প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / কথিত আহলে হাদীসদের কাছে দলীল চাই [পর্ব-৫]

কথিত আহলে হাদীসদের কাছে দলীল চাই [পর্ব-৫]

লেখক– মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকাড়বী রহঃ

অনুবাদঃ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

৪র্থ পর্ব

সেজদায়ে সাহু

১০৪
যদি ইমাম ভুলে ফজর মাগরিব বা ইশার রাকাতে আস্তে কেরাত পড়ে, তাহলে সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হবে কি না?
১০৫
যদি ইমাম ভুলে জোরে কেরাত পড়া নামাযে আস্তে কেরাত পড়ে, তাহলে সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হবে কি না?
১০৬
যদি সূরায়ে ফাতিহা পড়ে সূরা পড়া ভূলে যায়, রুকু করে ফেলে, তাহলে সেজাদায়ে সাহু দিতে হবে?
১০৭
এক ব্যক্তি প্রথমে সূরা ইখলাস পুরোটা পড়ে ফেলল, তারপর সূরা ফাতিহা পড়ল, তার উপর সেজদায়ে সাহু আবশ্যক নাকি না?
১০৮
জোরে আর আস্তের পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা কি?
এসব কিছুর জবাব কুরআন বা সহীহ সরীহ, গায়রে মুআরেজ তথা বৈপরীত্বহীন হাদীস দিয়ে দিন। যদি না পারেন তাহলে প্রোপাগান্ডা বন্ধ করুন।

ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকাল

১০৯
রাসূল সাঃ জোহরের নামাযে واليل اذا يغشى الخ পড়তেন। {সহীহ মুসলিম-১/২৫৪}
হাদীসের শব্দ হল كان يقرأ তথা তিনি পড়তেছিলেন। যেটা নাহুর পরিভাষায় ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দ।
১১০
রাসূল সাঃ ফজর নামাযে ق والقرآن المجيد সূরাটি পড়তেন। এ হাদীসেও كان يقرآ চলমান অতীতকালীন শব্দ এসেছে। রাসূল সাঃ ফজরের সুন্নতে সূরায়ে কাফেরূন এবং সূরায়ে ইখলাস পড়তেন। এ হাদীসেও كان يقرآ চলমান অতীতকালীন শব্দ এসেছে। এসব নামাযে এ সূরাগুলো কি নির্দিষ্ট না অন্য সূরা ও পড়া যাবে?
ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালটি কি সর্বদার জন্য এসেছে? নাকি না? কুরআন ও সহীহ হাদীস কী বলে?
১১১
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ রাসূল সাঃ কে অসংখ্যবার মাগরিবের সুন্নতে সূরায়ে কাফেরূন ও সূরায়ে ইখলাস পড়তে শুনেছেন। {তিরমিজী}
কি এসব রাকাতে জোরে কেরাত পড়া সুন্নত? আপনারা যে মাগরিবের নামাযে আস্তে আস্তে কেরাত পড়েন এর পক্ষে একটি সহীহ সরীহ হাদীস দেখান।
১১২
রাসূল সাঃ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন। {সহীহ বুখারী-১/৩৫}
হায়েজা স্ত্রীর গায়ে হেলান দিয়ে কুরআন পড়েছেন। {সহীহ বুখারী-১/৪৪} এ হাদীসে ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দ এসেছে।
রাসূল সাঃ হায়েজা স্ত্রীর সাথে মুবাশারাত তথা শারিরিকভাবে একান্ত স্পর্শ করতেন। {সহীহ বুখারী-১/৪৪} এখানেও ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দ এসেছে।
রাসূল সাঃ রোজা রাখা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করতেন। হাদীসের শব্দ হল كان يقبل তথা তিনি চুম্বন করতেন। {বুখারী-১/২৫৮} এখানেও ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দ ব্যবহৃত।
রাসূল সাঃ নামাযের পূর্বে স্ত্রীকে চুম্বন করতেন। {বুখারী-১/৪২} এখানেও ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দ ব্যবহৃত।
এই সকল কর্ম রাসূল সাঃ থেকে ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দ দিয়ে প্রমাণিত। এসব থেকে নিষেধ করা বা রহিত হওয়া সম্বলিত কোন হাদীস থাকলে পেশ করুন। নতুবা এসবের উপর সুন্নতে মুআক্কাদার মত আমল করুন। আর এসবকে পরিত্যাগকারীকে সুন্নত পরিত্যাগকারী বলে চ্যালেঞ্জবাজী করতে শুরু করে দিন।
১১৩
ماضى استمرارى তথা চলমান অতীতকালীন শব্দকে মূলত একবারের কর্মের ক্ষেত্রে। শরহে নববী-১/২৫৪} মাজমাউল বিহার-৩/২৩৫, মাসকুল খিসাম-১/৫৬৭}
এর দ্বারা নস হিসেবে স্থায়িত্ব প্রমাণিত হয় না। হ্যাঁ, মুজতাহিদ তার ইজতিহাদী যোগ্যতা দিয়ে “ক্বরিনা” তথা আলামত দেখে কোথাও স্থায়িত্ব উদ্দেশ্য নিয়ে থাকেন। আবার কোথাও স্থায়িত্ব উদ্দেশ্য নেন না।
হানাফীদের কাছে সকল “ক্বরিনা” তথা আলামতের চেয়ে বড় “ক্বরিনা” হল খুলাফায়ে রাশেদীনের আমল। অথবা খাইরুল কুরুন তথা রাসূল সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তিদের আমল।
যদি রাসূল সাঃ এর আমল ماضى استمرارى দিয়েও প্রমাণিত হয়, তারপর যদি এর আমল জারী হয়, তাহলে এ আমলের “ক্বরিনা” স্থায়িত্বকে বুঝায়। আর যদি উক্ত কাজের উপর আমল জারী না হয়, তাহলে এটি ছেড়ে দেয়ার উপর স্থায়িত্বের “ক্বরিনা” হিসেবে ধর্তব্য হবে। যেমন ১১২ এ বর্ণিত বলা মাসায়েলগুলি।
কিন্তু প্রাজ্ঞ ব্যক্তির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণকে হারাম বলা ব্যক্তিদের কী দশা হবে? শব্দের অর্থ তাদের যা বলছে তা ছেড়ে দেয়া তাদের জন্য নিজেদের বক্তব্য অনুযায়ী জায়েজ হয় না। কিন্তু নিজেদের ফাতওয়ায় নিজেরাই নাজায়েজ কাজগুলো করে বেড়ান।
১১৪
রুকুর তাকবীর একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি এবং মুক্তাদী আস্তে আস্তে বলে। আর ইমাম জোরে বলে। এ ব্যাপারে সহীহ সরীহ দেখান। এমনটি কোন সহীহ সরীহ হাদীসের ভিত্তিতে করা হয়?
১১৫
প্রথম তাকবীরের সাথে হাত উঠানোর হুকুম তাবরানীতে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। নিষেধ কোথাও নেই। ফেলী হাদীস তাওয়াতুর স্তরে বর্ণিত। যার বিপরীত কোন জঈফ হাদীসও নেই। আর উম্মতের নিরবচ্ছিন্ন আমল বিদ্যমান রয়েছে।
এ তিনটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে সারা উম্মত তাকবীরে তাহরিমার সময় হাত উঠানোকে সুন্নত বলে থাকেন।
১১৬
চার রাকাত নামাযে ২২টি তাকবীর হয়। {বুখারী-১/১১০}
ওমায়ের বিন হাবীবের বর্ণনা, ইবনে আব্বাস রাঃ এর হাদীস {ইবনে মাজাহ-৬২} জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ এর হাদীস {মুসনাদে আহমাদ} ইবনে ওমর রাঃ এর হাদীস {মাশকিুল আসার লিততাহাবী} আবু হুরায়রা রাঃ এর হাদীস {কিতাবুল ইলাল, দারা কুতনী}
এ পাঁচটি হাদীসে ماضى استمرارى রয়েছে। কিন্তু শিয়ারা এর উপর আমল করে আর গায়রে মুকাল্লিদরা এসব হাদীসের সাথে বিদ্রোহ করে।

হাদীসের সাথে বিদ্রোহ

১১৭
সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করা তথা হাত উঠানো রাসূল সাঃ থেকে-
১- হযরত মালেক বিন হুয়াইরিস রাঃ {সুনানে নাসায়ী}
২- হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ {আবু দাউদ, দারা কুতনী, মুয়াত্তা মুহাম্মদ}
৩- হযরত আনাস রাঃ {মুসনাদে আবী ইয়ালা}
৪- হযরত আবু হুরায়রা রাঃ {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৬০}
৫- আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ {তাবারানী}
৬- আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ {আবু দাউদ}
এ ছয়টি এবং আগের ৫টি মোট এগারটি হাদীস সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইন প্রমাণিত। এ হাদীস রহিত হওয়ার কোন দলিল গায়রে মুকাল্লিদদের কাছে নেই।
সেজদার সময় রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়ার হাদীস শুধুমাত্র ইবেন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। যে হাদীস নিজেই বিপরীতমুখী।
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা একটি বিরোধপূর্ণ হাদীসের উপর ভিত্তি করে এগারটি হাদীসের সাথে বিদ্রোহ করেছেন।

গায়রে মুকাল্লিদদের পরিস্কার মিথ্যাচার!

১১৮
তারা বলে থাকে যে, সমস্ত সাহাবাগণ সারা জীবন রফয়ে ইয়াদাইন করতেন, কথাটি পরিস্কার মিথ্যা কথা।
১১৯
কখনো বলে থাকে যে, প্রতিটি রফয়ে ইয়াদাইনের উপর দশটি নেকি পাওয়া যায়। রাসূল সাঃ নাকি ওয়াদা দিয়েছেন।
এটাও পরিস্কার মিথ্যাচার।
১২০
দারুল উলুম কুফার আবাদকারীদের অন্যতম হযরত আলী রাঃ এর রফয়ে ইয়াদান সম্বলিত হাদীসতো বর্ণনা করে, কিন্তু একথা বর্ণনা করে না যে, খোদ আলী রাঃ রফয়ে ইয়াদাইন করতেন না। {তাহাবী,মুয়াত্তা মুহাম্মদ, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৫৭, বায়হাকী}
একথাও বলে না যে, হযরত আলী রাঃ এর ছাত্রগণ [যার সংখ্যা হাজারের উপর] দের মাঝে কেউ রফয়ে ইয়াদাইন করতেন না। {মুসান্নাফে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৬১}
একথাও বলে না যে, কুফাবাসী পূর্বাপর কখনোই রফয়ে ইয়াদাইন করতো না। {আততালীকুল মুজাদ্দিদ-৩/৯১}
আর ইমাম মারওয়াজী রহঃ বলেনঃ لا نعلم مصرا من امصار تركوا بإجماعهم رفع اليدين عند الخفض والرفع إلا اهل الكوفة (التعليق المجدد-৯১) অথাৎ আহলে কুফার মাঝে সর্বদা তরকে রফয়ে ইয়াদাইন এর উপর ঐক্যমত্ব ছিল। একটি উপমাও রফয়ে ইয়াদাইন এর উপর পাওয়া যায় না। না কুফায় বসবাসকারী সাহাবা থেকে না কোন তাবেয়ী বা তাবে তাবেয়ী থেকে। তবে অন্য শহরগুলোতে তরকে রফয়ে ইয়াদাইন এর উপর ইজমা ছিল না। কেউ কেউ কখনো সখনো তা করেও বসতেন।

গায়রে মুকাল্লিদদের খেয়ানত ও মুনাফিকী

সুনানে আবু দাউদের হাওয়ালা দিয়ে হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ এর একটি হাদীস রফয়ে ইয়াদাইন এর প্রমাণবাহী একটি হাদীস নকল করেছে। অথচ এ ব্যাপারে সহীহ হাদীস বুখারীর ১/১১০, সহীহ মুসলিমের ১/১৬৮, জামে তিরমিজীর ১/৬৪ এ হাদীস বিদ্যমান। যে হাদীসে রফয়ে ইয়াদাইন এর কোন উল্লেখই নেই।
আবু দাউদে রফয়ে ইয়াদাইন এর কথা উল্লেখকারী বর্ণনাকারী “ইয়াহইয়া বিন আইয়ুব” হল জঈফ। {মিযানুল ইতিদাল}
এ কারণে হুফ্ফাজদের বিপরীত এ হাদীস মুনকার। এরকম মুনকার উল্লেখ করেছে।
কিন্তু এ হাদীসে সারা জীবন রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন একথা উল্লেখ নেই। হ্যাঁ, এর পর আবু দাউদেই হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ, হযরত বারা বিন আযেব রাঃ, হযরত জাবের বিন সামুরা রাঃ এর তরকে রফয়ে ইয়াদাইন তথা হাত না উঠানো সংক্রান্ত হাদীস আছে। এগুলো আর নকল করেনি।
খেয়ানত করা আহলে হাদীসের নিদর্শন নয়, বরং মুনাফেকের আলামত।
তারপর সুনানে নাসায়ীর হযরত ওয়াইল রাঃ এর জঈফ হাদীস রফয়ে ইয়াদাইন এর পক্ষে নকল করে। যাতে রফয়ে ইয়াদাইন সর্বদার জন্য প্রযোজ্য একথা উল্লেখ নেই। সাথে সাথে এরপরের আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর রফয়ে ইয়াদাইন না করার হাদীসটি ছেড়ে দিয়ে দিয়েছে। উল্লেখ করেনি।
এটা এমন ধোঁকা, যেমন কোন খৃষ্টান বাইতুল মুকাদ্দাসওয়ালা হাদীস নকল করে, অথচ বাইতুল্লাহর নাম উল্লেখই করে না।
এছাড়া আরেক মিথ্যা এই বলে যে, এক লাখ চৌচল্লিশ হাজার সাহাবাগণ নাকি রফয়ে ইয়াদাইন করতেন।
একথাটি একটি বানোয়াট ও মিথ্যাচার। একথার কোন ভিত্তি নেই। একথাটি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর মদীনায় দ্বিতীয়বার আগমণ এর দিকে নিসবত করা। অথচ আবু দাউদে দ্বিতীয়বার আগমণের সময় শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

রফয়ে ইয়াদাইন রহিত হওয়ার আলোচনা

গায়রে মুকাল্লিদদের কতিপয় আলেম অপূর্ণাঙ্গ হাওয়ালা নকল করে পরিশেষে মোল্লা আলী কারী হানাফী রহঃ এর নারায়ে হকের শিরোনাম লিখে “মুওজুআতে কাবীর” এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলে যে, রফয়ে না করা সম্বলিত সকল হাদীস বাতিল।
এর দ্বারা ভাবটা এমন যেন যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে গেছে!
কিন্তু এ কর্মটি এমন ধোঁকা, যা কোন কাফেরের কিতাবেও পাওয়া দুস্কর। মোল্লা আলী কারী রহঃ এ বক্তব্যের জোরদারভাবে বাতিল সাব্যস্ত করেছেন। পুরো চব্বিশ লাইনে তরকে রফয়ে ইয়াদাইনের হাদীস উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি রফয়ে ইয়াদাইনকে মানসুখ তথা রহিত প্রমাণ করেছেন।
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের স্বভাবই হল মিথ্যাকে গ্রহণ করা। সত্যকে সহ্যই করতে পারেন না। এ কারণেই নিজেদের হাদীস অনুসারী দাবি করে তরকে রফয়ে ইয়াদাইনসহ অনেক সহীহ হাদীসকে স্পর্ধার সাথে অস্বিকার করে। হাদীস অস্বিকারকারী দল মুনকিরীনে হাদীস থেকেও আগে বেড়ে হাদীস নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে থাকে।
১২১
মৌলবী মুহাম্মদ ইউসুফ জিপুরী “হাকীকাতুল ফিক্বহ” এর ১৯৪ পৃষ্ঠায় লিখেনঃ “রুকুর আগে পরের রফয়ে ইয়াদাইনের সত্যতা- [হেদায়া-১/৩৮৪, শরহে বেকায়া-১০২] এ উভয় হাওয়ালা পরিস্কার মিথ্যাচার। আল্লাহ তাআলা এমন মিথ্যাচার থেকে জাতিকে হেফাযত করুন।
১২২
আরো লিখেছে যে, “রফয়ে ইয়াদাইনের হাদীস তরকে রফয়ে ইয়াদাইন থেকে শক্তিশালী। [হেদায়া-১/৩৮৯] পরিস্কার মিথ্যা কথা। এমন কথা হেদায়াতে নেই।
১২৩
রফয়ে ইয়াদাইন না করার হাদীস দুর্বল। [শরহে বেকায়া-১০২] একেবারে মিথ্যাচার এ বক্তব্য। এমন কথা শরহে বেকায়ায় নেই।
১২৪
রফয়ে ইয়াদাইন না করার হাদীস দুর্বল। [হেদায়া-১/৩৮৬] একেবারে মিথ্যাচার এ বক্তব্য। এমন কথা হেদায়ায় নেই।
১২৫
সত্য কথা হল, রাসূল সাঃ থেকে রফয়ে ইয়াদাইন সহীহভাবে প্রমাণিত। [হেদায়া-১/৩৮৬] পরিস্কার মিথ্যা কথা। একথা হেদায়ায় নেই।
১২৬
যে রফয়ে ইয়াদাইন করে তার সাথে বিতর্ক জায়েজ নয়। {হেদায়া-১/৩৮৯] একথাও মিথ্যাচার। হেদায়া এ কথা নেই।

নোট

উল্লেখিত প্রশ্নের মাঝে প্রশ্ন নং ১২১ এবং ১২৬ এর মাঝে যে হাওয়ালা দেয়া হয়েছে তা হেদায়া ও শরহে বেকায়ার। এ উভয় কিতাব আরবীতে লিখা। এর মূল ইবারতের আরবীটা উল্লেখ করুন। এতে কি এরূপ অনুবাদ করা হয়েছে? যেমন তারা করেছেন? আল্লাহ তাআলা মিথ্যাচার থেকে জাতিকে হিফাযত করুন।
একটু লক্ষ্য করুন! এক মাসআলায় এত মিথ্যাচার ও ধোঁকা আপনার আর কোন ফিরক্বায় পাবেন কি না? সন্দেহ আছে।
আফসোস!
ওরা এসব মিথ্যাচার ও ধোঁকা কুরআন ও হাদীসের নামে করে বেড়াচ্ছে। আমাদের যে সকল ভাইয়েরা তাদের প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়েছেন, আর এটা ভাবছেন যে, এ দলটি কুরআন ও হাদীসের খাদেম। তারা দয়া করে এ দলের মিথ্যাচার ও ধোঁকাবাজীর ব্যাপারে আশা করি একটু চিন্তা ভাবনা করবেন, যা কুরআন ও হাদীসের নামে করা হচ্ছে।
১২৭
রুকুর আগে তাকবীর একটি না দু’টি?
যদি গায়রে মুকাল্লিদরা দুই তাকবীর বলে। এ হিসেবে যে, একটি তাকবীরে তাহরীমার সাথে আরেকটি রুকুতে যাওয়ার সময়।
তাহলে এ বক্তব্যটি পরিস্কারভাবে হাদীসের খেলাফ। কেননা, বুখারীর হাদীসে এসেছে যে, চার রাকাত নামাযে বাইশটি তাকবীর। রুকুর আগেই দুই তাকবীর হলে তাকবীরতো হয়ে যাবে ত্রিশের অধিক। তাহলে হাদীস অনুসরণ হল কিভাবে?
১২৮
যদি বলে যে, তাকবীর একটি। তাহলে এটি হবে রুকুতে যাওয়ার তাকবীর তাকবীরে তাহরিমা নয়। কারণ হাদীসে এসেছে يكبر عن كل خفض ورفع
তথা প্রতিটি উঠা-নোয়ায় তাকবীর রয়েছে। এ কারণেই এসব তাকবীরকে তাকবীরে ইন্তিকাল তথা পরিবর্তনকালীন তাকবীর বলা হয়। তাহলে তাকবীরে তাহরিমার সময় আর তাকবীর থাকে না, তখন রফয়ে ইয়াদাইন করাটা তাকবীরবিহীন হয়ে যায়। আর তাসবীহ ছাড়া হাত উঠানো কি কোন ইবাদত? এর জবাব কি?
১২৯
রুকুর তাসবীহ একবার বলা জায়েজ না জায়েজ? কেননা, বুখারী মুসলিমে কোন সংখ্যার কথা উল্লেখ নেই।
১৩০
কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ বলার হাদীস জঈফ। কারণ এ হাদীসের রাবী আউন এর ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে শ্রবণ প্রমানিত নয়। আর ইসহাক বিন ইয়াযিদ মাজহুল রাবী। তাহলে এক্ষেত্রে কতবার তাকবীর বলবে সহীহ হাদীসের আলোকে?
১৩১
দশবার পড়ার বর্ণনা নাসায়ীতে এসেছে। এ হাদীসও জঈফ। কারণ এতে ওহাব বিন মানূস মাসতুর।
১৩২
রাসূল সাঃ শুধুমাত্র سبحان ربى العظيم এর হুকুম দিয়েছেন। {আবু দাউদ, হাদীস নং-৮৮৬, ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৯০} এক্ষেত্রে অন্য কোন তাসবীহ পড়া জায়েজ আছে? পড়লে নামায হবে কি?
১৩৩
কেউ যদি রুকুতে কোন তাসবীহই না পড়ে তাহলে তার নামায হবে। {সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১০৫৩} এর উপর গায়রে মুকাল্লিদদের আমল নেই কেন?
১৩৪
যদি কেউ রুকুতে সেজদার তাসবীহ পড়ে, তাহলে সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হবে? না নামায বাতিল হয়ে যাবে?
১৩৫
নাসায়ী [উর্দু অনুবাদ-১/৩৪৯] ও আবু দাউদ [উর্দু অনুবাদ-১/৩৪০] এ রুকুতে জোরে তাকবীর বলার বর্ণনা এসেছে। এ হাদীসের উপর গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের আমল নেই কেন?
১৩৬
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা সর্বদা রুকুতে আস্তে আস্তে তাসবীহ বলেন, এর স্বপক্ষে একটি সহীহ সরীহ হাদীস পেশ করুন।
১৩৭
রুকুতে কুরআন পড়া নিষেধ। কেউ যদি ভুলে কুরআনের এক দুই আয়াত পড়ে ফেলে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু আবশ্যক না নামায বাতিল হয়ে যাবে?
১৩৮
নাসায়ী শরীফে রুকুতে ছয় ধরণের তাকবীরের কথা উল্লেখ আছে। রাসূল সাঃ সব ক’টি সর্বদা পড়তেন? নাকি একটি পড়তেন? আমাদের জন্য কোনটি পড়ার হুকুম?
১৩৯
হাকীম মুহাম্মদ সাদেক শিয়ালকুটি সাহেব রুকুতে চারটি দুআর কথা বুখারী মুসলিমের হাওয়ালা দিয়ে উল্লেখ করেছেন। অথচ না বুখারীতে আছে, না মুসলিমে আছে। যদি থাকে তাহলে পেশ করুন।
১৪০
রুকু থেকে উঠার সময় ইমাম জোরে আর মুক্তাদী আস্তে তাকবীর বলে থাকে, এ পার্থক্যের কী দলিল আছে? পেশ করুন।
১৪১
কতিপয় গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা রুকু থেকে উঠে আবার হাত বাঁধে। আর কেউ কেউ ছেড়ে দেয়। এ উভয় আমল কোন হাদীস অনুযায়ী করা হয়?
১৪২
রুকু থেকে উঠার সময়ের তাকবীর মুক্তাদীর জোরে বলার বর্ণনা নাসায়ীতে আছে। গায়রে মুকাল্লিদরা এর উপর আমল করে না কেন?
১৪৩
রুকু থেকে উঠার তাকবীর ফরজ, না ওয়াজিব না স্ন্নুত? সরীহ হাদীস দেখান।
১৪৪
সেজদার যাওয়া ও উঠার তাকবীর ইমাম জোরে আর মুক্তাদী আস্তে বলে থাকে, এ পার্থক্যের কথা সহীহ সরীহ হাদীস দিয়ে দেখান।
১৪৫
সেজদার তাসবীহ কতবার পড়তে হবে? সহীহ সরীহ হাদীস দিয়ে প্রমাণ করুন।
১৪৬
সেজদাতে কোন তাসবীহ না পড়লেও তাও জায়েজ আছে। {সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১১৩৬}
গায়রে মুকাল্লিদদের আমল নেই কেন?
১৪৭
হাকীম সাদেক শিয়ালকুটি সাহেব “সেজদার দ্বারা স্তর উঁচু হওয়া} এর শিরোনামে একটি হাদীস এনেছেনঃ عليك بكثر السجود الخ অথচ এ বাক্য রাসূল সাঃ এর হাদীস নয়। সাদেক শিয়ালকুটি সাহেব নিজের পক্ষ থেকে জোড়ে দিয়েছেন।
১৪৮
দুই সেজদার মাঝে হাত খোলা রাখবে? না বেঁধে রাখবে? পরিস্কার হাদীস দ্বারা প্রমাণ করুন।
১৪৯
মুসনাদে আহমদের ৪নং খন্ডের ৩১৭ নং পৃষ্ঠায় হাত হাটুর উপর রাখার কথা আছে, সাথে সাথে দুই সেজদার মাঝে তর্জনী দিয়ে ইশারা করার কথা আছে। এর উপর গায়রে মুকাল্লিদদের আমল নেই কেন?
১৫০
দুই সেজদার মাঝে যে আপনারা আস্তে আওয়াজে আল্লাহর নাম নিয়ে থাকেন এটা কোন হাদীসের ভিত্তিকে করে থাকেন?
১৫১
দুই সেজদার মাঝে জিকির বলা কি ফরজ, না ওয়াজিব না সুন্নত? যদি কেউ না পড়ে তাহলে তার নামায হবে কি? না বাতিল হবে?
১৫২
ইমাম বায়হাকী ২/২২২ এবং ফাতাওয়া ওলামায়ে হাদীস ২/১৪৮ এ আহাদীস ও চার ইমামের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, মহিলা ও পুরুষের নামাযে পার্থক্য আছে। গায়রে মুকাল্লিদরা এসকল হাদীস ও ইজমার বিপরীত শুধু কিয়াসের উপর নির্ভর করে বলে যে, মহিলা ও পুরুষের নামাযে কোন পার্থক্য নেই। হাদীসের চেয়ে তাদের কাছে কিয়াস এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? অথচ কিয়াসকে হারাম বলে ফাতাওয়া দিতেই পারঙ্গম তারা।
১৫৩
রুকু সেজদার তাসবীহ আরবীতে বলা জরুরী? যদি কেউ আরবীতে না বলে অন্য ভাষায় বলে তাহলে তার নামায হবে কি?
১৫৪
এক ব্যক্তি এক সেজদার পর ভুলে দাঁড়িয়ে গেছে, দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে স্মরণ হয়েছে, এখন সে নামায কিভাবে পূর্ণ করবে? স্পষ্ট সহীহ সরীহ হাদীস দিয়ে প্রমাণ দিন।

৬ষ্ঠ পর্ব

আরও জানুন

আমাদের নবী কি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী নন?

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। কোন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস