প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / মাযহাব মেনে আমীন জোরে বললে ফেতনা হয় না কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ হয়ে আমীন জোরে বললে ফেতনা হয় কেন?

মাযহাব মেনে আমীন জোরে বললে ফেতনা হয় না কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ হয়ে আমীন জোরে বললে ফেতনা হয় কেন?

প্রশ্ন:

From:  আহমাদ আলী
Subject: মাযহাব

Country : Bangladesh
Mobile :

Message Body:

চার মাযহাবে বিভিন্ন মাসআলা নিয়ে মতভেদ আছে। যেমন হানাফীরা নাভির নিচে হাত বাঁধে, মালেকী হাম্বলীরা নাভির উপর হাত বাঁধে। হানাফীরা আমীন আস্তে বলে, মালেকী হাম্বলীরা জোরে আমীন বলে। এ ব্যাপারে আপনার্ কোন কিছু বলেন না। বরং বলেন যে, চার মাযহাবই ঠিক আছে। মাযহাব অনুসরণ করে নাভির উপর হাত বাঁধা ঠিক আছে। মাযহাব অনুসরণ করে জোর আমীন বলা ঠিক আছে। মাযহাব অনুসরণ করে ইমামের পিছনে কিরাত পড়া ঠিক আছে। কিন্তু একই কাজ যখন আহলে হাদীসরা করে থাকেন তখন আপনারা এটাকে ফেতনা বলেন কেন? তাদের বিরোধিতা করেন কেন? দয়া করে যৌক্তিক জবাব দিয়ে বাধিত করবেন।

জবাব:

بسم الله الرحمن الرحيم

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এর মাঝে সকল সমস্যার সমাধান নিহিত। কিন্তু অনেক বিষয়ের সরাসরি সমাধান কুরআনে কারীমে নেই। আছে উসূলী তথা মূলনীতি হিসেবে। যেটা সাধারণ মুসলমানদের  বোধগম্যের বাহিরে। যা বুঝতে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন উলুল আমর তথা জ্ঞানীদের দ্বারস্ত হতে কুরআনে কারীমের একাধিক আয়াতে হুকুম দিয়েছেন। যেমন সুরা নিসার ৫৯ নং আয়াত। সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াত ইত্যাদি।

কুরআন হাদীসের কিছু বিধান স্পষ্ট ও পরিস্কার। যে কেউ তার অনুবাদ পড়লেই বুঝতে পারবে, এবং নির্ধিদ্ধায় আমল করতে পারবে। কিন্তু কিছু বিষয় আছে অস্পষ্ট, বাহ্যিক বিরোধপূর্ণ। সে সকল বিষয়ে কোন বিষয়টি আমলযোগ্য, আর কোনটি পরিত্যাজ্য তা সাধারণ মুসলমানগণ বুঝতে সক্ষম নয়। সেই সকল অস্পষ্ট ও বাহ্যিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের সমাধান কি? এটা রাসূল সাঃ সরাসরি হাদীসে বলে যাননি।

যেমন আমীন জোরে বলা ও আস্তে বলা উভয়টিই হাদীস দ্বারা প্রমানিত। ইমামের পিছনে কেরাত পড়া ও না পড়া উভয়টি হাদীস দ্বারা প্রমানিত। নাভির উপর হাত বাঁধা ও নাভির নিচে হাত বাঁধা উভয়টি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু কোনটি বর্তমানে আমলযোগ্য? আর কোনটি করা দরকার নেই? এমন সকল বাহ্যিক বিরোধপূর্ণ মাসআলাগত সমস্যার সমাধান রাসূল সাঃ থেকে সরাসরি পাওয়া যায় না।

এসবের সমাধান করেছেন বিজ্ঞ ইমামগণ। বিশেষ করে চার ইমাম। আর একথা চার ইমামের অনুসারী সবাই বলে থাকেন যে, বিরোধপূর্ণ হাদীসে বর্ণিত মাসআলার সমাধানদাতা সরাসরি রাসূল সাঃ নয়। সমাধানদাতা হলেন ফুক্বীহগণ।

আর কথিত আহলে হাদীসদের মত হল ওসব বিরোধপূর্ণ মাসআলার সমাধানদাতা সরাসরি রাসূল সাঃ। তাই তারা মনমত একটি মতকে প্রাধান্য দিয়ে সেটা রাসূল সাঃ এর একমাত্র ও আখেরী সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দেয়। আর প্রচার করে বেড়ায় এটাই একমাত্র সুন্নাত। যেটা রাসূল সাঃ করে গেছেন। অন্য পদ্ধতিটি সুন্নাত নয়।

পক্ষান্তরে মাযহাব অনুসারীরা বলেন যে, বিরোধপূর্ণ বিষয়ের সমাধান রাসূল সাঃ থেকে সরাসরি প্রমানিত নয়। তাই আমরা মাযহাবের ইমামদের এর সমাধানদাতা হিসেবে গ্রহণ করেছি কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে পূর্ণ প্রাজ্ঞতার কারণে।

এটাই হল মৌলিক পার্থক্য অন্য মাযহাবীদের মতামত ও আমলকে ফিতনা না বলা ও কথিত আহলে হাদীসদের মতামত ও আমলকে ফেতনা বলার মাঝে।

সহজভাবে বললে বলা যায়, সকল মাযহাবীরাই বলে থাকেন বিরোধপূর্ণ মাসআলার সমাধান রাসূল সাঃ থেকে সরাসরি পাওয়া যায় না। তাই এটিই একমাত্র সুন্নাত বলা যাবে না। আর কথিত আহলে হাদীসরা মনমত একটি মত প্রাধান্য দিয়ে রাসূল সাঃ এর দিকে মিথ্যার নিসবত করে বলে যে, এটাই একমাত্র রাসূল সাঃ এর সুন্নাত। তিনি এ বিষয়ের চূড়ান্ত ফায়সালা করে গেছেন।

যেমন আমীন জোরে বলা ও আস্তে বলা রাসূল সাঃ এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু কোনটি তার শেষ আমল? এর কোন সমাধান রাসূল সাঃ থেকে নেই। তাই আমরা হানাফীরা কুরআন-হাদীস, তারীখ বিশেষজ্ঞ ইমামে আবু হানীফা রহঃ তাহকীক মেনে তার দেয়া সমাধান অনুপাতে আমীন আস্তে বলি। আর হাম্বলী মালেকীরা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ ও ইমাম মালিক রহঃ এর অনুসরণ করে আমীন জোরে বলাকে গ্রহণ করেছেন। একথা জেনে যে, এর সমাধানদাতা সরাসরি রাসূল সাঃ নয়। ফক্বীহ। আমরা হানাফীরা একই কথা বলি।

কিন্তু কথিত আহলে হাদীসরা আমীন জোরে বলে, সেই সাথে এ বিষয়েরর সমাধানদাতা সরাসরি রাসূল সাঃ কে সাব্যস্ত করে একদিকে আমীন আস্তে বলার হাদীস অস্বিকার করছে। অপরদিকে রাসূল সাঃ এর দিকে মিথ্যার নিসবত করে রাসূল সাঃ এর সাথে বেআদবী করছে। এ কারণে মাযহাব না মেনে মনমত যেকোন হাদীস অনুসরণকারী কথিত আহলে হাদীসদের আমরা বেআদব ও ফিতনা বলে থাকি।

আশা করি বিষয়টি পরিস্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. আবু সাইদ ইবন মুখতার

    মাশা’আল্লাহ্‌! চমৎকার উত্তর দিয়েছেন। 🙂