প্রশ্ন
From: আবু আইয়ুব আনছারী, কাশীনগর,১৪ গ্রাম,কুমিল্লা
বিষয়ঃ মিলাদ কিয়াম
প্রচলিত মিলাদ ও কিয়াম সম্পর্কে জানতে চাই। এক আলেম বলেছে হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজীরে মক্কী রহ: মিলাদ কিয়াম করতেন, এই কথাটুকু সঠিক কিনা?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রচলিত মিলাদ ও কিয়াম বিদআত। কোন সন্দেহ নেই। কুরআন ও হাদীসে প্রচলিত এ মিলাদ কিয়ামের কোন বিশুদ্ধ প্রমাণ নেই।
তাছাড়া খাইরুল কুরুন যুগে এর কোন অস্তিত্বও ছিল না। তাই এটিকে ইবাদত মনে করা সম্পূর্ণই বিদআত এবং গোনাহের কাজ।
হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহঃ এর মিলাদ পড়া ও কিয়াম করা সংক্রান্ত আহলে বিদআতীরা যে দলীল পেশ করে থাকে, সেটি হল হাজী সাহেব রহঃ এর দিকে সম্বোধিত করা কিতাব “ফায়সালায়ে হাফত মাসআলা” এর রেফারেন্স দিয়ে।
কিন্তু আসল কথা হল, এটি হাজী সাহেব রহঃ এর নিজের লেখা কিতাব নয়।
একজন এ গ্রন্থটি রচনা করে হাজী সাহেবকে শুনান। তখন তিনি প্রচলিত পদ্ধতির অবস্থা না জেনে আসল মাসআলাটি জায়েজ বলে দিয়েছেন। [ফাতাওয়া রশীদিয়া-১৫০, ছাকীব বুক ডিপো দেওবন্দ]
সুতরাং উক্ত কিতাবের রেফারেন্স দিয়ে হাজী সাহেব রহঃ প্রচলিত মিলাদ কিয়াম করতেন দৃঢ়ভাবে বলা কোনভাবেই ইনসাফ হবে না।
যদি উক্ত গ্রন্থকে মেনেও নেই, তবু প্রচলিত মিলাদ কিয়ামের সাথে হাজী সাহেব রহঃ এর কিতাবে লিপিবদ্ধ করা মিলাদ কিয়ামের কোন মিল নেই। কারণ, সেখানে পরিস্কার লেখা হয়েছে যে,
এই আকীদা রাখে যে, যদি নির্দিষ্ট তারিখে মিলাদ না পড়া হয় বা কিয়াম না করা হয়, বা শিরনীর ইন্তেজাম না করা হয়, তাহলে সওয়াব পাওয়া যাবে না। এমন ধারণা করলে এটি নিন্দণীয় আকীদা। কেননা, এর দ্বারা শরীয়তের সীমাকে লঙ্ঘণ করা হচ্ছে। [ফায়সালায়ে হাফত মাসআলা-১৫]
কিতাবটি তার ধরে নিলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, হাজী সাহেব রহঃ এটিকে শুধু মুবাহ মনে করতেন। সুন্নত বা ওয়াজিব মনে করতেন না। সাথে সাথে বলে দিচ্ছেন যে, নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ করে, সেদিন মিলাদ কিয়াম এবং ফিরনী পায়েশ না পাকালে সওয়াব থেকে বঞ্চিত মনে করলে এটা শরীয়তের সীমা লঙ্ঘণ করা আকীদা হবে।
তাহলে বর্তমান যারা প্রচলিত মিলাদ কিয়াম করছেন তারা হাজী সাহেবের বক্তব্য অনুপাতে শরীয়ত মানছেন না শরীয়ত লঙ্ঘণ করছেন?
বারই রবীউল আউয়ালকে মিলাদ কিয়ামের জন্য বিশেষ দিন নির্ধারণ করে, ফিরনী পায়েশ পাকিয়ে বিশাল হুলস্থুল করা। সেই সাথে যারা এসব করে না, তাদেরকে নবীর দুশমন, ওহাবী ইত্যাদি বলে গালাগাল করে বর্তমানের মিলাদী বিদআতিরা হাজী সাহেবের বক্তব্য অনুপাতেইতো শরীয়ত বিরোধী প্রমাণিত হচ্ছেন।
হাজী সাহেবতো এটাকে মুবাহ মনে করতেন। আর মুবাহ বিষয় করলেও সওয়াব নেই, না করলেও তো গোনাহ নেই। তাহলে যারা মিলাদ কিয়াম করেন না, তাদের নিন্দা করে, নবীর দুশমন বলে মিলাদী ভাইরা কী প্রমাণ করছেন? তারা এটাকে মুবাহ মনে করেন না জরুরী মনে করেন?
অবশ্যই জরুরী মনে করে।
যদি জরুরী মনে করে থাকেন, তাহলে তাদের জন্য হাজী সাহেব রহঃ এর রেফারেন্স পেশ করা একটি ধোঁকাবাজী ছাড়া আর কী হতে পারে?
মৌলিক কথা হল, প্রচলিত মিলাদের প্রবক্তা হাজী সাহেব রহঃ ছিলেন না।
যদিও হয়েও থাকেন, এ সম্পর্কিত কুরআন ও হাদীসের কোন দলীল না থাকায় তা আমরা মানতে বাধ্য নয়। আমাদের মৌলিক দলীল কোন আল্লাহর ওলী বা ব্যক্তি বিশেষ নয়। আমাদের দলীল হল কুরআন ও সুন্নাহ।
যদি আল্লাহর ওলী বা আলেম কুরআন ও সুন্নাহের অনুকূল হন, তাহলে আমরা তাঁর অনুসরণ করে থাকি। আর যদি কুরআন ও হাদীসের অনুকূল না হয়, তাহলে তার সেই ব্যক্তিগত আমল বা অভিমত মানতে আমরা বাধ্য নই।
قَالَ الطِّيبِيُّ: وَفِيهِ أَنَّ مَنْ أَصَرَّ عَلَى أَمْرٍ مَنْدُوبٍ، وَجَعَلَهُ عَزْمًا، وَلَمْ يَعْمَلْ بِالرُّخْصَةِ فَقَدْ أَصَابَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْإِضْلَالِ فَكَيْفَ مَنْ أَصَرَّ عَلَى بِدْعَةٍ أَوْ مُنْكَرٍ؟ (مرقاة المفاتيح، كتاب الصلاة، باب الدعاء فى التشهد-3/26، رقم الحديث-946)
ইমাম তীবী রহঃ বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুস্তাহাব বিষয়ের উপর জিদ করে এবং সেটিকে দৃঢ় করে নেয়। কখনো সুযোগের উপর আমল না করে। তাহলে নিশ্চয় উক্ত ব্যক্তিকে শয়তান পথভ্রষ্ট করে দিয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি বিদআত ও মুনকারের উপর গোঁ ধরে তাদের কী অবস্থা? [মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ-৩/২৬, বর্ণনা নং-৯৪৬]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]