনামে ২ নম্বরে তিনি লিখেছেন, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রহ.) রুকুর পূর্বে রফউল ইয়াদাইন করার ব্যাপারে ইমাম আবূ হানীফা সম্পর্কে লিখেছেন, ইমাম আবূ হানীফা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তা ত্যাগ করলে গুনাহ হবে। (উমদাতুল কারী, ৫/২৭২) এও এক জালিয়াতি। পাঠকের অবগতির জন্য উমদাতুল কারী গ্রন্থের আরবী পাঠ এখানে তুলে ধরা হলো :
وفي ( التوضيح ) ثم المشهور أنه لا يجب شيء من الرفع وحكى الإجماع عليه وحكى عن داود إيجابه في تكبيرة الإحرام وبه قال ابن سيار من أصحابنا وحكي عن بعض المالكية وحكي عن أبي حنيفة ما يقتضي الإثم بتركه
৪
অর্থাৎ তাওযীহ গ্রন্থে বলা হয়েছে, প্রসিদ্ধ মত হলো কোন রফাই জরুরী নয়। এ ক্ষেত্রে ইজমাও উল্লেখ করা হয়েছে। দাউদ থেকে বর্ণিত আছে যে, তাকবীরে তাহরীমার সময় রফা করা জরুরী। আমাদের ফকীহগণের মধ্যে ইবনু সাইয়্যার এমতটিই অবলম্বন করেছেন। কোন কোন মালেকী থেকেও একথা বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আবু হানীফা থেকে এমন কথা বর্ণিত হয়েছে যা থেকে বোঝা যায় এটা ত্যাগ করলে গুনাহ হবে। (উমদাতুল কারী, ৫/২৭২)
বোঝাই যাচ্ছে, ইমাম আবূ হানীফা উক্ত কথা বলে থাকলে তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত তোলা সম্পর্কে বলেছেন।
৫
উক্ত শিরোনামেই আব্দুল হাই লক্ষণৌভীর বরাতে ৭ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক, সুফিয়ান সাওরী এবং শুবা বলেন, ইসাম ইবনু ইউসুফ মুহাদ্দিস ছিলেন। সেজন্য তিনি রফউল ইয়াদাইন করতেন। (আল ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ, পৃ. ১১৬)
এও একটি মারাত্মক জালিয়াতি। ইবনুল মুবারক, সুফিয়ান ও শোবা আদৌ একথা বলেন নি। যিনি বলেছেন তিনিও এভাবে কথাটি বলেন নি। পাঠকের অবগতির জন্য আল ফাওয়াইদুল বাহিয়্যার মূল আরবী পাঠ তুলে ধরা হলো :
وفي طبقات القاري : عصام بن يوسف روى عن ابن المبارك والثوري وشعبة وكان صاحب حديث يرفع يديه عند الركوع وعند رفع الرأس منه اهـ
অর্থাৎ মোল্লা আলী কারীর আত তাবাকাত গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ’ইসাম ইবনে ইউসুফ হাদীস বর্ণনা করেছেন ইবনুল মুবারক, (সুফিয়ান) ছাওরী ও শোবা থেকে। তিনি হাদীসবিদ ছিলেন। রুকুর সময় ও রুকু থেকে ওঠার সময় তিনি রফয়ে ইয়াদাইন করতেন।
৬
একই শিরোনামে ১৩ নম্বরে বলা হয়েছে, মুফতী আমিমুল ইহসান লিখেছেন, যারা বলে রফউল ইয়াদাইন করার হাদীস মানসূখ, আমি বলি তাদের একটি মাত্র দলীল (অর্থাৎ ইবনু মাসউদের হাদীস), দ্বিতীয় কোন দলীল নেই। (ফিকহুস সুন্নাহ ওয়াল আসার, পৃ. ৫৫)
এখানেও ধোঁকার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। মুফতী সাহেব এখানে তিন জায়গা ছাড়াও যেসব হাদীসে আরো অন্যান্য স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করার উল্লেখ এসেছে সেসব হাদীস উল্লেখপূর্বক বলেছেন,
قلت : ومن ذهب إلى نسخه فليس له دليل إلا مثل دليل من قال : لا يرفع يديه في غير تكبيرة الافتتاح
অর্থাৎ আমি বলব, যারা এর (অর্থাৎ তিন স্থান ছাড়া অন্যান্য স্থানের রফয়ে ইয়াদাইন) মানসুখ বা রহিত হওয়ার মত পোষণ করেন, তাদের দলিলও ঠিক তেমন, যেমন শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রফা করার প্রবক্তাদের দলিল।
মুফতী সাহেব একটি দলিলের কথা বলবেন কী করে? তিনি নিজেই তো শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় রফা করার পাঁচ-সাতটি হাদীস উল্লেখ করেছেন।
৭
নামের ক্ষেত্রে তিনি বারা রা.কে বারাআ, কাতাদা ইবনে রিবঈকে রব্য়ী, আতা ইবনে আবূ রাবাহকে রিবাহ, নুমান ইবনে আবু আইয়্যাশকে আয়াশ, কায়সকে কায়িস, ইসহাক ইবনে রাহাওয়ায়হ্কে রাহওয়াহ, ইবনে মাঈনকে মুঈন, মিকসামকে মুকসিম, ইবনে দুকায়নকে দাকীন, যুহরীকে যুহুরী, মুহারিবকে মুহাররব, সাওওয়ারকে সিওয়ার ও ’আব্বাদকে উব্বাদ বানিয়ে রিজাল শাস্ত্র বিষয়ে বড় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
একইভাবে কিতাবের নামের ক্ষেত্রে বায়হাকীর খিলাফিয়্যাতকে খুলাফিয়াত, হাকেমের মাদখালকে মুদখাল নামে উল্লেখ করেছেন। ৫১৭ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, যাহাবীর শারহু মুহাযযাব। অথচ এ নামে যাহাবী’র কোন কিতাব নেই। শারহুল মুহাযযাব হলো ইমাম নববীর লেখা। ৫৩৪ পৃষ্ঠার শুরুতে তিনি লিখেছেন, আনাস বর্ণিত হাদীসটি হাকিম মুদখাল গ্রন্থে বর্ণনার পর বলেন, হাদীসটি মাওযূ (বানোয়াট)। তিনি বাদরুল মুনীর গ্রন্থে বলেন, এর সানাদে মুহাম্মাদ ইবনু উকাশাহ রয়েছে। অথচ আল বাদরুল মুনীর হাকেমের রচনা নয়, এটি ইবনুল মুলাক্কিনের রচনা। তবুও এরা আহলে হাদীস!