প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্ল ওয়া বারকাতু,
জনাব
আমার প্রশ্ন হল ? এক জন ব্যক্তি কে চোররে আপবাদ দিয়ে দিন দুপুর বেলা গন পিটা দিয়া ছিল তার মধ্য আমি ওকে ১টা লাথি মারছিলাম পরে জান তে পারলাম সেই প্রেমের কারনে যেই ঘরে গিয়াছিল তারাই চোর আপবাদ দিয়াছিল এবং পরে মেডিকেল
নেওয়া পর মারা গেল,এখন আমি কি করতে পারি দয়া করে জানাবেন ? আর কিভাবে আমি ক্ষমা চাইব আল্লহর কাছে ?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনার কাজটি খুবই গর্হিত ও খারাপ হয়েছে। কয়েকটি হারাম কাজ এখানে একসাথে সংঘটিত হয়েছে। যথা-
১- লোকটিকে অপবাদ দেয়া।
২- তার উপর জুলুম করে আঘাত করা।
৩- তাকে হত্যায় সহযোগিতা করা।
উল্লেখিত প্রত্যেকটি হারাম কাজ আপনার কর্মটিতে উপস্থিত। তাই কায়মানোবাক্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চান। আর কখনো এমন গোনাহে জড়াবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করুন। আল্লাহ না করুন এ লোক হাশরের ময়দানে আপনার বিরুদ্ধে বিচার দায়ের করলে আপনার মুক্তির কোন উপায় নেই। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে উক্ত লোকটি জন্য দুআ করুন। আর নিজের পাপের জন্য কেঁদে কেঁদে দুআ করুন। তাওবাকারীর প্রার্থনা আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন।
সংবাদ যাচাই ছাড়া প্রতিক্রিয়া দেখানো নিষেধ
ইসলামের বিধান হল, কারো কাছ থেকে কোন সংবাদ আসলেই এর তথ্য তালাশ না করে তা প্রচার করা বা প্রতিক্রিয়া দেখানো কিছুতেই জায়েজ নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ [٤٩:٦]
মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও। {সূরা হুজুরাত-৬}
যাচাই-বাছাই ছাড়া কারো বিরুদ্ধে এ্যাকশন নেয়া বৈধ নয়। পত্রিকার সংবাদ কিংবা কোন ফাসিক ব্যক্তির সংবাদ শুনেই কারো বিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য করা বা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জায়েজ নয়।
মুসলমানকে অপবাদ দেয়া হারাম
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا [٣٣:٥٨]
যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। {সূরা আহযাব-৫৮}
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ [٢٤:٢٣]يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ [٢٤:٢٤] يَوْمَئِذٍ يُوَفِّيهِمُ اللَّهُ دِينَهُمُ الْحَقَّ وَيَعْلَمُونَ أَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ الْمُبِينُ [٢٤:٢٥]
যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকালে ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্যে রয়েছে গুরুতর শাস্তি। যেদিন প্রকাশ করে দেবে তাদের জিহবা, তাদের হাত ও তাদের পা, যা কিছু তারা করত; সেদিন আল্লাহ তাদের সমুচিত শাস্তি পুরোপুরি দেবেন এবং তারা জানতে পারবে যে, অল্লাহই সত্য, স্পষ্ট ব্যক্তকারী। {সূরা নূর-২৩-২৫}
কাউকে অন্যায়ভাবে আঘাত করা হারাম
عن ابن عباس رضي الله عنهما : أن النبي صلى الله عليه و سلم بعث معاذا إلى اليمن فقال ( اتق دعوة المظلوم فإنها ليس بينها وبين الله حجاب )
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্র্ণিত। রাসূল সাঃ হযরত মুয়াজ রাঃ কে ইয়ামেনে পাঠানোর সময় নসিহত করে বলেন-“মজলুমের বদদুআকে ভয় কর। কারণ তার দুআ ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা থাকে না। অর্থাৎ তা তৎক্ষণাৎ কবুল হয়ে যায়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৩১৬}
কাউকে হত্যা করা হারাম
وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۗ وَمَنْ قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا فَلَا يُسْرِفْ فِي الْقَتْلِ ۖ إِنَّهُ كَانَ مَنْصُورًا [١٧:٣٣]
সে প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন; কিন্তু ন্যায়ভাবে। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি তার উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতা দান করি। অতএব, সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত। {সূরা ইসরা ৩৩}
مَنْ يَشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَكُنْ لَهُ نَصِيبٌ مِنْهَا ۖ وَمَنْ يَشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَكُنْ لَهُ كِفْلٌ مِنْهَا ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُقِيتًا [٤:٨٥]
যে লোক সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক সুপারিশ করবে মন্দ কাজের জন্যে সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। {সূরা নিসা-৮৫}
তওবা পূর্ব গোনাহকে মাফ করে দেয়
ِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧]وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا [٤:١٨]
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ।
আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। {সূরা নিসা-১৭-১৮}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।