প্রশ্ন
সেকুলার গনতন্ত্রের ভোট দেয়া কতটুকু শরীয়ত সম্মত? আর ভোট দিলে কি আমি সেকুলারদের জীবন বিধান মেনে নিলাম? যেহেতু কুরআন ই একমাত্র জীবন বিধান (ভোটের মাধ্যমে কি সেকুলারদের জীবন বিধান স্বীকৃতি দেয়া হয় না?) যেহেতু না দেয়া এক্ষেত্রে আমি স্বাধীন?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
ভোট দেয়া জায়েজ আছে। যদিও এরকম ভোটের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামী খিলাফত কায়েম সম্ভব নয়। আর এ গণতান্ত্রিক ভোটের পদ্ধতিও পুরোপুরি শরীয়তসম্মত নয়।
কিন্তু যেহেতু খারাপ কাজকে এবং খারাপ লোককে ক্ষমতাসীন হতে বাধা দেয়া সাধ্যানুপাতে সকলের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে তুলনামূলক খারাপ লোক যাতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত না হতে পারে, এ জন্য নিজের চেষ্টার অংশ হিসেবে ভোট দিতে হবে।
আমার সমর্থনের অভাবে যদি কোন খারাপ লোক ক্ষমতাসীন হয়ে যায়, এর দায়ভার ভোট না দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকা ব্যক্তির উপরও বর্তাবে।
তাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গ ইসলাম সম্মত নয় বিশ্বাস করে কেবল খারাপের তুলনায় ভালোকে সহযোগিতা করার মানসে ভোট দেয়াই শরয়ী দায়িত্ব। ভোট না দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকা জায়েজ নয়।
এর দ্বারা সেক্যুলারদের জীবন মেনে নেবার বিষয় আসবে না।
وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ ۚ وَمَن يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ [٢:٢٨٣
তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে। তোমরা যা কর, আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে জ্ঞাত। {সূরা বাকারা-২৮৩}
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَتَمَ شَهَادَةً إِذَا دُعِيَ إِلَيْهَا فَهُوَ كَمَنْ شَهِدَ بِالزُّورِ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তিকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ডাকা হয়, কিন্তু সে তা দেয় না, তাহলে সে যেন অন্যায়ের পক্ষে সাক্ষ্য দিল। {মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৯৪২, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪১৬৭}
عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِخَيْرِ الشُّهَدَاءِ؟ الَّذِي يَأْتِي بِشَهَادَتِهِ قَبْلَ أَنْ يُسْأَلَهَا
হযরত জায়েদ বিন খালেদ জুহানী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আমি কি তোমাদের বলবো না যে, উত্তম সাক্ষ্য কে? ঐ ব্যক্তি যে, চাওয়া ছাড়াই সাক্ষ্য দিয়ে দেয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭১৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২১৬৮৩, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৬}
وَإِنَّا سَمِعْنَا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الظَّالِمَ فَلَمْ يَأْخُذُوا عَلَى يَدَيْهِ، أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابٍ
হযরত আবু বকর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন। যদি লোকেরা জালিম ব্যক্তিকে দেখেও তাকে বাঁধা না দেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাদের সবার উপর আযাব নাজিল করে দিতে পারেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৩৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৫৩, সুনানে তিরমিজী, [বাশশার] হাদীস নং-২১৬৮, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩০৫}
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «مَنْ أُذِلَّ عِنْدَهُ مُؤْمِنٌ فَلَمْ يَنْصُرْهُ، وَهُوَ يقَدِرُ عَلَى أَنْ يَنْصُرَهُ أَذَلَّهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তির সামনে কোন মুমিনকে অপমান করা হয়, অথচ তাকে সহায়তা করার ক্ষমতা উক্ত ব্যক্তির থাকা সত্বেও সে তাকে যদি সাহায্য না করে, তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে সবার সামনে লাঞ্ছিত করবেন। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৯৮৫, আলমুজামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-৫৫৫৪}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com