জুলুমকারীর উপর লা’নত বর্ষণ করা যাবে কি?

প্রশ্ন

লানত শব্দের বাংলা অর্থ জানতে চাই। লানত বলতে কি বুঝায় জানতে চাই।

কেউ যদি অন্য মানুষের উপর অত্যাচার জুলুম জালিয়াতি অবিচার করে, অর্থ-সম্পদ আত্বসাত লুন্ঠন করে, মানুষকে কষ্ট দেয়; কিংবা মানুষের উপর সর্বদা ক্রমাগত অত্যাচার জুলুম জালিয়াতি অবিচার করতে থাকে, মানুষের অর্থ-সম্পদ আত্বসাত লুন্ঠন করতে থাকে, মানুষকে চরম কষ্ট-দুর্ভোগ দিতে থাকে; এমন সব ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়া যাবে কিনা।

এভাবে বলা যাবে কিনা যে, তার উপর আল্লাহ্‌ গজব নাজিল হোক; তার উপর আল্লাহ্‌র লানত পড়ুক।

এমন সব ব্যক্তির ধ্বংস কামনা করা যাবে কিনা বা তাদের ধ্বংসের জন্য দুয়া করা যাবে কিনা। জানাবেন প্লিজ।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

লা’নত বলা হয়, কাউকে আল্লাহর রহমাত থেকে বঞ্চিত হবার বদদুআ করা।

আমরা বাংলায় এটাকে “অভিশাপ” বলে থাকি।

নির্দিষ্ট কাউকে ‘লা’নত’ করতে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা আসছে।

তবে আমভাবে কোন খারাপ কাজের উপর লা’নত করা জায়েজ আছে। যেমন কাফেরদের উপর আল্লাহর লানত। ইহুদীদের উপর আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হোক।

সেইসাথে যেই কাফেরের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সে কুফরের উপর মারা গেছে, তার ব্যাপারেও সরাসরি লা’নত করা জায়েজ। যেমন ফেরাউনের উপর লা’নত। আবু জাহালের উপর লা’নত এভাবে বলা যাবে।

কিন্তু কোন মুসলমানকে তার গোনাহের কারণে সরাসরি লা’নত করা জায়েজ নয়।

তবে জালেমের উপর আল্লাহর লা’নত এভাবে বলা যাবে।

কিন্তু সরাসরি বাহ্যিক ঈমানদার ব্যক্তিকে লা’নত করা যাবে না।

  عَنْ ‌سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا تَلَاعَنُوا ‌بِلَعْنَةِ ‌اللهِ وَلَا بِغَضَبِ اللهِ وَلَا بِالنَّارِ (سنن ابى داود، رقم-4906، سنن الترمذى، رقم-1976)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْسَ المُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلَا اللَّعَّانِ وَلَا الفَاحِشِ وَلَا البَذِيءِ (سنن الترمذى، رقم-1977)

(وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تَلَاعَنُوا) : بِحَذْفِ إِحْدَى التَّاءَيْنِ (‌بِلَعْنَةِ ‌اللَّهِ) ، أَيْ: لَا يَلْعَنُ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، فَلَا يَقُلْ أَحَدٌ لِمُسْلِمٍ مُعَيَّنٍ عَلَيْكَ لَعْنَةُ اللَّهِ مَثَلًا (وَلَا بِغَضَبِ اللَّهِ) ، بِأَنْ يَقُولَ غَضَبُ اللَّهِ عَلَيْكَ (وَلَا بِجَهَنَّمَ) : بِأَنْ يَقُولَ: لَكَ جَهَنَّمُ أَوْ مَأْوَاكَ. (وَفِي رِوَايَةٍ: وَلَا بِالنَّارِ) . بِأَنْ يَقُولَ أَدْخَلَكَ اللَّهُ النَّارَ أَوِ النَّارُ مَثْوَاكَ، وَقَالَ الطِّيبِيُّ أَيْ: لَا تَدْعُوَا النَّاسَ بِمَا يُبْعِدُهُمُ اللَّهُ مِنْ رَحْمَتِهِ إِمَّا صَرِيحًا كَمَا تَقُولُونَ: لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ أَوْ كِنَايَةٌ كَمَا تَقُولُونَ عَلَيْهِ غَضَبُ اللَّهِ أَوْ أَدْخَلَهُ اللَّهُ النَّارَ، فَقَوْلُهُ: لَا تَلَاعَنُوا مِنْ بَابِ الْمَجَازِ ; لِأَنَّهُ فِي بَعْضِ أَفْرَادِهِ حَقِيقَةٌ، وَفِي بَعْضِهِ مَجَازٌ، وَهَذَا مُخْتَصٌّ بِمُعَيَّنٍ ; لِأَنَّهُ يَجُوزُ اللَّعْنُ بِالْوَصْفِ الْأَعَمِّ كَقَوْلِهِ: {فَلَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْكَافِرِينَ} [البقرة: 89] ، وَبِالْأَخَصِّ قَوْلِهِ: ” «لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْيَهُودِ» ” أَوْ عَلَى كَافِرٍ مُعَيَّنٍ مَاتَ عَلَى الْكُفْرِ كَفِرْعَوْنَ وَأَبِي جَهْلٍ (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ) . وَكَذَا الْحَاكِمُ وَلَفْظُهُمْ: وَلَا بِالنَّارِ عَلَى مَا فِي الْجَامِعِ (مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح-7/3045، تحت رقم الحديث-4849)

حَقِيقَةُ ‌اللَّعْنِ الْمَشْهُورَةُ هِيَ الطَّرْدُ عَنْ الرَّحْمَةِ، وَهِيَ لَا تَكُونُ إلَّا لِكَافِرٍ، وَلِذَا لَمْ تَجُزْ عَلَى مُعَيَّنٍ لَمْ يُعْلَمْ مَوْتُهُ عَلَى الْكُفْرِ بِدَلِيلٍ وَإِنْ كَانَ فَاسِقًا مُتَهَوِّرًا كَيَزِيدَ عَلَى الْمُعْتَمَدِ، بِخِلَافِ نَحْوِ إبْلِيسَ وَأَبِي جَهْلٍ فَيَجُوزُ وَبِخِلَافِ غَيْرِ الْمُعَيَّنِ كَالظَّالِمِينَ وَالْكَاذِبِينَ فَيَجُوزُ أَيْضًا لِأَنَّ الْمُرَادَ جِنْسُ الظَّالِمِينَ وَفِيهِمْ مَنْ يَمُوتُ كَافِرًا، فَيَكُونُ ‌اللَّعْنُ لِبَيَانِ أَنَّ هَذَا الْوَصْفَ وَصْفُ الْكَافِرِينَ لِلتَّنْفِيرِ عَنْهُ وَالتَّحْذِيرِ مِنْهُ لَا لِقَصْدِ ‌اللَّعْنِ عَلَى كُلِّ فَرْدٍ مِنْ هَذَا الْجِنْسِ لِأَنَّ لَعْنَ الْوَاحِدِ الْمُعَيَّنِ كَهَذَا الظَّالِمِ لَا يَجُوزُ فَكَيْفَ كُلُّ فَرْدٍ مِنْ أَفْرَادِ الظَّالِمِينَ (رد المحتار، كتاب الطلاق، باب الرجعة، مطلب فى حكم لعن العصاة، كرتاشى-3/416، زكريا-5/49)

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল– [email protected]