প্রচ্ছদ / দিফায়ে ইসলাম / কুরআনে আউজুবিল্লাহ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কথা নেই?

কুরআনে আউজুবিল্লাহ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কথা নেই?

প্রশ্ন

আস্সালামু আলাইকুম। ‍হুজুর, আমাদের এক ভাই বলেন কুরআন পাকে নাকি আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম নেই। কুরআনে নাকি তা হুবুহু এই ভাবে আসে নি। তাই আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বলা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে একটু বুঝিয়ে বললে ভালো হয়।

আর পাঁচওয়াক্ত নামাজ নাকি কুরআনে পাকে নেই। মানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা নাকি কুরআনে পাকে স্পস্ট করে উল্লেখ নেই। আছে দুই/তিন ওয়াক্ত । হুজুর বিষয়গুলি নিয়ে স্পস্ট আলোচনা করলে ভাল হতো।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

যিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলছেন তিনি স্পষ্টতই কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে একজন অজ্ঞ লোক। এমন ব্যক্তির সাথে তর্ক জড়ানোই উচিত নয়।

কুরআনে হুবহু শব্দ থাকা জরুরী নয়, মূল বিষয় থাকলেই তা কুরআনে থাকা প্রমাণিত হয়ে যায়। কুরআনে হজ্জের কথা আসছে, কিন্তু হজ্জের পূর্ণ বিবরণ আসেনি। কুরআনে নামাযের কথা আসছে, কিন্তু নামাযের পূর্ণ বিবরণ আসেনি।

এখন কেউ যদি বলে যে, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে হজ্জ আদায় করা হয় এবং যেভাবে নামায আদায় করা হয় তাহ যেহেতু হুবহু শব্দে কুরআনে আসেনি, তাই নামায ও হজ্জের কথা কুরআনে নেই বলে দাবী করে বসলো। সেইসাথে এইভাবে নামায পড়াও জায়েজ নেই বলেও ফাতওয়া দিয়ে দিলো এমন ব্যক্তিকে আমরা মূর্খ ছাড়া আর কিছু বলতে পারি না।

কারণ, হুবহু বিবরণ না থাকলে মূল নামায ও হজ্জের কথা যেহেতু কুরআনে আছে সুতরাং হজ্জ ও নামায কুরআন দ্বারাই প্রমাণিত এটাই সঠিক ও যথার্থ কথা। সামান্যতম যার জ্ঞানবুদ্ধি আছে সেই ব্যক্তিই তা বুঝতে সক্ষম।

তেমনি ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’ পড়ার কথা কুরআনে পরিস্কার এ শব্দে না থাকলেও মূল নির্দেশটা কুরআনে বিদ্যমান। যেমন কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে:

فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ ﴿النحل: ٩٨﴾

সুতরাং যখন আপনি কুরআন পড়বেন, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় গ্রহণ করবেন। [সূরা নাহল-৯৮]

এছাড়া আরো ইরশাদ হয়েছে:

وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿الأعراف: ٢٠٠﴾

যদি শয়তানের পক্ষ হতে তোমাকে কোনও কুমন্ত্রণা দেওয়া হয়, তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [সূরা আ’রাফ-২০০]

وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿فصلت: ٣٦﴾

যদি শয়তানের পক্ষ থেকে তোমার কখনো কোন খোঁচা লাগে, তবে (বিতাড়িত শয়তান থেকে) আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করো। নিশ্চয়ই তিনি সকল কথার শ্রোতা, সকল বিষয়ে জ্ঞাত। [সূরা হা মীম সাজদাহ-৩৬]

আর ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’ অর্থই হলো: ‘আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি’। তাহলে এটা বলা মানেইতো হলো কুরআনের উপরোক্ত নির্দেশকে বাস্তবায়ন করা। তাহলে একথাতো কুরআনেই উদ্ধৃত। এটাকে ‘কুরআনে নেই’ বলা, আরেকটু আগ বেড়ে ‘এভাবে বলা নাজায়েজ’ মন্তব্য করা চরম মূর্খতা বৈ কিছু নয়।

কুরআনে ৫ ওয়াক্ত নামায

কুরআনে কারীমে ৫ ওয়াক্ত নামাযের কথা উদ্ধৃত হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে:

فَسُبْحَانَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ (17) وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِينَ تُظْهِرُونَ (18)

সুতরাং তোমরা আল্লাহর তাসবীহতে লিপ্ত  থাকো যখন তোমরা সন্ধ্যায় উপনিত হও [মাগরিব ও ইশার নামায দ্বারা] এবং যখন তোমরা ভোরের সম্মুখিন হও [ফজর নামায দ্বারা] এবং তারই প্রশংসা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এবং বিকাল বেলায় [আসরের নামাযের দ্বারা] ও যোহরের [যোহরের নামায দ্বারা] সময়। {সূরা রূম-১৭-১৮}

সূরা রূমের উক্ত আয়াতে একই সাথে ৫ ওয়াক্ত নামাযের সময় আল্লাহর তাসবীহতে লিপ্ত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর আল্লাহর তাসবীহ করার সর্বোত্তম মাধ্যম যে নামায একথা সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। [তাফসীরে রূহুল মাআনী-৮/২৯, মাআরিফুল কুরআন-৬ খন্ড, ২১ পারা, পৃষ্ঠা- ৪০]

সুতরাং ‘কুরআনে ৫ ওয়াক্ত নামাযের কথা নেই’ বলা কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। যদি কুরআনে ৫ ওয়াক্ত নামাযের কথা নাও থাকতো, তবু আমাদের উপর ৫ ওয়াক্ত নামায পড়া আবশ্যক হতো। কারণ, আল্লাহর নির্দেশ সম্বলিত কুরআন মানা যেমন উম্মতের উপর আবশ্যক, তেমনি কুরআনী নির্দেশ মতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজকে মান্য করা উম্মতের উপর আবশ্যক।

যেহেতু নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ৫ ওয়াক্ত নামায মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত। তাই এটি আদায় করা উম্মতের উপর ফরজ দায়িত্ব।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *