প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / চার মাযহাবে বিভক্ত হওয়া এবং মাযহাব মানার কথা কোথায় আছে?

চার মাযহাবে বিভক্ত হওয়া এবং মাযহাব মানার কথা কোথায় আছে?

প্রশ্ন

ইউটিউবে মুজাফফর বিন মুহসিন সাহেবের মাযহাব বিষয়ক একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। সেখানে তিনি এক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাব বলেন,

চার মাযহাবে বিভক্ত হবার কথা কুরআন ও হাদীসের কোথায় এসেছে? মাযহাব মানতে হবে একথা কুরআন ও হাদীসের কোথায় এসেছে। কুরআন নাজিল বন্ধ হবার পর মাযহাব মানার বিষয়টি কে ফরজ করল?

এ বিষয়ে আপনাদের বিশ্লেষণ আশা করছি।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

রাসূল সাঃ এর হাদীসকে ছয় কিতাবে বিভক্ত করতে হবে এটা কখন নাজিল হয়েছে?

কুরআন সাত কিরাতে নাজিল হবার পরও এক কিরাতে সীমাবদ্ধ করার বিষয়টি কখন নাজিল হয়েছে?

মুহাদ্দিসদের বানানো পরিভাষা “সহীহ” জঈফ” ইত্যাদি তৈরী করে রাসূল সাঃ এর হাদীসকে ভাগ করার বিধান কখন নাজিল হয়েছে?

এসব প্রশ্নের উত্তর যদি মুজাফফর সাহেব জাতির সামনে উপস্থাপন করার মত সাহস প্রদান করতে পারেন, তাহলেই জাতি বুঝে যাবে তিনি কিভাবে জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন।

আরেকটি মজার কথা

মুজাফফর বিন মুহসিন সাহেব তার লিখিত “গভীর ষড়যন্ত্রের কবলে আহলে হাদীস আন্দোলন নামক বইটিতে কথিত আহলে হাদীস মতাদর্শীদের একটি বিভক্তির চিত্র উপস্থাপন করেছেন। তার একটি খানিক ঝলক হল এই যে,


জমিয়তে আহলে হাদীস আন্দোলন

আহলে হাদীস আন্দোলন বাংলাদেশ।

আহলে হাদীস তাবলীগে ইসলাম। [পৃষ্ঠা-৭]
আহলে হাদীস যুব সংঘ। [পৃষ্ঠা-৬]
জমিয়তে শুব্বানে আহলে হাদীস। [পৃষ্ঠা-৬]
জামাআতে গুরাবায়ে আহলে হাদীস।[পৃষ্ঠা-২০]
অলইন্ডিয়া আহলেহাদীস কনফারেন্স। [পৃষ্ঠা-২০]
আঞ্জুমানে আহলে হাদীস বাঙ্গলা ও আসাম। [পৃষ্ঠা-২০]
নিখিল বঙ্গ ও আসাম জমিয়তে আহলে হাদীস। [পৃষ্ঠা-২০]

এখন আমাদের প্রশ্ন হল, আল্লাহর নবীর আনীত দ্বীনকে দ্বিখন্ডিত করে কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণের নামে এভাবে দলে দলে বিভক্ত হবার নির্দেশ কবে কোথায় নাজিল হল?

সাড়ে চৌদ্দশত বছর যাবত উম্মতের ঐক্যমত্বের ভিত্তিতে চার মাযহাব অনুসারে আমলটি শরীয়তের দলীল ইজমা দ্বারা প্রমাণিত হবার পরও তার জন্য যদি সরাসরি ওহীর প্রয়োজন হয়, তাহলে ইংরেজ আমলের পর সৃষ্ট কথিত আহলে হাদীস ফিরক্বার এত দলের বিভক্তির স্বপক্ষে ওহীর প্রয়োজন নয় কেন?

আশা করি মুজাফফর সাহেব উত্তর প্রদান করবেন।

শেষ দিকে এসে চূড়ান্ত মুর্খতার পরিচয় দিয়ে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন “মাযহাব ফরজ এটি করল কে? কথাটা বলে বেশ আত্মতৃপ্তিতে ভুগতে দেখা যাচ্ছে মুজাফফর সাহেবকে।

কুরআন-হাদীস এবং আরবী সম্পর্কে তিনি কতটা অজ্ঞ এবং মুর্খ সেটি তার উক্ত প্রশ্নের মাঝে পরিস্কার হয়ে যায়। তিনি যদি কষ্ট করে একটি কুরআন ও হাদীস পড়তেন। যদি শুধুমাত্র তার গুরুদের অন্ধ তাকলীদ না করে কুরআন ও হাদীসকে আমভাবে পড়তেন, আরবীটা শিখতে পারতেন, তাহলে এমন মুর্খতা তিনি প্রকাশ করতেন না জাতির সামনে।

মাযহাব মানে কি? মাযহাব মানে পথ। আর এখানে আলোচ্য যে মাযহাব তথা পথ। সেটি হল আল্লাহর দ্বীন মানার পথ। তো আল্লাহর দ্বীন মানার পথে  চলা ফরজ একথাতো একজন সাধারণ মুসলমানও  জানে যে, সাধারণত মাযহাব বলা হয় আল্লাহর দ্বীন মানার পথকে বলা হয়। আর আল্লাহর দ্বীন মানার পথে চলা ফরজ একথা কে না জানে? কুরআনে আল্লাহর দ্বীনকে আঁকড়ে ধরতে। দ্বীনের পথে চলতে নির্দেশ এসেছে এসব কি দেখার কোন সৌভাগ্য মুজাফফর সাহেবের হয়নি?

وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ [٣١:١٥]

যে আমার অভিমুখী হয়,তার পথ অনুসরণ করবে। {সূরা লুকমান-১৫}

কুরআনেতো পরিস্কারভাবে আল্লাহ অভিমুখী ব্যক্তিদের পথ অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। আর চার মাযহাব যে, আল্লাহ অভিমুখী এটি কার অজানা? তাহলে সাধারণ মুসলমানদের জন্য মাযহাব মানা আবশ্যক নয় একথা মুর্খ ছাড়া আর কে বলতে পারে?

আল্লাহ তাআলা এসব দাজ্জাল শায়েখদের ধোকা থেকে উম্মতে মুসলিমাকে হিফাজত করুন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. ইহুদীদের দালালেরাই মুসলিম দের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে

Leave a Reply to muhammad aslam miah Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *