প্রশ্ন
আমি একটা মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করতাম।তবে আমি মোটামুটি নামাজ কালাম পড়তাম। আর পর্দা বয়ান শুনতে শুনতে পর্দা মুল্য বুঝতে পারলাম। তাই আমি মেয়েটির সাথে সব সময় পর্দার কথা বলতাম। তাকে বোঝাতাম। এক সময় সে আমার কথা শুনে পর্দা করা শুরু করলো। এখন সে খাছ পর্দা করে। তাই আমি তার সাথে এখন সব সম্পর্ক বাদ দিয়ে দিছি যেহুত সে পর্দা করে আর আমিও তো গায়রে মাহারাম পুরুষ।
এখন প্রশ্ন হলো মেয়েটি তার প্রয়োজনি মাসালা মাসায়েল জিজ্ঞাস করার মত কাউকে পাচ্ছে না। কেননা সে গ্রামে থাকে সেখানে কোন ভাল হক্বানি আলেম নেই এমনি কি কোন জানলেওয়ালা মহিলাও নেই। আগে কিছু জানার দরকার হলে আমার কাছে জিজ্ঞাস করত। আমি আমাদের মসজিদের ইমাম মুফতি ইয়াহইয়া হাসান দাঃবাঃএর কাছে জিজ্ঞাস করে বলে দিতাম।কিন্ত এখন কথা বলিনা বিধায় তা আর হচ্ছে না। তাই আমি কি শুধু দ্বীনের প্রয়োজনে তার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি? তার যে যে মাসায়েল গুলা প্রয়োজন তা হক্বানি আলেমদের কাছে থেকে জেনে বলে দিতে পারি? তবে তার সাথে কথা বললে আমি তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি আর সেও আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে সেটা সে মুখে না বললেও আমি বুঝি। এমন অবস্থায় কি করতে পারি
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
যেহেতু আপনার সাথে উক্ত মেয়েটির আগে নাজায়েজ প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এখন তওবা করেছেন। আবার কথা বলার দ্বারা আকর্ষণ তৈরী হচ্ছে। তাই তার সাথে মাসআলা জানার জন্যও কথা বলা জায়েজ হবে না।
তাকে বলুন, অন্য কোন ব্যবস্থা করে নিতে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ ۚ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَىٰ مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ [٢٤:٢١]
হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন। [সূরা নূর-২১]
مُحْصَنَاتٍ غَيْرَ مُسَافِحَاتٍ وَلَا مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ [٤:٢٥]
তাদের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা হবে, তারা কেবল কাম-চরিতার্থকারিনী এবং গুপ্ত প্রণয় গ্রহণকারীণী হবে না। [সূরা নিসা-২৩]
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ»
উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পুরুষের জন্য স্ত্রীজাতি অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা আমি রেখে গেলাম না। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫০৯৬]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ، وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا، فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ، فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ، فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ»
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেনঃ নিশ্চয় দুনিয়া লোভনীয় ও সবুজ-শ্যামল। আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে তোমাদেরকে খলীফা (শাসক) বানিয়েছেন। তিনি দেখবেন যে, তোমরা কেমন কাজ করো। সাবধান! দুনিয়া সম্পর্কে সর্তক হও এবং নারীদের সম্পর্কেও সর্তক হও। নিশ্চয় বনী ইসরাইলের মাঝে প্রথম ফিতনা নারীদের মাধ্যমেই হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৭৪২]
، أَلَا لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সাবধান! কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে নির্জনে মিলিত হলে সেখানে অবশ্যই তৃতীয়জন হিসাবে শয়তান অবস্থান করে (এবং পাপাচারে প্ররোচনা দেয়)। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২১৬৫]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com