প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / ফানাফিল্লায় পৌঁছলে আর ইবাদত লাগে নাঃ এটি কি সঠিক বক্তব্য না কুফরী বক্তব্য?

ফানাফিল্লায় পৌঁছলে আর ইবাদত লাগে নাঃ এটি কি সঠিক বক্তব্য না কুফরী বক্তব্য?

প্রশ্ন

 

শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকী সত্তের সন্ধান অনুষ্ঠানে একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে ফানাফিল্লায় পেীঁছলে নামাজ রোজা লাগে না.তিনি আরো বলেন যে এটি এমন এক পর্যায় যেখানে মানুষ দুনিয়ার সবকিছু খাওয়া-দাওয়া ,আত্মীয়-স্বজন,কাপড়-চোপর ভুলে যাই ও আল্লাহ কে দেখতে পাই, উনি কি ভুলভাল বকছেন এখানে?এটি কি ভন্ডামী? ফানাফিল্লাহ বলতে তিনি কি বুঝাচ্ছেন পাগল? কিন্তু পাগল কিভাবে আল্লাহ কে দেখতে পাই?
Youtube Link:https://www.youtube.com/watch?v=gkxGsf1LbSI
বিস্তারিত জানালে খুশি হব…….

সিহাব
বাংলাদেশ

 

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ফানাফিল্লাহ বলতে যা বুঝানো হয়ে থাকে, তাহল, বান্দা আল্লাহর সাথে সম্পূর্ণ মিশে যাওয়া। [নাউজুবিল্লাহ!]

এটি একটি কুফরী আকিদা।

এমন আকিদা বিশ্বাসী ব্যক্তি মুসলমান থাকে না।

তবে কোন ব্যক্তি আল্লাহর প্রেমে পাগল হতে পারে। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। তবে সেই পাগলামী শরীয়তের কোন দলীল নয়। সেই পাগলামী অর্জন করার মেহনত করাও জায়েজ নেই।

তবে আল্লাহর মোহাব্বত পাওয়ার মেহনত করা শুধু জায়েজই নয় উত্তম। তাসাওউফের মেহনত মানেই আল্লাহকে পাওয়ার মেহনত।

হাদীসে এসেছে। যখন জিবরাঈল আঃ রাসূল সাঃ কে প্রশ্ন করেন-

قَالَ: مَا الإِحْسَانُ؟ قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ

ইহসান জি জিনিস? রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহ তাআলার ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছো। যদি দেখতে না পাও, তবে নিশ্চয় তিনিতো তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। {বুখারী, হাদীস নং-৫০}

মৌলিকভাবে এটাই তাসাওউফের মেহনত। আল্লাহর ভয় ও মোহাব্বত নিয়ে শরীয়তের প্রতিটি মাসায়েলকে মান্য করা। ইবাদতকে দায়িত্ব নয় বরং মোহাব্বত নিয়ে আদায় করা। ভালবাসা নিয়ে আদায় করা। আল্লাহ তাআলা সবই দেখছেন সেই মনোভাব নিয়ে ইবাদত করা। পরিশুদ্ধ নিয়তে শরীয়তের প্রতিটি বিধান পালন করা। এর নামই তাসাওউফ।

কিন্তু ফানাফিল্লাহ নামের যে ভয়ংকর ঈমান বিধ্বংসী আকিদার কথা বলা হয় তা সুষ্পষ্ট কুফরী আকিদা। মৃত্যু পর্যন্ত কোন বান্দার জন্যই শরীয়তের কোন আমল রহিত হয়ে যায় না। সবার জন্যই সমান।

শুধুমাত্র তিন ব্যক্তি থেকে শরীয়তের বিধান রহিত থাকে। যা হাদীসে পরিস্কার ভাষায় এসেছে-

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ المُبْتَلَى حَتَّى يَبْرَأَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَكْبُرَ

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তি থেকে হিসাব কিতাবের কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। একজন হল ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত, দ্বিতীয়জন হল পাগল ব্যক্তি সুস্থ্য হওয়া পর্যন্ত। নাবালেগ ব্যক্তি বালেগ হওয়া পর্যন্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৯৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৪১}

এছাড়া সকলের উপর মৃত্যু পর্যন্ত শরীয়তের প্রতিটি বিধান মানা আবশ্যক। এ কারণেই রাসূল সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম মৃত্যু পর্যন্ত শরীয়তের প্রতিটি বিধানের প্রতি ছিলেন পরিপূর্ণ পাবন্দ।

যারা ফানাফিল্লাহ এ পৌঁছলে ইবাদত লাগে না বলে দাবি করছেন, তাদের মতে কি রাসূল সাঃ এ মর্যাদায় পৌছতে পারেননি? তাহলে নবীজী সাঃ কেন মৃত্যু পর্যন্ত এত গুরুত্বের সাথে ইবাদত করে গেলেন? কেন নামায জামাতের সাথে পড়ার জন্য এত মেহনত করে গেলেন?

সাহাবায়ে কেরাম রাঃ কি এ মর্যাদায় পৌছতে পারেননি?

তাহলে সাহাবায়ে কেরাম কেন এত মুজাহাদা আর কুরবানী দিলেন মৃত্যু পর্যন্ত দ্বীনের জন্য?

নবীজী সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরামের মৃত্যু পর্যন্ত ইবাদত গুজারীতে কাটানোই পরিস্কার প্রমাণ করে যে, এটি একটি ধোঁকাবাজীপূর্ণ দাবি। যদি এমন কোন পর্যায় থাকতো, যেখানে গেলে আর ইবাদত লাগে না, তাহলে সেটি অবশ্যই রাসূল সাঃ এর অর্জিত হতো। তারপর সাহাবায়ে কেরাম রাঃ ও সেই মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতেন।

অথচ পবিত্র কুরআনে মৃত্যু পর্যন্ত সকলকে ইবাদত করতে বাধ্য করে ইরশাদ হয়েছে-

وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ (99

তোমরা মৃত্যু পর্যন্ত তোমাদের রবের ইবাদত কর। {সূরা হিজর-৯৯}

একথা সর্বজন বিদিত যে, নবীগণ এবং সাহাবায়ে কেরামগণের চেয়ে অধিক বিশ্বাস আর কারও হতে পারে না। তবু তাদের উপর আমরণ শরীয়তের বিধান পালনের দায়িত্ব ছিল। সেই সাথে তারা মৃত্যু পর্যন্ত তা গুরুত্বের সাথে পালন করে গিয়েছেন।

হযরত ঈসা আঃ এর ব্যাপারে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে-

قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا [١٩:٣٠

সন্তান বললঃ আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন।

وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا [١٩:٣١

আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে। {সূরা মারইয়াম-৩০-৩১}

যেখানে নবীকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন ইবাদত করে যেতে, সেখানে উম্মতীর জন্য এমন সুযোগ থাকার কোন মানেই হয় না। তাহলে উম্মতী নবী থেকেও উপরের মাকামে চলে যেতে পারে নাউজুবিল্লাহ।

তবে কেউ যদি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। তাহলে উক্ত ব্যক্তির উপর শরীয়তের কোন বিধান প্রযোজ্য নয়। যা ইতোপূর্বে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। পাগলের জন্য কোন বিধান নেই।

তাই কেউ যদি এমন ভারসাম্যহীন হালাতে পৌছে যায়, তাহলে তার জন্য শরীয়তের কোন বিধানই প্রযোজ্য নয়। একথা সত্য। ফানাফিল্লাহ অর্থ যদি এই ধরা হয় যে, ব্যক্তি পাগল হয়ে যাওয়া, তাহলে উপরোক্ত বক্তার বক্তব্যটি  সঠিক। অর্থাৎ পাগল হওয়ার কারণে তার উপর শরীয়তের কোন বিধান প্রযোজ্য নয়। কিন্তু ফানাফিল্লাহ অর্থ যদি এই ধরা হয় যে, বান্দা আল্লাহর সাথে মিশে গেছে [নাউজুবিল্লাহ] তাহলে এটি একটি কুফরী ও শিরকী আকিদা।

আল্লাহ তাআলা এসব কুফরী আকিদা থেকে আমাদের মুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

আজানের সময় বা খানা খাওয়া ও বাথরুমে গমণ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় মাথায় কাপড় রাখার হুকুম কী?

প্রশ্ন আমার চারটি বিষয়ে জানার ছিলো : ________ ১, বাথরুমে অবস্থানকালীন সময়ে মাথায় কাপড় দেওয়ার …

No comments

  1. তাজউদ্দীন আহমেদ

    আসসালামু আলাইকুম ভাই লুতফর রাহমান, আপনার ইসলামের প্রতি নিষ্ঠা আমাকে খুব আনন্দ দেয় আমার এটা ও পিড়া দেয় আপনি সব কুল রক্ষা করতে চেষ্টা করেন মাঝে মাঝে আপনার পুরান মত প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সত্যকে পিছনে ফেলে দেন । আপনার এই লিখা দেখে আমার একটা কবিতার কোথা মনে পড়ে গেল। আপনি বুদ্ধিমান মানুষ। মসজিদে নামায পড়, মায়খানাইয় গিয়ে পান কর, আল্লহ ও খুশি থাকবেন, শয়তান ও নারাজ হবে না। যাযাকাল্লাহ খায়ের।

    • ওয়াআলাইকুম আসসালাম।

      আপনার এ অদ্ভুত ধারণা হবার কারণটা কি দয়া করে বলবেন কি?

      সত্যকে সত্য বলতে হবে, বাতিলকে বাতিল বলতে হবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা নিজের পক্ষ থেকে শরীয়তের কোন কিছু সাব্যস্ত করার অধিকার আল্লাহ ও রাসূল সাঃ ছাড়া আমার আপনার কারো নেই।

  2. তাজউদ্দীন আহমেদ

    আপনার কথা ” ফানাফিল্লাহ বলতে যা বুঝানো হয়ে থাকে, তাহল, বান্দা আল্লাহর সাথে সম্পূর্ণ মিশে যাওয়া। [নাউজুবিল্লাহ!] এটি একটি কুফরী আকিদা। এমন আকিদা বিশ্বাসী ব্যক্তি মুসলমান থাকে না।”

    আবার বলছেন ” ফানাফিল্লাহ অর্থ যদি এই ধরা হয় যে, ব্যক্তি পাগল হয়ে যাওয়া, তাহলে উপরোক্ত বক্তার বক্তব্যটি সঠিক। অর্থাৎ পাগল হওয়ার কারণে তার উপর শরীয়তের কোন বিধান প্রযোজ্য নয়। কিন্তু ফানাফিল্লাহ অর্থ যদি এই ধরা হয় যে, বান্দা আল্লাহর সাথে মিশে গেছে [নাউজুবিল্লাহ] তাহলে এটি একটি কুফরী ও শিরকী আকিদা।”

    ভাই আপনি একটা শব্দের দুইটা বিপরিত মুখি অর্থ বলছেন। ভাই ফারুকি সাহেবের ভুল ঢেকে আপনার কি লাভ। আপনি আরও গুম্রাহিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ভাই আপনার এই কথা দ্বারা সত্য বলছেন কিন্তু সরাসরি বলছেন না মুনসুর হাল্লাজ কাফের এবং তাও বলছেন না ফারুকি সাহেব কুফুরি কথা বলেছেন। আপনি আমি ভাল করেই জানি আরও ভাল জানেন আল্লাহ, যে ফারুকি সাহেব কি বিশ্বাসে উক্ত উক্তি করেছেন। আপনারা সমাজের অনেক গুরুত্ব পুরন মানুষ। আপনারা যদি এমন করেন সাধারন মুসলমান কোথায় যাবে। যাযাকাল্লাহ খায়ের

    • আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ!

      কে কি নিয়ত করে কথা বলে সেটি তিনিই ভাল জানেন। আমরা কারো মনের কথা জানি না। তাই কারো মনের কথা ধারণা করে তার বিরুদ্ধে ফাতওয়া আরোপ করার অধিকার আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রদান করেননি।

      হককে হক বলতে হবে। আর বাতিলকে বাতিল বলতে হবে।
      ফানাফিল্লাহ এটি একটি শব্দ। মানে হল আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত হওয়া।
      শাব্দিক অর্থে এতে কোন খারাবীই নেই। বরং এটি খুবই তাৎপর্যময় এবং ফযীলতপূর্ণ শব্দ। আল্লাহর নামে উৎসর্গ হওয়া প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। তাই এ শব্দটি কিছুতেই কুফরী শব্দ নয়।

      হ্যাঁ, এ শব্দ উচ্চারণকারী কি উদ্দেশ্য নিয়েছে? সেই উদ্দেশ্য অনুপাতে এর হুকুম আরোপিত হবে।
      যদি উদ্দেশ্য কুফরী হয়, তাহলে এ শব্দটির দ্বারা কুফরী আবশ্যক হবে। আর যদি কুফরী বাক্য উদ্দেশ্য না হয়, তাহলে এটিকে কুফরী বলার মত ধৃষ্টতা আপনি দেখাতে পারলেও আমরা দেখাতে পারি না। এ অধিকার আমাদের আল্লাহ তাআলা দেননি।

      আমরা পরিস্কার বলছি-
      ফানাফিল্লাহ শব্দটি শাব্দিক অর্থ হিসেবে কিছুতেই কুফরী শব্দ নয়। বরং এটি ঈমান উদ্দীপক শব্দ। যার অর্থ আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত হওয়া।

      যদি এর দ্বারা আল্লাহর সাথে মিশে যাওয়া মাকসাদ হয়, তাহলে এটি কুফরী। এ অর্থে এ শব্দ কারো জন্য প্রয়োগ করা হারাম।

      যদি এর দ্বারা মাকসাদ হয় ব্যক্তি মানসিক ভারসম্যহীন হওয়া, তাহলে এর দ্বারা কুফরী অর্থ নেয়া অর্বাচিনতা ছাড়া আর কিছু নয়।

      সেই সাথে এ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য যদি এই হয় যে, ব্যক্তি সকল কিছুতে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়, নিজের কোন ইচ্ছে ও খাহেশাতকে প্রাধান্য দেয় না, এক কথায় আল্লাহ তাআলা সকল বিধানের সামনে নিজেকে উৎসর্গিত করে দেয়, এ অর্থে ফানাফিল্লাহ বললে এতেও কুফরী বলার অধিকার কারো নেই।

      আশা করি কমেন্টটি ভাল করে পড়ে বিষয়টি অনুধাবন করবেন। জাযাকাল্লাহ।

Leave a Reply to তাজউদ্দীন আহমেদ Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *