প্রশ্ন
আস সালামু আলাইকুম
জনাব,
আমার প্রশ্নটি হলো প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম নিয়ে।
কিয়াম করা বিদআত এবং সম্মিলিত ভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে মিলাদ করাও বিদআত
এটা জানা আছে। এবং হাজির-নাযির আকীদা রাখলে তা শিরক।
কিন্তু আমার এক বন্ধু কিয়ামকে বিদআত বলে, কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে
সম্মিলিত ভাবে সমোস্বরে দুরূদ পড়া বিদআত, এটা সে মানতে নারাজ। এ বিষয়ে
আমি তাকে বুঝাই যে, প্রত্যেকে নিজেস্বভাবে দুরূদ পড়ে, ওজীফা, সূরা
ফাতিহা, ইখলাস ইত্যাদি পড়ে দুআ করার কথা বললে এবং মুহাক্কিক আলেমগণের
ফাতাওয়ার ব্যাপারে অবগত করলেও সে তা মানে নি বরং বলে যে, তাহলে কি আমাদের
পূর্বপুরুষরা ভুল করে এসেছেন ? এবং সে আমাদের আকাবীরে দেওবন্দ (রহ.) এর
কারো কারো ব্যাপারে আমাকে বলে যে, তাঁরা এমনটি করেছেন। এবং শুধু আমিই নই
হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র তার ফুফাত ভাই এ বিষয়ে তাকে বললেও সে মানতে
নারাজ।
এ বিষয়ে আলোকপাত করতে আপনার মর্জি হয়।
নিবেদক
শামীম,
উপশহর, রাজশাহী
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
উক্ত দ্বীনী ভাইয়ের এভাবে সম্মলিত দরূদের মাহফিলকে বিদআত না মনে করার মূল কারণ হল, বিদআত সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা না থাকা।
যে পদ্ধতিতে কোন ইবাদত খাইরুল কুরুনে আদায় করা হতো না, সেটিকে জরুরী মনে করে বা একমাত্র পদ্ধতি মনে করে, বা আবশ্যকীয় পদ্ধতি বানিয়ে উক্ত ইবাদত করাও বিদআতের শামিল।
তাই দরূদ পড়া যদিও উত্তম ও সওয়াবের কাজ। কিন্তু এভাবে মাহফিল করে সম্মিলিতভাবে করার বিশেষ সূরতটি খাইরুল কুরুনে ছিল না। তাই এটিকে আবশ্যকীয় বা জরুরী মনে করে করলে তা পরিস্কারই বিদআত হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই।
আল্লামা মুনাভী রহঃ লিখেছেন-
اى أنشأ واخترع وأتى بأمر حديث من قبل نفسه…… (ما ليس منه) أى رأيا ليس له فى الكتاب أو السنة عاضد ظاهر أو خفى، ملفوظ أو مستنبط (فهو رد) أى مردود على فاعله لبطلانه، (فيض القدير، رقم الديث-8333)
وضع الحدود وإلتزام الكيفيات والهيئات المعينة فى أوقات معينة لم يوجد ذلك التعين فى الشريعة، (الإعتصام-1/39)
وفيه ايضا- ومنها التزام الكيفيات والهيئات المعينة كالذكر بهيئة الإجتماع على صوت واحد واتخاذ يوم ولادة النبى صلى الله عليه وسلم عيدا، وما اشبه ذلك.. الخ (الإعتصام-1/29)
আরে উলামায়ে দেওবন্দের সবাই এটিকে বিদআত হিসেবেই ঘোষণা দিয়েছেন। কয়েকজন আকাবীর মুফতীয়ানে কেরামের নামও কিতাবের উদ্ধৃতি উল্লেখ করছি।
১-হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ। {ইমদাদুল ফাতাওয়া-৫/৩২৮-৩২৯}
২-মুফতী মাহমুদ গঙ্গুহী রহঃ। [ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-৩/১১৭-১১৮}
৩-মুফতী ইউসুফ লুধিয়ানবী রহঃ। {আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল-১/৪৪৪}
৪-মুফতী রশীদ আহমাদ লুধিয়ানবী রহঃ। {আহসানুল ফাতাওয়া-১/৩৪৭-৩৪৮}
৫-মুফতী আব্দুর রহীম লাজপুরী রহঃ। {ফাতাওয়া রহিমীয়া-২/৭২-৭৩}
এখানে মাত্র ৫জন প্রসিদ্ধ দেওবন্দী আলেমের নাম উল্লেখ করলাম। যারা পরিস্কার ভাষায় উক্ত পদ্ধতিতে দরূদ পড়াকে বিদআত বলেছেন। এরকম আরো উপস্থাপন করা যাবে। মোটকথা, উলামায়ে দেওবন্দের সর্বসম্মত মত হল, ইজতিমায়ীভাবে শোর লাগিয়ে দরূদ পড়া বিদআত।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
মাশাল্লা আপনাদের ব্যবস্থাপনা অনেক সুন্দর আল্লাহ আপনাদের পরিশ্রম সার্থক করেন।
মাশাআল্লাহ! অনেক ভালো লাগে।