প্রশ্ন
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
জনাব,
আসসালামু আলাইকুম।
আহলে হক্ক মিডিয়ার সম্মানিত প্রতিনিধি, লুৎফর রহমান ফরায়যী সাহেব। আমি কারিমুল হাসান লিখন আপনাকে বিনিত ভাবে বলছি, আপনি নামাযের মধ্যে বার বার হাত উত্তলন করাকে ঘোড়ার লেজের সাথে তুলনা করেছেন। আপনার কাছ থেকে এমন ভাষার বক্তব্য কখনো আশা করিনি। আমার বিশ্বাষ আপনি অনেক মার্জিত ভাষায় বলতে পারতেন, কিন্তু আপনি তা করেনি। কেন করেননি এ প্রশ্ন আপনাকে করবোনা। কোন ভুমিকা ছাড়াই আপনাকে বলছি, আপনি এ অহেতুক বক্তব্য তুলে নিন।
পুর্বেও আপনি বলেছেন, “চুরান্ত সিদ্ধান্ত দাতা মুসতাহিত গন, নবী দঃ গন নয় ” এমন প্রচার ফেসবুকে হওয়ায় ইসলামের ভাবমুর্তী নষ্ট হচ্ছে। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এমন কথার তিব্র নিন্দা সহ সাবলীল প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি কারিমুল হাসান লিখন আবারও বলছি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। হয়তো ভাবছেন আমি এ কথা বলার কে? জেনে রাখুন, আমি মুসলিম, আমি গর্বিত, আমি বাঙ্গালী।
অনুরোধে
কারিমুল হাসান লিখন
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কারিমুল হাসান লিখন ভাইয়ের এ সুন্দর আহবানকে আমরা সাধুবাদ জানাই। সেই সাথে আমরা হাদীস ও দ্বীন সম্পর্কে ভাইটির অজ্ঞতাকে তুলে ধরে হককে গ্রহণ করারও অনুরোধ করছি। স্পষ্ট করেই বলছি- আপনার উপরোক্ত দু’টি অভিযোগই আপনি হাদীস ও দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং না জানার কারণে করেছেন। আপনার অজ্ঞতাকে আমরা খারাপ হিসেবে দেখছি না। প্রতিটি মানুষ সব কিছু বুঝে যাবে এটি সম্ভব না। বাকি হক গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে। যাইহোক আপনার দু’টি অভিযোগের জবাব দেখুন
অভিযোগ নং-১
অযথা হাত উত্তলোনকে ঘোড়ার লেজের সাথে তুলনা!
আমাদের জবাব
আপনি সম্ভবত হাদীসের কিতাবগুলো পড়ার সৌভাগ্য অর্জন করেননি। কমপক্ষে বুখারী মুসলিমের নামায অধ্যায়ও যদি পড়তেন। তাহলে আপনি এ অযথা উতলা দরদে অভিযোগটি আমাদের বিরুদ্ধে উত্থাপন করতেন না। দেখুন মুসলিমের হাদীস-
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَا لِي أَرَاكُمْ رَافِعِي أَيْدِيكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمْسٍ؟ اسْكُنُوا فِي الصَّلَاةِ»
রাসূল সাঃ আমাদের নিকট এসে বললেন, ব্যাপার কি? তোমাদের দেখছি বেয়াড়া ঘোড়ার লেজের মত করে রফয়ে ইয়াদাইন কর। নামাযে স্থির থাক। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৩০}
এ হাদীসটি পড়লে আপনি আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি আশা করি উচ্চারণ করতেন না। তুলতেন না আমাদের বিরুদ্ধে অপবাদের আঙ্গুল।
আমি আমার বয়ানে বলেছি- শুধু রফয়ে ইয়াদাইন তথা হাত তোলা কোন ইবাদত নয়। বরং এর সাথে তাকবীর হলে সেটি ইবাদতে পরিনত হয়। যেমন আমরা বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে হাত তুলি সেখানে সাথে তাকবীর বলি। তাকবীর বলার দ্বারা উক্ত হাত উত্তোলনটি ইবাদত হয়েছে। শুধু রফয়ে ইয়াদাইন তথা হাত উঠানো কোন ইবাদত নয়। আমরা ঈদের নামাযে ছয়বার হাত উঠাই। প্রতিবার হাত উঠানোর সময় তাকবীর বলি। আমরা নামাযের শুরুতে তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠাই। সে সময় তাকবীর বলি।
তো কথিত আহলে হাদীসরা যে রুকুতে যেতে আসতে হাত উঠায় সেটি কিসের ভিত্তিতে উঠায়? সেখানেতো রুকুতে যেতে আসতে তাকবীর বলা হয়ে যাচ্ছে। তথা তাকবীরে ইন্তিকালিয়া হিসেবে তাকবীরটি হয়ে গেল। তো এখন যে রুকুতে যেতে আসতে হাত উঠানো হচ্ছে সেটির সাথেতো কোন তাকবীর আর বাকি নেই। সেটিতো অযথা হাত উত্তোলন হচ্ছে। যে হাত উত্তোলনের সাথে কোন তাকবীর বাকি নেই। যে তাকবীর ছিল সেটিতো তাকবীরে ইন্তিকালিয়া হিসেবে প্রতিটি উঠাবসার তাকবীর। তো কথিত আহলে হাদীসদের রুকুতে যেতে আসতের সময়কার রফয়ে ইয়াদাইন তথা হাত উত্তোলনটি হয়ে যাচ্ছে তাকবীরহীন হাত উত্তোলন। অর্থাৎ একটি অহেতুক হাত উত্তোলন। যে অহেতুক হাত উত্তোলনকে রাসূল সাঃ বেয়াড়া ঘোড়ার লেজের সাথে তুলনা করেছেন।
আর রাসূল সাঃ এর তুলনা সম্পূর্ণই সঠিক। কারণ ঘোড়া যখন তার লেজ উঠায় তখন সে কোন তাকবীর বলে না। ঠিক তেমনি কথিত আহলে হাদীসরা যখন রফয়ে ইয়াদাইন করে রুকুতে যেতে আসতে, তখন সেটির জন্য তারা কোন তাকবীর বলে না। যেটি বলে সেটি রফয়ে ইয়াদাইনের তাকবীর নয় বরং রুকুতে যেতে আসার তাকবীরে ইন্তিকালিয়া। তাই তাদের রুকুতে যেতে আসার রফয়ে ইয়াদাইনটি বেয়াড়া ঘোড়ার লেজ উঠানোর মতই একটি অহেতুক কাজ। যার উপমা রাসূল সাঃ মুসলিম শরীফের হাদীসে প্রদান করেছেন।
আমি অধম রাসূল সাঃ এর উক্ত হাদীসটি উদ্ধৃত করায় কি দোষ করলাম? একটু বলবেন কি? রাসূল সাঃ এর হাদীস উপস্থাপন করাও অপরাধ নাকি?
অভিযোগ নং-২
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদাতা নবী নন মুজতাহিদ!
আমাদের জবাব
আমরা আগেও বলেছি এখনো বলছি যেসকল মাসআলা কুরআন ও হাদীসে অস্পষ্ট। কুরআন ও হাদীসে বাহিক্যভাবে বিপরীতমুখী, শব্দ একটি কিন্তু অর্থ একাধিক, এসকল বিষয়ের অনেক ক্ষেত্রেই রাসূল সাঃ মূল উদ্দেশ্য কোনটি তা নির্দিষ্ট করে যাননি। বরং এসব গবেষণা করে নির্ধারণ করে দিয়েছেন ফুক্বাহায়ে কেরাম তথা মুজতাহিদগণ।
যেমন সূরা বাকারার এক আয়াতে এসেছে স্বামী মৃত মহিলার ইদ্দত হল চার মাস দশদিন। আরেক আয়াতে এসেছে ইদ্দত হল এক বছর। এখন কোনটি উদ্দেশ্য? এটি পরিস্কার ভাষায় কুরআনে বলা হয়নি। এসব নির্ধারণ করেছেন ফুক্বাহায়ে কেরাম।
কুরআনে সালাত শব্দটি এক স্থানে নামায, আরেক স্থানে মাগফিরাত, আরেক স্থানে রহমাত, আরেক স্থানে দরূদ হিসেবে এসেবে। এসব পার্থক্য রাসূল সাঃ নির্দিষ্ট করে যাননি। এসব নির্ধারণ করে দিয়েছেন গবেষণা করে ফুকাহায়ে কেরাম।
যদি সব মতভেদপূর্ণ বিষয়ের সমাধান রাসূল সাঃ পরিস্কার ভাষায় করে গিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা-
আমীন আস্তে বলা আর জোরে বলা মতভেদের মাঝে আমিন কিভাবে বলতে হবে? সেক্ষেত্রে
১
আমীন আস্তেই বলতে হবে বা জোরেই বলতে হবে এটিই আমি নবীজী সাঃ এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এমন কোন কোন হাদীস আছে? থাকলে পেশ করুন।
২
ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়তেই হবে বা পড়তে হবে না আর এটিই আমি নবীজী সাঃ এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এমন কোন হাদীস আছে? থাকলে পেশ করুন।
এভাবে প্রতিটি মতভেদপূর্ণ মাসআলায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত উল্লেখ পূর্বক রাসূল সাঃ কোন হাদীস বলে থাকলে তা পেশ করে আপনি আপনার অতি ভাবমূর্তি রক্ষার হাস্যকর হালাতকে রক্ষা করুন।
আরো ভাল করে জানতে পড়ুন- মাযহাব মেনে আমীন জোরে বললে ফিতনা হয় না, কিন্তু কথিত আহলে হাদীস হয়ে জোরে আমীন বললে ফিতনা হয় কেন?
আমাদের আহবান!
আমরা আপনাদের বলি পড়াশোনার পরিধি বাড়ান। উলামায়ে হকের চেয়ে দ্বীনকে বেশি মোহাব্বত করার ভান করবেন না। আমরা বুঝ হবার পর থেকে হাদীস ও কুরআন বুকে নিয়ে চলার চেষ্টা করছি আলহামদুলিল্লাহ। কুরআন ও হাদীসই আমাদের একমাত্র পাঠ্য ছিল শিক্ষা জীবন সূচনার পর থেকে আলহামদুলিল্লাহ। তাই হুট করেই আমাদের কাছে এসে কুরআন ও হাদীসের প্রতি আপনাদের অতি মোহাব্বত ও অতি জ্ঞানের জোশ প্রকাশ না করার প্রতি বিনীত আহবান রাখছি।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
এই লোকের(কারিমুল হাসান লিখন) ফেসবুক প্রোফাইল “দৈনিক বার্তাবাহক” থেকে প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন যেন খারেজীদের সব হাদিসগুলা তাবলীগ এর উপরে লাগানো যায়!!
খারেজীদের বড় দাড়ি থাকবে এই লক্ষণ এর কারণেই সম্ভবত ইনি দাড়িও রাখেন নাই 😀 😀