লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
কিয়ামত কাকে বলে?
وتطلق في عرف الشرع على يوم موت الخلق وعلى يوم قيام الناس لرب العالمين (روح المعانى-5\122)
শরীয়তের পরিভাষায় “কিয়ামত” বলা হয় ঐ দিনকে, যেদিন সৃষ্টিকুল ধ্বংস হবে, এবং সেইদিনকে বলে, যেদিন লোকেরা তার রবের সামনে দাঁড়াবে। [রূহুল মাআনী-৫/১২২]
কিয়ামত বিষয়ে ৪টি আকীদা
১ সব ধ্বংস হয়ে যাবে।
كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ ۚ لَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ [٢٨:٨٨]
আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধবংস হবে। বিধান তাঁরই এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। [সূরা কাসাস-৮৮]
২ ধ্বংসের পর আবার পুনরুত্থান হবে।
ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُونَ [٢٣:١٦]
অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে। [সূরা মুমিনূন-১৬]
৩ পুনরুত্থানের পর হিসাব কিতাব হবে।
إِنَّ إِلَيْنَا إِيَابَهُمْ [٨٨:٢٥] ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُم [٨٨:٢٦]
নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট, অতঃপর তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্ব। [সূরা গাসিয়া-২৫-২৬]
৪ হিসাব কিতাব শেষে জান্নাত ও জাহান্নামের ফায়সালা
فَأَمَّا الَّذِينَ شَقُوا فَفِي النَّارِ لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَشَهِيقٌ [١١:١٠٦]
অতএব যারা হতভাগ্য তারা দোযখে যাবে, সেখানে তারা আর্তনাদ ও চিৎকার করতে থাকবে। [সূরা হুদ-১০৬]
وَأَمَّا الَّذِينَ سُعِدُوا فَفِي الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا [١١:١٠٨]
আর যারা সৌভাগ্যবান তারা বেহেশতের মাঝে, সেখানেই চিরদিন থাকবে,[সূরা হুদ-১০৮]
কিয়ামত আসবেই!
إِنَّ السَّاعَةَ لَآتِيَةٌ لَّا رَيْبَ فِيهَا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُونَ [٤٠:٥٩]
কেয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে সন্দেহ নেই; কিন্ত অধিকাংশ লোক বিশ্বাস স্থাপন করে না। [সূরা গাফির-৫৯]
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَأْتِينَا السَّاعَةُ ۖ قُلْ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتَأْتِيَنَّكُمْ [٣٤:٣]
কাফেররা বলে আমাদের উপর কেয়ামত আসবে না। বলুন কেন আসবে না? আমার পালনকর্তার শপথ-অবশ্যই আসবে। [সূরা সাবা-৩]
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ ۚ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ [٢٢:١]
হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। [সূরা হজ্জ-১]
কিয়ামত কখন?
يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي ۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ۚ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً ۗ يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ اللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ [٧:١٨٧]
আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দিন এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তা অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও যমীনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের উপর আসবে অজান্তেই এসে যাবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। বলে দিন, এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর নিকটই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না। [সূরা আরাফ-১৮৭]
إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ [٣١:٣٤]
নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। [সূরা লুকমান-৩৪]
يَسْأَلُكَ النَّاسُ عَنِ السَّاعَةِ ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ اللَّهِ ۚ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُونُ قَرِيبًا [٣٣:٦٣]
লোকেরা আপনাকে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, এর জ্ঞান আল্লাহর কাছেই। আপনি কি করে জানবেন যে সম্ভবতঃ কেয়ামত নিকটেই। [সূরা আহযাব-৬৩]
তারিখ বলা হয়নি কেন?
إِنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ أَكَادُ أُخْفِيهَا لِتُجْزَىٰ كُلُّ نَفْسٍ بِمَا تَسْعَىٰ [٢٠:١٥]
কেয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই; যাতে প্রত্যেকেই তার কর্মানুযায়ী ফল লাভ করে। [সূরা ত্বহা-১৫]
কিয়ামত নিকটেই
اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانشَقَّ الْقَمَرُ [٥٤:١]
কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। [সূরা ক্বামার-১]
اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُّعْرِضُونَ [٢١:١]
মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। [সূরা আম্বিয়া-১]
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّمَا أَجَلُكُمْ فِيْ أَجَلِ مَنْ خَلَا مِنْ الْأُمَمِ مَا بَيْنَ صَلَاةِ الْعَصْرِ إِلَى مَغْرِبِ الشَّمْسِ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্বের যেসব উম্মাত অতীত হয়ে গেছে তাদের অনুপাতে তোমাদের অবস্থান হলো ‘আসরের সালাত এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়টুকুর সমান। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৪৫৯]
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِنَّمَا بَقَاؤُكُمْ فِيمَا سَلَفَ قَبْلَكُمْ مِنَ الْأُمَمِ كَمَا بَيْنَ صَلاَةِ الْعَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ
সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রহ.) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, আগেকার উম্মাতের স্থায়িত্বের তুলনায় তোমাদের স্থায়িত্ব হলো ‘আসর হতে নিয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের ন্যায়। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৭]
بعثت والساعة كهاتين (صحيح البخارى، رقم-4936)
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আসরের নামাযের পর কিয়ামত সম্পর্কিত লম্বা খুতবা মাগরিব ছুঁই ছুঁই সময় হয়ে গেল।
রাবী বলেন, আমরা সূর্যের দিকে তাকাতে লাগলাম যে, তা এখনো অবশিষ্ট আছে কি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
أَلاَ إِنَّهُ لَمْ يَبْقَ مِنَ الدُّنْيَا فِيمَا مَضَى مِنْهَا إِلاَّ كَمَا بَقِيَ مِنْ يَوْمِكُمْ هَذَا فِيمَا مَضَى مِنْهُ
জেনে রাখ! তোমাদের এই দুনিয়ার যতটুকু অতীত হয়ে গেছে, সেই হিসাবে এতটুকুও আর অবশিষ্ট নেই যতটুকু আজকে এই দিনের অতিবাহিত হয়েছে তার তুলনায় যতটুকু অবশিষ্ট আছে। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২১৯১]
কিয়ামতের আলামত কত প্রকার?
তিন প্রকার। যথা-
১ আলামাতে বায়িদা। যা প্রকাশিত হয়ে গেছে।
২ আলামাতে মুতাওয়াসসিতা। যা কিছু প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু শেষ হয়নি। আরো হবে।
৩ আলামাতে ক্বরীবা। যা বড় আলামত। একের পর এক প্রকাশিত হয়ে দ্রুত কিয়ামত হয়ে যাবে। [আলইশাআহ লিআশরাতিছ ছাআহ-১৬]
আলামাতে বায়িদা
১ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন। [বুখারী, হাদীস নং-৪৯৩৬]
২ নবীজীর মৃত্যু।
৩ বাইতুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের হাতে বিজয়।
৪ হযরত আউফ বিন মালেক রাঃ এর অসুস্থ্য হয়ে শাহাদতবরণ।[ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪০৪২]
৫ উমর রাঃ এর শাহাদাত। [বুখারী, হাদীস নং-৫২৫]
৬ উসমান রাঃ এর শাহাদত। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৭/১৯২]
৭ জঙ্গে জামাল, জঙ্গে সিফফীন, হাররাহ এর ঘটনা এবং হযরত হুসাইন রাঃ এর শাহাদত। [তাবারানী কাবীর-৯৯৫, মুসতাদরাক হাকেম-৫৫৭৩, ৪৬১০, বুখারী, হাদীস নং-৭১২১, ফাতহুল বারী-১২/৩০৩, ৮৫, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬৫২৪]
৮ তাতারী ফিতনা। [বুখারী, হাদীস নং-২৯২৮, ২৯২৭, শরহে নববী-১৮/৩৭]
৯ হেজায থেকে আগুন বের হওয়া।
أَبُو هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَخْرُجَ نَارٌ مِنْ أَرْضِ الْحِجَازِ تُضِيءُ أَعْنَاقَ الإِبِلِ بِبُصْرَى
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না হিজাযের যমীন থেকে এমন আগুন বের হবে, যা (ইরাকের) বসরা শহরের উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দেবে। [বুখারী, হাদীস নং-৭১১৮]
এ ঘটনা হয়েছে ৬৫৪ হিজরীতে। মদীনার এক উপত্যাকা থেকে তা ভড়কে উঠে। এক মাস পর্যন্ত স্থীর ছিল। আগুনটির দৈর্ঘ ১২ মাইল ও প্রশস্ততা ছিল ৪ মাইল। যে পাহাড় পর্যন্ত তা পৌছতো তা মোমের মত গলিয়ে দিতে। স্ফুলিঙ্গ থেকে বিজলীর মত মত ও ও সমুদ্রের ঢেউয়ের মত গর্জন শোনা যেতো। মদীনার কাছে এসে তা থেমে যায়। আগুনের আলোয় রাত ও দিনের মত আলোকিত হয়েছিল।
মদীনা থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থানকারী বসরাবাসী একথার স্বাক্ষ্য দিয়েছে যে, হেযাজ থেকে প্রকাশিত উক্ত আগুনের আলোতে তারা তাদের উটনীগুলোর গর্দান বহুবার আলোকিত হতে দেখেছে। [শরহে নববী-১৮/২৮, আততাজকিরাহ বিআহওয়ালিল মাওতা ওয়া উমূরিল আখিরাহ, লিলকুরতুবী-১২৩৬, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া]
১০ খারেজীদের উদ্ভব। [বুখারী-৬৯৩০]
১১ রাফেজীদের উদ্ভব।
عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَظْهَرُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ يُسَمَّوْنَ الرَّافِضَةَ يَرْفُضُونَ الْإِسْلامَ»
হযরত আলী বিন আবী তালেব রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: আখেরী জমানায় একদলের আবির্ভাব হবে। যাদের নাম হবে রাফেজী। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮০৮, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪৯৯]
আলামাতে মুতাওয়াসসিতা
১ মূর্খতার সয়লাব হবে
مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يَقِلَّ العِلْمُ، وَيَظْهَرَ الجَهْلُ، (بخارى-81)
কিয়ামতের আলামত হল, ইলম কমে যাবে ও মূর্খতা বৃদ্ধি পাবে। [বুখারী, হাদীস নং-৮১]
مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ، أَنْ يُرْفَعَ العِلْمُ، وَيَظْهَرَ الجَهْلُ، (بخارى-6808)
কিয়ামতের আলামত হল, ইলম উঠে যাওয়া ও মূর্খতা ছড়িয়ে পড়া। [বুখারী, হাদীস নং-৮১]
ইলম কিভাবে উঠে যাবে কিভাবে?
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ العَاصِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ العِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا، فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا» (صحيح البخارى-100)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তাআলা বন্দার অন্তর থেকে ইলম বের করে উঠিয়ে নিবেন না, বরং আলিমদের উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমেই ইলম উঠিয়ে নিবেন। যখন কোন আলিম বাকী থাকবে না, তখন লোকেরা জাহিলদেরই নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তারা না জেনেই ফাতওয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে, আর অপরকেও গোমরাহ করবে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০০]
অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ يُبْغِضُ الْفُحْشَ وَالتَّفَحُّشَ، وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُخَوَّنَ الْأَمِينُ، وَيُؤْتَمَنَ الْخَائِنُ، حَتَّى يَظْهَرَ الْفُحْشُ وَالتَّفَحُّشُ، وَقَطِيعَةُ الْأَرْحَامِ، وَسُوءُ الْجِوَارِ،
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা (কথা ও কাজে) নির্লজ্জতা এবং নির্দ্ধিধায় অশ্লীলতায় নিমজ্জিতকে অপছন্দ করেন। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ সেই সত্ত্বার কসম!কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত কায়েম হবে না, যতক্ষণ না আমানতদারকে খিয়ানতকারী ও খিয়ানতকারীকে আমানতদার বলা হবে। এমন কি অশ্লীলতা ও বেলেল্লেপনা ছড়িয়ে পড়বে। এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নতা এবং খারাপ প্রতিবেশী হবে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৬৮৭২]
الفاحش: ذو الفحش فى كلامه وفعاله، والمتفحش: الذى يتكلف ذلك ويتعمده (النهاية لابن الاثير-3\415)
أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ: «إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يَظْهَرَ الشُّحُّ، وَالْفُحْشُ، وَيُؤْتَمَنُ الْخَائِنُ، وَيُخَوَّنُ الْأَمِينُ، وَيَظْهَرُ ثِيَابٌ يَلْبَسُهَا نِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ، ويَعْلُو التُّحوتُ الْوُعُولَ»
নিশ্চয় কিয়ামতের আলামতসমূহের মাঝে রয়েছে যে, কৃপণতা, অশ্লীলতা প্রকাশ পাবে। আমানতদার খিয়ানতকারী এবং খিয়ানতকারীকে আমানতদার মনে করা হবে। এমন সব কাপড় আবিস্কৃত হবে যা মহিলারা পরিধান করবে। এসব কাপড় পরিধান করার পরও তারা উলঙ্গই থাকবে। নিকৃষ্ট লোকগুলো উত্তম লোকদের উপর বিজয়ী হবে। [আলমু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৭৪৮]
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ، وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا ”
আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, কিয়ামাতের কিছু ‘আলামত হলঃ ‘ইল্ম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতা প্রসারতা লাভ করবে, মদপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং যেনা ব্যভিচার বিস্তার লাভ করবে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৮০]
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَظْهَرَ الْجَهْلُ وَيَفْشُوَ الزِّنَا وَتُشْرَبَ الْخَمْرُ وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ وَيَقِلَّ الرِّجَالُ حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً قَيِّمٌ وَاحِدٌ ”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের নিদর্শন হলোঃ ইলম (দীনি জ্ঞান) উঠে যাবে, মূর্খতার প্রসার ঘটবে, ব্যাপকহারে যিনা-ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, মদ্য পান করা হবে, স্ত্রীলোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন তত্ত্বাবধায়ক পুরুষ থাকবে। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২২০৫]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَا تَفْنَى هَذِهِ الْأُمَّةُ حَتَّى يَقُومَ الرَّجُلُ إِلَى الْمَرْأَةِ فَيَفْتَرِشَهَا فِي الطَّرِيقِ، فَيَكُونَ خِيَارُهُمْ يَوْمَئِذٍ مَنْ يَقُولُ لَوْ وَارَيْتَهَا وَرَاءَ هَذَا الْحَائِطِ»
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ। এ উম্মত ধ্বংস হবে না যতক্ষণ না এমন সময় আসবে যে, লম্পট পুরুষ নারীর সাথে রাস্তার মাঝেই যৌনকর্মে লিপ্ত হবে। তখন তাদের মাঝে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই হবে, যে বলবে যে, যদি তোমরা গাছের আড়ালে গিয়ে কাজটা করতে তাহলে ভালো হতো। [মুসনাদে আবী ইয়ালা মুসিলী, হাদীস নং-৬১৮৩]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَتَسَافَدُوا فِي الطَّرِيقِ تَسَافُدَ الْحَمِيرِ» قُلْتُ: إِنَّ ذَاكَ لَكَائِنٌ؟ قَالَ: «نَعَمْ لَيَكُونَنَّ»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না, যতক্ষণ না এমন সময় আসবে যে, লোকেরা গাধার মত রাস্তায় পরস্পর যিনায় লিপ্ত হবে। আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ বললেন, এমন কি সত্যিই হবে? নবীজী বললেন, অবশ্যই হবে। [সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৭৬৭, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৭২৭৭]
وَيَلْعَنُ آخِرُ الْأُمَّةِ أَوَّلَهَا، أَلَا وَعَلَيْهِمْ حَلَّتِ اللَّعْنَةُ حَتَّى يَشْرَبُوا الْخَمْرَ عَلَانِيَةً حَتَّى تَمُرَّ الْمَرْأَةُ بِالْقَوْمِ، فَيَقُومُ إِلَيْهَا بَعْضُهُمْ، فَيَرْفَعُ بِذَيْلِهَا كَمَا يُرْفَعُ بِذَنَبِ النَّعْجَةِ، فَقَائِلٌ يَقُولُ: يَوْمَئِذٍ أَلَا وَارِ مِنْهَا وَرَاءَ الْحَائِطِ، فَهُوَ يَوْمَئِذٍ فِيهِمْ مِثْلُ أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ فِيكُمْ، فَمَنْ أَمَرَ يَوْمَئِذٍ بِالْمَعْرُوفِ، وَنَهَى عَنِ الْمُنْكَرِ فَلَهُ أَجْرُ خَمْسِينَ مِمَّنْ رَآنِي، وَآمَنَ بِي وَأَطَاعَنِي وَتَابَعَنِي
হযরত আবূ উমামা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:এ উম্মতের আখেরী লোকেরা প্রথম যুগের লোকদের উপর অভিশাপ বর্ষণ করবে। ভালো করে শোন! তারপর আল্লাহর পক্ষ থেকে অভিশাপ তাদের উপর নেমে আসবে। ফলে তারা প্রকাশ্যে মদপান করবে। তাদের অবস্থা এতোটাই নিচে নামবে যে, রাস্তায় কিছু লোকের সামনে দিয়ে একজন মহিলা হেটে যাবে। তাদের মাঝে কিছু লোক ঐ মহিলার সাথে যিনা করার জন্য মহিলার কাপড় এমনভাবে আকড়ে ধরবে, যেমনিভাবে কোন দুম্বার লেজ ধরা হয়। এমতাবস্থায় কোন এক ব্যক্তি বলে উঠবে যে, মহিলাকে নিয়ে দেয়ালের আড়ালে চলে যাও। সেদিন এমন কথা যে বলতে পারবে, সেই ব্যক্তি তাদের মাঝে সওয়াব ও নেকের ক্ষেত্রে এমন হবে, যেমন আবু বকর রাঃ এবং উমর রাঃ তোমাদের মাঝে মর্যাদা রাখে। সেইদিন যেসব লোকেরা নেক কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে পারবে, তারা আমাকে দেখেছে, আমার উপর ঈমান এনেছে এবং আমার আনুগত্য করেছে ও অনুসরণ করেছে এমন পঞ্চাশ ব্যক্তির নেক ও বদলা অর্জন করবে। [আলমু’জামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-৭৮০৭]
জারজ সন্তান বৃদ্ধি পাবে
عَنْ مَيْمُونَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا تَزَالُ أُمَّتِي بِخَيْرٍ مَا لَمْ يَفْشُ فِيهِمْ وَلَدُ الزِّنَا، فَإِذَا فَشَا فِيهِمْ وَلَدُ الزِّنَا، فَيُوشِكُ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ بِعِقَابٍ»
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবি হযরত মাইমুনা রাঃ থেকে বর্ণিত। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: আমার উম্মত থেকে কল্যাণ বন্ধ হবে না, যতক্ষণ না তাদের মাঝে জারজ সন্তান বেড়ে যায়। যখন তাদের মাঝে জারজ সন্তান বিস্তার লাভ করবে, তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ব্যাপক আযাবের সম্মুখিন করবেন। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬৮৩০, মু’জামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-৫৫]
يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَكْثُرَ أَوْلَادُ الزِّنَا» . قُلْتُ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَهُمْ مُسْلِمُونَ؟ قَالَ: نَعَمْ. قُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَالْقُرْآنُ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ؟ قَالَ: نَعَمْ. قُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَأَنَّى ذَلِكَ؟ قَالَ: يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يُطَلِّقُ الرَّجُلُ الْمَرْأَةَ، ثُمَّ يَجْحَدُهَا طَلَاقَهَا، فَيُقِيمُ عَلَى فَرْجِهَا، فَهُمَا زَانِيَانِ مَا أَقَامَا
হে ইবনে মাসঈদ: নিশ্চয় কিয়ামতের আলামাতের মাঝে একটি হল, জারজ সন্তান বৃদ্ধি পাওয়া। (রাবী উতাই বলেন) আমি জিজ্ঞাসা করলাম: হে আবূ আব্দুর রহমান! তারা কি মুসলমান হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, হে আবূ আব্দুর রহমান! অথচ কুরআন তাদের সামনেই থাকবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, এরপরও? তিনি বললেন, লোকদের মাঝে এমন এক সময় আসবে, যখন স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিবে। তারপর তালাক দেয়াকে অস্বিকার করবে। তারপর স্ত্রীর সাথে ঘরসংসার অব্যাহত রাখবে। ফলে উভয়েই ব্যাভিচারী হবে। [মু’জামুল আওসাত লিততাবারানী, হাদীস নং-৪৮৬১]