প্রশ্ন
আসসালামুয়ালাইকুম। আমাদের এলাকায় আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাঙ্ক কর্তৃক
ইফতারের আয়োজন করা হয় সকল মুসল্লিদের জন্য। উনাদের মাখসাদ আল্লাহ তা’আলাই
ভাল জানেন। আমাদের এতেকাফকারী ভাইয়েরা এই দাওয়াত কবুল না করায় একটা
ফিতনার সৃষ্টি হয়। আমার প্রশ্ন হল তারা দাওয়াত কবুল না করে কি কোনো ভুল
করেছেন? আর মসজিদ কমিটি এবং ইমাম সাহেবের পক্ষ থেকে এই দাওয়াত কবুল করে
মসজিদে এর আয়োজন করা কি শরীয়তসম্মত? খুব শীঘ্রিই দলিলসহ উত্তর দিলে ভাল
হয়।
মো: আশিকুর রহমান
কেরানীগঞ্জ,ঢাকা।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
একথা দিবালোকের ন্যায় সত্য যে, বাংলাদেশের কোন ইসলামী ব্যাংকই শরয়ী মূলনীতি পূর্ণ অনুসরণ করে ব্যাংকিং করে না। বাকি তাদের সমস্ত কার্যক্রমই নাজায়েজ একথা বলা যাবে না। আম সুদী ব্যাংকের তুলনায় ইসলামী ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম উত্তম।
হারাম টাকা উপার্জনকারীর দাওয়াত কবুল করার ক্ষেত্রে কয়েকটি কথা জেনে রাখা জরুরী।যথা-
১
হারাম উপার্জনকারীর পূর্ণ রোজগারই হারাম। আর লোকটি তার হারাম টাকা দিয়েই দাওয়াত খাওয়াচ্ছে।
২
লোকটির উপার্জন হালাল ও হারামের মাঝে সংমিশ্রিত। এ দুটি উপার্জিত অর্থ এমনভাবে সংমিশ্রিত যে, একটি অন্যটি থেকে পৃথক নয়।
তবে এর মাঝে হারাম উপার্জন বেশি। আর লোকটি মিশ্রিত সে সম্পদ দিয়ে দাওয়াত তথা ইফতার করাচ্ছে।
৩
দাওয়াতকারীর হালাল উপার্জনও আছে, আবার হারাম উপার্জনও আছে। এ দুটি উপার্জিত অর্থ এমনভাবে সংমিশ্রিত যে, একটি অন্যটি থেকে পৃথক নয়। তবে তার হারাম উপার্জন কম। হালাল উপার্জন বেশি। আর লোকটি এ মিশ্রিত সম্পদ দিয়ে হাদিয়া-দাওয়াত খাওয়াচ্ছে।
৪
হারাম উপার্জনকারী হারাম উপার্জন দিয়ে দাওয়াত খাওয়াচ্ছে না। বরং কারো থেকে হালাল টাকা ধার করে বা কারো কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বা তাদের হালাল উপার্জন থেকে দাওয়াত খাওয়াচ্ছে।
প্রথমোক্ত দুই সূরতে উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দাওয়াত খাওয়া জায়েজ নয়। আর তৃতীয় সুরতে উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দাওয়াত গ্রহণ জায়েজ হলেও, না নেয়া উত্তম।
আর চতুর্থ সুরতে উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দাওয়াত গ্রহণ জায়েজ আছে।
আরেকটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন যে, ব্যাংকের সকল ইনকামই হারাম নয়।
ব্যাংকের অবস্থা এই যে, তার পূর্ণ সম্পদ কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা-
১-মূলধন। ২-সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত টাকা। ৩-জায়েজ ব্যবসার আমদানী। ৪-সুদ এবং হারাম ব্যাবসার আমদানী।
এ চারটি বিষয়ের মাঝে কেবল ৪র্থ সুরতটি হারাম। বাকিগুলো যদি কোন হারাম কাজ না হয় তাহলে মূলত জায়েজ। যেসব ব্যাংকে প্রথম ৩টি বিষয়ের লেনদেন অধিক। আর ৪র্থ বিষয়টি তথা হারাম লেনদের লভ্যাংশ কম সেসব ব্যাংকের হাদিয়া গ্রহণ দাওয়াত গ্রহণ জায়েজ।
তবে যদি উক্ত ব্যাংকের হারাম লেনদেন বেশি হয়, তাহলে উক্ত ব্যাংকের দাওয়াত গ্রহণ জায়েজ হবে না।
এখন আপনি নিজেই নির্দিষ্ট করে নিন উক্ত ব্যাংকের আর্থিক লেনদেনের কি হালাত? সেই হিসেবে আপনাদের ইফতারির দাওয়াত গ্রহণ বৈধ হবে কি না?
আমাদের জানা মতে ইসলামী ব্যাংগুলো কতিপয় শরয়ী শর্ত না মানার কারণে তাদের মাঝে সুদের সংমিশ্রণ রয়েছে। তবে তাদের বেশ কিছু জায়েজ কারবার ও কার্যক্রম রয়েছে। আমাদের সুধারণা মতে তাদের জায়েজ কার্যক্রম বেশি। তাই তাদের দাওয়াত গ্রহণ জায়েজ আছে।
তাই ইফতারী গ্রহণের ক্ষেত্রে এতটা কঠোরতা না করলেও চলবে। ইমাম সাহেব ও মসজিদ কৃর্তৃপক্ষের উপর অযাচিত চাপ প্রয়োগ করা ঠিক হবে না।
বাকি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সঠিক পদ্ধতিতে, শরয়ী মূলনীতি মেনে ব্যাংকিং করাতে উপদেশ দেয়া সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
فى الفتاوى الهندية- أهدى إلى رجل شيئا أو أضافه إن كان غالب ماله من الحلال فلا بأس إلا أن يعلم بأنه حرام ، فإن كان الغالب هو الحرام ينبغي أن لا يقبل الهدية ، ولا يأكل الطعام إلا أن يخبره بأنه حلال ورثته أو استقرضته من رجل ، كذا في الينابيع (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، كتاب الكراهية-5/342، رد المحتار-6/247
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
জাযাকাল্লাহ খাইর
Thanks a lot for sharing!