প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক প্রদান প্রসঙ্গে

স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক প্রদান প্রসঙ্গে

প্রশ্ন: 

সম্মানিত মুফতি সাহেব,

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

আমার ভাবী এক বছর যাবত অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক ছিল। সে বিষয় নিয়ে 5-6মাস আগে দুজনের মাঝে অনেক ঝগড়া হয়। অতপর মেয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবার পর স্বামীর সাথে ফোনে কথা বলার সময় স্বামী রাগের মাথায় ওনার স্ত্রীকে ও তার মা-বাবা সবাইকে প্রচন্ড গালিগালাজ করে । এবং ফোনে কথা বলার সময় অনেক খারাপ একটা গালি দিয়ে বলে তালাক দেওয়ার জন্য অতপর মেয়ে (স্ত্রী) ফোনে তালাক তালাক তালাক বলে রেখে দেওয়া হয়। এখন জানতে চাচ্ছি এইটা কি ইসলামি শরিয়া মোতাবেক তালাক কতোটুকু যুক্তি আছে।

উক্ত ঘটনায় কি আসলে তালাক হবে নাকি ?  উত্তর আশা করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। [email protected]

بسم الله الرحمن الرحيم

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

উত্তর: 

প্রিয় ভাই!
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কোনো তালাক পতিত হয়নি।

মূলত শরীয়তের দৃষ্টিতে তালাক দেওয়ার মূল ও স্থায়ী অধিকার স্বামীর কাছেই ন্যস্ত। অর্থাৎ, তালাকের আসল মালিকানা ও ক্ষমতা আল্লাহ তাআলা পুরুষকেই প্রদান করেছেন।

তবে স্বামী ইচ্ছা করলে এই অধিকারটি তার স্ত্রীকে বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে অর্পণ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে দাম্পত্য জীবনে চূড়ান্ত বনিবনা না হলে (স্বামীর অনুমতি থেকে থাকলে) স্ত্রী নিজের ওপর তালাক কার্যকর করার অধিকার রাখে। কিন্তু কোনো নারী স্বামীকে তালাক দিতেই পারে না।  সুতরাং, প্রশ্নোক্ত ঘটনায় শরীয়ত অনুযায়ী কোনো তালাকই পতিত হয়নি।

প্রিয় ভাই! দাম্পত্য জীবনে ভুল বোঝাবুঝি, রাগ, ও মান-অভিমান আসতে পারে।
কিন্তু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য ধৈর্য, ক্ষমা, ও পারস্পরিক বোঝাপড়াই সবচেয়ে বড় নিয়ামত। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ “তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করো।”
(সূরা আন-নিসা: ১৯)

অতএব, তালাকের মতো গুরুতর বিষয়ে তাড়াহুড়া বা আবেগ নয় বরং ধৈর্য, পরামর্শ ও আল্লাহভীতি অবলম্বন করাই শ্রেয়।

ধৈর্য ধারণ না করে গালিগালাজ ইত্যাদী করা মোটেও উচিত হয়নি। এটি কবিরা গুনাহ।

عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلاَ اللَّعَّانِ وَلاَ الفَاحِشِ وَلاَ البَذِيءِ

আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ  মু’মিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৯৭৭]

أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: دَخَلَ رَهْطٌ مِنَ اليَهُودِ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا: السَّامُ عَلَيْكَ، فَفَهِمْتُهَا فَقُلْتُ: عَلَيْكُمُ السَّامُ وَاللَّعْنَةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَهْلًا يَا عَائِشَةُ، فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِي الأَمْرِ كُلِّهِ» فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَوَلَمْ تَسْمَعْ مَا قَالُوا؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” فَقَدْ قُلْتُ: وَعَلَيْكُمْ

‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার একদল ইয়াহূদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললঃ আসসামু আলাইকা। (তোমার মরণ হোক)। আমি এ কথার অর্থ বুঝে বললামঃ আলাইকুমুস্ সামু ওয়াল লানাতু। (তোমাদের উপর মৃত্যু ও লা‘নাত)। নাবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ! তুমি থামো। আল্লাহ সর্ব হালতে নম্রতা পছন্দ করেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! তারা যা বললোঃ তা কি আপনি শুনেননি? রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বললেনঃ এ জন্যই আমিও বলেছি, ওয়া আলাইকুম (অর্থাৎ তোমাদের উপরও)। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬২৫৬]

পরকিয়ার ভয়াবহ ক্ষতি ও পরিণাম: 

পরকীয়া এমন এক গুনাহ, যা শুধু দাম্পত্য সম্পর্কই নয় পুরো পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। এটি ভালোবাসা, বিশ্বাস, সম্মান ও শান্তিকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে কঠোরভাবে সতর্ক করে বলেছেনঃ وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا

“ব্যভিচারের নিকটেও যেও না; নিশ্চয়ই এটি অতি নিকৃষ্ট কাজ এবং অতি মন্দ পথ।”
— (সূরা আল-ইসরা: ৩২)

পরকিয়ার প্রধান ক্ষতি ও পরিণামসমূহঃ

১. আল্লাহর গজব ও অভিশাপ নেমে আসে।

২. পরিবার ও দাম্পত্য জীবনের ভরসা ও ভালোবাসা ধ্বংস হয়।

৩. সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়, পারিবারিক মানসম্মান মাটিতে মিশে যায়।

৪. হৃদয় থেকে ঈমান ও লজ্জাবোধ কমে যায়।

৫. সমাজে ফিতনা, সন্দেহ ও অনৈতিকতার বিস্তার ঘটে।

المحيط البرهاني: (239/3، ط: دار الكتب العلمية)

“والأصل في هذا: أن الزوج يملك إيقاع الطلاق بنفسه فيملك التفويض إلى غيره فيتوقف عمله على العلم؛ لأن تفويض طلاقها إليها يتضمن معنى التمليك، لأنها فيما فوض إليها من طلاقها عاملة لنفسها دون الزوج، والإنسان فيما يعمل لنفسه يكون مالكا”.

ومحله المنكوحة واهله زوج عاقل بالغ مستيقظ (الدر المختار مع رد المحتار-4/431، مجمع الانهر-2/4، النهر الفائق-2/310

والله أعلم بالصواب

উত্তর লিখনে
মুহা. শাহাদাত হুসাইন , ছাগলনাইয়া, ফেনী।

সাবেক শিক্ষার্থী: ইফতা বিভাগ
তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

সত্যায়নে
মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী দা.বা.

পরিচালক তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা

উস্তাজুল ইফতা জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

0Shares

আরও জানুন

দুই রাকাত না পাওয়া মাসবূক ব্যক্তি কি ইমামের সাথে বৈঠকে তাশাহুদ পড়বে না?

প্রশ্ন হুজুর আপনি লিখেছেন মাসবুক শেষবৈঠক পেলেও  তাশাহুদ  পড়বে। কিন্তু  আমি  জানি  ২রাকাত  পূর্ণ  না …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস