লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
ইংরেজদের রাজত্ব ও আহমদ রেজা
حکومت برطانیہ مسلمانان ہندوستان کے واسطے رحمت خداوندی کی حیثیت رکہتی ہے، اس حکومت نے یہاں کے تمام فرقوں میں امن پیدا کرکے ان پر احسان عظیم کیا ہے، لہذا اس کے خلاف جہاد و قتال کس طرح جائز هو سكتا هے؟ (تلخيصرسالةالأمارةوالجهادمصنفةاحمدرضاخا
অনুবাদ- ইংরেজ শাসন হিন্দুস্তানের মুসলমানদের জন্য আল্লাহর রহমাত। এ শাসন এখানের সকল দলের মাঝে নিরাপত্বা বিধান করে বড় এহসান করেছে। তাই তাদর বিরুদ্ধে জিহাদ ও সংগ্রাম করা কিছুতেই জায়েজ নয়। {আহমাদ রেজা খাঁ রচিত তালখীসু রিসালাতুল আমারাতুল জিহাদ}
ইংরেজদের আমলে যখন শাহ আব্দুল আজীজ রহঃ ইংরেজদের আধিপত্বের কারণে সর্বাত্মক জিহাদের জন্য ভারতবর্ষকে দারুল হরব তথা যুদ্ধ কবলিত দেশ আখ্যা দিয়ে সবাইকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে উদ্ভুদ্ধ করছিলেন। [উল্লেখ্য ইসলামের পরিভাষায় দারুল হরবে জুমআর নামায পড়া সহীহ নয়। বরং শত্র“ বিতাড়িত করে স্বাধীন করার পর জুমআর পড়বে।] তখন বেদআতিদের প্রতিষ্ঠাতা আহমাদ রেজা খাঁ বেরেলবী কি ফাতওয়া দেয় দেখুন-
ہندستان بفضلہ تعالی دار الاسلام ہے یہاں کے شہروں میں جمعہ صحیح ہے (احكام شريعت- 151
অনুবাদ- হিন্দুস্তান আল্লাহর রহমাতে দারুল ইসলাম তথা ইসলামী রাষ্ট্র। এখানকার শহরে জুমআর নামায পড়া সহীহ আছে। {আহকামে শরীয়ত-২/১৫১, আহমদ রেজা}
হুক্কার পানি দিয়ে অজু
যদি আবে মুতলাক তথা স্বাভাবিক পানি না পাওয়া যায়, তাহলে হুক্কার পানিই আবে মুতলাক তথা স্বাভাবিক পানি। এটা থাকা অবস্থায় তায়াম্মুম করা জায়েজ নয়। {আহকামে শরীয়ত-৩/২৪৪, আহমদ রেজা} যদি তায়াম্মুম করে তাহলে নামায বাতিল।
নামাযে স্বপ্নদোষ
নামাযে স্বপ্নদোষ হলে যদি সালাম ফিরানো পর্যন্ত বীর্য বের না হয়, তাহলে নামায হয়ে যাবে। {ফাতাওয়ায়ে রেজাইয়্যাহ-৬২, আহমদ রেজা}
নামাযে মহিলাদের দেখা
নামাযী নিজের নামাযের মাঝে নিজের অথবা বেগানা নারীর গোপনাঙ্গের ভিতরাংশে দৃষ্টি দেয় তাহলে তার নামায ভাঙ্গবে না। {ফাতাওয়ায়ে রেজাইয়্যাহ-১/৬৭, আহমদ রেজা}
আহমদ রেজা ও আউলিয়া
# ওলীদের কাছে সাহায্য চাওয়া, তাদেরকে ডাকা, তাদের সাথে সম্পর্ক করা শরীয়তের হুকুম এবং পছন্দনীয় আমল। {আলআমানু ওয়ালআলা-২৯, আহমদ রেজা}
# আমি [আহমদ রেজা] যখনই সাহায্য চাই তখন “হে গাওস”ই বলে থাকি। একবার অন্য একজন ওলীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে চাইলাম, কিন্তু আমার মুখ দিয়ে তার নাম বের হল না। বরং মুখ দিয়ে “ইয়া গাওস”ই বের হয়ে গেল। {মালফুযাত-৩০৭, আহমদ রেজা}
# ওলীরা চানতো এক সময়ে দশ হাজার শহরের দশ হাজার স্থানের দাওয়াত কবুল করে নেন। {খালেসুল ইতিকাদ-৪০, আহমদ রেজা}
# আহমদ রেজা বলে-
শায়খ আব্দুল কাদীর বলেন যে, সূর্য উদিত হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাকে সালাক করে। নতুন বছর যখন আসে, তখন সে আমাকে সালাম করে। আর আমাকে এ সংবাদ দেয় যা কিছু এ বছর হবে। নতুন সপ্তাহ যখন আসে, তখন আমাকে সালাম করে। আর বলে দেয় যা কিছু এ সপ্তাহে হবে। নতুন দিন আমাকে সালাম জানায়। আর আমাকে বলে দেয় যা কিছু সেদিন হবে। আমার কাছে নেক ও বদ আমল পেশ করা হয়। আমার চোখ লৌহে মাহফুজে নিবদ্ধ। {খালেসুল ইতিক্বাদ-৪৯, আহমদ রেজা}
# সূরায়ে লুকমানের ৩৪ নং আয়াতে যে পাঁচটি ইলমে গায়েবের কথা উল্লেখ আছে, তা শুধু রাসূল সাঃ জানেনই না, বরং তিনি যাকে চান তাকে তা দিতে পারেন। এ হিসেবে রাসূল সাঃ এর উম্মতীদের মাঝে ৭ কুতুবকে এ বিষয় জানেন। {খালেসুল ইতিক্বাদ-৫৩-৫৪, আহমদ রেজা}
# মাজারের পাশে ওলীদের রূহ উপস্থিত হয়। {আহকামে শরীয়ত-৭১, আহমদ রেজা}
# ওলীগণ মৃত্যুর পর জীবিত। তাদের কারামাত, পরিচয়, কর্মকান্ড, তাদের ফয়েজ তখনো জারী থাকে। আর আমরা গোলাম, খাদিম, মোহাব্বতকারীদের তারা সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকেন। {ফাতাওয়া রেজাইয়্যাহ-৬/২৩৬, আহমদে রেজা}
রেজাখানী বেরেলবী সব ভেড়া!
আহমদ রেজা ওসীয়ত করে বলেনঃ তোমরা সবাই মোস্তাফা সাঃ এর ভোলা-ভালা ভেড়া। ভেড়িরা আছে তোমাদের চারদিকে। {আলা হযরত বেরেলবী, বস্তুয়ী-১০৫}
বেরেলবী ওলী
ওলীগণ আরশ থেকে নিয়ে জমিনের নিচ পর্যন্ত সব দেখেন। {মালফুযাতে আহমদ রেজা-১/৭৪, আহমদ রেজা}
আহমদ রেজার পছন্দনীয় খাবার
পেঁচা খাওয়া হালাল। {ফাতাওয়া রেজাইয়্যাহ-২০/৩১২, আহমদ রেজা}
বাদুড় খাওয়া জায়েজ। {ফাতাওয়া রেজাইয়্যাহ-২০/৩১৮, আহমদ রেজা}
বেরেলবীদের ভাষায় আহমদ রেজার কুরআন অনুবাদের অপারেশন
আহমদ রেজা সাহেব কুরআনে কারীমের অনুবাদ “কানযুল ঈমান” নামে করেছেন। এ অনুবাদে তিনি অসংখ্য স্থানে মারাত্মক সব ভুল করেছেন। উসূল ও মূলনীতি এবং অভিধানের তোয়াক্কা না করে যাচ্ছেতাই অনুবাদ করেছেন। অনেক বেরেলবী রেজাখানী আলেমগণও এর বিরোধীতা করেছেন। কিছু উদারহণ নিম্নে প্রদত্ব হল-
সূরা ফাতাহ এর আয়াতের ভুল অনুবাদ
# মৌলবী আহমদ রেজা সাহেব সূরা ফাতাহ এর ২ নং ্আয়াত এর لِيَغْفِرَ لَكَ اللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ অনুবাদ করেছেনঃ যাতে তোমাদের সবার গোনাহ মাফ হয়, তোমাদের অগ্রগামীদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের। {কানযুল ঈমান, সূরা ফাতাহ-২}
রেজাখানী বেরেলবীদের পক্ষ থেকে এ অনুবাদের সমালোচনা
# এই অনুবাদ সহীহ নয়। {শরহে মুসলিম-৬/২৯৪, গোলাম রসূল সাঈদী বেরেলবী}
# আমাদের নিকট এ অনুবাদ সহীহ নয়। এ অনুবাদ কুরআনের অভিধান এবং ইতলাকাত, কুরআনের বাকরীতি এবং সহীহ হাদীসের বিপরীত। কুরআনের উপর যুক্তির হস্তক্ষেপ। {শরহে মুসলিম-৭/৩২৪-৩২৫}
# সম্পর্ক অগ্রবর্তী ও পরবর্তীদের সাথে করা হয়েছে। অথচ এটি অভিধান, কুরআনের অনেক আয়াত, হাদীস ও আসারে সাহাবা এবং ফুক্বাহায়ে কেরামের ব্যাখ্যার সম্পূর্ণ উল্টো। {শরহে মুসলিম-৭/৩৪৬}
# এ স্থানে আয়াদ দ্বারা উম্মতের মাগফিরাত সহীহ নয়। {শরহে সহীহ মুসলিম-৭৩৪৬}
# এ অনুবাদ হাদীসের সরাসরি বিপরীত। {মাগফিরাতে জাম্ব-৬, আবুল খায়ের মুহাম্মদ জুবায়ের হায়দারাবাদী}
# এখানে উম্মতের ক্ষমা উদ্দেশ্য নেয়া, দুই কারণে জায়েজ ও সহীহ নয়। {মাগফিরাতে জাম্ব-২৯, আবুল খায়ের}
# কয়েকটি হাদীসের বিরোধী এ অনুবাদ। {মাগফিরাতে জাম্ব-৬, আবুল খায়ের মুহাম্মদ জুবায়ের হায়দারাবাদী}
বেরেলবীরা আহমদ রেজা খানের বিপরীত অনুবাদ ও তাফসীর করে বলেনঃ
# যাতে আল্লাহ তাআলা আপনার অগ্র পশ্চাতের সকল খেলাফে আওলা কাজ ক্ষমা করে দেন। {আলবয়ান, সূরা ফাতাহ-২, সৈয়দ আহমদ সাঈদ কাজেমী}
# রাসূল সাঃ সগীরা, ভুল এবং খেলাফে আওলা কাজের জুলুমের স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। {মুকারারাতে কাজেমী-৩/৭৮, আহমদ সাঈদ কাজেমী}
# যাতে আল্লাহ তাআলা তোমার ধারণায় তোমার যত আগের পরের গোনাহ আছে সব কিছুকে ক্ষমা করে দেন। {কাওসারুল খাইরাত-২৩৭, আশরাফ শিয়ালয়ী}
# হে আল্লাহর প্রিয়জন! সে সমস্ত বিষয় যাকে তুমি নিকটস্থতা এবং প্রিয় হওয়ার কারণে গোনাহ মনে করছো, যা কিছু তুমি করেছো, কিংবা যা এখনো হয়নি, এ সব কিছুই ক্ষমা করে দেয়া হল। {কাওসারুল খাইরাত-২২৫}
# তোমার মাগফিরাতের ঘোষণা দুনিয়াতেই করে দিলেন। {কাওসারুল খাইরাত-৩২৪}
# ফাতহে মক্কার সময় রাসূল সাঃ কে গোনাহ মাফীর সুসংবাদ দেয়া হয়। {জাআল হক্ব, আহমদ ইয়ার খান}
# মৌলবী গোলাম দস্তগীর কাসওয়ারী স্বীয় কিতাব “তাক্বদীসুল ওকীল” এ আহমদ রেজার বিপরীত অনুবাদ লিখেছেন।
# মৌলবী নক্বী আলী খান নিজের কিতাব “আল কালামুল আওজাহ” এ আহমদ রেজার বিপরীত অনুবাদ করেছেন।
# পীর করম শাহ নিজের তাফসীর “জিআউল কুরআন” এ আহমদ রেজার উল্টো অনুবাদ করেছেন।
# মৌলবী আবু দাউদ সাদেক “রেজায়ে মুস্তাফা” এর আহমদ রেজার বিপরীত অনুবাদ করেছেন।
সূরা কাসাসের ২৭ নং আয়াতের ভুল অনুবাদ
“আমার মেয়ের মহর হিসেবে তুমি আমার বকরী চড়াও। {কানযুল ঈমান, সূরা কাসাস-২৭, আহমদ রেজা}
এ অনুবাদের সমালোচনা করে ইক্তিদার আহমদ খান লিখেনঃ
এ অনুবাদ সর্ব দিক দিয়ে অনুপযোগী। নাতো কুরআনে কারীমে এর কোন সুযোগ আছে। না এটি কোন শব্দের অনুবাদ হতে পারে। এ অনুবাদ তারও বিপরীত। এছাড়া এটি ফিক্বহে হানাফীরও বিপরীত। {তানক্বীদাতে আলাল মাতবুআত-২৯, ইক্তিদার আহমদ}