প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / ডাঃ জাকির নায়েককে ইহুদীদের দালাল বলা হয় কেন?

ডাঃ জাকির নায়েককে ইহুদীদের দালাল বলা হয় কেন?

প্রশ্ন

এটচ এম ইমরান
পটুয়াখালী

আসসালামু আলাইকুম.
হযরত সমপ্রতি গনমাধ্যম ফেসবুকে দেখা যায়।
বহুল আলোচিত ডাঃ জাকির নায়েক এর ব্যাপারে ইহুদি দের দালাল বলে আখ্যায়িত করা হয়। যেমনটি আপনারা হামেশাই করে থাকেন আহলে হাদীসের ব্যাপারে। আমার প্রশ্ন নায়েক কে ইহুদী বলা যাবে কিনা আর বলা গেল তা কেন। তিনি তো দীনের খেদমত করছেন দিনের পর দিন তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফর করে এ কাজ গুলো করছেন। এমন কি তা সৌদি বাদশা পুরুস্কৃত করেছেন। এ ব্যাপার গুলো একটু খোলাসা করে উওর দিবেন.
ধন্যবাদ

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রথমে একটি বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার। আমরা তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা থেকে আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবী ফিরক্বা সম্পর্কে অনেক গবেষণালব্দ প্রবন্ধ ও প্রশ্নোত্তর প্রকাশ করেছি। বেশ কিছু বিষয়ভিত্তিক ভিডিও এবং মাহফিলের বয়ান আপলোড করেছি। যা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েব সাইট www.ahlehaqmedia.com  এবং আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করেছি।

আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, কোন লেখা বা বক্তব্যে আমরা জাকির নায়েককে ইহুদী বা ইহুদীদের দালাল বলে সম্বোধন করিনি। এটা আমরা পূর্ণ যিম্মাদারীর সাথেই দাবী করছি।

তাই এ অভিযোগ আমাদের দিকে বা আমাদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের দিকে নিসবত করা অন্যায় ও গর্হিত। যারা করছেন তাদের কাছে এর জবাব তালাশ করাই অধিক যুক্তিযুক্ত।

বরং আমরা জাকির নায়েক সাহেবের বিষয়ে আমাদের পরিস্কার বক্তব্য লিখিত এবং ভিডিও উভয় মাধ্যমেই প্রকাশ করেছি। যাতে আমরা স্পষ্ট বলেছি যে, জাকির নায়েক সাহেবের দাওয়াতী বক্তব্য, তুলনামূলক ধর্মতত্ব আলোচনাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

তিনি তার উস্তাদ আহমাদ দিদাত থেকে যে বিষয়গুলো রপ্ত করেছেন, সে বিষয়গুলো তিনি চমৎকারভাবে উপস্থাপন করে ইসলামের অনেক বড় উপকার করেছেন।

এজন্য আমরা তার জন্য  মন থেকে দুআ করি।

কিন্তু তিনি হাজার বছর পূর্বে বিজ্ঞ ফুক্বাহায়ে কেরাম কর্তৃক সমাধানকৃত ইখতিলাফী মাসআলাকে নতুন করে উস্কে দিয়ে সাধারণ মুসলমানদের যে বিভ্রান্ত ও দিশেহারা করেছেন, তার এহেন কর্মকে আমরা ধিক্কার জানাই। তাকে তার এ অনৈতিক অনধিকারচর্চামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার হৃদয় নিংড়ানো আহবান করেছি।

এ আহবান শুধু আমরা নয়, বরং তার কল্যাণকামী অনেক আহলে হাদীস আলেমও করেছেন। যেমন পাকিস্তানের লা-মাযহাবী আলেম শায়েখ আবু যায়েদ জমীর, এবং লা-মাযহাবী আলেম শায়েখ মেরাজ রব্বানী এবং শায়েখ তাউসীফুর রহমানও করেছেন।

সুতরাং জাকির নায়েক সাহেবকে ইহুদী বলা বা ইহুদীদের দালাল বলার অপবাদের খড়গ আমাদের দিকে উত্তোলন করা সরাসরি অন্যায় অপবাদ। আল্লাহ হিফাযত করুন।

বাকি রইল আমাদেরই কিছু আলেম বা আবেগী লোকজন তাকে ইহুদীদের দালাল কেন বলে? এ প্রশ্নটি।

এক্ষেত্রে আমাদের পর্যবেক্ষণ মতে জাকির নায়েক সাহেব যেমন ভাল কাজ করেছেন। তেমনি এমন কিছু বিতর্কিত কাজ করেছেন যা তার ভাল কাজের উপর অনেকাংশেই পর্দা ফেলে দেয়।

আমেরিকার গোলামীতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত সৌদী সরকার কাউকে পুরস্কৃত করলেই তিনি ইসলামের সুবিশাল খাদিমের স্বীকৃতি পেয়ে যান না। একথা মনে রাখতে হবে। ইসলামের প্রকৃত খাদিম সেই ব্যক্তি, যার সব কিছুতে আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি পূর্ণ দৃষ্টি রয়েছে। যারা প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে রাসূলে আরাবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ সম্মত আমল। মেজাজে শরীয়ত অনুপাতে যিনি দ্বীনের খিদমাত আঞ্জাম দিয়ে যান, তিনিই প্রকৃত দ্বীনের খাদিম। যদিও দুনিয়াবী কোন বাদশা থেকে স্বীকৃতি না পান।

প্রশ্ন হল, জাকির নায়েক ইহুদীদের দালাল হল কিভাবে?

এক নাম্বার উত্তর হল, একথা আমরা বলি না।

দ্বিতীয়  কথা হল, যেহেতু এ উপমহাদেশে ইসলাম হানাফী উলামাগণ এনেছেন। ইসলাম আনার পর থেকে কুরআন ও হাদীসের আলোকে সংকলিত ফিক্বহে হানাফী অনুপাতে উপমহাদেশের মানুষ আমল করে আসছে।

যদি আমলগুলো কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী হতো, তাহলে অভিযোগ উত্থাপন ছিল যৌক্তিক। কিন্তু আমলগুলো কুরআন ও সুন্নাহ সম্মত হবার পরও সাধারণ মুসলমানদের সামনে একই মানের বিপরীতমুখী আমলের দলীল উপস্থাপন করে মসজিদে মসজিদে বিভেদ সৃষ্টি করা খুবই অন্যায় ও গর্হিত।

যেখানে সৌদী আরবের সম্মিলিত ফাতওয়া বোর্ড এবং প্রধান মুফতীদের ফাতওয়া হল, যে এলাকায় কুরআন ও হাদীসভিত্তিক যে মাযহাব প্রচলিত সেখানে সেটিই আমল করবে। ভিন্ন আমল চালু করে ফিতনা সৃষ্টি করবে না।

মাযহাব সম্পর্কে আর আলেমদের অবস্থান জানতে হলে পড়ুনঃ

আরব আলেম উলামাগণ কি মাযহাব ও তাকলীদ বিরোধী?

সেখানে, ঘরে ঘরে, মসজিদে মসজিদে, এলাকায় এলাকায় মানুষের মাঝে সালাতসহ ইবাদতের মাসায়েল নিয়ে ভিন্ন আমল প্রতিষ্ঠা করে ফিতনা সৃষ্টি করা কতটা জঘন্য কাজ তা আশা করি বিজ্ঞ কাউকে বুঝানোর প্রয়োজন নেই।

ইহুদী এবং খৃষ্টানদের মূল থিউরী হল, ডিভাইড এন্ড রোল। অর্থাৎ বিভেদ সৃষ্টি করে শাসন কর।

অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে সামনে এনে মুসলমানদের পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত করে শক্তি ক্ষয় করে মূলত যেহেতু ইহুদীদেরই এজেন্ডা বাস্তবায়ন হচ্ছে জাকির নায়েক ও তার পিচ টিভির মাধ্যমে, এ কারণেই অনেকে তাকে ইহুদী ও খৃষ্টানের দালাল নামে অভিহিত করে থাকেন।

তিনি সরাসরি দালালী না করেও থাকেন, কিন্তু তার কর্মের মাধ্যমে দালালী প্রতিভাত হয়।

আমরা তার ভালগুলোর প্রশংসা করি। কিন্তু তার ফিতনামূলক কাজগুলোর জন্য তার ভুলগুলো শুধরে দিয়ে তাকে সংশোধনের উদাত্ত আহবান জানাই।

জাকির নায়েক সাহেব আমাদের জানা মতে একজন মুসলিম। হয়তো না জেনে মারাত্মক কিছু ভুল করেছেন। আশা করি তিনি তার ভুলগুলো থেকে তওবা করে দ্বীনের সত্যিকার দাঈ হবেন।

কিন্তু তাকে ইহুদী বলা সম্পূর্ণরূপে অন্যায় এবং হারাম। কোন মুসলমানকে কাফের বলা হারাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন।

এক হাদীসে ইরশাদ হচ্ছেঃ

عن أبي ذر رضي الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( لا يرمي رجل رجلا بالفسوق ولا يرميه بالكفر إلا ارتدت عليه إن لم يكن صاحبه كذلك 

হযরত আবু জর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাঃ বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যদি কাউকে ফাসেক বলে, কিংবা কাফের বলে অথচ লোকটি এমন নয়,তাহলে তা যিনি বলেছেন তার দিকে ফিরে আসবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬৯৮}

তাই তাকে বিধর্মী, কাফের বা ইহুদী ইত্যাদি সম্বোধন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …