লেখক– মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকাড়বী রহঃ
অনুবাদঃ লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। যিনি দ্বীন বুঝার জন্য আমাদের ফুক্বাহাদের দিকে মনোনিবেশ করার আদেশ দিয়েছেন (সূরা তাওবা-১২২)।আর শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচতে রাসূল সা. এর অনুসরণ করার সাথে উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী মুজতাহিদদের অনুসরনের আদেশ দিয়েছেন,(সূরা নিসা-৮৩)।আর অগণিত সালাম ও দরূদ ঐ রাহমাতাল্লিল আলামীনের উপর, যিনি ফিক্বহকে কল্যাণ ফক্বীহদের কল্যাণী বলে ঘোষণা দিয়েছেন (বুখারী মুসলিম)।আর মুজতাহিদের সঠিকতার উপর দু’টি পূণ্য, আর ভুলের উপর একটি পূণ্যের ঘোষণা দিয়েছেন। আর বলেছেন যে, “একজন ফক্বীহ শয়তানের উপর হাজারো আবেদ থেকে শক্তিশালী”।আর তার আহলে বাইত ও এবং সাহাবায়ে কিরামের উপর যারা সর্ব প্রকার জান-মাল ও মাতৃভূমি কুরবানী দিয়ে দ্বীনকে ছড়িয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে। তাদের মাঝে দু’টি দল ছিল। একটি ছিল মুজতাহিদদের দল অপরটি মুকাল্লিদদের (মিয়া নজীর হুসাইন প্রণিত মিয়ারুল হক)।
এমন একজনের নামও বলা যাবেনা, যার ইজতিহাদের যোগ্যতাও রাখতেন না, আবার কোন মুজতাহিদের তাক্বলীদ ও করতেন না। যাদের বলা হত গায়রে মুকাল্লিদ। আর তাদের উপর রহমত বর্ষিত হোক তাদের পরের আইয়িম্মায়ে দ্বীন বিশেষ করে চার ইমামদের উপর যাদের সংকলন ও ব্যাখ্যায় কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ হুজুর সা. এর সুন্নাতের উপর আমল করাটা সহজ হয়ে গেছে।
পর সমচার
এই দুনিয়ায় বিভিন্ন ধরণের মানুষ আছে। কিছু লোক এমন আছে যাদের আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের খিদমতের জন্য নির্বাচিত করে নিয়েছেন। যারা রাত দিন তালীম শিক্ষকতা, লিখনীর মাধ্যমে নসীহত ও তাবলীগ করে দ্বীন প্রচার করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে দৃঢ়তা নসীব করুন। আর সর্ব প্রকার শত্রুতা আর ফিতনা থেকে হিফাযত করুন।
এর ঠিক উল্টো কিছু লোক এটাকেই কল্যাণধর্মী কাজ মনে করে যে, সাদাসিধা মুসলমানদের মনে কিছু ওয়াসওয়াসা ঢেলে দিবে, যার ফলে তারা দ্বীন থেকে সরে যাবে। অথবা কমপক্ষে সন্দেহ-সংশয়ে নিপতিত হবে। এমনি এক ব্যক্তির সাথে আমার একদা সাক্ষাৎ হয়।
সে লোকটি এক শ্বাসে নিজের পরিচয় দিল। আরবীতে এমএ ডিগ্রিধারী। ইসলামিয়াতে এমএ। সেই সাথে ওকালতে সার্টিফিকেটও আছে। আর দ্বীনী বিষয়ে রয়েছে প্রচুর পড়াশোনা। রয়েছে অগাধ পান্ডিত্ব।
আহলে হাদীস
লোকটি বলল-আমি আহলে হাদীস! আমি বললাম-আপনার বড় ভাই এখান থেকে উঠে গেল, যে বলেছে সে নাকি আহলে কুরআন।
একথা শুনে লোকটি বলতে লাগল-“আহলে কুরআনের শব্দ ইসলামী পরিভাষায় হাফেজে কুরআনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর ফযীলতের ব্যাপারে আমার দ্বিমত নেই। কিন্তু ইংরেজদের আমলে এই নামটি সুন্নাত অস্বিকারকারীদের রাখা হয়। যারা একটি গোমরাহ ফিরক্বা। এ পবিত্র নাম নিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেয়। কখনো বলে-‘যখন কুরআন সত্য, তো আহলে কুরআন সত্য’।কখনো বলে-‘যখন থেকে কুরআন তখন থেকেই আহলে কুরআন। সকল সাহাবাই আহলে কুরআন ছিলেন’।কখনো হাফেজে কুরাআনের ফাযায়েলকে নিজের উপর প্রয়োগ করে সরল মানুষদের বিভ্রান্ত করে”।
আমি বললাম-“এমনিভাবে ইসলামী সমাজে আহলে হাদীস মুহাদ্দিসীনদের বলা হতো। মুহাদ্দিসীন সনদের বিশ্লেষণ করতেন। আর ইংরেজদের আমলে আহলে হাদীস ফিক্বহ অস্বিকারকারীদের বলা হতে লাগল। আর এসব লোকেরাও সাধারণ মানুষদের এভাবে বিভ্রান্ত করে যে, যখন থেকে হাদীস, তখন থেকেই আহলে হাদীস। সকল সাহাবাই আহলে হাদীস তথা ফিক্বহের অস্বিকারকারী ছিলেন। আবার কখনো কখনো মুহাদ্দিসীনদের ফাযায়েলকে নিজেদের উপর প্রয়োগ করে, যা খুবই গর্হিত কাজ”।
আমি তাকে বললাম-“আপনি যখন আজ পর্যন্ত একটি হাদীসও সনদসহ বিশ্লেষণ করেন নি, তাহলে আপনি কী করে আহলে হাদীস গেলেন?”
লোকটি বলতে লাগল-আমি শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীসকেই মানি। ফিক্বহ এবং কোন উম্মতের সিদ্ধান্তকে মানি না। এজন্য আমরা আহলে হাদীস।
আমি বললাম-কি কুরআন শরীফ প্রায় প্রতিটি মুসলমানদের ঘরে থাকে। আপনি বলুন হাদীস কাকে বলে?
বলতে লাগল-“রাসূল সাঃ এর বক্তব্য, কর্ম এবং তাক্বরীর অর্থাৎ যে কাজটি তার সামনে হয়েছে কিন্তু আল্লাহর নবী কিছু বলেন নি সেগুোলাকে হাদীস বলে।
আমি বললাম-আপনি হাদীসের সে সংজ্ঞা দিলেন তা কুরআনের কোন আয়াতের অনুবাদ?
-কোন আয়াতের নয়।
-তাহলে এ সংজ্ঞাটি কোন হাদীসের অনুবাদ?
-কোন হাদীসেরই না।
-এ সংজ্ঞাটি কুরআনেও নেই, হাদীসেও নেই, তাহলে এ সংজ্ঞাটি আপনি নিলেন কোত্থেকে?
-কোন মুহাদ্দিস উম্মত এটি বর্ণনা করেছেন। আর সর্বপ্রথম কোন উম্মত মুহাদ্দিস কত বছর পর এটি বর্ণনা করেছেন সেটাও আমার মনে নেই।
-আপনার দাবিতো এটা ছিল যে, আপনি এজন্য আহলে হাদীস যে, শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীসের কথা মানেন, কোন উম্মতের কথা মানেন না, অথচ আপনি হাদীসের সংজ্ঞাই এক উম্মত থেকে চুরি করেছেন তাহলে আপনি আহলে হাদীস রইলেন কিভাবে?
নিশ্চুপ হয়ে গেল কথিত আহলে হাদীস লোকটি।
আমি এবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম-কুরআনে কারীমের সকল আয়াতের মত সকল হাদীসও কি মুতাওয়াতির [নিরবচ্ছিন্ন সূত্রাবদ্ধ] এবং চূড়ান্ত সহীহ?
-না। সকল হাদীস মুতাওয়াতির নয়। সব সহীহ ও নয়। বরং অনেক হাদীস দুর্বল আছে। এমনকি জাল হাদীসও আছে।
-আপনি আমাকে শুধুমাত্র একটি হাদীস লিখে দেন যেটাকে আল্লাহ অথবা তার রাসূল সাঃ সহীহ বলেছেন। আর একটি হাদীস এমন দেখান যেটাকে আল্লাহ অথবা তার রাসূল দুর্বল বা জাল বলেছেন।
-একটি হাদীসকেও আল্লাহ ও তার রাসূল সহীহ-হাসান, বা দুর্বল ও জাল বলেন নি।
-তাহলে আপনি কোন হাদীসকে সহীহ, কোন হাদীসকে হাসান, কোন হাদীস দুর্বল ও জাল কি হিসেবে বলেন?
-নিজেদের সিদ্ধান্ত অথবা উম্মতের মুহাদ্দিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাদীসকে সহীহ-দুর্বল ইত্যাদি বলে থাকি।
-তাহলেতো আপনি আহলে রায়, অথবা আহালে রায়ের মুকাল্লিদ তথা অনুসারী হয়ে গেলেন, আহলে হাদীসতো আর বাকি রইলেন না।
এবার লোকটি বেশ ঘাবরে গেল। চিন্তিত হয়ে বলতে লাগল-আপনার কাছে হাদীস ও দুর্বল হওয়ার কি নিদর্শন আছে?
আমি বললাম-যে হাদীসকে চার মুজতাহিদ ইমাম গ্রহণ করেছেন, আর সবার এগুলোর উপর নিরবচ্ছিন্ন আমল আছে আমরা বলি-উক্ত হাদীসকে আল্লাহ ও রাসূল সহীহ বলেন নি, দুর্বলও বলেন নি, তবে ঐক্যমত্বের কারণে এটা সহীহ হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আর যেসব মাসআলায় মতভেদপূর্ণ হাদীস আছে সেসব ক্ষেত্রে মুজতাহিদে আযম রহঃ যে হাদীসের উপর আমল করেছেন, সেই সাথে হানাফীদের এর উপার নিরবচ্ছিন্ন আমল আছে সেটাকে আমরা সহীহ মানি। কেননা আমাদের ইমাম রহঃ বলেছেন যে, “আমার মাযহাব সহীহ হাদীসের উপর”।আর মুজতাহিদের কোন হাদীস অনুযায়ী আমল করাটাই হল মুকাল্লিদদের জন্য জন্য উক্ত হাদীসটি সহীহ। এজন্য আমরা বলি-“যেমন এ হাদীসটিকে আল্লাহ এবং তার রাসূল সাঃ সহীহ বলেন নি, বলেন নি দুর্বলও। আর যেখানে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে সেখানে আল্লাহ তায়ালা মুজতাহিদদের ইজতিহাদ [উদ্ভাবন] করার অধিকার দিয়েছেন। আমাদের ইমাম সাহেব এ হাদীসে উল্লেখ হওয়া মাসআলাকে গ্রহণ করেছেন। এখন যদি তাঁর ইজতিহাদ সঠিক হয়, তাহলে তিনি পাবেন দু’টি সওয়াব। আর যদি ভুল হয় তাহলে পাবেন। আমলটি সুনিশ্চিত আল্লাহর কাছে মকবুল। আমাদের ইমামের এই ইজতিহাদের বিপরীত যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহ বা রাসূল সাঃ থেকে সুষ্পষ্ট প্রমাণ করে যে, যে হাদীসের উপর আমাদের মুজতাহিদ ইমাম আমল করেছেন সেটিকে আল্লাহ বা রাসূল সাঃ মনগড়া তথা জাল বলেছেন , তাহলে আমরা আমাদের ইমামের ইজতিহাদকে ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ ও তার রাসূলের কথা মেনে নিব। কিন্তু আমাদের নবীজী সাঃ বর্ণিত স্বীকৃত কল্যাণী যুগের মুজতাহিদে আযম রহঃ যেটাকে গ্রহণ করেছেন সেটাকে ছেড়ে দিয়ে অকল্যাণী যুগের কোন ব্যক্তির কথা আমরা মানতে রাজী নই। হাদীস গ্রহণ ও বর্জনের ব্যাপারে আমাদের মূলনীতিটি কুরআন সুন্নাহর বিরোধী হলে শুনাও। আমরাতো মন থেকে তাহলে আপনাদের শুকরিয়া জানাবো।
বাকি রইল আপনার কথা-“আপনারা নিজেদের সিদ্ধান্ত অথবা কোন গায়রে মুজতাহিদ উম্মতের সিদ্ধান্তানুযায়ী কোন হাদীসকে সহীহ, কোন হাদীসকে দুর্বল বলে থাকেন।”
তাহলে বুঝা গেল আপনাদের এ আমলটি কোন দলিলের উপর নির্ভরশীল নয়। কেননা আপনাদের কাছেতো কেবল আল্লাহ ও তার রাসূলের কথাই দলিল। আর আপনারা সুনিশ্চিত আল্লাহও নন, আবার রাসূলও নন। আপনাদের গায়রে মুজতাহিদ উম্মতীও আল্লাহ ও নন, আবার রাসূল ও নন। তাহলেতো আপনাদের কোন হাদীসকে না সহীহ বলা উচিত, না দুর্বল। কিন্তু আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কাছেও আপনাদের এসব কথা কোন দলিলের উপর নির্ভরশীল নয়। কেননা আপনি যেমন ইজমা নন, তেমনি আপনার মাঝে না মুজতাহিদের শর্ত আছে। সুতরাং যেটাকে গবেষণা বলছেন সেটা কোন দলিলের উপর নির্ভরশীল নয়। কেননা এক্ষেত্রে না আপনাকে আমরা আল্লাহ মানি, না রাসূল মানি। না ইজমা মানি। না মুজতাহিদ মানি। আপনি নিজেই বলে দিন যা বলতে আমাদের বাধ্য করছেন যে, আপনাদের গবেষণা মানা মানে হল নিজেদের আপনারা আল্লাহ বা রাসূল মনে করেন! নিজেদের মুখে স্পষ্টতো একথা বলেন না যে, আপনারা খোদা বা রাসূল [আল ইয়াজু বিল্লাহ] কিন্তু যখন আমরা ইজমা ও মুজতাহিদের বিপরীতে আপনাদের দলিলহীন কথা মানি না, তখন শোরগোল করে দেন যে, আমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের কথা মানি না।
এবার আপনি নিজেই একবার ভেবে দেখুন আপনাদের অপপ্রচার কতটা জঘন্য!
আপনিতো খুব বাহাদুর পুরুষ। তাই না? আপনি জানেন কি মুহাদ্দিসীনরা হাদীসের তিন প্রকার করেছেন। যথা-
১-মারফু’ তথা সেসব হাদীস যাতে রাসূল সাঃ এর বক্তব্য, কর্ম ও তাক্বরীর উল্লেখ করা হয়েছে।
২-মাওকুফ তথা সেসব হাদীস যাতে সাহাবীদের বক্তব্য, কর্ম ও তাক্বরীর উল্লেখ করা হয়েছে।
৩-মাকতু’ তথা সেসব হাদীস যাতে তাবেয়ীদের বক্তব্য, কর্ম ও তাক্বরীর উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত নিজের মুজতাহিদের পথপ্রদর্শনে এই তিন প্রকারকেই মানি। আপনারাও কি এ তিন প্রকারকে মানেন?
সে বলল-অবশ্যই না! আমরা কেবল প্রথম প্রকারকেই মানি।
-আপনি কি কোন আয়াত বা হাদীস পেশ করতে পারবেন যাতে রয়েছে যে, যারা হাদীসের তিন প্রকারকেই মানে তাদের যুক্তিপূজারী আরা যারা তিন ভাগের একভাগকে অস্বিকার করে তাদের আহলে হাদীস বলা হয়?
সে বিরক্ত হয়ে বলল-আপনি কথায় কথায় আয়াত ও হাদীস জানতে চান কেন?
-এ কারণে যে, আপনি শুরুতেই এ দাবী করেছেন যে,-আপনি কুরআন-হাদীস ছাড়া অন্য কিছু মানেন না। একথা এখন আপনার বুঝে আসল যে, আপনাদের ভাই “আহলে কুরআন” যেমন তাদের দাবী অনুযায়ী সকল মাসায়েল সরাসরি কুরআন থেকে দেখাতে পারবে না, তেমনি আপনারাও আপনাদের দাবি অনুযায়ী সকল মাসায়েল হাদীস থেকে দেখাতে পারবেন না।
মুহাদ্দিসীনে কিরাম সহীহ হাদীস ১০ প্রকার বর্ণনা করেছেন যা মুকাদ্দামায়ে নববীতে আছে। যাতে মুরসাল হাদীস এবং মুদাল্লিসীনদের মুআন আন হাদীসও সহীহের প্রকারে শামীল হয়েছে। আমরা এ ১০ প্রকার সহীহকেই মানি। আর নিজেদের মুজতাহিদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী এসবের উপর আমলও করি। আপনারাও কি এ ১০ প্রকারকে সহীহ মেনে এসবের উপর আমল করেন?
-না আমরা সব ক’টিকে মানি না। বরং ৫ প্রকার মানি। আর বাকি ৫ প্রকারকে মনগড়া ও জাল বলে আখ্যায়িত করি।
-আপনি কোন আয়াত বা হাদীস উপস্থাপন করতে পারবেন, যাতে লিখা আছে যে, যারা হাদীস সহীহ হওয়ার ১০ প্রকার মানে তাদের যুক্তিপূজারী আর আর অর্ধেকের বেশি হাদীসকে অস্বিকার করে তাদের বলা হয় “আহলে হাদীস”? “নিজের ফাঁদে নিজেই আটক” এ প্রবাদ বাক্য আপনাদের বেলায়ই যথোপযুক্ত।
একটি মাসআলা
কোন ব্যক্তি যদি এ অসিয়ত করে যে, আমি আমার এতটুকু পরিমাণ সম্পদ হাদীসের আহলদের জন্য ওয়াক্বফ করলাম, তাহলে সে ওয়াক্বফ এর হকদার কে হবে? তো ওলামায়ে কিরাম বলেছেন যে, ইমাম শাফেয়ী রহ^ এর মুকাল্লিদ যদি হাদীসের ছাত্র হয় তাহলে সে এর হকদার হবে। আর যদি হাদীসের ছাত্র না হয় তাহলে হকদার হবে না। তবে হানাফীরা এর হকদার হবে, চাই হাদীসের ছাত্র হোক বা না হোক। এজন্য যে, হানাফীরা মুরসালা হাদীস এবং খবরে ওয়াহেদকে কিয়াসের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে [আদ দুররুল মুখতার]।
এর দ্বারা জানা গেল, যে গায়রে মুকাল্লিদরা হাদীসের খিদমাতের নামে বর্হিরাষ্ট্র থেকে টাকা নেয়। আর সারাদিন সহীহ হাদীস সমূহকে দুর্বল ও মনগড়া বলে প্রচারণা চালায় তাদের জন্য শরীয়তের দৃষ্টিতে এ টাকা গ্রহণ জায়েজ হবে না।
আরো একটি ছলনা
আমি বললাম-আপনাদের মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ জিপুরী এ একটি কিতাব আছে, “হাকীকাতুল ফিক্বহ” নামে। সে কিতাবে একটি শিরোনাম আছে-“আহলে কুফীদের হাদীসের জ্ঞান”।সেটাতে তিনি বলেন-‘যদি আহলে কুফীরা এক হাজার হাদীস শুনায়, তাহলে ৯৯৯টিকে নিক্ষেপ করে দাও। আর বাকি একটির উপর সন্দেহ রাখবে, কখনো সহীহ বিশ্বাস করবে না’।
লোকটি দ্রুত বলে বসল-আহলে কুফাদের হাদীসের সাথে কী সম্পর্ক?
-আস! অভিজ্ঞতা নিয়ে নাও! আমি সিহাহ সিত্তা থেকে হাদীস বের করবো, যাতে একজন কুফী রাবী পাওয়া যাবে, সেটাকে সিহাহ সিত্তা থেকে বের করে দিবে।
–“তাহলে সিহাহ সিত্তাতে থাকবে কি? সেখানে মাটি উড়তে থাকবে”।তড়িঘরি জবাব দেয় লোকটি।
-এমন কোন আয়াত বা হাদীস আছে নাকি যে, কুফাবাসীর বর্ণিত সহীহ হাদীসকে এজন্য অস্বিকার করে যে, এটা কুফাবাসী বর্ণনা করেছেন, তাদের বলা হবে “আহলে হাদীস”।আর যারা কুফাবাসী ও হেজাজবাসী, সবার বর্ণিত সহীহ হাদীস মানে তাদের বলা হয় যুক্তিপুজারী?