প্রশ্ন
আচ্ছা ভাই কেওকি অলসতায় নামায পরেনা এটা ভুল বললেন সে ইচ্ছে করলে নামায পরতে পারত কিন্তু সে নামায পরেনা ইচ্ছে তারা কি কাফের নয় জারা ইচ্ছে করে নামায ছেরে দেয়
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
কাউকে জোরপূর্বক নিজের যুক্তি কাফির সাব্যস্ত করার অধিকার আমাদের বা আপনাকে দেয়া হয়নি। শরীয়তের মাসআলা তার বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের থেকেই বুঝতে হবে। মুচি হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে নাক গলানো, মন্তব্য করা, কিংবা অশিক্ষিত মুর্খ হয়ে ডাক্তারী বিষয়ে পন্ডিতি করা কোনটিই ঠিক নয়। তেমনি শরয়ী বিধানাবলী সম্পর্কে অজ্ঞতা সত্বেও দু’একটি বাংলা অনুবাদ পড়ে মুজতাহিদের মত হুকুম আরোপ করে দেয়া আরো মারাত্মক ও বিপদজনক।
ইচ্ছেকৃত নামায তরক করা কবীরা গোনাহ। এতে কোন সন্দেহ নেই। এটি কুফরীর মত কাজ। কিন্তু এর দ্বারা ব্যক্তি কাফির হয় যায় না। যদি তাই হয়, তাহলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই কাফির হয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্র বলা যাবে না। বরং বলতে হবে কাফির সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্র বলতে হবে। কারণ এদেশের অধিকাংশ মানুষই নামায পড়ে না। কিছু মানুষ মাঝে মাঝে পড়ে আবার মাঝে মাঝে পড়ে না। আপনার ফাতওয়ায় তাহলে এদেশে কাফেরদের দেশ হয়ে যাচ্ছে।
আসলে বিষয়টি এমন নয়। নামায ছেড়ে দেয়া কাফেরদের মত কাজ। কিন্তু এর দ্বারা ব্যক্তি কাফির হয়ে যায় না। এক হল কাফিরের মত কাজ। আরেক হল কাফির হয়ে যাওয়া। দু’টি দুই জিনিস। যেমন একজনকে রান্না করতে দেখে আপনি বললেন লোকটি বাবুর্চির কাজ করল। এর মানে লোকটি বাবুর্চির মত কাজ করেছে। কিন্তু এর দ্বারা ব্যক্তি বাবুর্চি হয়ে যায়নি।
তেমনি নামায পরিত্যাগ করা কুফরীর মত কাজ। কিন্তু এর দ্বারা ব্যক্তি কাফির হয়ে যায় না।
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا [٤:١١٦
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না,যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা,ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। [সূরা নিসা-১১৬]
১
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ نُعَيْمٍ، قَالَ: وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مَنْ لَقِيَ اللهَ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَإِنْ زَنَى، وَإِنْ سَرَقَ ”
হযরত সালামা বিন নুআইম রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ এর একদল সাহাবা রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হয় [মৃত্যুবরণ করে] যে সে শিরক করেনি, তাহলে সে ব্যক্তি জান্নাতী হবে। যদিও সে যিনা এবং চুরি করে থাকে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮২৮৪, ২১৪৩৪, বুখারী, হাদীস নং-১২৩৭]
২
হযরত আবু জর গিফারী রাঃ থেকে একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন-
فَقَالَ: “مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، ثُمَّ مَاتَ عَلَى ذَلِكَ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ ” قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: “وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ ” قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: “وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ ” ثَلَاثًا، ثُمَّ قَالَ فِي الرَّابِعَةِ: “عَلَى رَغْمِ أَنْفِ أَبِي ذَرٍّ “
যে ব্যক্তি বলে আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তারপর সে উক্ত হালাতে ইন্তেকাল করে তাহলে সে জান্নাতী হবে। আমি বললাম, যদি সে যিনা করে এবং চুরি করে তাহলেও? রাসূল সাঃ ইরশাদ করলেন, যদিও সে যিনা করে বা চুরি করে। আমি আবার বললাম- যদি সে যিনা করে এবং চুরি করে তাহলেও? রাসূল সাঃ ইরশাদ করলেন, যদিও সে যিনা করে বা চুরি করে। এভাবে তিনবার বললাম, তখন চতুর্থবারের সময় রাসূল সাঃ বললেন, যদিও আবু জরের নাক কুঞ্চিত হয় তবু। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২১৪৬৬]
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস পরিস্কার ভাষায় প্রমাণ করছে, পাপ করার দ্বারা ব্যক্তি গোনাহগার হয়, কিন্তু ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না। সে তার পাপের শাস্তি ভোগ করে একদিন জান্নাতী হবেই ইনশাআল্লাহ।
বাকি কোন ব্যক্তি যদি নামাযকে পরিত্যাগ করে এ আক্বিদা রেখে যে, নামায পড়া ফরজ নয়। তাহলে উক্ত ব্যক্তি কাফির। এতে কোন সন্দেহ নেই।
এ প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন-
নামায না পড়লে ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়?
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।