প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / লা-মাযহাবী বন্ধুরা! দয়া করে জবাব দেবেন কি?

লা-মাযহাবী বন্ধুরা! দয়া করে জবাব দেবেন কি?

মুফতী মনসূরুল হক্ব দা.বা.

আহলে হাদীস নামধারী লা-মাযহাবী বন্ধুরা সেই যে ১৮৭৯ সাল থেকে ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ আর রুপি-টাকার টোপসংবলিত লিফলেট প্রকাশ করে আসছেন, তার আর থামাথামি নেই; থামার লক্ষণও নেই।

পার্থক্য এতটুকু যে সেকালের দশ রুপি একালে এসে লাখের ঘর ছাড়িয়েছে। এসব লিফলেটে তারা উম্মাহর প্রথম সারির উলামায়ে কেরাম ও মাযহাবের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইমামগ ণে র প্র তি লাগামহীন বিষোদগার করে থাকে। পাশাপাশি উম্মতের সর্ববাদী দ্বীনি সিদ্ধান্ত ও ‘আমালুল মুতাওয়ারাস’ তথা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পরম্পরায় নির্দ্বিধায় পালিত বিভিন্ন আমলের প্রামাণ্যতার বিরুদ্ধে বাহারি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়।

তাদের এসব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সরলমনা সাধারণ দ্বীনদার ভাইয়েরা, যারা কোরআন-সুন্নাহয় বিশেষজ্ঞ নন দোটানায় পড়ে যান এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিভ্রান্তও হন। মুসলিম জন সাধারণের ঈমান – আমল হেফাযতের উদ্দেশ্যে তাদের লিফলেটবাজির জবাবে সর্বপ্রথম কলম দেগেছিলেন দারুল উলূম দেওবন্দের প্রথম সন্তান হযরত শাইখুল হিন্দ (রহ.)।

তাঁর লিখিত ‘আদিল্লায়ে কামিলাহ’ ও ‘ঈযাহুল আদিল্লাহ’ ওদের দাঁতই ভেঙে দেয়নি; মাি ড়-চোয়ালও অালগা করে দিয়েছিল। যার জবাব আজ ১৩৫ বছর পর্যন্তও ওরা দিতে সক্ষম হয়নি, ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত সক্ষম হবেও না।

কিন্তু ‘যার যা স্বভাব’। ওরা লিফলেটবাজি বন্ধ করেনি। সত্য প্রকাশের দায়বোধ থেকে তাই উলামায়ে কেরামও কলম বন্ধ করেননি।

সেই ধারাবাহিকতায় শুধুমাত্র কোরআন ও সহীহ হাদীস মানার দাবিদার (ইজমা, কিয়াস নয়) লা-মাযহাবী বন্ধুদের নিকট আমরা কিছু প্রশ্ন রাখছি।

প্রশ্নগুলোর সঠিক জবাব এ দেশের দ্বীনদরদি প্রতিটি মুসলমানই আন্তরিকভাবে কামনা করে।

১.

আমাদের হাদীস মানতে হবেএ বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ও সহীহ হাদীস পেশ করুন ( দয়া করে ‘সুন্নাহ’ মানার হাদীসকে ‘হাদীস’ মানার হাদীস হিসেবে চালিয়ে দেবেন না।)

২.

একটি সহীহ হাদীসের মাধ্যমে সহীহ হাদীসের সংজ্ঞা পেশ করুন।

৩.

হাদীস ও সুন্নাত কি একই জিনিস? রাসূল (সা.) আমাদের হাদীস মানতে বলেছেন, নাকি সুন্নাত মানতে বলেছেন প্রমাণসহ বলুন।

৪.

ইজমা ও কিয়াস শরীয়তের দলিল হওয়ার বিষয়টি কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। যেমন : আল্লাহ তা’আলা বলেন,

অর্থ : কারও নিকট হিদায়াতের পথ প্রকাশিত হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে আমি তাকে সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা বড় মন্দ আভাস! (সূরা নিসা, আয়াত নং ১১৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,

 

অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসূলের এবং তাঁদের , যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্বশীল। কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা পেশ করো আল্লাহ ও রাসূলের নিকট, যদি তোমরা আখিরাতে বিশ্বাস করো। এটাই উত্তম ও পরিণামে প্রকৃষ্টতর। (সূরা নিসা, আয়াত নং ৫৯ ) সুতরাং আপনারা যে ইজমা, কিয়াসকে শরীয়তের দলিল মানেন না, যার ফলে কোরআনের এসব আয়াতকে অস্বীকার করা হয়, এতে আপনাদের ঈমানের ব্যাপারে আপনাদের সিদ্ধান্ত কী?

৫.

ইজমা ও কিয়াসের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া সরাসরি কোরআন-হাদীসের ভাষ্য দ্বারা নিম্নোক্ত আধুনিক মাসআলাগুলোর সমাধান পেশ করুন।

 চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়েয আছে কি না?

 ডেসটিনি-২০০০ লিঃ জায়েয হবে কি না?

 প্রাইজবন্ড কেনা জায়েয হবে কি না?

 প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা ও লভ্যাংশ গ্রহণ করা জায়েয হবে কি না?

 বর্তমান শেয়ারবাজারে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় জায়েয হবে কি না?

 প্লাস্টিক সার্জারি করা জায়েয হবে কি না?

 বীমা-ইনস্যুরেন্স করা জায়েয হবে কি না?

 ট্রেডমার্ক বেচাকেনা জায়েয হবে কি না?

 বিমানে নামাজ পড়া জায়েয হবে কি না?

 দেশি-বিদেশি কাগজের নোট পরস্পরে কম-বেশি মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয হবে কি না?

যদি কোরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট ভাষ্য দ্বারা এর উত্তর দিতে না পারেন তাহলে

“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম”

এ আয়াতের প্রেক্ষিতে দ্বীন কিভাবে পূর্ণাঙ্গ হলো তা শুধুমাত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করুন।

৬.

আপনাদের লেখা তাফসীর-উসূলে তাফসীর, হাদীস-উসূলে হাদীস, ফিকহ ও উসূলে ফিকহের কোনো কিতাব আছে কি? থাকলে সেগুলোর নামধাম ও কোন সালে তা লেখা হয়েছে, জানিয়ে বাধিত করুন। ৭. আপনাদের দাবি হলো, আপনারা সহীহ বুখারী মানেন। তো প্রশ্ন হলো,

 ইমাম বুখারী (রহ.) তো বুখারী শরীফে তিন তালাকে তিন তালাক পতিত হওয়ার কথা বলেছেন; (হাঃ নং ৫২৫৯,) তাহলে আপনারা কেন তিন তালাকে এক তালাকের কথা বলেন?

 ইমাম বুখারী (রহ.) দুই হাত দিয়ে মুসাফাহার কথা বলেছেন (হাঃ নং ৬২৬৫) আপনারা কেন এক হাত দিয়ে মুসাফাহার কথা বলেন?

 ইমাম বুখারী (রহ.) আবু হুমাইদ আস সায়েদীর সূত্রে নবীজির নামাযের বর্ণনা দিয়েছেন (হাঃ নং ৮২৪ ) সেখানে মাত্র একবার হাত তোলার কথা আছে, তাহলে আপনারা কেন নামাযে বারবার হাত তোলেন?

 বুখারী শরীফে আছে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একই সময়ে ৯ জন বিবির সঙ্গে সংসার করেছেন, তো আপনারা কেন হাদীসের ওপর আমল করে ৯ বিবি নিয়ে সংসার করছেন না? ৮. বুখারী শরীফের সব হাদীস কি আমলযোগ্য, বিশেষ করে যেসব হাদীস নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরবর্তী স্পষ্ট নির্দেশনা দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে, যেমনÑ

 বুখারী শরীফের কিতাবুল জানায়েযের ১৩০৭ থেকে ১৩১৭ নং হাদীসসমূহ। এসব হাদীসে কাউকে জানাযা নিয়ে যেতে দেখলে সকলকে দাঁড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। অথচ এই বিধান অন্যান্য সহীহ হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। (উমদাতুল কারী ৬/১৪৬)

 ইসলামের প্রথম যুগে নামাযরত অবস্থায় কথা বলা, সালাম দেওয়া, সালামের উত্তর দেওয়াÑসবই বৈধ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই বিধান রহিত হয়ে গেছে। (সহীহ বুখারী, হাঃ নং ১১৯৯, ১২০০)

 নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিজরতের পর মদীনায় ১৬/১৭ মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামায আদায় করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই বিধান রহিত হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী, হাঃ নং ৭২৫২)

 হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত বুখারী শরীফের ২২৯, ২৩০, ২৩১, ২৩২ নং হাদীসগুলো যেখানে বীর্যপাতহীন সহবাসে গোসল ফরয না হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে,

সেগুলো স্বয়ং হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত সহীহ ইবনে হিব্বানের ১১৭৬ নং হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে, যেখানে বীর্যপাতহীন সহবাসের দ্বারাও গোসল ফরয হওয়ার কথা বলা হয়েছে। জানার বিষয় হলো, আপনারা এসব রহিত হাদীসের ওপর কিভাবে আমল করেন?

৯.

আপনারা শুধু বুখারী শরীফ মানতে চান, তাহলে বুখারী শরীফের সব হাদীস মিলিয়েই না হয় দুই রাক’আত নামায আদায়ের পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি পেশ করুন।

১০.

আপনারা নির্দিষ্ট ইমামের তাকলীদ (অনুসরণ) করাকে শিরক বলে থাকেন, তাহলে এযাবৎকাল যত বড় বড় মুহাদ্দিস হাদীস সংকলন করেছেন, তাফসীরবীদগণ তাফসীর লিখেছেন তাঁরা সকলেই তো কোনো না কোনো নির্দিষ্ট মাযহাবের অনুসরণ করেছেন, তাহলে তাঁরা সকলেই কি মুশরিক হয়ে গেছেন? আপনাদের দাবির আলোকে মাযহাব গ্রহণের শিরক করার কারণে তাঁরা যদি সত্যি সত্যিই ঈমানহারা হয়ে থাকেন, তাহলে কিভাবে আপনারা তাঁদের কিতাব থেকে হাদীসের দলিল পেশ করেন? এবং কিভাবে তাঁদের কিতাবের ভিত্তিতে কোনো হাদীসকে সহীহ, কোনো হাদীসকে যয়ীফ বলেন? এতে কি মুশরিক ও বেঈমানদের কিতাব দ্বারা দলিল দেও য়া হয় না?

0Shares

আরও জানুন

হানাফী মাযহাব মতে বুযুর্গদের কবর পাকা করার অনুমতি আছে?

প্রশ্ন আল্লাহ ওয়ালা বুযুর্গদের কবর কি পাকা করা হানাফী মাযহাব মতে জায়েজ? দয়া করে জানালে …

No comments

  1. ওরা বলদের দঢ়॥ওরা উত্তর দিতে পারবেনা

  2. ওদের কাজ সত্যকে মেনে নেওয়া নয়, বরং ওদের কাজ লিফলেটবাজি করা তাইলে ওরা জবাব দিবে কেমনে?

  3. সত্যিই! দারুন। যাযাকাল্লাহ।

  4. আহমাদ মুঈনুদ্দীন

    এযুগের নব্য ইয়াহুদিদের দালালদের আর ক্ষমতাই কতটুকু

  5. উত্তর কেমনে দিবে ?

Leave a Reply to hm mohsin Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *