প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / কথিত আহলে হাদীসদের কাছে দলীল চাই [পর্ব-৪]

কথিত আহলে হাদীসদের কাছে দলীল চাই [পর্ব-৪]

লেখক– মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকাড়বী রহঃ

অনুবাদঃ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

৩য় পর্ব

আমীন বলা বিষয়ে পর্যালোচনা

৭৩
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা যখন একাকি নামায পড়ে, তখন সর্বদা আমীন আস্তে বলে। একটি সহীহ সরীহ হাদীস পেশ করতে বলুন যাতে একাকি নামায আদায়কারীর জন্য আমীন আস্তে বলতে বলা হয়েছে।
৭৪
কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা ইমামের পিছনে সর্বদা এগার রাকাত নামাযে আমীন আস্তে বলে থাকে। যথা জোহরের চার রাকাত ফরজে, আসরের চার রাকাত ফরজে, মাগরিবের ফরজ নামাযের শেষ রাকাতে এবং ইশার শেষ দুই রাকাতে।
এ এগার রাকাতে আস্তে পড়ার বিধান কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? এতে জোরে আমীন বলা নিষেধ কোন হাদীসের ভিত্তিতে?
৭৫
যে ৬ রাকাত নামাযে ইমাম জোরে কিরাত পড়ে থাকে, [ফজরের ফরজ দুই রাকাত, মাগরিবের ফরজের প্রথম দুই রাকাত ও ইশার ফরজের প্রথম দুই রাকাত] উক্ত ছয় রাকাত যদি ইমামের পিছনে মুক্তাদী কোনক্রমে না পায়, তাহলে উক্ত ছয় রাকাত যখন একাকী পূর্ণ করে তখনও তারা জোরে আমীন বলে না? কেন? কোন সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে এতে জোরে আমীন বলার নিষেধাজ্ঞা এসেছে? আস্তে আমীন বলার আদেশও বা কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
৭৬
যে ছয় রাকাতে ইমাম কেরাত জোরে পড়ে থাকে, উক্ত ছয় রাকাত নামাযে যদি কোন মুসল্লি দেরী করে শরীক হওয়ার কারণে এসে দেখে যে, ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা অর্ধেক পড়ে ফেলেছে, আর মুক্তাদী মাত্র সূরা ফাতিহার শুরুর الحمد لله رب العلمين বলেছে, এমন সময় ইমাম সাহেব وَلَا الضَّالِّينَ
বললেও মুক্তাদী সূরা ফাতিহা শেষ না করলেও আমীন জোরে বলে তারপর বাকি সূরা ফাতিহা পূর্ণ করে থাকে। এখন প্রশ্ন হল পূর্ণ সূরা ফাতিহা শেষ না করে শুধু الحمد لله رب العلمين পড়ে এভাবে আমীন বলা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? দয়া করে জানাবে কি?
৭৭
রাসূল সাঃ কোন সহীহ হাদীসে এ হুকুম দিয়েছেন যে, ইমামের পিছনে ছয় রাকাতে জোরে আমীন বলবে, আর এগার রাকাতে আমীন আস্তে বলতে হবে?
৭৮
রাসূল সাঃ মুক্তাদী হয়ে সারা জীবনে কোন নামাযে জোরে আমীন বলেছেন এমন একটি সহীহ হাদীস দয়া করে পেশ করুন।
৭৯
রাসূল সাঃ এর ২৩ বছরের নবুওতী জীবনে রাসূল সাঃ এর পিছনে কোন সাহাবী অন্তত এক রাকাতেও জোরে আমীন বলেছেন এমন কোন সহীহ সরীহ হাদীস আছে?
সাহাবীগণ আমীন জোরে বলার কারণে মসজিদ প্রতিধ্বনি উঠে যেত মর্মে সুনানে ইবনে মাজাহ এর যে হাদীস উপস্থাপন করা হয়, সেটা দুর্বল হাদীস। এ কারণেই সালাতুর রাসূল কিতাবের টিকায় গায়রে মুকাল্লিদ আলেম আব্দুর রউফ সাহেব লিখেন যে, “এর সনদ দুর্বল”। কারণ এতে বিশর বিন রাফে জঈফ। আর আব্দুল্লাহ মাজহুল। {সালাতুর রাসূল-২৩৯} এছাড়া ইবনে হিব্বান রঃ উক্ত হাদীসকে মওজু হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর গায়রে মুকাল্লিদদের ইমাম আলবানী রহঃ ও এটাকে দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দেখুন-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫৩}
তাহলে এ হাদীস দিয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসওয়ালা ভাইরা দলিল দেন কি করে?
৮০
এ হাদীস দুর্বল ইবনে হিব্বান রহঃ এর মতে মওজু হওয়া সত্বেও এটি কুরআনে কারীমের আয়াতেরও বিপরীত। কেননা কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে যে, নবীজী সাঃ এর আওয়াজের উপর কারো আওয়াজ উঁচু হওয়া জায়েজ নয়। এমন করলে সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। {সূরা হুজুরাত-২}
অথচ এ হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাঃ এর কেরাত কেবল প্রথম কাতারে থাকা সাহাবাগণই শুনতো, আর মুক্তাদী সাহাবাগণের আওয়াজ রাসূল সাঃ এর আওয়াজের তুলনায় এতটাই উঁচু ছিল যে, পুরো মসজিদে প্রতিধ্বনি হয়ে যেত। তাহলেতো নবীজী সাঃ এর আওয়াজের উপর সাহাবাগণের আওয়াজ উঁচু হওয়ায় কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী সাহাবাগণের নামায বাতিল সাব্যস্ত হয়। [নাউজুবিল্লাহ] ৮১
জঈফ ও কুরআনের খেলাফ হওয়ার সাথে এটি সাহাবাগণ ও তাবেয়ীগণের ইজমার ও বিপরীত। কেননা, এই হাদীসেই হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ এর ফরমান ترك الناس التأمين তথা “লোকেরা আমীন [জোরে] বলাকে ছেড়ে দিয়েছেন”।
আর একথাতো স্পষ্ট যে, সে জমানায় লোক বলতে সাহাবা তাবেয়ীগণকেই বুঝানো হয়েছে।
৮২
জঈফ, খেলাফে কুরআন, ইজমার খিলাফ হওয়ার সাথে সাথে এটি আমলের খেলাফ। কেননা প্রতিধ্বনি উঠার বিষয়তো বিল্ডিংয়ে সৃষ্টি হয়। আর নবীজী সাঃ এর জমানায়তো মসজিদ ছিল কাঁচা ইটের। খেজুরের ডালও পাতা দিয়ে মসজিদ বানানো হতো। এতোতো প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হতেই পারে না।
দেখুন গায়রে মুকাল্লিদরা কিভাবে কুরআনের খেলাফ, হাদীসের খেলাফ, ইজমার খেলাফ, যুক্তির খেলাফ দুর্বল বর্ণনা নিয়ে দেশব্যাপী ফিতনা বিস্তার করে যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা এদের হাত থেকে জাতিকে হিফাযত করুন।
৮৩
গায়রে মুকাল্লিদদের ইমাম সাহেব ১১ রাকাতে আস্তে আমীন বলে থাকে। এ কর্ম কোন সহীহ হাদীসের ভিত্তিকে করা হয়?
৮৪
তাদের ইমাম নামাযের ছয় রাকাতে আমীন আস্তে বলে। একথা কোন সহীহ সরীহ হাদীসে স্পষ্টাক্ষরে উল্লেখ আছে?
৮৫
সুবিশাল হাদীস ভান্ডারে খুলাফায়ে রাশেদীনের ব্যাপারে একটি বর্ণনাও এমন নেই যে, যাতে প্রমাণিত যে, খলীফায়ে রাশেদীনরা ইমাম বা মুক্তাদী হয়ে আমীন জোরে জোরে বলেছেন। আছে?
৮৬
একটি হাদীসও নেই যাতে একথা আছে যে, খুলাফায়ে রাশেদীনদের জামানায় কোন একজন মুসল্লিও একদিনের কোন নামাযের কোন রাকাতে আমীন জোরে জোরে বলেছেন।
৮৭
আবু ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর যে হাদীস আবু দাউদ থেকে পেশ করা হয় উক্ত হাদীস একেতো সহীহ নয়। কারণ এর সনদে থাকা সুফিয়ান মুদাল্লিস। আলী বিন সালেহ শিয়া, মুহাম্মদ বিন কাসীর জয়ীফ। এছাড়া এ হাদীসে সর্বদা আমীন জোরে বলার কোন কথা নেই।
৮৮
আর উম্মুল হুসাইন এর হাদীসের মাঝে নজর বিন শুমাইল মুতাআসসিব, হারুনুল আওয়ার শিয়া, ইসমাইল বিন মুসলিম মক্কী জঈফ, আবু ইসহাক মুখতালাত, ইবনে উম্মুল হুসাইন মাজহুল।
এরকম হাদীস গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের কাছে গ্রহণীয়?
৮৯
কুরআনে পাকের সূরায়ে ইউনুসে হযরত ঈসা আঃ এর দুআর পর আল্লাহ তাআলার ফরমান হল- قد اجيبت دعوتكما তথা তোমাদের উভয়ের দুআ কবুল করে নেয়া হয়েছে।
সমস্ত মুফাসসিরীনে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, মুসা আঃ এর সাথে হারুন আঃ ছিলেন। তিনি দুআ করছিলেন শুধু আমীন আমীন বলে। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে হারুন আঃ এর উক্ত আমীন বলাকে দুআ বলে সম্বোধন করেছেন। আর সহীহ বুখারীর প্রথম খন্ডের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় এসেছে যে, وقال عطاء آمين الدعاء তথা আতা বলেছেন যে, আমীন হল দুআ। কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা আমীন যে দুআ তা অস্বিকার করে আল্লাহর বাণী, মুফাসসিরীনদের ইজমা অমান্য করে।
৯০
দুআর নিয়ম কুরআনে এসেছে যে, ادعوا ربكم تضرعا وخفية তথা তোমরা তোমাদের রবের কাছে দুআ কর বিনয়ের সাথে ও আস্তে আওয়াজে। {সূরা আরাফ- ৭}
إِذْ نَادَى رَبَّهُ نِدَاءً خَفِيًّا [যাকারিয়া আঃ] স্বীয় রবের কাছে দুআ চান আস্তে আস্তে। {সূরা মরিয়ম-৩}
হাদীসে দুআর মূলনীতি হল যে, আস্তে আওয়াজে দুআ করা উঁচু আওয়াজে ৭০বার দুআ করার সমান। [اخرجه ابو الشيخ عن انس مرفوعا بسند صحيح ] {ফাতহুল কাদীর}
সুতরাং একথা প্রমাণিত যে, আমীন হল দুআ। আর দুআর মাঝে আসল হল আস্তে আস্তে বলা। এ কারণে ইমাম হোক বা একাকী নামায আদায়কারী হোক কিংবা মুক্তাদী হোক আমীন আস্তে বলাই উচিত।
৯১
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের কাছে আমাদের চাওয়া হল, তারা কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়ে একথা প্রমাণ করে দিন যে, আমীন দুআ নয়। আর একথাও প্রমাণ দিন যে, দুআর মাঝে আস্তে নয় জোরে বলা উত্তম।
৯২
হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর বর্ণনা হল- রাসূল সাঃ ولا الضالين বলার পর আমীন আস্তে বলেছেন। [দ্রষ্টব্য- মুসনাদে আহমদ-৪/৩১৬, হাদীস নং-১৮৮৪৩, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৪৮, মুস্তাদরাকে হাকেম-২/২৩২}
قال الحاكم على شرطها واقره الذهبى
৯৩
হযরত ওমর রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ ও আস্তে আস্তে আমীন বলতেন। {তাহাবী, তাবারানী}
৯৪
যুক্তিও এটা বলে যে, আমীন কুরআনে নেই। এজন্য যে, কুরআন উঁচু আওয়াজে পড়া হবে, আর আমীন আস্তে আওয়াজে পড়া হবে, যেন কারো এ ব্যাপারে সন্দেহ না হয় যে, আমীন কুরআনের অন্তর্ভূক্ত।
৯৫
পাকিস্তান ও ভারতে ইসলাম আগমণের ১৩ শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু ১২শত বছর ধরে এখানের সকল কুরআন হাদীস, খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবাদের আমলের অনুরূপ আমীন আস্তে বলে আসছে। এ ১২শত বছরের মধ্যে এখানে না কেউ আমীন আস্তে বলার বিরুদ্ধে পুস্তক লিখেছে। না কেউ এ ব্যাপারে বাহাসের চ্যালেঞ্জ করেছে।
১২শত বছর পর মুহাদ্দিস, আলেম বা সুফী কেউ নয়, বরং ফাখের ইলহাবাদী সর্বপ্রথম এ উপমহাদেশে আমীন জোরে বলা সংস্কৃতি শুরু করে।
প্রসিদ্ধ গায়রে মুকাল্লিদ ঐতিহাসিক ইমাম খান নওশহারয়ী সাহেব লিখেন যে, “মাওলানা শাহ মুহাম্মদ ফাখের ইলহাবাদী সর্বপ্রথশ দিল্লি জামে মসজিদে আমীন জোরে বলে তাকলীদের গোঁড়ামী দূরিভূত করেন। {নকুশে আবুল ওয়াফা-৩৪}
লক্ষ্য করুন! কুরআন হাদীস এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের মতকে কিভাবে তাকলীদের গোঁড়ামী বলে কুরআন ও সুন্নতের সাথে বিদ্রোহ করে নিজেদের ভদ্রতার মুখোশ উন্মেচিত করছে।
এই মাওলানা ফাখের কে?
তার ব্যাপারে মাওলানা সানাউল্লাহ উমরতাসরী সাহেব লিখেনঃ
না জানে দ্বীনে হক, মাযহাবও কি তাও জানে না,
জুব্বা পরে পাগড়ি বেঁধে পরিচয় দেয় মাওলানা। [ফাতাওয়া সানাইয়্যাহ-১/১০৩}
দ্বিতীয়বার জোরে আমীন ইংরেজ সরকারের চাকরিজীবি হাফেজ ইউসুফ দিয়েছেন। {নুকুশে আবুল ওয়াফা-৪২}
এ লোক পরবর্তীতে কাদিয়ানী হয়ে যায়। ইশাআতুস সুন্নাহ এর ২১ নং খন্ডের ১১৪ নং পৃষ্ঠায় এসেছে যে, আমরতাসর এ সর্ব প্রথম হাদীসের উপর আমল শুরুকারী ডেপুটি কালেক্টর হাফেজ মুহাম্মদ ইউসুফ সাহেব মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সহকারী হয়ে যায়।
এমনিভাবে ইংরেজ আমলে এ মাসআলাকে মুসলমানদের মাঝে প্রচার করা শুরু হয়।
গায়রে মুকাল্লিদদের কাছে প্রশ্নঃ আপনারা ইংরেজ আমলের আগে উপমহাদেশের একটি মসজিদ দেখান যেখানে ইংরেজরা আসার আগে আমীন জোরে বলা হত।
৯৬
কুরআনে পাকের নীতি, সহীহ হাদীস, খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত এবং সাহাবাগণের আমলের বিপরীত জোরে আমীন বলার যে দুর্বল হাদীস গায়রে মুকাল্লিদগণ উপস্থাপন করে থাকেন, সে ব্যাপারে খোদ ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ ব্যাখ্যা করে বলেনঃ ما أراه إلا ليعلمنا তথা শুধুমাত্র নামায শিখানোর জন্য উঁচু আওয়াজে বলা হয়েছে। {কিতাবুল আসমায়ি ওয়াল কুনা-১/১৯৬}
আমাদের মাদরাসাগুলোতেও যখন বাচ্চাদের নামায শিখানো হয়, তখন সামনের বাচ্চাও উঁচু আওয়াজে আমীন বলে, তখন পিছনের বাচ্চাগুলোও একসাথে উঁচু আওয়াজে আমীন বলে।
আমীন জোরে বলার দুর্বল হাদীসের উপরও আমাদের আমল বিদ্যমান আছে। আমাদের কোন আয়াত বা হাদীসের বিরোধীতার ভয় নেই।
৯৭
গায়রে মুকাল্লিদ মিস্ত্রি নূর হুসাইন সাহেব লিখেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ সর্বদা আমীন জোরে বলতেন। আর অন্যদের বলতেন যে, আমীন জোরে জোরে বল। {বুখারী-১/১০৮, রেসালায়ে আমীন বিলজেহের-১৮}
এ কথাটি বুখারীর উপর একটি সরাসরি মিথ্যাচার। বুখারীতে জোরে বলার শব্দই নেই।
৯৮
হাকীম সাদেক শিয়ালকুটি একটি হাদীস লিখেছেন যে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ ইহুদীরা যত আমীন [জোরে] বলার কারণে যতটুকু ক্ষিপ্ত হয়, এত ক্ষীপ্ত অন্য কোন আওয়াজে হয় না। {ইবনে মাজাহ} যদি কেউ উঁচু আওয়াজে আমীন বলে, তাহলে রাসূল সাঃ এর এ পাক সুন্নতের কারণে ক্ষীপ্ত হইয়ো না। অপছন্দও করো না। কেননা, আমীন জোরে বলার দ্বারা ইহুদীরা ক্ষীপ্ত হয় এবং অপছন্দ করে। আর আমাদের ইহুদীদের বিরোধীতা করা উচিত। {সালাতুর রাসূল-২৪২}
দেখুন! কিভাবে সারা উম্মতকে ইহুদী বানিয়ে দিল। অথচ প্রথমত হাদীসটিই সহীহ নয়। খোদ আব্দুর রউফ গায়রে মুকাল্লিদ এর টিকায় লিখেছেন যে, এ হাদীসের সনদ জঈফ। কেননা, তালহা বিন ওমর জঈফ এ ব্যাপারে সবাই একমত। {২৪১}
তারপর এ জঈফ হাদীসেও উঁচু [جهر] শব্দ একদম নেই। উঁচু শব্দ মিলানো রাসূল সাঃ এর উপর পরিস্কার মিথ্যাচার।
৯৯
গায়রে মুকাল্লিদ পুরুষ মহিলারা যখন একাকী নামায পড়ে, আর জোহর, আসর এর নামাযে যখন ইমাম এবং মুক্তাদী উঁচু আওয়াজে আমীন না বলে, তখন কি তারা ইহুদী হয়ে যায়?
১০০
যেহেতু উঁচু আওয়াজে আমীন বলার হাদীস সহীহ নয়, তাই তারা সাধারণ্যের সামনে একটি আশ্চর্য প্রকার ফর্দ প্রকাশ করে থাকে ওরা।

গায়রে মুকাল্লিদদের আজীব চালাকী

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ এর জোরে আমীন বলা সংক্রান্ত একটি হাদীস লিখে এ ব্যাপারে হাপেজ আব্দুল্লাহ রূপরী সাহেব লিখেন যে, এ হাদীস সুনানে দারা কুতনীতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন এর সনদ সহীহ। আর হাকেম ও বর্ণনা করেছেন। আর বলেছেন যে, বুখারী মুসলিম এর শর্ত এর উপর আছে এ হাদীস। আর বায়হাকীও বর্ণনা করেছেন। তিনি এটাকে হাসান বলেছেন। {আহলে হাদীস কা মাসায়েল ইমতিয়াজী-৭৯}
অথচ তিন কিতাবের কোথাও এ হাদীস নেই। মুহাদ্দিসগণের সহীহ বলাতো দূরে থাক।
১০১
মৌলবী ইউসুফ জিপুরী “হাকীকাতুল ফিক্বহ” এর ১৯৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ হেদায়া ১/৩৬৫ এবং শরহে বেকায়া-৯৭ এ জোরে আমীন বলার হাদীসসমূহ বিদ্যমান।
অথচ এটি একেবারেই মিথ্যাচার। সত্য হলে হেদায়া ও শরহে বেকায়ার আরবী ইবারত প্রকাশ করুন।
১০২
মৌলবী ইউসুফ “হাকীকাতুল ফিক্বহ” এর ১৯৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেনঃ ইবনে হুমাম আস্তে আমীন বলার হাদীসকে জঈফ বলেছেন। [হেদায়া-১/৩৬৩] কি আশ্চর্য মিথ্যাচার! হেদায়া ছষ্ঠ শতাব্দীর কিতাব। আর ইবনুল হুমাম নবম শতাব্দীর ব্যক্তিত্ব। তিনি তিনশত বছরের আগের কিতাবে কিভাবে লেখেছেন?
১০৩
হাকীম মুহাম্মদ সাদেক সাহেব লিখেনঃ মসজিদে নববীতে রাসূল সাঃ এর জমানা থেকে আজ পর্যন্ত জোরে আমীন বলার ধ্বনি রয়ে গেছে। {সলাতুর রাসূল-২৪০}
এটা একেবারে মিথ্যাচার। খেলাফতে রাশেদা, খেলাফতে উমাইয়্যাহ, খেলাফতে আব্বাসী, খাওয়ারজামী, সুবলুকী, তুর্কীদের আমলের সেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী আমীন আস্তে বলা হতো।

৫ম পর্ব

0Shares

আরও জানুন

বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে একথাগুলো কি আমরা জানি?

সংগৃহিত  আমরা জানি না লালন আসলে কে? লালন ছিলেন বাউল সম্প্রদায়ের গুরু।আমরা কি জানি কারা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *