প্রচ্ছদ / কাফন-দাফন-জানাযা / মৃতের জন্য কুরআন খতম করার হুকুম কী?

মৃতের জন্য কুরআন খতম করার হুকুম কী?

প্রশ্ন

আসসালামুয়ালাইকুম ! রাইয়ান মাহমুদ খুলনা গত কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু মারা যায় এখন আমরা বাকি সব বন্ধুরা মিলে ওই বন্ধুর জন্য একটি কোরআন খতম করার উদ্যোগ নেই। এখন আমার প্রশ্ন হল মৃত ব্যক্তির জন্য ইসালে সওয়াবের নিয়তে কোরআন খতম করা বিধান কি? দলীল জানালে ভালো হবে! বিঃদ্রঃ খতম করে কোন ধরনের টাকা নেওয়া হবে না শুধু মাত্র সওয়াব পৌঁছানো উদ্দেশ্য।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

মৃতের ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করা জায়েজ আছে। এর দ্বারা ইনশাআল্লাহ মৃত ব্যক্তির কবরে এর  সাওয়াবও পৌঁছে যাবে।

عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ مَالِكِ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلَمَةَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَبَقِيَ مِنْ بِرِّ أَبَوَيَّ شَيْءٌ أَبَرُّهُمَا بِهِ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِمَا؟ قَالَ: «نَعَمْ، الصَّلَاةُ عَلَيْهِمَا، وَالِاسْتِغْفَارُ لَهُمَا، وَإِيفَاءٌ بِعُهُودِهِمَا مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِمَا، وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا، وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لَا تُوصَلُ إِلَّا بِهِمَا»

হযরত আবূ সাঈদ আসসায়েদী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদা রাসূল সাঃ এর কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় বনী সালামা গোত্রের একজন ব্যক্তি আসল। লোকটি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা মাতার ইন্তেকালের পর তাদের জন্য কোন নেক কাজ করার কি সুযোগ আছে? নবীজী সাঃ ইরশাদ করলেন, তাদের জন্য নামায পড়ে [ঈসালে সওয়াব কর] তাদের জন্য ইস্তিগফার কর। তাদের অঙ্গিকার ওয়াদাগুলো পূর্ণ কর। তাদের সম্পর্কিত আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখ। তাদের বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার কর। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৬৬৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১৪২]

عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْرَءُوهَا عِنْدَ مَوْتَاكُمْ، يَعْنِي يس»

হযরত মাকিল বিন ইয়াসা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা মৃতের নিকট কুরআন পড়। মানে সূরা ইয়াসীন পড়। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৪৪৮]

عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سُورَةُ يس اقْرَءُوهَا عِنْدَ مَوْتَاكُمْ

হযরত মাকিল বিন ইয়াসা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা মৃতের নিকট সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত কর। [মুস্তাদরাকা আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-২০৭৪, শুয়াবুন ঈমান লিলবায়হাক, হাদীস নং-২২৩০, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হাদীস নং-৭৩০৯, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১০৮৫৩]

عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الْعَلَاءِ بْنِ اللَّجْلَاجِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ لِي أَبِي: ” يَا بُنَيَّ إِذَا أَنَا مُتُّ فَأَلْحِدْنِي، فَإِذَا وَضَعْتَنِي فِي لَحْدِي فَقُلْ: بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللهِ، ثُمَّ سِنَّ عَلَيَّ الثَّرَى سِنًّا، ثُمَّ اقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِي بِفَاتِحَةِ الْبَقَرَةِ وَخَاتِمَتِهَا، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ ذَلِكَ

হযরত আব্দুর রহমান বিন আলা বিন লাজলাজ, তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, হে বৎস! আমি যখন মারা যাবো, তখন আমার জন্য “লাহাদ” কবর খুড়বে। তারপর আমাকে যখন কবরে রাখবে তখন পড়বে “বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ” তারপর আমার উপর মাটি ঢালবে। তারপর আমার মাথার পাশে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষাংশ পড়বে। কেননা, আমি রাসূল সাঃ থেকে এমনটি বলতে শুনেছি। [আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৪৫১, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৭০৬৮] আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেনঃ

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَرِجَالُهُ مُوَثَّقُونَ.

এ হাদীস ইমাম তাবারানী তার কাবীরে নকল করেছেন, এবং তার প্রতিটি রাবী সিকা। [মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৪২৪৩]

ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا مَاتَ أَحَدُكُمْ فَلَا تَحْبِسُوهُ، وَأَسْرِعُوا بِهِ إِلَى قَبْرِهِ، وَلْيُقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، وَعِنْدَ رِجْلَيْهِ بِخَاتِمَةِ الْبَقَرَةِ فِي قَبْرِهِ

হযরত ইবনে উমর রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তাকে আটকে রেখো না, বরং দ্রুত তাকে কবরস্ত কর। আর তার কবরের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা এবং পায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারার শেষ অংশ তিলাওয়াত কর। [আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-১৩৬১৩, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৮৮৫৪]

من صام أو صلى أو تصدق وجعل ثوابه لغيره من الأموات والأحياء جاز، ويصل ثوابها إليهم عند أهل السنة والجماعة (رد المحتار، زكريا-3/152، كرتاشى-2/243)

والأصل فيه أن الإنسان له أن يجعل ثواب عمله لغيره صلاة أو صوما أو صدقة أو قراءة قرآن أو ذكرا أو طوافا أو حجا أو عمرة أو غير ذلك عند أصحابنا للكتاب والسنة (البحر الرائق، زكريا-3/105، كويته-3/59، الهداية-1/196، الفتاوى التاتارخانية-3/648، رقم-5242)

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *