প্রচ্ছদ / আধুনিক মাসায়েল / আলিমদের ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণ : কিছু সমস্যা ও তার সমাধান

আলিমদের ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণ : কিছু সমস্যা ও তার সমাধান

মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ

এবার মাসিক মুহাযারার শিরোনাম নির্ধারণ করা হয়েছে-‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে আলিমদের ব্যবসা-বাণিজ্যেঅংশগ্রহণ : সমস্যা ও সমাধান।’ শিরোনামে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে’ শব্দ দুটি না থাকলেও অসুবিধা নেই। কারণউপার্জনের বিষয়টি নতুন নয়, পুরনো। সব যুগেই আলিম-ওলামা ছিলেন। তাঁরা দ্বীনী কাজের সাথে নিজেদেরও পরিবার পরিজনের জীবিকাও উপার্জন করেছেন। আপনারা হয়তো বলবেন, আগের যুগের অনেক আলিমতো বিয়ে শাদি করেননি, সংসারের ঝামেলা তাদের ছিল না। শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. (১৪১৭হি.) তাঁদের সম্পর্কে একটি কিতাবও লিখেছেন-

العلماء العزاب الذين آثروا العلم على الزواج

কিন্তু তাঁদের সংখ্যা খুব বেশি নয়।

বিভিন্ন শতাব্দীর অসংখ্য আলিমের মধ্য থেকে তাঁদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়েছে।

তাছাড়া সংসারজীবনে প্রবেশ না করলেও তাদের অর্থোপার্জনের প্রয়োজন হয়নি তা তো নয়। তাহলে বোঝাগেল, আর্থিক কর্মকান্ডে আলিমদের সম্পৃক্ত হওয়া নতুন কিছু নয়।

আজকে যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা যায় তা হল : ১. উপার্জন এবং অর্থ-সম্পদের বিষয়ে শরীয়তেরদৃষ্টিভঙ্গি।

২. উপার্জনের পদ্ধতি এবং পরামর্শমূলক কথা।

৩. কিছু সমস্যা ও তা থেকে উত্তরণের উপায়?

৪. কিছু সংখ্যক আলিম ও দ্বীনদার মানুষ যারা ব্যবসা করছেন তাদের অধিকাংশ কোন পথ অবলম্বন করছেন,আসলে কোন পথ অবলম্বন করা দরকার ছিল। তারা যে পথ বেছে নিয়েছেন এতে শরঈ খারাবি কী এবংঅর্থনৈতিক খারাবি কী? এর বিকল্প পন্থা কী হতে পারত এবং সেটি এর চেয়ে ভালো কেন।

এই দু’ চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।

প্রথম কথা তো হচ্ছে, জীবিকা নির্বাহের রাস্তা বের করা শরীয়তের নির্দেশ, তবে সবসময় তা শর্তযুক্ত রাখাহয়েছে। সূরা জুমআর আয়াতটি দেখুন-

فاذا قضيت الصلوة فانتشروا فى الارض وابتغوا من فضل الله واذكروا الله كثيرا لعلكم تفلحون

সালাত শেষ হলে তোমরা ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ  (রিযিক) সন্ধান করবে ও আল্লাহকেঅধিক স্মরণ করবে। যেন তোমরা সফলকাম হও।-সূরা জুমুআ (৬২) : ১০

শুধু এতটুকু নয়, শরীয়ত সদাকার আদেশ করেছে। আত্মীয়-স্বজনদের হক আদায় করতে বলেছে। তেমনিসামাজিক বিভিন্ন কাজকর্মে অর্থব্যয়ের যে নির্দেশ শরীয়তে আছে তা ইঙ্গিত করে একদল মানুষ এমন থাকুক,যারা নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনীয় জীবিকা উপার্জনের পাশাপাশি আরো বেশি কিছু উপার্জন করবে। সবাইনয় এবং সবাই তা পারবে না।

সারকথা এই যে, নিজের ও নিজের পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন পূরণের জন্য উপার্জন করা এবং বিশেষক্ষেত্রে আরো বেশি উপার্জন করা শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রশংসনীয়। তবে শর্ত আছে। কুরআন-হাদীস পাঠ করলেইশর্তগুলো জানা যাবে। যেমন দেখুন এই হাদীসটি-

التاجر الصدوق الأمين

এখানে যে দুটো বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে-সত্যবাদিতা ও আমানতদারি-এ দুটোর দ্বারা ব্যবসার ক্ষেত্রে যতধরনের অন্যায় ও গর্হিত কর্মের আশ্রয় নেওয়া হয় সবগুলোকে বাতিল করা হয়েছে। আলোচনার শেষের দিকেএ বিষয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করব  ইনশাআল্লাহ।

অর্থনীতির বিষয়ে যেসব কিতাব লেখা হয়েছে, এ উপমহাদেশের আলিমদের বা আরবের আলিমদের, তাতে দুধরনের দৃষ্টিভঙ্গিই আছে। বিশেষত এ উপমহাদেশের আলিমদের অর্থনীতির উপর লেখা কিতাবপত্রে দুধরনের চিন্তা পাওয়া যায়-কিছু কিতাব আছে, যেগুলো অর্থনীতি বিষয়ে লেখা হলেও দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে অর্থবিমুখ।অর্থাৎ অর্থোপার্জনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আবার কিছু কিতাব আছে, যেগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা।

মানাযের আহসান গিলানী, আমীন আহসান ইসলাহী, আবদুল বারী নদভী, হিফযুর রহমান সিউহারভী-রাহিমাহুমুল্লাহ-প্রমুখ আলিমদের কিতাব পড়লে দুটো দৃষ্টিভঙ্গিই পাওয়া যাবে। পড়ার সময় মনে হবে, একটাআরেকটা থেকে আলাদা। আসলে আগে থেকেই দুটো ধারা চলে আসছে।

আমাদের হাদীসের কিতাবগুলোতে একটি মাসআলা আলোচনায় আসে যে,  সবরকারী দরিদ্র উত্তম, নাশোকরকারী ধনী? এ বিষয়ে দুদিকেই যুক্তি আছে, দলিল আছে। সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এ দুটি ধারা ছিল।অর্থ-সম্পদ বিষয়ে আবু যর গিফারী রা.-এর সিদ্ধান্ত ও অবস্থানও আপনারা জানেন। আবুদ দারদা রা.-এরকথাও অনেকে জানেন। তিনি বলেছিলেন, ইসলাম আসার পর আমি ইবাদত ও তিজারতকে একত্র করার চেষ্টাকরেছিলাম। কিন্তু পারিনি। পরে শুধু ইবাদতকে গ্রহণ করেছি।

তবে জুমহুর সাহাবা দুটোর মাঝে সমন্বয় করেছেন। খোদ খলীফারাও করেছেন। আবু বকর রা. খেলাফতেরদায়িত্ব নেওয়ার আগে ব্যবসা করতেন।

যাইহোক, দুটি ধারা আগে থেকেই চলে আসছে। তাছাড়া এটি একটি ফিতরী ও স্বাভাবিক বিষয় যে, কেউ ধনীহবে, কেউ সে তুলনায় গরীব হবে। প্রত্যেকের অবস্থা অনুসারে কর্তব্য নির্ধারিত হবে।

দ্বিতীয় কথা এই যে, উপার্জনের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা আসতে পারে এবং সেগুলো থেকে উত্তরণের উপায় কী?সমস্যা সম্পর্কে কথা বলতে গেলে প্রথমে বলতে হবে, কী পরিমাণ সম্পদ থাকা দরকার। একেক পরিমাণসম্পদের সমস্যা একেক রকম। সম্পদের পরিমাণের শেষ নেই। তবে আমি মনে করি, আল্লাহ তাআলা ছাড়াঅন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে সহজেই জীবন অতিবাহিত করা যায়, অন্তত এতটুকু সম্পদ থাকা দরকার। এপরিমাণ সম্পদ উপার্জনের চেষ্টা করা জরুরি। এবং আল্লাহ চাহে তো এ পরিমাণ সম্পদ উপার্জন করা অসম্ভবনয়।

মুমিন হিসেবে এ বিশ্বাস থাকতে হবে যে, যতদিন দুনিয়াতে মুসলমান থাকবে ততদিন হালাল রোজগারের পথখোলা থাকবে। কারণ কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা হালাল রিযিকের আদেশ করেছেন। তবে কখনো তাঅপেক্ষাকৃত কঠিন হতে পারে, কিন্তু এ তো শুধু উপার্জনের ক্ষেত্রে নয়, দ্বীনের অন্য সকল ক্ষেত্রেই একই কথা।আপনারা যে এখানে এসেছেন গাড়িতে আপনার লেবাসের কয়জনকে দেখেছেন?

বাসে নামাযের সময়  হয়েছে আপনি হয়তো বাস থামানোর অনুরোধ করেছেন, কিন্তু অন্যরা বিরক্ত হচ্ছে।কেউ কেউ তো এমনও বলে থাকে যে, পরে কাযা পড়ে নিয়েন!

মাদরাসায় পড়ছেন, তো অন্য অনেকে করুণার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। তাহলে প্রতিকুলতা শুধু উপার্জনের ক্ষেত্রেনয়, দ্বীনের সকল ক্ষেত্রেই। তবে মুমিন হিসেবে এই বিশ্বাসটুকু আপনার থাকতে হবে আর তা বাস্তবও বটে যে,কিয়ামত পর্যন্ত হালাল পথে চলার রাস্তা খোলা থাকবে, এখনও খোলা আছে।

তৃতীয় কথা : অর্থ কীভাবে উপার্জন করা হবে। আমরা দেখতে পাই যে, আলিমদের জীবিকা নির্বাহের রাস্তাদুভাবে হয়ে থাকে।

১. দ্বীনী খিদমতকে মূল পেশা বানিয়ে আরেকটু স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য কিছু অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণকরা।

২. দ্বীনী ইলম অর্জনের পর মূল পেশা হিসেবে কোনো ‘হিরফা’ পেশাদারী কাজ বা ‘তিজারাহ’ ব্যবসা অবলম্বনকরা।

দুটোই হতে পারে। কোনোটিই দোষনীয় নয়, তবে শরীয়তের বিধি-বিধান অনুযায়ী হওয়া আবশ্যক।

প্রথম পথ

আলিমদের মধ্যে এই পন্থাটিই বেশি এবং আমাদের এ অঞ্চলে ঐতিহ্যগতভাবেই আলিমগণ দ্বীন শেখার পরদ্বীনী খিদমতের সাথে জড়িত হন, যা অবশ্যই প্রশংসনীয় এবং এটি প্রয়োজনীয়ও ছিল। দ্বিতীয় পথে কেউগেলে আমরা তারও বিরোধী নই। তবে অধিকাংশ আলেমের দ্বীনী খিদমতে লেগে থাকাটাই ভালো। এটি শুধুফযীলতের বিষয়ই নয়, প্রয়োজনেরও বিষয়। আপনি যদি এ অঞ্চলের সাধারণ শিক্ষিতদের সাথে আলিমদেরঅনুপাত বের করেন তাহলে দেখবেন, আলিমদের সংখ্যা কত কম। তাই যেটা ঐতিহ্যগতভাবে এখানে হয়েআছে সেটা দরকারিও বটে।

এখন কারো যদি মূল পেশা হয় দ্বীনী খিদমত আর সেখান থেকে তিনি কোনো বেতন-ভাতা গ্রহণ না করেনতাহলে সেটা আলাদা বিষয়। জরুরি কিছু নয়। পিছনের দিকে তাকালে দেখা যায়, সালাফ থেকে দু ধরনেরঅবস্থানই আছে  কেউ এটাকে উৎসাহিত করেছেন, কেউ নিরুৎসাহিত করেছেন। অনেকেই বলেছেন, যাদেরমূল পেশা দ্বীনী খিদমত তাদের জীবিকার পুরোটা বা মূল অংশ ওখান থেকেই আসা উচিত। তাহলে তাদেরপক্ষে ঐ খিদমতে পুরো সময় দেওয়া সম্ভব হবে।

আর এটাও তো সত্য যে, আগের তুলনায় এখনকার দ্বীনী অবস্থা দুর্বল। তাই যদি খেদমতের জায়গা থেকে অর্থগ্রহণের বিষয় থাকে তাহলে দায়দায়িত্বও বেশি থাকবে। এদিক থেকে অনেকে এটাকে উৎসাহিত করেছেন।আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের ও পরিবারের জীবন চলে যায় এ পরিমাণ জীবিকাযদি এ পেশা থেকে এসে যায় তাহলে ভালো, কিন্তু বাস্তব অবস্থা হল, অনেক ক্ষেত্রে তা হয় না। যে যে ক্ষেত্রেহয় না, ফলে করজ করতে হচ্ছে বা বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে সেসব ক্ষেত্রে আর কী করা যেতে পারে এটা চিন্তাকরা যায়।

এ বিষয়ে দু ধরনের উদ্যোগ হতে পারে : ১. একক বা ব্যক্তিগত উদ্যোগ। ২. সম্মিলিত বা যৌথ উদ্যোগ।

একক উদ্যোগ-এর অর্থ হল, নিজের বুদ্ধি ও অল্প অর্থ কাজে লাগিয়ে কিছু অতিরিক্ত উপার্জনের চেষ্টা করা।এটা কোথাও কোথাও আছে। যেমন কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে ছাত্ররা খাতা-কলম কিনে থাকে। কেউ কেউছাত্রদের নাস্তা বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করে থাকেন। এতে দোষের কিছু নেই। এক প্রতিষ্ঠানেরসবাই হয়তো তা করতে পারবেন না, কিন্তু কেউ করলে তা দোষনীয় নয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উৎসাহওদেওয়া উচিত। যাতে ছাত্ররাও মানসম্মত জিনিস সহজে পেতে পারে।

এ রকম আরেকটি উপায় হতে পারে

হস্তশিল্প, কুটির শিল্প। এখন সাধারণ শিক্ষিতদের অনেকেই এ ধরনের কাজ করছে। আলিমদের পরিবারেওতা হতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই। হালাল জীবিকা উপার্জনের প্রচেষ্টায় লজ্জারও কিছু নেই।

আরেকটি উদাহরণ দিই। এখানে মানসিক বাধাটা সরিয়ে ফেলতে পারলেই আর সমস্যা নেই।

অনেক ছাত্র বাহির থেকে তরকারি এনে খায়। কোনো উস্তাদের বাসা থেকে যদি তা আসে তাহলে একদিকে

উস্তাদেরও কিছু আয় হল, ছাত্রও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার পেল। এগুলোতে আসলে দোষ নেই। অনেকছেলের প্রয়োজন থাকে, অনেকে অসুস্থ থাকে, সব খাবার খেতে পারে না। তো এ ধরনের রীতি গড়ে উঠলেউস্তাদেরও উপকার, ছাত্রেরও উপকার।

আরেকটি উদাহরণ, মৌসুমী কাজ। যেমন ঈদের সময় নতুন কাপড় সরবরাহ করা। এভাবে আয়ের পথগুলোসম্পর্কে যদি একটু ব্যাপকভাবে চিন্তা করা হয়, দু একটি উপায়কে নির্দিষ্ট না করা হয় তাহলে দেখা যাবে,অনেক পথ বের হবে।

আরেকটা আয়ের উৎস বলি, মূল উদ্দেশ্য আয় নয়, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যাবে। তা হল লেখালেখি।অনেকে বলে, ইন্ডিয়া, পাকিস্তানের সব আলেম ব্যবসা করেন। আসলে এটা গলত মশহুর। সবাই ওখানেব্যবসা করেন না। তবে অনেকে এমন আছেন, যারা কিছু কিছু লেখালেখি করেন। এরপর নিজস্ব একটিমাকতাবার মতো হয়ে যায়। হয়তো নিজে গড়ে তোলেন কিংবা নিজের কিতাবগুলো কোনো মাকতাবাকে দেন।ওখান থেকে তার কিছু আয় আসে।

দেখুন, কিতাবপত্র লেখাও পড়ানোর মতোই। পড়ানো যেমন আল্লাহর জন্য হয় তেমনি কিতাব লেখাওআল্লাহর জন্য। তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়ও আসবে।

আরো কিছু রাস্তা আছে, এগুলোকে উৎসাহিত করব না। যেমন তাবীজ-তদবীর ও আমলের কাজ। একে পেশাহিসেবে নেওয়া শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে পছন্দনীয় নয়। শরীয়তের গন্ডির ভিতর থেকে কারো কোনো উপকারকরলে যদি কিছু পেয়ে যায় তাহলে দোষের কিছু নেই। কিন্তু পেশা বানানো পছন্দনীয় নয়।

তো এই হল ব্যক্তিগতভাবে ছোট ছোট কাজকে আয়ের উৎস বানানোর কিছু দৃষ্টান্ত।

ম্মিলিত বা যৌথ উদ্যোগ

এক্ষেত্রে যে উপায়টি বলব তা ব্যবসা নয়; বরং নিজের পেশায় থেকে ব্যবসায় অর্থায়ন করা। কারণ আপনারযদি একটি নিয়মিত পেশা থাকে আবার পুরা ব্যবসায়ীও হতে চান তাহলে কোনোটিই ভালোভাবে হবে না।

অনেক ছাত্রকে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দিতে চায়। ঐসব দিকে যাওয়া উচিত কি অনুচিত-সেবিতর্কে না গিয়েও যে কথা বলা যায় তা হচ্ছে, তুমি যে বছর মাদরাসায় ভর্তি হয়েছ ঐ বছর অন্য কোথাওপরীক্ষা দিতে পারবে না। কারণ অন্য কোথাও পরীক্ষা দিতে গেলে তুমি এ মাদরাসার নিয়ম ভঙ্গ করবে,নিসাবের পড়া ঠিক মতো পড়বে না, অনুপস্থিত থাকবে। এখানেও বিষয়টি এ রকম। খিদমতের পুরোযিম্মাদারী আদায়ের সাথে সাথে যদি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীও হতে চাই তাহলে কোনোটাই হবে না। কোনোটাযদি ভালো হয় তাহলে বুঝতে হবে অন্যটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসার জন্যও মেধা ও সময় লাগে, তেমনিআদর্শ শিক্ষকতার জন্যও মেধা ও সময় লাগে। ভালো দরসের  জন্য যথেষ্ট প্রস্ত্ততি নিতে হয়। এরপরমনোযোগের সাথে দরস দিতে হয়। সুতরাং দুটোই যখন সময় ও মেধাকে দাবি করে তখন দুটো কীভাবেহবে। এটা সম্ভব কেবল সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে। যেখানে চাকরিটা সময়ের সাথে সীমাবদ্ধ। সুতরাং কেউ ঐসময়ের পর ব্যবসায় অংশগ্রহণ করতে পারে এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীও হতে পারে। কিন্তু মাদরাসারযিম্মাদারির সাথে এটা সম্ভব নয়। এখানে যেটা সম্ভব তা হচ্ছে ব্যবসায় অর্থায়ন। কয়েকজনের অর্থ একত্র হয়েব্যবসা দাঁড়িয়ে যেতে পারে। তবে তা পরিচালনা করবেন তারা, যাদের মূল পেশা ব্যবসা, অন্য কিছু নয়। তোসারকথা এই যে, বড় ব্যবসা পরিচালনা করাও সম্ভব যদি এটাই মূল পেশা হয়। অন্যথায় বহু সমস্যার সৃষ্টিহবে।

বড় ব্যবসা কীভাবে করবে

ব্যবসা যত ছোট সমস্যা তত কম।

পক্ষান্তরে ব্যবসা যত বড় সমস্যাও তত বেশি। এটা শুধু আলিমদের জন্য নয়, সাধারণ ব্যবসায়ীদের জন্যও।তবে আলিমদের প্রতি আমাদের দুর্বলতা বেশি। আমরা তাদের কথা বলছি না, যাদের চিন্তাধারা এই যে,ব্যবসা করতে যাচ্ছি, অন্যরা যেভাবে করে আমরাও সেভাবেই করব। তাদের সম্পর্কে এখানে কিছু বলারনেই।

কোনো কোনো ‘ইসলামী’ ব্যাংকার এমনও বলে থাকেন যে, ব্যাংকগুলো তো আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নীতিরআওতায় চলে। এখানে বাস্তবে বড় পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। তাই যদি গবেষণা করে ব্যাংকের সুদেরব্যাপারে একটা কিছু করা যেত  তাহলে পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংকিং সম্ভব হত!

তাকে বেশি দোষ দেই না। কারণ তিনি সাধারণ শিক্ষিত মানুষ। ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও শুধু পোশাক পরিবর্তনকরেছেন, কিন্তু আশ্চর্য হতে হয় কোনো কোনো ‘ইসলামী’ ব্যক্তির কথা শুনে। এ রকম একজন বললেন,আলিমরা এতদিন পর্যন্ত কী গবেষণা করল! এই আধুনিক যুগে এসেও সুদটাকে বৈধ করতে পারল না!

যাইহোক, যারা ব্যবসায় গিয়ে প্রচলিত ধারার সাথে মিশে যাবে তাদের সম্পর্কে কিছু বলার নেই। কিন্তু যেআলিমরা ব্যবসাকে পেশা হিসেবে নিতে চান, তারা যদি আদর্শ ঠিক রেখে ব্যবসা করেন তাহলে আগেওবলেছি, এতে দোষ নেই; বরং প্রশংসার চোখেই দেখা উচিত।

ভালো ব্যবসায়ীও আমাদের দরকার। এর প্রথম কারণ জীবিকা উপার্জন। দ্বিতীয় কারণ, সমাজের পরিবর্তন।আলিমরা যদি সঠিকভাবে ব্যবসা করেন তাহলে সমাজের একটি উত্তম পরিবর্তনের অসীলা তারা হবেন। এটিহবে সুন্নতে হাসানা বা উত্তম রীতি প্রবর্তনের শামিল।

এখন বিশ্বব্যাপী ব্যবসা চলছে ভুলভাবে। তাই কেউ যদি শরীয়া অনুযায়ী বড় ব্যবসা দাঁড় করায় তাহলে তাএকটি মডেল হিসেবে দাঁড়াবে। বর্তমান যুগেও যে শরীয়া মোতাবেক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্ভব তার একটি বাস্তবউদাহরণ সৃষ্টি হবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে কী কী ব্যবসা করা যেতে পারে। দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, কী কী সমস্যা সৃষ্টিহতে পারে এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় কী?

ব্যবসার একটি উপায় হচ্ছে একক প্রচেষ্টা। এটা তার পক্ষেই সম্ভব, যে আগে থেকেই অর্থবিত্তের মালিক।আলিমদের মধ্যে এ ধরনের মানুষ কম।

যাদের অর্থ কম তারা এককভাবে ব্যবসা করতে পারবে না। এখন বড় বড় ব্যবসায়ীরাও এককভাবে ব্যবসাকরে না।

এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে শেয়ারবাজার ও ব্যাংকগুলো। ব্যাংকে যদিও সব শ্রেণীর মানুষের অর্থ জমা হয় কিন্তু ব্যাংকেরটাকা খাটায় দেশের বড় বড় ধনীরা। আরেক জায়গা হচ্ছে শেয়ারবাজার। তারা শেয়ার বাজারে আইপিও ইস্যুকরে কোটি কোটি টাকা জনগণ থেকে নেয় এবং সে টাকা দিয়ে ব্যবসা করে। তো শুধু নিজের টাকা দিয়েশিল্পপতিরাও ব্যবসা করে না।

যাই হোক, আলিমরা যদি বড় ধরনের ব্যবসা করতে চান বা বড় ব্যবসায় অংশীদার হতে চান তাহলে এরপদ্ধতি কী?

ব্যবসার প্রথম বিষয় হচ্ছে মূলধন যোগাড়। সাধারণ ব্যবসায়ীরা সাধারণত দু’ভাবে মূলধন যোগাড় করে।ব্যাংক লোন  ও আইপিও-এর মাধ্যমে। কিন্তু আলিমরা কী করবে? আলিমরা পুরোনো পন্থা থেকেই মূলধনযোগাড় করতে পারবেন এবং ব্যবসাও করতে পারবেন। নতুন আবিষ্কৃত ধারাগুলোর বাইরেই এটি সম্ভব।শরীয়তের দৃষ্টিতে একে তুলনা করা যায় শিরকতের সাথে। শক্ত নীতিমালা থাকলে এবং দক্ষ ও সৎ হাতেপরিচালিত হলে এটা সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু কিছু সমস্যা হয়। এটা ছোটখাটো কৌশল অবলম্বন করে সমাধাকরা সম্ভব। আপনি নিয়ম রাখতে পারেন যে, মাসের এত তারিখের মধ্যে চাঁদা পৌঁছে দিতে হবে। ঐ তারিখেরমধ্যে অফিসে পৌঁছে না দিলে একজন লোক আপনার কাছে যাবে এবং চাঁদা নিয়ে আসবে। সেক্ষেত্রে তারযাতায়াত খরচ আপনাকে বহন করতে হবে। এই নিয়ম চালু হলে দেখবেন, চাঁদা পরিশোধের হার বেড়েগেছে। আর এখন তো যেকোনো জায়গা থেকেই টাকা পাঠিয়ে দেওয়া সহজ।

এখন শুধু ইতিবাচক কথাই বলছি। এক্ষেত্রেও যেসব ভুল পদ্ধতি আছে, যেমন কেউ চাঁদা এনে দিলে সে এতপার্সেন্ট কমিশন পাবে-এগুলো এখন বলছি না। এ বিষয়ে পরে আসছে।

তো এভাবে অনেকের অল্প অল্প টাকা জমা হলে ব্যবসার অর্থায়ন হবে। এখানে একটি কথা বলি, যা আমিপ্রায়ই বলে থাকি, তা এই যে, শর্টকাট পথে বড়লোক হওয়ার উপায় শরীয়তে নাই। সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্যেওনেই। হ্যাঁ, গলদ পথে গেলে আছে। এজন্য ঐ লাইনে কেউ বড় লোক হলে ব্যঙ্গ করে বলা হয়-ভদ্রলোকনিশ্চয়ই আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন!

তো আপনাকে অল্প থেকেই শুরু করতে হবে। ব্যক্তিগত ব্যবসা করুন বা যৌথ ব্যবসা, শিরকত করুন বামুযারাবা, সবক্ষেত্রেই এককথা। অল্প থেকেই শুরু হবে। এরপর ধীরে ধীরে বড় হবে। রাতারাতি অনেক টাকাহয়ে যাবে-এটা হবেও না, করাও উচিত না।

করা উচিত না এজন্য বললাম যে, আপনার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে হয়তো অনেক বড়লোক আছে। তারাআপনাকে একসাথে অনেক টাকা দিতে চায় ব্যবসা করার জন্য। আপনি বুদ্ধিমান হলে এত টাকা একসাথেনিবেন না। কারণ এখানে দায়িত্ব অনেক। প্রথমে মূলধন রক্ষা করা তারপর লাভ করা। কিছু নিজে রাখা, কিছুতাদেরকে দেওয়া। এগুলো অনেক ঝুঁকি ও দায়িত্বের বিষয়। এজন্য ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে হবে।

মূলধন জমা হওয়ার পর কোনো উৎপাদনশীল ব্যবসা হতে পারে আবার কোনো বেচাকেনাও হতে পারে। যারাব্যবসা পরিচালনা করবেন তারা নিজেদের দক্ষতা অনুযায়ী ব্যবসার ধরন বাছাই করবেন। শরীয়তের বিধানমেনে যে কোনোটাই করা যেতে পারে।

উৎপাদনশীল ব্যবসা এই দিক থেকে ভালো যে, এতে আরো কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। তবে পূর্বঅভিজ্ঞতানা থাকলে এতে ঝুঁকিও আছে।

সমিতির মতো আরেকটি হল কোম্পানি। সমিতি ও কোম্পানিতে খুব বেশি পার্থক্য নেই। রাষ্ট্রীয় কিছু আইনেকোম্পানি ও সমিতিতে কিছু পার্থক্য আছে। বাকি শরয়ী দৃষ্টিতে সমিতি ও কোম্পানি দুটোই শিরকত। যদিওআধুনিক আরবীতে লিমিটেড কোম্পানিকে শারিকা বলে। সুতরাং শিরকতের মাসাইলগুলো জেনে নিতে হবেএবং সেগুলো অনুসরণ

করতে হবে।

মূলধন যোগাড়ের দ্বিতীয় পন্থা মুযারাবা। আপনি ছোটখাটো কিছু দাঁড় করান, তাতে প্রতিশ্রুতি থাকুক। আকর্ষণবোধ করলে একজন দু’জন করে মানুষ আপনার এখানে বিনিয়োগ করতে আসবে। আপনি বলবেন, এখানেবিনিয়োগ করতে পারেন তবে আপনি কোম্পানির অংশীদার হবেন না। আবার অংশীদার হবেন না একথাটাউহ্য রেখে বলতে পারেন যে, এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন যদি লাভ হয় তাহলে লাভের এত ভাগ আপনিপাবেন, এত ভাগ আমি। আর লোকসান হলে তা আপনাকে বহন করতে হবে। শেষ বাক্যটি না বললেওমুযারাবা হয়ে যায়। তবে শিরোনাম থাকতে হবে লাভের অংশীদারিভিত্তিক ব্যবসা। এটা মুযারাবার সঠিকতরজমা। কারণ মুযারাবার অংশীদারি তো শুধু লাভের ক্ষেত্রে হয় লোকসান বহন করতে হয় রাববুল মাল বাঅর্থদাতাকে।

তো এ উপায়েই মূলধন সংগ্রহ করা সম্ভব। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, এভাবে মনুষ টাকা দিবে কি না। এটাআসলে নির্ভর করে আপনার যোগ্যতা ও বিশ্বস্ততার উপর।

মানুষ প্রথমেই যা চায় তা হচ্ছে সিকিউরিটি, তার অর্থের নিরাপত্তা। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখে কেন? এখন তোঅসংখ্য কোম্পানি আছে, যেগুলোতে বড় বড় লাভের হাতছানি আছে। এরপরও অধিকাংশ মানুষ ব্যাংকেইটাকা রাখে। কেন? কারণ ঐখানে সে নিরাপদ বোধ করে। তো আপনি যদি দক্ষ ও বিশ্বস্ত হন তাহলে অল্পলাভ দিলেও মানুষ আপনার কাছে টাকা রাখবে। মিনতি করে রাখবে। সুতরাং স্বাভাবিক পন্থায় টাকা আসবেনা-এই আশঙ্কা সম্পূর্ণ অমূলক। তবে দক্ষতা ও বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতে হবে।

এখনও মানুষ নিরাপদ জায়গা তালাশ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, মানুষ নিরাপদ মনে করে অর্থ রাখেএরপর প্রতারিত হয়। এ কারণে দিন দিন মানুষের আস্থা কমছে। এদেশের উদাহরণ দিলে অনেকে অসন্তুষ্টহবে, পাকিস্তানের উদাহরণ নিন। পাকিস্তানে ১টি কোম্পানি ছিল এলায়েন্স মোটর কোম্পানি। তারা টাকানেওয়ার সময় হালাল উপার্জনের টাকা কি না ইত্যাদি বিচার করে টাকা নিত। পাকিস্তানের বিখ্যাত আলিমদেরএবং তাদের সূত্রে অন্য অনেক মানুষের টাকা তাতে খাটত। দেশে আসার পর হঠাৎ শুনলাম, ঐ কোম্পানিদেউলিয়া হয়ে গেছে। পরিচালকরা পলাতক। পরিচালকরা আলিম ছিল না। কিন্তু

পাকিস্তানের অনেক বড় বড় আলিমের টাকা তাতে খাটছিল। আলিমদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল তাদেরপরিচিতজনদের টাকা। তো এভাবে আস্থা বিনষ্ট হয়। এজন্য অন্যের অর্থের বিষয়ে দায়িত্বের মানসিকতানিজের অর্থের চেয়েও বেশি থাকতে হবে। এটা যদি থাকে, দক্ষতা ও বিশ্বস্ততা থাকে তাহলে একসময়মাথাব্যথা হয়ে যাবে যে, এত টাকা কোথায় খাটাব।

তো এটা হচ্ছে অর্থায়ন প্রসঙ্গ। এখানে অন্য কিছু কথাও আছে। তা পরে বলার চেষ্টা করব।

এখন ব্যবসা কোনটা করব-এ নিয়ে দুয়েকটি কথা বলা যাক।

অনেক ধরনের ব্যবসা এখন হচ্ছে। আমার মতে আলিমদের যদি ব্যবসার ক্ষেত্রে বিচরণ করতে হয় তাহলেগণমুখী ব্যবসাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তাহলে সমাজ উপকৃত হবে। ঝুঁকির আশঙ্কাও ঐসব ক্ষেত্রেতুলনামূলক

কম থাকে।

গণমুখী ব্যবসা মানে যেখানে ব্যবসা হবেই। যেমন একটু বড় করে ধরলে, সুপার স্টোর। ছোট করে ধরলেডিপার্টমেন্টাল স্টোর। এখানে বিক্রি না হয়ে পারে না। এসব দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থাকে।সুতরাং কিছু না কিছু বিক্রি হবেই। ফলে লোকসানের ঝুঁকি কমে আসবে। আর অনেক লোকের সাথেমেলামেশা হবে। আপনি বাজারদরেই পণ্য দিবেন, কিন্তু ভালো জিনিস দিবেন। মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিস রাখবেননা। নকল জিনিস রাখবেন না। ক্রেতার সাথে সুন্দর আচরণ করবেন। তাহলেই দেখবেন আপনার দোকানেভীড় লেগে গেছে। আমাদের বাঙালীদের অনেক দুর্বলতা আছে, তবে অনেক গুণও আছে। একটি গুণ হচ্ছেঅল্পে সন্তুষ্ট হওয়া। তো ছোটখাটো কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে মানুষ আপনার কাছেই আসবে।

ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ব্যবসা যদি কেউ করেন তাহলে তার দাঁড়িয়ে যাওয়ার অনেক পথ খোলা আছে। একটাপর্যায়ে গিয়ে আপনি যদি বড় জায়গা নিয়ে কৃষি প্রজেক্ট করতে পারেন, অনেক লোকের কর্মসংস্থান করতেপারেন তাহলে আপনি যখন বলবেন, আমাদের নিজস্ব ক্ষেত থেকে আনা। ওখানে ক্ষতিকর সার, কীটনাশকব্যবহার করা হয় না, শুধু কৃষি বিভাগের অনুমোদিতগুলো ব্যবহার করা হয় তখন দেখবেন, মানুষ কীভাবেনেয়। তখন দুই ব্যবসা একসাথে হবে। কৃষিতে এক ব্যবসা, দোকানে আরেক ব্যবসা।

এ রকম মাছের খামার করতে পারবেন। ওখানেও অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। নিজে না করলেওঅন্যদের খামারে বিনিয়োগ করতে পারেন। এখন মাছের খামারীরাও অনেক জুলুমের শিকার। কারণ তারাআগে ঋণ নেয়। মাছ বিক্রির দিন ফড়িয়ারা এসে হাজির। খামারিরা নিজেদের ইচ্ছেমতো মাছ বিক্রিও করতেপারে না। এরপর মাছ বিক্রির টাকা নিজেদের কাছে আসার আগেই অন্যদের পকেটে চলে যায়। তো আপনিওখানেও বিনিয়োগ করতে পারবেন। আবার ন্যায়সঙ্গতভাবে মাছ কিনেও নিতে পারবেন। আপনারও লাভহবে, ওদেরও লাভ হবে।

এভাবে গরুর খামার। যেখান থেকে দুধ আসবে। গোশত আসবে। মোটকথা, এভাবে উৎপাদনশীল খাতওতৈরি হবে। আর যেহেতু বিপণনের জায়গা আপনার নিজেরই আছে, চিন্তার কোনো কারণ নেই। নিজস্বখামারের খাঁটি দুধ, নিজস্ব খামারের ডিম, মুরগী। খুব ভালো চলবে।

এরকম ফার্মেসী। গণমুখী ব্যবসা। আমাদের দেশে চেইন ফার্মেসী তেমন দেখা যায় না। কিন্তু অন্যান্য দেশেআছে।  যেমন-সৌদী আরবে আছে ছাইদালিয়াতুল ইত্তিহাদ। শহরে গ্রামে তাদের অনেক শাখা আছে।সুনামের কারণে মানুষ তাদের ফার্মেসী খোঁজ করে তাদের থেকে ওষুধ নেয়।

এরকম ভালো মানের হাসপাতাল করা যায়, ডায়গনোস্টিক সেন্টার করা যায়। মান ও আদর্শ বজায় রাখলেউন্নতি হবে ইনশাআল্লাহ।

এভাবে সাধারণ খাবার হোটেলও হতে পারে এবং এটাও চেইন পদ্ধতির হতে পারে। তো ব্যবসা যদি কেউকরতে চায় তাহলে আমি গণমুখী ব্যবসাকেই প্রাধান্য দিব।

তবে দক্ষ ব্যবস্থাপনা লাগবে, দক্ষ হাতে পরিচালনা করতে হবে।

এবার মাসআলায় আসি। অর্থ অনেকেই দিবে, কিন্তু ব্যবসা তো সবাই করবে না। ব্যবসা যারা করবে তারাকীভাবে করবে। যারা ব্যবসা করবে তারা কি অন্যদের সমান লাভ নিবে? এরকম নিলে ব্যবসা জমবে না।আমাদের মধ্যে অনেক সময় চিন্তার সীমাবদ্ধতা এসে যায়। ব্যবসার স্বার্থেই হৃদয়টাকে একটু প্রশস্ত করতেহবে।

অন্যথায় যারা ব্যবসা পরিচালনা করে তারা নিরুৎসাহিত হবে। সেক্ষেত্রে দু অবস্থার কোনো একটা হবে। হয়সে নিজের ব্যবসাই করবে, আপনারটা ছেড়ে দিবে। কিংবা তার আমানতদারিতে ঘুন ধরবে। এজন্য যারাপরিচালনায় থাকবে তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে।

কোম্পানির ক্ষেত্রে মাসআলা বলা আছে যে, ব্যবসা পরিচালনাকারী যদি শেয়ার হোল্ডারও হয় তবু সেআলাদাভাবে বেতন-ভাতা নিতে পারবে। আর যদি কোম্পানি না হয়, সমিতি জাতীয় শিরকাত হয় তাহলেহানাফী মাযহাবে শরীকের আলাদা বেতন নেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ আছে, কিন্তু হাম্বলী মাযহাবে এটা জায়েয।অনেকেই এখন হাম্বলী মাযহাবের উপর ফতোয়া দিয়ে থাকেন।

হানাফী মাযহাবেও সহজ রাস্তা আছে। তা হচ্ছে, ওদের শেয়ারের লভ্যাংশ বাড়িয়ে দেওয়া। এটা অবশ্য সবক্ষেত্রে সুফল দেয় না। কারণ তার হয়তো শেয়ার আছে ১০,০০০ টাকার, তো লভ্যাংশ বাড়িয়ে দিলেও১০,০০০ টাকায় আর কত বাড়াবেন। এজন্য সেসব ক্ষেত্রে বেতনের দিকে গেলে অসুবিধা নেই।

এখন যত বহুজাতিক কোম্পানি দেখছেন এ সমস্ত কোম্পানিতে যারা বড় বড় দায়িত্বে চাকরি করেন তাদেরসবাইকে শেয়ার দেয়া আছে। তাদের রীতি হচ্ছে, ব্যবসা যেভাবে অগ্রসর হবে সেভাবে উপরের কর্মকর্তা,কর্মচারী অর্থাৎ যাদের মাধ্যমে ব্যবসা অগ্রসর হয়েছে, তাদেরকে ফ্রী শেয়ারও দিয়ে থাকে। সে বিনিয়োগ নাকরেই কোম্পানির ৫% এর মলিক, ১০% এর মালিক হয়ে যায়। ফলে বেতনের বাইরেও প্রাপ্ত শেয়ারেরহিসাবে সে লভ্যাংশ পায়। এতে তারা আরো উৎসাহিত হয়। তো যাদের দ্বারা ব্যবসা উপরে উঠবে তাদেরকে

বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করতে হবে। ব্যবসা ছোট থাকলে সুযোগ-সুবিধা কম থাকবে, ব্যবসা বড় হলে সুবিধাওবাড়বে। এভাবে অগ্রসর হলে ব্যবসা পরিচালনাকারীরা উৎসাহিত হবে। এগুলোর সহীহ উপায় আছে। তালাশকরলে পেয়ে যাবেন।

এবার অন্য কিছু কথা বলি। এখন অনেকেই যে সব ব্যবসার দিকে যাচ্ছে সেগুলো সম্পর্কে কিছু কথা বলাপ্রয়োজন মনে হচ্ছে। মাসআলা বলার আগে সাধারণ দিকটা বলি। আমরা অন্যদের থেকে ব্যবসার এমন কিছুপন্থা নিয়েছি যেগুলো ব্যবসার কৃত্রিম পন্থা।  শুধু ইসলামী ব্যবসার ক্ষেত্রে নয়, সাধারণ ব্যবসার ক্ষেত্রেওএগুলো মূল পথ নয়, অলিগলির পথ।

মূলধন যোগানের বিষয়টি ধরুন, মানুষের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ নেয় ব্যাংক এবং নন ব্যাংকিংইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অর্থাৎ

অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এরা যে মানুষের কোটি কোটি টাকা নেয়, এ মূলধন সংগ্রহের জন্য কতটাকা কমিশন দেয়? কেউ যদি ওদের ওখানে পাঁচ জন, দশ জন একাউন্ট হোল্ডার নিয়ে যায়, দশ নামে বিশনামে ফিক্সড ডিপোজিট করায় ব্যাংকের ম্যানেজার কি তাকে দু হাজার টাকা দিতে পারে? পারে না। পারে শুধুআপ্যায়ন করতে। এর বেশি কিছু করার এখতিয়ার তার নেই। ব্যাংকের রুলেও নেই। এখানে টাকা জমাকরলে কমিশন দেয়া, নেয়া, পাওয়া এগুলোর কোনো রাস্তা নেই। অথচ মানুষের টাকা এদের কাছেই বেশি

জমা হয়।

আমি আগেও বলেছিলাম কমিশনের বিষয়টা মানুষ নিয়েছে ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো থেকে। এরপর বিভিন্নক্ষেত্রে তা চালু করেছে। ইন্সুরেন্স কোম্পানির কাজটা হচ্ছে গায়রে ফিতরী বা অস্বাভাবিক । যে মানুষের মনেকোনো দুশ্চিন্তা ছিল না তার মনে ইন্সুরেন্স কোম্পানির ব্রোকার/এজেন্টরা দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে। জীবনের ঝুঁকি,প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি, বিভিন্ন ঝুঁকির কথা বুঝিয়ে মানুষকে উদ্বিগ্ন করে। মানুষ যেটাকে আগে প্রয়োজনীয় মনেকরেনি সেটাকেই তারা প্রয়োজনীয় করে তোলে। তো এই কৃত্রিম পরিস্থিতি তৈরি করে টাকা আনতে খাটনিকরতে হয়। এজন্য ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো  তৈরি হয়েছে কমিশনের ভিত্তিতে।

ইন্সুরেন্স কোম্পানির জন্য এটা অসুবিধার বিষয় নয়। কারণ তাদের কি সবার টাকা পরিশোধ করতে হয়?লাইফ ইন্সুরেন্স ওয়ালাকে করতে হয়, কিন্তু সময়ের আগে তো মৃত্যু হয় কম লোকের। তাদের ঝুঁকি তোতখনই যখন কেউ একলাখ টাকার ইন্সুরেন্স করেছে, ১০ হাজার টাকার প্রিমিয়াম জমা করে মারা গেছে।তাহলে কোম্পানিকে ১ লাখই আদায় করতে হবে। কিন্তু এধরনের ঘটনা খুবই কম ঘটে। কোম্পানির মূল লাভওখানেই।

জীবন বীমা ছাড়া অন্য যত বীমা আছে সেখানে ক্ষতিগ্রস্তকে দেওয়া হয়। চিন্তা করে দেখুন, ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যাবেশি, না ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন লোকের সংখ্যা বেশি। দুটোর মাঝে তুলনাই হয় না। যা হোক, এভাবেবীমাওয়ালাদের টাকা ফেরত দেওয়ার ঝামেলা কম থাকে তাই কমিশন দিয়ে যা থাকবে সেটাই তার লাভ।কিন্তু যারা ব্যবসা  করবে তাদের জন্য এটা সমস্যা। তাদেরকে মূলধন খাটাতে হবে, সবাইকে লাভ দিতে হবে,ব্যবসা শুরুর আগেই যদি মূলধন খরচ করে ফেলে তাহলে ব্যবসা করবে কীভাবে?

যাই হোক, ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলোর কমিশন-রীতি দেখে দেখে নানা ধরনের ব্যবসা চালু হয়েছে। এগুলোকিছু চালু করেছে মাইক্রো ক্রেডিট ওয়ালারা। এদের একশ্রেণীর এনজিও এটা চালু করেছে। এর পর আস্তেআস্তে তা ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের সমাজেরও কেউ কেউ তা গ্রহণ করেছে। ওখান থেকেই রীতি হয়ে গেছে,কেউ কারো কাছ থেকে টাকা এনে দিতে পারলেই কমিশন পাবে!! আর ন্যূনতম কমিশন নাকি ২০%। এটাকোত্থেকে দিচ্ছেন? ব্যবসায় যাওয়ার আগেই যখন আসল মূলধন থেকে খরচ করে ফেললেন তখন মাসআলায়যাওয়ার আগেই ব্যবসার সাধারণ নিয়ম থেকে বোঝা যায়, ‘দাল মে কুছ কালা হ্যায়’।

আপনি যদি সৎভাবে ব্যবসা করতে চান তাহলে এটা ব্যবসার রাস্তা না। এ ধরনের কারবার যারা করে তাদেরব্যবসায় স্থায়ী ও টেকসই উন্নতির চিন্তা থাকে না। তারা নিশ্চিন্ত থাকে যে, অর্থ আনার জন্য তো আলাদালোকজন আছে, তারাই মানুষকে আগ্রহী করবে। আপনি ভালো কিছু করতে চাইলে সে পথে না গিয়ে ব্যবসারউন্নতির মাধ্যমে মানুষকে আগ্রহী করতে হবে।

কারণ আপনি যদি পেশাদার ব্যবসায়ী হন তাহলে আপনার চিন্তা হবে যে, এবার আমার লোকদেরকে ১০%লাভ দিয়েছি। আগামী বছর ১২% লাভ দিতে হবে। তাহলে এ বছর এক কোটি টাকা জমা হয়েছে আগামীবছর আরো এক কোটি টাকা জমা হবে। পক্ষান্তরে কমিশনওয়ালাদের এসব চিন্তার প্রয়োজন নেই। সে ভাববে,আমার ব্যবসায় লাভ কম হোক বেশি হোক, আমার টাকা আনার লোক আলাদা আছে।

পৃথিবীর প্রতিষ্ঠিত সব ব্যবসা গুডউইলের মাধ্যমে হয়। গুডউইল বা সুনাম ব্যবসার এমন এক সম্পদ, যা মূল্যবান নয়, অতিমূল্যবান। এখন শোনা যাচ্ছে ঐঝইঈ ব্যাংকের বাংলাদেশের ব্রাঞ্চগুলো বিক্রি হবে। কোনোব্যাংক তা কিনবে। এখানে কী বিক্রি হবে? এ ব্যাংকের যে একাউন্ট হোল্ডার আছে তারা ঐ ব্যাংকের দায়িত্বেচলে যাবে। এ ব্যাংকের লোনগুলো ঐ ব্যাংকের দায়িত্বে যাবে। অফিস যেগুলো আছে তার অধিকাংশই তোভাড়া বাড়ি। তো কিনছে কী? যে ব্যাংক তা কিনছে সে নতুন আরো কিছু ব্রাঞ্চ করলেই তো পারত। অথচএখানে কোটি কোটি ডলারের লেনদেন হবে। মূলত বিক্রি হবে গুডউইলটা। একটি ব্যাংক দিয়ে উদাহরণদিলাম। যে কোনো সেক্টরেই এটা প্রযোজ্য। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাগুলো গুডউইলের মাধ্যমে অগ্রসর হয়।কমিশনের রাস্তা ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার রাস্তা নয়, এটা টাকা কামানোর ক্ষণস্থায়ী একটা পথ

হতে পারে।

আর কেউ যদি মনে করে, আমি এভাবে এজেন্ট হয়েই আয় করব, তাহলে শরয়ী মাসআলার আগে একটি কথাশুনুন। তা হচ্ছে এ ধরনের ব্রোকারির পেশার লোকজনকে মানুষ ভালো চোখে দেখে না। এটাকে নিচু মানেরকাজই মনে করা হয়, যা একজন আলিমের পক্ষে কখনো মানানসই নয়। সবাই জানে, ইনি যে আমার কাছথেকে টাকা নিচ্ছেন এতে ওনার কমিশন আছে। নিজেকে এত নিচে নামিয়ে আনা একজন আলিমের পক্ষেশোভন নয়। এটা জায়েয হলেও আমরা বলতাম,  আলিমদের জন্য তা করা উচিৎ নয়। কিন্তু মুযারাবাকারবারে তো এটা জায়েযই না। কেউ জায়েয বলেছেন বলে আমাদের জানা নেই।

কেউ কেউ ভালো করে নিজের কথা না বলে কোনো বড় জায়গা থেকে ফতোয়া আনার চেষ্টা করেছিল, কিন্তুওখানে প্রশ্নটিই পরিষ্কার নয়। অর্থাৎ এ কথা কেউ বলেনি যে, মুযারাবার মূলধন থেকে এজেন্টদেরকে কমিশনদেওয়া যাবে। এটা কেউ বলেছেন বলে আমাদের জানা নেই। আসলে একথাটা বলার সুযোগও নেই।শরীয়তের মাসআলা অনুযায়ীও এভাবে এজেন্ট হয়ে উপার্জন করার সুযোগ নেই। তো অলিগলির পথ বাদদিয়ে ব্যবসার মূল পথে যদি আসা হয় তাহলে আলিমদের জন্য ব্যবসায় আসার সুযোগ আছে এবং প্রয়োজনওআছে।

এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে আঁকড়ে থাকতে হবে সেগুলোর কয়েকটি হল :

* সততা ও নিষ্ঠা। এটি ব্যবসার  ক্ষেত্রে শরীয়ত কর্তৃক প্রদত্ত শর্ত হলেও আলেমদের জন্য তা আরো বেশিঅপরিহার্য। কারণ এক্ষেত্রে তাদের কোনো বিচ্যুতি শুধু তাদের একক ত্রুটি হিসেবে ধর্তব্য হবে না; বরং এরবিরূপ প্রভাব এসে পড়বে পুরো আলেমসমাজ, দ্বীনদার শ্রেণী এবং ইসলামের উপর। অতএব সত্যবাদিতা ওবিশ্বস্ততা থেকে কখনো বিচ্যুত হওয়া যাবে না।

* কোয়ালিটির উপর গুরুত্ব প্রদান।

পণ্য/সেবার গুণগত মান অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আপস করার সুযোগ নেই।

* ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে হবে এমন বৈশিষ্ট্যাবলি ও গুণাবলির মাধ্যমে যা তারা সচরাচরকম জায়গায় পেয়ে থাকে। মোটা মোটা কমিশন দিয়ে পণ্য বিক্রি বা বিনিয়োগকারী আনার চিন্তা করা যাবে না।

* সর্বোপরি শরীয়তের গন্ডিতে থেকেই সবকিছু করতে হবে।

এ বিষয়গুলো মেনে চললে নিজের অজান্তেই ব্যবসার প্রাণ গুডউইল-সুনাম সৃষ্টি হবে। তখন টাকার লাগামটেনে ধরাই হবে মূল কাজ।

সবশেষে আরেকটি কথা বলব। তা হচ্ছে, আমাদের আকাবির কওমী আলেমদেরকে মাদরাসা-মসজিদেরবাইরে ভিন্ন লাইনে যেতে, কলেজ-ইউনিভার্সিটি ও আলিয়ায় পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যইত্যাদিতে জড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে নিরুৎসাহিত করে এসেছেন। এর কারণও অজানা নয়। তা হচ্ছে,তিক্ত অভিজ্ঞতা। নিজেদের গন্ডির বাইরে গেলেই অধিকাংশের ক্ষেত্রে বিচ্যুতি লক্ষ করা যায়। যেন মূলপরিচয়ই হারিয়ে ফেলি আমরা অনেকে। কিন্তু যদি এমনটি না হয়; বরং একজন ওয়ারিসে নবী ও কওমেররাহবার হিসেবে আমরা নিজেদের স্বকীয়তা-স্বাতন্ত্র বজায় রেখে সমাজের বিভিন্ন পেশায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়েপড়ি তাহলে সেটি হবে অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক এবং সবার জন্য উপকারী।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।

0Shares

আরও জানুন

ইংল্যান্ড আমেরিকায় মুসলমানদের জন্য সুদ খাওয়া জায়েজ?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। ভাই আমি সালমান গোপালগঞ্জ থেকে।   আমার ভাই লন্ডন থাকে। সে ওই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *