লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
ভূমিকা
একজন মুসলমানের কাছে রাসূল সাঃ নিজের প্রাণের চেয়ে, নিজের সন্তানের চেয়ে, নিজের মা-বাবার চেয়ে এবং তার যাবতীয় সম্পদ থেকে প্রিয়। যদি কোন ব্যক্তির এমন মোহাব্বত না থাকে, তাহলে লোকটি প্রকৃত মুসলমানই নয়। রাসূল সাঃ হাদীসে ইরশাদ করেন-
عن أنس قال قال النبي صلى الله عليه و سلم : ( لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده وولده والناس أجمعين
অনুবাদ- হযরত আনাস রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পিতা-মাতা, এবং তার সন্তান ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মোহাব্বত করবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭৭}
নাস্তিক্যতা এক জিনিস, আর ধর্মকে কটাক্ষ্য করা, রাসূলকে গালাগাল দেয়া, অশ্লিলভাবে উপস্থাপন করা ভিন্ন জিনিস। রাসূল সাঃ কে যারা গালি দেয়, অপমানিত করে, অসম্মানজনক কথা বলে বা লিখে, সে মুরতাদ। সে তওবা না করলে হত্যা করা ইসলামের বিধান। এরকম কুলাঙ্গারের এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সৃষ্টির মাঝে যিনি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তার যে কুৎসা রটায় এমন কুলাঙ্গারের আল্লাহর এ ধরিত্রীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
এ বিধান শুধু ইসলামে নয়, রহিত ও বিকৃত ধর্ম ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মেও আছে।
তওরাতের ভাষায় মুরতাদের শাস্তি
৬,৭-দুনিয়ার এক সীমানা থেকে অন্য সীমানা পর্যন্ত তোমার কাছে বা দূরের লোকেরা যে দেব-দেবীর পূজা করে, যারা তোমার এবং তোমার পূর্বপুরুষদের অজানা সেই সব দেব-দেবীর দিকে যদি তোমার নিজের ভাই কিংবা তোমার ছেলে বা মেয়ে কিংবা প্রিয় স্ত্রী কিংবা তোমার প্রাণের বন্ধু তোমাকে একা পেয়ে বিপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে, “চল আমরা গিয়ে দেব-দেবীর পূজা করি”। ৮-তবে তার ডাকে সাড়া দিও না বা তার কথায় কান দিয়ো না। তাকে কোন দয়া দেখাবে না। তাকে রেহাই দিবে না। কিংবা তাকে রক্ষা করবে না। ৯- তাকে হত্যা করতেই হবে। তাকে হত্যা করাবার কাজে তুমি নিজের হাতেই শুরু করবে। তারপর অন্য সবাই যোগ দেবে। ১০- যিনি তোমাকে মিসর দেশের গোলামী থেকে বের করে এনেছেন তোমার সেই মাবুদ আল্লাহর দিক থেকে সে তোমাকে ফিরাবার চেষ্টা করেছে বলে বলে তাকে তুমি পাথর ছুড়ে হত্যা করবে। ১১- তাতে বনি ইসরাঈলরা সকলে সেই কথা শুনে ভয় পাবে, এবং তোমাদের মধ্যে কেউ আর এই রকম খারাপ কাজ করবে না। {বাংলা কিতাবুল মুকাদ্দাস-২৪২, তৌরাত, দ্বিতীয় বিবরণ, ১৩: ৬-১}
খৃষ্টান ধর্মেও মুরতাদের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড
মুরতাদ হওয়া ক্ষমার অযোগ্য গোনাহ। হত্যা এবং জিনাকারীর স্থলাভিষিক্ত। {এনসাইক্লোপেডিয়া, রিলিজিওন অধ্যায়, ইন্ডিয়া এডিশন, ৬ নং খন্ড}
ইংলেন্ডে এক খৃষ্টান পাদ্রি ইহুদী এক মহিলাকে বিয়ে করার জন্য স্বীয় ধর্ম ত্যাগকরার কারণে অক্সফোর্ডে তাকে ১২৩২ ঈসাব্দের ১৭ই এপ্রিল প্রকাশ্যে জ্বালিয়ে হত্যা করা হয়। { এনসাইক্লোপেডিয়া, রিলিজিওন অধ্যায়, ইন্ডিয়া এডিশন, ৬ নং খন্ড ৬৪৪পৃষ্ঠা}
কুরআনের ভাষায় নবী অবমাননার শাস্তি
কুরআনে কারীমে গুস্তাখে রাসূলের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত বর্ষিত হবে মর্মে ঘোষণা হয়েছে।
ইরশাদ হচ্ছে-
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُهِينًا [٣٣:٥٧
যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। {সূরা আহযাব-৫৭}
তারপর তাদের হত্যার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
مَلْعُونِينَ ۖ أَيْنَمَا ثُقِفُوا أُخِذُوا وَقُتِّلُوا تَقْتِيلًا [٣٣:٦١] سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلُ ۖ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا [٣٣:٦٢
অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে এবং প্রাণে বধ করা হবে। যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না। [সূরা আহযাব-৬১-৬২}
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ ۗ وَنُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٩:١١]وَإِنْ نَكَثُوا أَيْمَانَهُمْ مِنْ بَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُوا فِي دِينِكُمْ فَقَاتِلُوا أَئِمَّةَ الْكُفْرِ ۙ إِنَّهُمْ لَا أَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنْتَهُونَ [٩:١٢]أَلَا تُقَاتِلُونَ قَوْمًا نَكَثُوا أَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا بِإِخْرَاجِ الرَّسُولِ وَهُمْ بَدَءُوكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ ۚ أَتَخْشَوْنَهُمْ ۚ فَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَوْهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ [٩:١٣]
অবশ্য তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। আর আমি বিধানসমূহে জ্ঞানী লোকদের জন্যে সর্বস্তরে র্বণনা করে থাকি। আর যদি ভঙ্গ করে তারা তাদের শপথ প্রতিশ্রুতির পর এবং বিদ্রুপ করে তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে, তবে কুফর প্রধানদের সাথে যুদ্ধ কর। কারণ, এদের কেন শপথ নেই যাতে তারা ফিরে আসে। তোমরা কি সেই দলের সাথে যুদ্ধ করবে না; যারা ভঙ্গ করেছে নিজেদের শপথ এবং সঙ্কল্প নিয়েছে রসূলকে বহিস্কারের? আর এরাই প্রথম তোমাদের সাথে বিবাদের সূত্রপাত করেছে। তোমরা কি তাদের ভয় কর? অথচ তোমাদের ভয়ের অধিকতর যোগ্য হলেন আল্লাহ, যদি তোমরা মুমিন হও। {সূরা তওবা-১১-১৩}
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহঃ এ আয়াতের দ্বারা দলিল দিয়ে বলেন- যে ব্যক্তি ইসলাম বা কুরআনের বিরুদ্ধে খারাপ মন্তব্য করে, অথবা রাসূল সাঃ এর ব্যাপারে মন্দ কথা বলে ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে। {মাহাসিনুত তাওয়ীল-৫/১৪২}
হাদীসের ভাষায় গুস্তাখে রাসূলের শাস্তি
যে ব্যক্তি মুসলমান সে রাসূল সাঃ কে গালাগাল ও মন্দ বলার মাধ্যমে মুরতাদ হয়ে যায়। প্রথম রাসূল সাঃ কে মন্দ বলার কারণে, তারপর মুরতাদ হওয়ার কারণে লোকটি হত্যার যোগ্য হয়ে যায়। তাই সেসব হাদীসও নিচে উদ্ধৃত করা হল যদ্বারা মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড সাব্যস্ত হয়, এবং সেসব হাদীসও উদ্ধৃত করা হল যার দ্বারা রাসূল সাঃ কে মন্দ বলার কারণে মৃত্যুদন্ড সাব্যস্ত হয়।
১–
عن عبد الله قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( لا يحل دم امرئ مسلم يشهد أن لا إله إلا الله وأني رسول الله إلا بإحدى ثلاث النفس بالنفس والثيب الزاني والمفارق لدينه التارك للجماعة )
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মুসলমান হয়,আর সে সাক্ষ্য দেয় একথার যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, এবং একথার যে, আমি আল্লাহর রাসূল, তার রক্ত তিনটি অপরাধ ছাড়া বৈধ হবে না। এক হল সে কারো প্রাণ বধ করল, (ফলে কেসাস আবশ্যক হল) দ্বিতীয় হল বিবাহিত হওয়ার পরেও জিনা করে, তৃতীয় হল স্বীয় ধর্ম ছেড়ে দেয় এবং জামাআত ছেড়ে আলাদা হয়ে যায়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৪৮৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬৭৬}
২–
عن عكرمة قال : أتي علي رضي الله عنه بزنادقة فأحرقهم فبلغ ذلك ابن عباس فقال لو كنت أنا لم أحرقهم لنهي رسول الله صلى الله عليه و سلم ( لا تعذبوا بعذاب الله ) . ولقتلتهم لقول رسول الله صلى الله عليه و سلم ( من بدل دينه فاقتلوه )
হযরত ইকরিমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আলী রাঃ এর কাছে ধর্মত্যাগীদের উপস্থিত করা হল, তখন তিনি তাদের পুড়িয়ে ফেললেন, এ সংবাদ হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর কাছে পৌঁছল, তখন তিনি বললেন, যদি আমি হতাম, তাহলে আমি তাদের পুড়িয়ে ফেলতাম না রাসূল সাঃ এর এ নিষেধাজ্ঞা কারণে যে, “তোমরা আল্লাহর শাস্তি দিয়ে শাস্তি দিওনা”। বরং আমি তাদের হত্যা করতাম। কারণ আল্লাহর নবী সাঃ বলেছেন-“যে ব্যক্তি ধর্ম পাল্টায় তাকে হত্যা কর”। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫২১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬০৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৫৩}
৩–
قالت عائشة أما علمت أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : لا يحل دم امرئ مسلم إلا رجل زنى بعد إحصانه أو كفر بعد إسلامه أو النفس بالنفس
হযরত আয়শা রাঃ বলেন, তুমি জান না যে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, বিবাহিত জিনাকারী, অথবা মুসলমান হওয়ার পর কুফুরীকারী অথবা হত্যার কারণ ছাড়া কোন মুসলমানকে হত্যা করা জায়েজ নয়। {সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৩৪৮০, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩১৫৩}
৪–
عن أبي بردة بن أبي موسى الأشعري عن أبيه : أن النبي صلى الله عليه و سلم بعثه إلى اليمن ثم أرسل معاذ بن جبل بعد ذلك فلما قدم قال أيها الناس إني رسول رسول الله صلى الله عليه و سلم إليكم فألقى له أبو موسى وسادة ليجلس عليها فأتي برجل كان يهوديا فأسلم ثم كفر فقال معاذ لا أجلس حتى يقتل قضاء الله ورسوله ثلاث مرات فلما قتل قعد
হযরত আবু মুসা আশআরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ তাকে ইয়ামেনের গভর্ণর বানিয়ে পাঠালেন। তারপর হযরত মুআজ বিন জাবাল রাঃ কে পাঠালেন। তিনি যখন সেখানে পৌঁছলেন, তখন তিনি ঘোষণা করলেন-“আমি আল্লাহর রাসূল সাঃ এর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে দূত স্বরূপ। সেসময় হযরত আবু মুসা আশআরী রাঃ এর জন্য একটি চেয়ার দিলেন, যেন তিনি তাতে বসেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এল। যে ব্যক্তি প্রথমে ইহুদী ছিল। তারপর মুসলমান হয়েছে। তারপর আবার ইহুদী হয়ে গেছে। তখন মুআজ বিন জাবাল রাঃ বললেন, “আমি ততক্ষণ পর্যন্ত বসবো না, যতক্ষণ পর্যন্ত এ লোককে হত্যা করা হয়। আল্লাহ ও তার রাসূল সাঃ এর এটাই ফায়সালা”। একথা তিনি তিনবার বললেন। তারপর যখন তাকে হত্যা করা হল। তখন তিনি বসলেন। {সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৩৫২৯}
৫–
عن عائشة قالت : ارتدت أمرأة يوم أحد فأمر النبي صلى الله عليه و سلم أن تستتاب فإن تابت وإلا قتلت
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। ওহুদ যুদ্ধে এক মহিলা মুরতাদ হয়ে যায়, তখন রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, তাকে তওবা করানো হোক, আর যদি তওবা না করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২১, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৬৬৪৫, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১৮৭২৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৯৬০৭}
৬–
عن جابر أن امرأة يقال لها أم مروان ارتدت عن : الإسلام فأمر النبي صلى الله عليه و سلم أن يعرض عليها الإسلام فإن رجعت وإلا قتلت
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। উম্মে মারওয়ান নামের এক মহিলা মুরতাদ হয়ে গেলে রাসূল সাঃ আদেশ দেন যে, তার কাছে ইসলাম পেশ করতে, যদি সে ফিরে আসে তাহলে ভাল, নতুবা তাকে হত্যা করা হবে। {সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৬৬৪৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২২}
মুরতাদ হওয়ার ঘটনায় রাসূল সাঃ এর জমানায় শুধু মুরতাদ হওয়ার কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। বিদ্রোহ প্রমাণিত হওয়ার দরকার নেই। কারণ মুরতাদ হওয়াটাই একটি বিদ্রোহ। এমনিভাবে রাসূল সাঃ কে মন্দ বলাটাও দ্বীনের বিষয়ে বিদ্রোহ। শুধু এ কারণেই মৃত্যুদন্ড আবশ্যক হয়ে যায়। আর কোন বিদ্রোহীতা পাওয়ার দরকার নেই।
নিম্নের হাদীসগুলো লক্ষ্য করুন-
৭–
من سب نبيًّا فاقتلوه ومن سب أصحابى فاضربوه
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি নবীকে গালি দেয়, তাকে হত্যা কর। আর যে সাহাবীকে গালি দেয়, তাকে প্রহার কর। {জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২২৩৬৬, জমউল জাওয়ামে, হাদীস নং-৫০৯৭, দায়লামী, ৩/৫৪১, হাদীস নং-৫৬৮৮, আস সারেমুল মাসলূল-৯২}
অভিধানে ছব্ব (মন্দ বলা) এর অর্থ কি?
আরবী অভিধানে ছব্ব (মন্দ কথা) বলা হয় কোন বিষয়ে এমন কথা বলা, যার দ্বারা উক্ত বিষয়ে দোষ ও দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। {মেরকাত}
হাফেজ ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন-যে কথা সমাজে খারাপ ও দোষ এবং ত্র“টি হিসেবে বলা হয় তা’ই ছব্ব তথা গালি। {আস সারেমূল মাসলূল-৫৩৪}
৮–
ابن عباس أن أعمى كانت له أم ولد تشتم النبى -صلى الله عليه وسلم- وتقع فيه فينهاها فلا تنتهى ويزجرها فلا تنزجر – قال – فلما كانت ذات ليلة جعلت تقع فى النبى -صلى الله عليه وسلم- وتشتمه فأخذ المغول فوضعه فى بطنها واتكأ عليها فقتلها فوقع بين رجليها طفل فلطخت ما هناك بالدم فلما أصبح ذكر ذلك لرسول الله -صلى الله عليه وسلم- فجمع الناس فقال ্র أنشد الله رجلا فعل ما فعل لى عليه حق إلا قام গ্ধ. فقام الأعمى يتخطى الناس وهو يتزلزل حتى قعد بين يدى النبى -صلى الله عليه وسلم- فقال يا رسول الله أنا صاحبها كانت تشتمك وتقع فيك فأنهاها فلا تنتهى وأزجرها فلا تنزجر ولى منها ابنان مثل اللؤلؤتين وكانت بى رفيقة فلما كانت البارحة جعلت تشتمك وتقع فيك فأخذت المغول فوضعته فى بطنها واتكأت عليها حتى قتلتها. فقال النبى -صلى الله عليه وسلم- ্র ألا اشهدوا أن دمها هدر
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। এক অন্ধ সাহাবীর একটি উম্মে ওয়ালাদ বাদি ছিল। সে বাদিটি রাসূল সাঃ কে গালাগাল করতো। অন্ধ সাহাবী তাকে নিষেধ করেন, কিন্তু সে নিষেধ অমান্য করে, তিনি তাকে হুমকি দেন, তাতেও সে বিরত থাকে না। তিনি বলেন, একদা রাতে বাদিটি রাসূল সাঃ কে গালাগাল শুরু করে, তখন সাহাবী খঞ্জর নিয়ে তার পেটে চেপে ধরলেন। এবং জোরে চাপ দিলেন। ফলে বাদিটি মারা গেল। এমনকি বাদিটি দুই পায়ের মাঝখান দিয়ে পেটের বাচ্চা বের হয়ে যায়। বাচ্চাটি রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। সকালে বিষয়টি রাসূল সাঃ এর কাছে উপস্থাপিত হয়। তখন রাসূল সাঃ সবাইকে একত্র করে বলেন, যে এ কাজ করেছে তাকে আল্লাহর কসম ও আমার উপর থাকা তার হকের কসম দিচ্ছি সে যেন দাঁড়িয়ে যায়। তখন সেই অন্ধ সাহাবী দাঁড়ালেন। তিনি লোকদের ভীর ঠেলে কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে গেলেন। রাসূল সাঃ এর সামনে গিয়ে বসে পড়লেন। তারপর বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! সে আপনাকে গালাগাল করতো, আপনার কুৎসা রটাতো। আমি তাকে এসব করতে বাঁধা দিতাম। কিন্তু সে বিরত হতো না। তাকে হুমকি ধামকি দিতাম, তবু সে থামতো না। আর আমার হীরার টুকরোর মত দু’টি সন্তান তার গর্ভ থেকে আছে। আমি তাকে খুব ভালবাসতাম। গতরাতে সে যখন সে আপনাকে গালাগাল শুরু করে, কুৎসা বলতে থাকে, তখন আমি একটি খঞ্জর তার পেটে চেপে ধরি। তারপর তা চাপ দিয়ে তাকে হত্যা করি। তখন রাসূল সাঃ বললেন- লোকেরা! তোমরা স্বাক্ষ্যি থাক! এর প্রাণটা বেঘোরে গেল। (কোন বদলা নেয়া ছাড়া অনর্থক প্রাণ বিসর্জিত হল)। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৬৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১০৩, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১১৯৮৪, বুলুগুল মারাম, হাদীস নং-১২০৪}
বুলুগুল মারাম ফি আহাদীসিল আহকাম গ্রন্থে আল্লামা ইবনে হাজার লিখেন, অন্ধ সাহাবীর এ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, নবীজী সাঃ কে মন্দ মন্তব্যকারীকে হত্যা করে দেয়া হবে। আর মুসলমান হলে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর তার থেকে তওবা করার আবেদন করার দরকার নেই। {বুলুগুল মারাম ফি আহাদীসিল আহকাম-১৩৩}
৯–
جابر ابن عبد الله رضي الله عنهما يقول قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( من لكعب بن الأشرف فإنه قد آذى الله ورسوله ) . فقام محمد بن مسلمة فقال يا رسول الله أتحب أن أقتله ؟ قال ( نعم )
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ কাব বিন আশরাফের ব্যাপারে কে আছো? কেননা আল্লাহ ও তার রাসূলকে কষ্ট দেয়। তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি চান আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮১১}
১০–
عن أنس بن مالك رضي الله عنه : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم دخل عام الفتح وعلى رأسه المغفر فلما نزعه جاء رجل فقال إن ابن خطل متعلق بأستار الكعبة فقال ( اقتلوه )
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ যখন মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় প্রবেশ করেন,তখন রাসূল সাঃ এর মাথায় ছিল শিরস্ত্রাণ। তিনি মাথা থেকে তা খুললেন। সেসময় একজন এসে বললেন যে, ইবনে খাতাল কাবার গিলাফ ধরে বসে আছে। রাসূল সাঃ বললেন-তাকে হত্যা কর। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৭৪৯}
ইবনে খাতালকে কেন কাবার গিলাফ ধরা অবস্থায়ও রাসূল সাঃ হত্যার নির্দেশ দিলেন? আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ করে বলেন যে, লোকটি রাসূল সাঃ কে গালাগাল করত। {ফাতহুল বারী-২/২৪৮,আস সারেমুল মাসলূল-১৩৫}
১১–
عن على رضى الله عنه أن يهودية كانت تشتم النبى -صلى الله عليه وسلم- وتقع فيه فخنقها رجل حتى ماتت فأبطل رسول الله -صلى الله عليه وسلم- دمها
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। এক ইহুদী মহিলা রাসূল সাঃ কে গালাগাল করত, মন্দ কথা বলত। তখন এক ব্যক্তি তার গলা চেপে ধরে, ফলে সে মারা যায়। তখন রাসূল সাঃ তার হত্যার বদলে হত্যাকে অগ্রহণীয় সাব্যস্ত করেছেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৬৪, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৩১৫৪,}
১২–
عن البراء بن عازب قال : بعث رسول الله صلى الله عليه و سلم إلى أبي رافع اليهودي رجالا من الأنصار فأمر عليهم عبد الله بن عتيك وكان أبو رافع يؤذي رسول الله صلى الله عليه و سلم ويعين عليه الخ قال فأضربه ضربة أثخنته ولم أقتله ثم وضعت ظبة السيف في بطنه حتى أخذ في ظهره فعرفت أني قتلته
হযরত বারা ইবনে আজেব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ একদা আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাঃ কে আমীর বানিয়ে আবু রাফে ইহুদীকে হত্যা করতে পাঠালেন। আবু রাফে রাসূল সাঃ কে কষ্ট দিত এবং অন্যদের কষ্ট দিতে সাহায্য করত। আব্দুল্লাহ বিন আতিক বলেন, আমি তাকে প্রচন্ড আঘাত করলাম। কিন্তু হত্যা করতে পারিনি, তারপর তরবারীর ধারালো ডগা তার পেটে ঢুকিয়ে দিলাম এমনকি তা তার পিঠ ফুরে বেরিয়ে যায়। তখন আমি বুঝলাম যে, আমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮১৩}
এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কতিপয় লোক একাজে নিয়োগ রাখা দরকার। যারা রাসূল সাঃ কে যারাই গালাগাল করবে, অশ্লিল মন্তব্য করবে তাদের হত্যা করবে।
সাহাবাগণ কর্তৃক মুরতাদ হত্যার প্রমাণ
রাসূল সাঃ কে গালাগাল বা মন্দ বললে লোকটি মুরতাদ হয়ে যায়। মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। সাহাবাগণ কর্তৃক কতিপয় মুরতাদ হত্যার নজীর নিচে উদ্ধৃত করা হল-
১–
রাসূল সাঃ এর ওফাতের পর ইয়ামেন ও নজদে মুরতাদ হওয়ার ফিতনা প্রবল আকার ধারণ করে। অনেক লোক মুসায়লামা কাজ্জাব ও সাজ্জাহের নবুওয়ত মেনে মুরতাদ হয়ে যায়। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ ইরতিদাদের এ ফিতনারোধে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়ালেন। হযরত ইকরিমা বিন আবী জাহাল রাঃ কে সেখানে পাঠানোর সময় নসীহত করলেন যে, ومن لقيته من المرتدة بين عمان إلى حضرموت واليمن فنكل به، তথা “আম্মান থেকে হাজরামাওত এবং ইয়ামান পর্যন্ত যত মুরতাদ পাবে সবক’টিকে হত্যা করবে”। {আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৫/৩৬৩}
২–
عن سعيد بن عبد العزيز : أن أبا بكر قتل أم قرفة الفزارية في ردتها
হযরত সাঈদ বিন আব্দুল আজীজ থেকে বর্ণিত। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ উম্মে কিরফাকে মুরতাদ হওয়ার অপরাধে হত্যা করেন। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১১০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৬৬৪৯}
৩–
كتب عمرو بن العاص إلى عمر يسأله عن رجل أسلم ثم كفر ثم أسلم ثم كفر حتى فعل ذلك مرارا أيقبل منه الإسلام فكتب إليه عمر أن اقبل منه الإسلام ما قبل الله منهم اعرض عليه الإسلام فإن قبل فاتركه وإلا فاضرب عنقه”
হযরত আমর বিন আস রাঃ হযরত ওমরের কাছে লিখলেন যে, এক লোক ইসলাম গ্রহণ করে আবার কাফের হয়, তারপর আবার ইসলাম গ্রহণ করে, তারপর আবার কাফের হয়, এভাবে সে কয়েকবার করে, তার ইসলাম কি কবুল করা হবে? তখন হযরত ওমর রাঃ লিখলেন যে, যতক্ষণ আল্লাহ তাআলা তার ইসলাম গ্রহণ করেন, তুমিও তার ইসলামকে গ্রহণযোগ্য মান, তাই তুমি তার সামনে ইসলাম পেশ কর, যদি গ্রহণ করে তাহলে ছেড়ে দাও, নতুবা হত্যা কর। {কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১৪৬৭}
৪–
أن عثمان بن عفان كان يقول: “من كفر بعد إيمانه طائعا فإنه يقتل”
হযরত উসমান বলেন যে, যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর ইচ্ছেকৃত কুফরী করে, তাকে হত্যা করা হবে। {কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১৪৭০}
৫-
عن علي قال “يستتاب المرتد ثلاثا فإن عاد قتل”
হযরত আলী রাঃ বলেন, মুরতাদকে তাওবা করতে তিনবার বলা হবে, তওবা না করলে, তাকে হত্যা করা হবে। {কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১৪৭৫}
সাহাবাগণ কর্তৃক রাসূল সাঃ কে অবমানকারীদের হত্যার নজীর
১–
ইবনে খাতালের দুই বাদি ছিল, যারা রাসূল সাঃ সম্পর্কে কুৎসামূলক গান গাইতো। মক্কা বিজয়ের দিন তাদেরও হত্যা করার নির্দেশ রাসূল সাঃ দেন। {আসাহহুর সিয়ার-২৬৬, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৪/৪৯৮}
গান যদিও অন্যের বানানো, তবু গাওয়ার কারণে তাদের হত্যা করা হয়। সুতরাং যারা নিজেরাই বানিয়ে নোংরা কথা রাসূল সাঃ সম্পর্কে বলে,তাদের ব্যাপারে কি বিধান হবে তা সহজেই অনুমেয়।
২–
এমনিভাবে মক্কা বিজয়ের দিন হুয়াইরিস বিন নাকীজ নামের এক কুলাঙ্গার যে রাসূল সাঃ কে কষ্ট দিত, তাকেও হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়। {আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৪/২৯৮}
হুয়াইরিসকে হযরত আলী রাঃ হত্যা করেন। {আসাহহুস সিয়ার-২৬৪}
৩-
মদীনায় আবু ইফক নামে এক কুলাঙ্গার ছিল। সে রাসূল সাঃ সম্পর্কে কুৎসামূলক কবিতা রচনা করে, তখন রাসূল সাঃ তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলে সালেম আমের নামে একজন সাহাবী তাকে হত্যা করেন। {সীরাতে ইবনে হিশাম-৪/২৮৫}
৪–
বনী উমাইয়্যার এক কবি মহিলা ছিল। যার নাম আসমা বিনতে মারওয়ান। সে আবু ইফকের হত্যা দেখে ইসলামকে ঠাট্টা করে কবিতা রচনা করে। তখন রাসূল সাঃ তাকে হত্যার নির্দেশ দিলে উমায়ের বিন আদল আল খাতামী রাঃ তার ঘরে গিয়ে তাকে হত্যা করে আসেন। এ সংবাদ রাসূল সাঃ কে জানালে রাসূল সাঃ খুশি হয়ে বলেন- হে উমায়ের! তুমি আল্লাহ ও তার রাসূলকে সাহায্য করেছো। {সীরাতে ইবনে হিশাম-৪/২৮৬}
৫-
গুরফা বিন হারেস আল কিন্দী নামের একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি এমন ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। যার সাথে এ চুক্তি ছিল যে, তার জান-মালের হিফাজতের দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানের। বিনিময়ে সে ইসলামী রাষ্ট্রে কোষাগারে কর জমা দিত। ইসলামের পরিভাষায় যাকে জিম্মি বলা হয়। হযরত গুরফা বিন হারেস আল কিন্দী জিম্মি লোকটিকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। লোকটি জবাবে রাসূল সাঃ কে গালি দিল। হযরত গুরফা রেগে লোকটিকে সেখানেই হত্যা করে ফেলেন।
এ সংবাদ হযরত আমর বিন আস রাঃ এর কাছে পৌঁছলে তিনি গুরফাকে বললেন, এ লোকের সাথেতো আমাদের অঙ্গিকার আছে। সে হিসেবে সে তো নিরাপত্তা পাওয়ার যোগ্য। তুমি তাকে হত্যা করলে কেন?
গুরফা জবাব দিলেন- “তার সাথে আমাদের অঙ্গিকার একথার উপর নয় যে, সে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কে গালাগাল দিবে আর আমরা তার হিফাজত করবো”। {হায়াতুস সাহাবা-২/৩৫১, উর্দু এডিশন}
গুস্তাখে রাসূলের শাস্তি মৃত্যুদন্ড ইজমায়ে উম্মতের দৃষ্টিতে
কুরআন হাদীস, সীরাত ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ এবং মুজতাহিদ ইমামদের ইজমা তথা সর্বসম্মত মতানুসারে এ কথা প্রমানিত যে, রাসূল সাঃ কে গালাগালকারী, কুৎসাকারী এবং মুরতাদের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড।
আর উম্মতে মুহাম্মদীর বিগত চৌদ্দশত বৎসর যাবত কোন মুসলমান নবী অবমাননাকারীকে মুসলমানরা হত্যা না করে ছাড়েনি। কেননা রাসূল সাঃ এর সাথে গুস্তাখী করা মুরতাদ হওয়াকে আবশ্যক করে।
আল্লামা কাজী ইয়াজ রহঃ একথার উপর ইজমা হয়েছে মর্মে নকল করেন-
[ قال القاضي أبو الفضل رضي الله عنه: قد تقدم من الكتاب والسنة وإجماع الأمة ما يجب من الحقوق للنبي صلى الله عليه وسلم، وما يتعين له من بر وتوقير، وتعظيم وإكرام، وبحسب هذا حرم الله تعالى أذاه في كتابه، وأجمعت الأمة على قتل متنقصه من المسلمين وسابه، قال الله تعالى: (إن الذين يؤذون الله ورسوله لعنهم الله في الدنيا والآخرة وأعد لهم عذابا مهينا)
আল্লামা কাজী ইয়াজ রহঃ বলেন, কুরআন হাদীস ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা রাসূল সাঃ এর শানে কি কি হক রয়েছে তা প্রমানিত। এবং তাকে কতটুকু সম্মান-ইজ্জত দিতে হবে তা’ও সুনির্দিষ্ট। এ হিসেবে আল্লাহ পাক কুরআনে কারীমে রাসূলকে কষ্ট দেয়াকে হারাম করেছেন। আর উম্মত একথার উপর ইজমা তথা ঐক্যমত্বে পৌঁছেছেন যে, মুসলমানদের মাঝে যে তাঁর কুৎসা বলবে, কিংবা গালি দিবে তাকে হত্যা করা হবে। {সুবুলু হুদা ওয়ার রাশাদ-১২/২১, আশ শিফা-২/২১১}
চার ইমামের দৃষ্টিতে গুস্তাখে রাসূল সাঃ এর শাস্তি
কুরআনে কারীম ও হাদীসে রাসূল এবং আসারে সাহাবার আলোকে সমস্ত ফুক্বাহায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, রাসূল সাঃ এর শানে যে ব্যক্তি বেয়াদবী করবে, কটু কথা বলবে, নিন্দা করবে, দোষচর্চা করবে, তাহলে সে মুসলমান থাকলে মুরতাদ হয়ে হত্যা আবশ্যক হয়ে যায়।
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী রহঃ তাম্বীহুল ওলাত ওয়াল আহকামের মাঝে আল্লামা তাক্বীউদ্দীন সুবকী রহঃ কিতাব “আসসাইফুল মাসলূল আলা মান সাব্বার রাসূল সাঃ কিতাব থেকে নকল করেন-
قال الامام خاتمة المجتهدين تقى الدين ابو الحسن على بن عبد الكافى السبكى رحمه الله تعالى فى كتابه السيف المسلول على من سب الرسول صلى الله عليه وسلم، قال القاضى عياض اجمعت الامة على قتل منتقصه من المسلمين وسابه،
قال ابو بكر ابن المنذر اجمع عوام اهل العلم على من سب النبى صلى الله عليه وسلم القتل وممن قال ذالك مالك بن انس والليث واحمد واسحاق وهو مذهب الشافعى، قال عياض وبمثله قال ابو حنيفة وأصحابه والثورى واهل الكوفة والاوزعى فى المسلم، وقال محمد بن سحنون اجمع العلماء على ان شاتم النبى صلى الله عليه وسلم والمنتقص له كافر والوعيد جار عليه بعذاب الله تعالى، ومن شك فى كفره وعذابه كفر، وقال ابو سليمان الخطابى لا اعلم احدا من المسلمين اختلف فى وجوب قتله اذا كان مسلما، (رسائل ابن عابدين- ১/৩১৬)
ইমামে খাতিমাতুল মুজতাহিদীন তাক্বীউদ্দীন আবুল হাসান আলী বিন আব্দুল কাফী আস সুবকী রহঃ তার “আসসাইফুল মাসলূল আলা মান সাব্বার রাসূল সাঃ গ্রন্থে লিখেন যে, কাজী ইয়াজ বলেন, উম্মতের ইজমা একথার উপর যে, মুসলমানদের মাঝে যে ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর শানে বেয়াদবী করবে, গালাগাল করবে তাকে হত্যা করা আবশ্যক। আবু বকর ইবনুল মুনজির বলেন, সমস্ত আহলে ইলম একথার উপর একমত যে, যে ব্যক্তি রাসূল সাঃকে গালাগাল করবে, বা মন্দ বলবে তাকে হত্যা করা ওয়াজিব।
ইমাম মালেক বিন আনাস, ইমাম আবুল লাইস, ইমাম আহমাদ এবং ইমাম ইসহাক এ বক্তব্যের প্রবক্তা। আর এটাই ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মাজহাব।
আল্লামা কাজী ইয়াজ বলেন, এমনিভাবে একই মত ইমাম আবু হানীফা রহঃ হানাফী ফুক্বাহাদের, এবং ইমাম সাওরী, আহলে কুফা ও ইমাম আওজায়ী থেকে গুস্তাখে রাসূল সাঃ এর ব্যাপারে এমনটিই বর্ণিত (তাদের হত্যা করা হবে)।
ইমাম মুহাম্মদ বিন সুহনুন বলেন, ওলামায়ে কেরাম রাসূল সাঃ কে গালাগালকারী ও তার কুৎসাকারীদের কাফের হওয়ার উপর ইজমা তথা ঐক্যমত্ব হয়েছেন। আর এমন ব্যক্তির উপর আল্লাহর শাস্তি ও ধমক রয়েছে। আর যে ব্যক্তি এমন ব্যক্তির কাফের হওয়া ও শাস্তির অধিকারী হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করবে সেও কাফের।
আর ইমাম আবু সুলাইমান খাত্তাবী বলেন যে, আমি এমন কোন মুসলমানের ব্যাপারে জানি না যে, এমন ব্যক্তির হত্যার আবশ্যকতার ব্যাপারে মতবিরোধ করে। {রাসায়েলে ইবনে আবেদীন-১/৩১৬}
মোটকথা, রাসুল সাঃ এর কুৎসাকারী ও বেআদবীকারীর ব্যাপারে সমস্ত ফুক্বাহায়ে কেরাম একমত যে, এমন কুলাঙ্গার যদি স্বীয় কুফরী থেকে তওবা না করে, স্বীয় ঈমান ও বিবাহ নতুন করে না করে, তাহলে এ ব্যক্তি মুরতাদ এবং তাকে হত্যা করা আবশ্যক।
কিন্তু ফুক্বাহায়ে কেরামের মাঝে এ ব্যাপারে এখতেলাফ আছে যে, যদি সে ব্যক্তি তওবা করে,তাহলে তার থেকে হত্যার বিধান রহিত হবে কি না?
ইমাম মালেক রহঃ এবং ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর ফাতওয়া হল রাসূল সাঃ কে মন্দ বলা এটা এমন অপরাধ যে, তওবা করার পরও তার থেকে হত্যার বিধান রহিত হয় না। অনেক হানাফী ফক্বীহ ও শাফেয়ী ফক্বীহ একথার উপরই ফাতওয়া দিয়েছেন।
কিন্তু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এবং ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য হল তওবা করা ও দ্বিতীয়বার ঈমান আনার পর তার থেকে হত্যার শাস্তির বিধান রহিত হয়ে যায়। অবশ্য এসব লোকদের উপর উপযোগী শাস্তি দেয়া আবশ্যক।
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী রহঃ লিখেন যে, ইমাম সুবকী রহঃ বলেন যে, যদিও একথাকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে যে, গুস্তাখে রাসূল সাঃ তওবা করলে এবং দ্বিতীয়বার ইসলাম গ্রহণ করলে এবং ইসলামী বিধান মানার দৃঢ়তা প্রকাশ করলে তার তওবাকে গ্রহণ করা হবে এবং তাকে হত্যা করা হবে না। কিন্তু এমন ব্যক্তির ব্যাপারে আমার সন্দেহ হয় যে, সে ঈমানের মরতে পারবে কি না? কেননা রাসূল সাঃ এর সাথে বেয়াদবী বহুত মারাত্মক অপরাধ। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আত্মমর্যাবোধ অনেক কঠোর। এজন্য এ ব্যাক্তির মৃত্যুর ব্যাপারে আমার ঘোর সন্দেহ আছে যে তাকে হেদায়াত থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে। তার ঈমানকে বরবাদ করা হতে পারে, এবং হেদায়াত পাওয়ার তৌফিক নাও হতে পারে। {রাসায়েলে ইবনে আবেদীন-২/২৫১}
বিস্তারিত জানতে দেখুন–
১- হাফেজ ইবনে তাইমিয়া প্রণিত “আস সারেমুল মাসলূল আলা শাতিমির রাসূল সাঃ”।
২- আল্লামা তাক্বীউদ্দীন সুবকী রহঃ প্রণিত “আসসাইফুল মাসলূল আলা মান সাব্বার রাসূল সাঃ”।
৩- কাজী ইয়াজ রহঃ এর প্রণিত “আশ শিফা”।
৪- আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ প্রণিত তাম্বীহুল ওলাত ওয়াল আহকাম আলা শাতিমি খাইরিল আনাম”।
মুরতাদ ও গুস্তাখে রাসূলকে হত্যা করবে কে?
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এবং ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মতানুসারে তাকে হত্যা করবে রাষ্ট্রপ্রধান বা তার প্রতিনিধিরা। কিন্তু সাথে সাথে একথাও লিখেছেন যে, যদি কোন সাধারণ মানুষ তাকে হত্যা করে ফেলে তাহলে তার উপর কোন শাস্তি আসবে না। কেননা মুরতাদ হওয়ার কারণে গুস্তাখে রাসূল লোকটি প্রথমেই তার রক্তকে অন্যের জন্য হালাল করে দিয়েছে।
বাদায়েউস সানায়েতে বলা হয়েছে-
إن قتله إنسان قبل الاستتابة يكره له ذلك ولا شيء عليه لزوال عصمته بالردة (بدائع الصنائع، كتاب السير، فصل وأما بيان أحكام المرتدين)
যদি তাকে কেউ হত্যা করে তওবা করার আগেই তাহলে কাজটি মাকরূহ হলেও হত্যাকারীর উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না। কেননা মুরতাদ হওয়ার কারণে গুস্তাখে রাসূল লোকটি প্রথমেই তার রক্তকে অন্যের জন্য হালাল করে দিয়েছে। {বাদায়েউস সানায়ে-৭/১৩৪}
তবে বর্তমানে ওলামায়ে কেরাম এমতই পোষণ করেন যে, রাসূল সাঃ অবমানকারীকে রাষ্ট্রপক্ষকে চাপ দিবে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করবে। নিজের হাতে নবী অবমাননাকারীকে হত্যা করবে না। কারণ এ অনুমতি থাকলে দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে।
শেষকথা
উল্লেখিত রেফারেন্সসহ আলোচনা দ্বারা একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, রাসুল সাঃ কে যারা গালাগাল করে, কুৎসা রটায় তারা মুরতাদ। তাদের একমাত্র শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। কার্যকর করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
মক্কারর কাফেররা পর্যন্ত যে নবীজীকে আল আমীন তথা বিশ্বাসভাজন বলে মন্তব্য করতো, খৃষ্টান বাদশা নাজ্জাশীর সামনে মক্কার মুশরিকরা রাসূল সাঃ এর সম্মানহানীকর বক্তব্য দেয়ার উদ্দেশ্যে গিয়েও যেখানে রাসূল সাঃ মক্কার সবচে’ সম্ভ্রান্ত, সবচে’ নীতিবান, সবচে’ চরিত্রবান বলে মন্তব্য করেছে। সেখানে আজ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে, হাজারো পীর বুজুর্গ, লাখো আলেম ওলামার দেশে কতিপয় কুলাঙ্গাররা কি করে রাসূল সাঃ সম্পর্কে জঘন্য সব মন্তব্য করে পাড় পেয়ে যায়? রাসূল সাঃ সম্পর্কে জঘন্য মন্তব্য শুনার পর চুপ করে থেকেও যারা হাশরের ময়দানে রাসূল সাঃ এর হাতে হাউজে কাউসারের পানি পান করার লালসা করেন, রাসূল সাঃ এর শাফায়াতে হাশরের ভয়াবহ হালাত থেকে মুক্তি পেতে আশা রাখেন তাদের দেখলে হাসি পায়। এমন নিমকহারাম জাতি পৃথিবীতে আর আছে কি না মনে সন্দেহ জাগে।
আমার বাপকে গালি দিলে আমি গর্জে উঠি। মায়ের চরিত্রে কেউ কালিমা লেপন করলে আমি তার টুটি চেপে ধরি। কিন্তু যার নাম আামার কালিমার অংশ, আমার মুসলমানিত্বের অংশ, আমার ঈমান, যার নাম না বলে কবরে মুক্তি পাব না, যার সুপারিশ ছাড়া হাশরের ভয়াবহ হালাত থেকে মুক্তি পাব না, যার হাতে হাউজে কাউসারের পানি পান না করলে কলজে ফাটা কান্নায় কাতরাবো, সেই মহান নবীকে আজ কতিপয় কুলাঙ্গার গালাগাল করছে, নোংরা ভাষায় উপস্থাপন করছে বিভিন্ন লেখায়। তারপরও আমি নিশ্চুপ। আমি খুব দ্বীনদার মুসলমান?! ধিক! এই মুসলমানিত্বের! ধিক! এই স্বার্থপরতার।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সত্যিকার অর্থে রাসূল সাঃ কে ভালবাসার তৌফিক দান করুন। গুস্তাখে রাসূল কুলাঙ্গারদের আল্লাহ রাব্বুল হেদায়াত দিন, নতুবা কাব বিন আশরাফ, ইবনুল খাতাল, আবু রাফেদের মত নিকৃষ্ট মৃত্যু দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।