প্রশ্ন
প্রশ্নকারীর নাম: নাম অপ্রকাশিত রাখা হলো!
ঠিকানা: পুরানা পল্টন
জেলা/শহর: পুরানা পল্টন
দেশ: ঢাকা বাংলাদেশ
প্রশ্নের বিষয়: তালাক
বিস্তারিত:
—————-
গত শুক্রবার বার ২৭ তারিখে আমার এক বোন কে তার স্বামী তালাক দেয়। তাদের কথপোকথন এর এক পর্যায় স্বামী সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছিলো যে, আমি ছাইড়া দিবো। তখন মেয়ের ভাই বলসে যে, এমনে ছারবি কেন? ১০ জন নিয়ে বিয়ে করসিস, ১০ জন নিয়ে ছাড়বি। তখন স্বামী তার স্ত্রী কে বলসে যে, আমি এখন ই তালাক দিয়ে দিলাম। ১তালাক ২ তালাক ৩ তালাক। এখন কি খালি লিখিত ভাবে বাকি আসে? ওইটা ও দিয়া দিমু। এখন তার স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে চায়। কিভাবে কি? জানালে ভালো হতো।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হয়ে স্ত্রী স্বামীর জন্য হারাম হয়ে গেছে।
সুতরাং উক্ত স্ত্রীকে এখন ফিরিয়ে নেয়ার কোন স্বাভাবিক পদ্ধতি নেই।
তালাক পরবর্তী সময়ে তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হবার পর, যদি স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হয়, এবং দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাসসহ স্বাভাবিক সংসার করতে থাকে, তারপর উক্ত দ্বিতীয় স্বামী যদি মৃত্যুবরণ করে বা তাকে তালাক প্রদান করে, তাহলে ইদ্দত শেষ হবার পরই কেবল প্রথম স্বামী আবার বিয়ে করতে পারবে। এছাড়া উক্ত স্ত্রীকে প্রথম স্বামী গ্রহণ করার কোন শরয়ী সূরত নেই।
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। [সূরা বাকারা-২৩০]
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}
عن مجاهد قال كنت عند ابن عباس فجاء رجل فقال إنه طلق امرأته ثلاثا. قال فسكت حتى ظننت أنه رادها إليه ثم قال ينطلق أحدكم فيركب الحموقة ثم يقول يا ابن عباس يا ابن عباس وإن الله قال (وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا) وإنك لم تتق الله فلم أجد لك مخرجا عصيت ربك وبانت منك امرأتك
অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহঃ. বলেন,আমি ইবনে আব্বাস রাঃ-এর পাশে ছিলাম। সে সময় এক ব্যক্তি এসে বলেন-‘সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ চুপ করে রইলেন। আমি মনে মনে ভাবছিলাম-হয়ত তিনি তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার কথা বলবেন (রুজু করার হুকুম দিবেন)। কিছুক্ষণ পর ইবনে আব্বাস রা. বলেন,তোমাদের অনেকে নির্বোধের মত কাজ কর;[তিন তালাক দিয়ে দাও!] তারপর ‘ইবনে আব্বাস! ইবনে আব্বাস! বলে চিৎকার করতে থাক। শুনে রাখ আল্লাহ তা‘য়ালা বাণী-“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘য়ালাকে ভয় করে আল্লাহ তা‘য়ালা তার জন্য পথকে খুলে দেন। তুমিতো স্বীয় রবের নাফরমানী করেছো [তিন তালাক দিয়ে]। এ কারণে তোমার স্ত্রী তোমার থেকে পৃথক হয়ে গেছে। {সুনানে আবু দাউদ-১/২৯৯, হাদীস নং-২১৯৯, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৪৭২০, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৪৩}
عن عائشة رضى الله عنها قاتل: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اذا طلق الرجل امرأته ثلاثا لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره، ويذوق كل واحد منهما عسليلة صاحبه (سنن الدار قطنى، كتاب الطلاق، دار الكتب العلمية-4\21، رقم-3932)
وإن كان الطلاق ثلاثا فى الحرة، وثنتين فى الأمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا ويدخل بها، ثم يطلقها، أو يموت عنها (الفتاوى الهندية-1\478، جديد-1\535)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com